এখনই আমাদের Telegram Community গ্রুপে যোগ দিন।। এখানে WBBSE বোর্ডের পঞ্চম শ্রেণি থেকে দশম শ্রেণির যেকোনো বিষয়ভিত্তিক সমস্যা শেয়ার করতে পারেন এবং একে অপরের সাহায্য করতে পারবেন। এছাড়া, কোনও সমস্যা হলে আমাদের শিক্ষকরা তা সমাধান করে দেবেন।

Telegram Logo Join Our Telegram Community

ষষ্ঠ শ্রেণী – ইতিহাস – ভারতীয় উপমহাদেশের প্রাচীন ইতিহাসের ধারা (প্রথম পর্যায় : আনুমানিক খ্রিস্টপূর্ব ৭০০০-১৫০০ অব্দ) – অধ্যায় সারসংক্ষেপ

আজকের এই আর্টিকেলে আমরা ষষ্ঠ শ্রেণীর ইতিহাসের তৃতীয় অধ্যায়, ‘ভারতীয় উপমহাদেশের প্রাচীন ইতিহাসের ধারা (প্রথম পর্যায় : আনুমানিক খ্রিস্টপূর্ব ৭০০০-১৫০০ অব্দ)’ অধ্যায়ের অধ্যায় সারসংক্ষেপ নিয়ে আলোচনা করবো। এই প্রশ্নগুলো ষষ্ঠ শ্রেণীর শিক্ষার্থীদের পরীক্ষার প্রস্তুতির জন্য যেমন গুরুত্বপূর্ণ। কারণ ষষ্ঠ শ্রেণী পরীক্ষায় এই ধরনের প্রশ্ন প্রায়ই আসতে দেখা যায়।

ষষ্ঠ শ্রেণী – ইতিহাস – ভারতীয় উপমহাদেশের প্রাচীন ইতিহাসের ধারা
ষষ্ঠ শ্রেণী – ইতিহাস – ভারতীয় উপমহাদেশের প্রাচীন ইতিহাসের ধারা

প্রাচীনকালে মানুষের বাসস্থান

প্রাচীনকালে মানুষ কোনো স্থায়ী বাসস্থানে থাকত না। তারা বনে জঙ্গলে ঘুরে বেড়াত এবং গুহায় বাস করত। এই মানুষদের ‘আদিম মানুষ’ বলা হতো। তারা শিকার ও সংগ্রহের মাধ্যমে খাবার জোগাড় করত। কিন্তু পরে তারা স্থায়ী বসবাস শুরু করে, কৃষিকাজ ও পশুপালন শিখে, আগুন ব্যবহার করতে শুরু করে। এভাবেই মানুষ আরও উন্নত জীবন শুরু করেছিল।

আদিম সভ্যতার বিকাশ

আদিম সভ্যতার মানুষেরা ধীরে ধীরে স্থায়ী বাড়ি বানাতে শিখল। তারা জমিতে ফসল ফলাতে, পশুপালন করতে এবং আগুন ব্যবহার করতে শিখল। এছাড়া তারা গুহাচিত্র আঁকত, যা তাদের জীবনধারা ও বিশ্বাস প্রকাশের একটি মাধ্যম ছিল। সময়ের সঙ্গে তারা গ্রাম ও শহর বানাতে শুরু করে, এবং নিজেদের মধ্যে যোগাযোগের পথ খুঁজে পায়। এরপরই সভ্যতা গড়ে ওঠে, যেখানে লিপি ও শাসন ব্যবস্থার জন্ম হয়।

ভারতে প্রাচীন সভ্যতা

ভারতে দুটি প্রধান প্রাচীন সভ্যতা গড়ে উঠেছিল: মেহেরগড় সভ্যতা ও সিন্ধু সভ্যতা (হরপ্পা সভ্যতা)। মেহেরগড় সভ্যতাটি পরে সিন্ধু সভ্যতাকে উৎসাহিত করেছিল এবং তার বিকাশ ঘটেছিল।

মেহেরগড় সভ্যতা

মেহেরগড় সভ্যতা প্রায় 7000 খ্রিস্টপূর্বাব্দে শুরু হয়েছিল। এটি ছিল তামা-পাথরের যুগের সভ্যতা। এখানে মানুষ কৃষি, পশুপালন, শিকার এবং আগুন ব্যবহার শুরু করেছিল।

আবিষ্কার

মেহেরগড় সভ্যতা প্রথম 1978 খ্রিস্টাব্দে ফরাসি প্রত্নতত্ত্ববিদ জাঁ-ফ্রাঁসোয়া জারিজ আবিষ্কার করেন। এই খোঁজে তাকে সাহায্য করেছিলেন রিচার্ড মেডো। এটি পাকিস্তানের বেলুচিস্তান প্রদেশের বোলান গিরিপথের কাছাকাছি পাওয়া গিয়েছিল।

পর্ব

মেহেরগড় সভ্যতা তিনটি পর্বে ভাগ করা হয় –

  • প্রথম পর্ব (7000 খ্রিস্টপূর্বাব্দ থেকে 5000 খ্রিস্টপূর্বাব্দ) – এই সময় মানুষ শস্য উৎপাদন করতে শিখেছিল এবং গোহাল, ছাগল, ভেড়া পালতে শুরু করেছিল। তারা আগুন ব্যবহার করতে শিখেছিল এবং ইট দিয়ে ঘর বানাত।
  • দ্বিতীয় পর্ব (5000 খ্রিস্টপূর্বাব্দ থেকে 4000 খ্রিস্টপূর্বাব্দ) – এই সময়ে মাটির পাত্র ও কাস্তের ব্যবহার শুরু হয়। গয়না তৈরি করা শুরু হয়, এবং কৃষি কাজ আরও উন্নত হয়।
  • তৃতীয় পর্ব (4300 খ্রিস্টপূর্বাব্দ থেকে 3800 খ্রিস্টপূর্বাব্দ) – এই সময়ে বিভিন্ন ধরনের গম ও যব চাষ করা হত। মানুষ কুমোরের চাকার সাহায্যে মাটির পাত্র তৈরি করত।

হরপ্পা সভ্যতা

হরপ্পা সভ্যতা, যা সিন্ধু সভ্যতা নামেও পরিচিত, ছিল ভারতের প্রাচীনতম নগর সভ্যতা। এটি সিন্ধু নদীর তীরে গড়ে উঠেছিল এবং এর কেন্দ্র ছিল হরপ্পা শহর।

আবিষ্কার

হরপ্পা সভ্যতা প্রথম আবিষ্কার হয় 1826 খ্রিস্টাব্দে, যখন ইংরেজ প্রত্নতত্ত্ববিদ চার্লস ম্যাসন পাঞ্জাব প্রদেশের সাহিওয়াল জেলায় যান। পরে 1850 খ্রিস্টাব্দে আলেকজান্ডার কানিংহাম ওই অঞ্চলে গিয়ে খনন কাজ শুরু করেন। এরপর 1921 খ্রিস্টাব্দে দয়ারাম সাহানি এবং 1922 খ্রিস্টাব্দে রাখালদাস বন্দ্যোপাধ্যায় সিন্ধু সভ্যতার নিদর্শন আবিষ্কার করেন।

সভ্যতার বিস্তার

হরপ্পা সভ্যতা ছিল বিশাল, যা ভারত, পাকিস্তান, এবং আফগানিস্তানের এক বড় এলাকা জুড়ে বিস্তৃত ছিল। এর বিস্তার প্রায় 700,000 বর্গকিলোমিটার ছিল।

হরপ্পার নগর পরিকল্পনা

হরপ্পা সভ্যতায় নগর পরিকল্পনা ছিল খুব উন্নত। শহর দুটি অংশে বিভক্ত ছিল:

  • সিটাডেল: এটি ছিল শহরের উঁচু এলাকা, যেখানে শাসকরা বাস করত।
  • বাড়িঘর: সাধারণ মানুষের বাড়ি ছিল একতলা থেকে তিনতলা পর্যন্ত, এবং প্রতিটি বাড়িতে ছিল স্নানাগার ও শৌচাগার।

শহরের রাস্তা ছিল পাকা, চওড়া এবং সোজা। রাস্তাঘাট ছিল ভালোভাবে পরিকল্পিত, এবং গলিপথগুলিও বড় রাস্তা থেকে বের হত।

অর্থনীতি ও বাণিজ্য

হরপ্পা সভ্যতা ছিল একটি বাণিজ্যিক সভ্যতা। তারা মেসোপটেমিয়ার সঙ্গে বাণিজ্য করত। পানির মাধ্যমে এবং স্থলপথে তারা বাণিজ্য চালাত। সেই সময়ে নৌকা ও পশু-টানা গাড়ির ব্যবহারের প্রমাণ পাওয়া গেছে।

কারিগরি শিল্প

এই সভ্যতার মানুষ মাটি, পাথর, হাতির দাঁত এবং ধাতু ব্যবহার করে নানা ধরনের শিল্প তৈরি করত। তারা গয়না, পুতুল ও অন্যান্য শিল্পকর্ম তৈরি করত, যা খুবই সূক্ষ্ম ও উন্নত ছিল।

ধর্ম ও সংস্কৃতি

হরপ্পা সভ্যতায় ধর্ম ছিল খুব গুরুত্বপূর্ণ। এখানে মাতৃ দেবী, পশু দেবতা, এবং যোগী বা শিবের আদিরূপ পাওয়া গেছে। তারা ধর্মীয় উপকরণ এবং প্রতীক ব্যবহার করত, যা তাদের বিশ্বাস ও জীবনধারা প্রকাশ করে।

লিপি

হরপ্পা সভ্যতার লিপি ছিল চিত্রলিপি। তবে এই লিপি এখনও পড়া সম্ভব হয়নি, কারণ এটি সাংকেতিক এবং বর্ণমালা ছিল না।

ধ্বংস ও পতন

হরপ্পা সভ্যতার পতন ঘটে আনুমানিক খ্রিস্টপূর্ব 1750 অব্দের পরে। বিভিন্ন কারণে এই সভ্যতার ধ্বংস হয়, যেমন:

  • বন্যা
  • খরা
  • সিন্ধু নদীর গতিপথ পরিবর্তন
  • ভূমিকম্প
  • আর্যদের আক্রমণ

এগুলি মিলে হরপ্পা সভ্যতার পতনের কারণ হয়েছিল।


আজকের এই আর্টিকেলে আমরা ষষ্ঠ শ্রেণীর ইতিহাসের তৃতীয় অধ্যায়, ‘ভারতীয় উপমহাদেশের প্রাচীন ইতিহাসের ধারা (প্রথম পর্যায় : আনুমানিক খ্রিস্টপূর্ব ৭০০০-১৫০০ অব্দ)’ অধ্যায়ের অধ্যায় সারসংক্ষেপ নিয়ে আলোচনা করেছি। এই প্রশ্নগুলো ষষ্ঠ শ্রেণীর শিক্ষার্থীদের পরীক্ষার প্রস্তুতি এবং প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষায় সহায়ক হবে, কারণ এগুলো প্রায়ই পরীক্ষায় আসে। আশা করি, এই নিবন্ধটি আপনাদের উপকারে এসেছে। যদি আপনার কোনো প্রশ্ন বা মতামত থাকে, তবে টেলিগ্রামে যোগাযোগ করতে পারেন। আপনাদের প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার জন্য আমি সর্বদা প্রস্তুত। ধন্যবাদ!

Share via:

মন্তব্য করুন