ষষ্ঠ শ্রেণী – ইতিহাস – ভারতীয় উপমহাদেশের প্রাচীন ইতিহাসের ধারা (প্রথম পর্যায় : আনুমানিক খ্রিস্টপূর্ব ৭০০০-১৫০০ অব্দ) – অতিসংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর

Solution Wbbse

আজকের এই আর্টিকেলে আমরা ষষ্ঠ শ্রেণীর ইতিহাসের তৃতীয় অধ্যায়, ‘ভারতীয় উপমহাদেশের প্রাচীন ইতিহাসের ধারা (প্রথম পর্যায় : আনুমানিক খ্রিস্টপূর্ব ৭০০০-১৫০০ অব্দ)’ অধ্যায়ের কিছু অতিসংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর নিয়ে আলোচনা করবো। এই প্রশ্নগুলো ষষ্ঠ শ্রেণীর শিক্ষার্থীদের পরীক্ষার প্রস্তুতির জন্য যেমন গুরুত্বপূর্ণ, তেমনি প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার জন্যও সহায়ক। কারণ ষষ্ঠ শ্রেণী এবং চাকরির পরীক্ষায় এই ধরনের প্রশ্ন প্রায়ই আসতে দেখা যায়।

ষষ্ঠ শ্রেণী ইতিহাস – ভারতীয় উপমহাদেশের প্রাচীন ইতিহাসের ধারা 2
ষষ্ঠ শ্রেণী ইতিহাস – ভারতীয় উপমহাদেশের প্রাচীন ইতিহাসের ধারা 2
Contents Show

আদিম সমাজে কীভাবে ভেদাভেদ এসেছিল?

আদিম সমাজের একেবারে প্রথমদিকে সমতার নীতি অনুসরণ করা হত। কিন্তু সমাজ উন্নত হতে থাকলে সমাজে শাসকগোষ্ঠী তৈরি হয়। অন্য আর-একটি দল ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠানে ব্যস্ত হয়ে পড়ে এবং ব্যক্তিধারণা তৈরি হয়। এইভাবে সমাজে ভেদাভেদ তৈরি হয়।

ভারতীয় উপমহাদেশের প্রাচীনতম সভ্যতা কোনটি? সভ্যতাটির আবিষ্কার কারা করেছিলেন?

ভারতীয় উপমহাদেশের প্রাচীনতম সভ্যতা ছিল মেহেরগড় সভ্যতা।

১৯৭৪ খ্রিস্টাব্দে বর্তমান পাকিস্তানের বোলান গিরিপথের কাছে মেহেরগড় সভ্যতা আবিষ্কৃত হয়। সভ্যতাটি আবিষ্কার করেন ফরাসি প্রত্নতাত্ত্বিক জাঁ ফ্রাঁসোয়া জারিজ। এই কাজে তাঁর সহযোগী ছিলেন রিচার্ড মেডো।

আদিম সমাজে নিয়মের শাসন কীভাবে চালু হল?

প্রথমদিকে আদিম সমাজে কোনো নিয়মকানুন ছিল না। মতের অমিল হলেই লড়াই, গণ্ডগোল শুরু হত। একসময় ঠিক হল সবাই নিয়ম মেনে চলবে। এভাবেই সমাজে নিয়মের শাসন চালু হল।

সভ্যতার প্রথমদিকে জিনিস কেনাবেচা কীভাবে হত?

সভ্যতার প্রথমদিকে জিনিস দিয়ে জিনিস নেওয়া হত এবং আরও পরে মুদ্রা দিয়ে জিনিস কেনাবেচা হত।

সিন্ধু সভ্যতার প্রধান দুটি প্রত্নকেন্দ্রের নাম লেখো।

সিন্ধু সভ্যতার প্রধান দুটি প্রত্নকেন্দ্র হল – হরপ্পা ও মহেন-জো-দারো।

মেহেরগড় সভ্যতার দুটি কেন্দ্রের নাম করো।

মেহেরগড় সভ্যতার উল্লেখযোগ্য দুটি কেন্দ্র হল – মেহেরগড় ও কিলি-গুল-মোহম্মদ। এ ছাড়া গুমলা, সরাইখোলা, বুরজাহোম, আনজিরা প্রভৃতি মেহেরগড় সভ্যতার গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র।

সিন্ধুনদের পাঁচটি উপনদীর নাম লেখো।

সিন্ধুনদের পাঁচটি উপনদী হল – শতদ্রু, বিপাশা, বিতস্তা, চন্দ্রভাগা ও ইরাবতী বা রাভি।

সিন্ধু সভ্যতাকে কেন তাম্র-ব্রোঞ্জ যুগের সভ্যতা বলা হয়?

সিন্ধু সভ্যতার মানুষ তামা ও ব্রোঞ্জ ধাতুর ব্যবহার জানত, সেইজন্য একে তাম্র-ব্রোঞ্জ যুগের সভ্যতা বলা হয়।

সিন্ধু সভ্যতার সময়কাল উল্লেখ করো।

সাধারণভাবে খ্রিস্টপূর্ব 3000 থেকে খ্রিস্টপূর্ব 1500 অব্দ পর্যন্ত সিন্ধু সভ্যতার সময়কাল ধরা হয়।

হরপ্পা সভ্যতাকে প্রথম নগরায়ণ বলা হয় কেন?

ভারতীয় উপমহাদেশে হরপ্পা সভ্যতাতেই প্রথম নগর গড়ে উঠেছিল। সেইজন্য একে প্রথম নগরায়ণ বলা হয়।

মহেন-জো-দারোর স্নানাগারটির আকার-আয়তন কীরূপ ছিল?

মহেন-জো-দারোর স্নানাগারটির আয়তন ছিল লম্বায় 180 ফুট, চওড়ায় 108 ফুট এবং উচ্চতায় 8 ফুট। স্নানাগারটি ছিল আয়তাকার।

হরপ্পা সভ্যতার কৃষিজ ফসলগুলির নাম লেখো।

হরপ্পা সভ্যতার কৃষিজ ফসলগুলি ছিল গম, যব, জোয়ার, বাজরা, নানারকমের ডাল, সরষে, তুলো, তিল এবং ধান। তবে ধান শুধুমাত্র রংপুর ও লোথালে চাষ হত।

কী থেকে অনুমান করা হয় যে হরপ্পার নগরজীবনে ধনী ও গরিব ভেদাভেদ ছিল?

নগরের বড়ো এবং ছোটো বাড়িগুলি দেখে অনুমান করা যায় যে, হরপ্পা সভ্যতায় ধনী ও গরিব ভেদাভেদ ছিল।

হরপ্পার মানুষের গৃহপালিত পশুর নামগুলি লেখো।

হরপ্পার মানুষের গৃহপালিত পশুর মধ্যে ছিল ষাঁড়, ভেড়া, ছাগল, উট প্রভৃতি। খুব সম্ভবত তারা ঘোড়ার ব্যবহার জানত না।

হরপ্পায় কী ধরনের সিলমোহর পাওয়া গেছে?

শিংওয়ালা মানুষ, ষাঁড়, গাছ ও জ্যামিতিক নকশা খোদাই করা সিলমোহর পাওয়া গেছে।

হরপ্পা সভ্যতার অধিবাসীরা কোন্ কোন্ দেশের সঙ্গে বাণিজ্য করত?

হরপ্পা সভ্যতার অধিবাসীরা মেসোপটেমিয়া, সুমের, মিশর, পারস্য বা ইরান, তুর্কমেনিস্তান প্রভৃতি দেশের সঙ্গে বাণিজ্য করত। জিনিসের বদলে জিনিস দেওয়ার মাধ্যমে এই বাণিজ্য হত।

হরপ্পা সভ্যতার অবনতির দুটি কারণ উল্লেখ করো।

হরপ্পা সভ্যতার অবনতির দুটি কারণ হল –

  • ভয়াবহ বন্যা এবং
  • শুষ্ক জলবায়ু।

হরপ্পা সভ্যতার পারস্পরিক নির্ভরতার একটি প্রমাণ দাও।

হরপ্পা সভ্যতার পুঁতির কারিগরকে ব্রোঞ্জের কারিগরের ওপর নির্ভর করতে হত। কারণ পুঁতি তৈরি করতে ব্রোঞ্জের যন্ত্রপাতি লাগত। আবার ব্রোঞ্জের কারিগরকে কুমোরের ওপর নির্ভর করতে হত। কারণ ব্রোঞ্জের কারিগরের ব্রোঞ্জ গরম করার পাত্র তৈরি করত কুমোর। এভাবেই পারস্পরিক নির্ভরতা তৈরি হয়েছিল।

তামা-পাথরের যুগ কাকে বলে?

আদিম যুগের প্রাথমিক পর্বে মানুষ নানা কাজে পাথরের ব্যবহার করত। ধীরে ধীরে মানুষেরা পাথরের সঙ্গে সঙ্গে ধাতুর ব্যবহার শুরু করল। এইসময় তামা ও কাঁসার ব্যবহার হত। লোহার ব্যবহার তখনও শুরু হয়নি। তাই এই সময়কে বলা হত তামা-পাথরের যুগ।

সিন্ধু সভ্যতা কোন্ যুগের সভ্যতা?

সিন্ধু সভ্যতা প্রায়-ইতিহাস যুগের সভ্যতা। কারণ, সিন্ধু সভ্যতার মানুষেরা তখন লিখতে জানলেও তার পাঠোদ্ধার আজও করা যায়নি। এই সময়কার মানুষেরা ধাতু হিসেবে তামা ও ব্রোঞ্জ ব্যবহার করত বলে সিন্ধু সভ্যতাকে তাম্র-ব্রোঞ্জ যুগের উন্নত সভ্যতা বলা হয়। প্রকৃতপক্ষে সিন্ধু সভ্যতা ছিল প্রাচীন যুগের উন্নত সভ্যতা।

সিন্ধু সভ্যতা কতদূর ছড়িয়ে পড়েছিল?

অথবা, সিন্ধু সভ্যতার বিস্তার আলোচনা করো।

সিন্ধু সভ্যতা প্রায় সাত লক্ষ বর্গ কিলোমিটার অঞ্চল জুড়ে ছড়িয়ে পড়েছিল। উত্তরে জম্মুর মান্ডা থেকে দক্ষিণে গুজরাট ও কচ্ছ অঞ্চল এমনকি মহারাষ্ট্রের দৈমাবাদ পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়েছিল। পূর্বে দিল্লির আলমগিরপুর থেকে পশ্চিমে পাকিস্তানের বেলুচিস্তান পর্যন্ত সিন্ধু সভ্যতার বিস্তার ঘটেছিল।

সিন্ধু সভ্যতার জলনিকাশি ব্যবস্থা কেমন ছিল?

সিন্ধু সভ্যতার জলনিকাশি ব্যবস্থা অত্যন্ত উন্নতমানের ছিল। প্রতিটি বাড়ির শৌচাগারের জল ছোটো নর্দমায় এসে পড়ত। ছোটো নর্দমাগুলি থেকে সেই জল বড়ো নর্দমায় গিয়ে পড়ত। বড়ো নর্দমা সিন্ধুনদে গিয়ে মিশেছিল। নর্দমাগুলি পাকা ছিল, পরিষ্কার করার জন্য ঢাকা দেওয়া ম্যানহোলের ব্যবস্থা ছিল।

সিন্ধু সভ্যতায় পশুপালনের বিবরণ দাও।

সিন্ধু সভ্যতার মানুষেরা পশুপালন করত। এখানে ষাঁড়, ছাগল, ভেড়া প্রভৃতি প্রতিপালিত হত। তবে উটের ব্যবহারও সে- সময় চালু ছিল। সিন্ধুর অধিবাসীরা ঘোড়ার ব্যবহার জানত না। এখানে মানুষেরা কখনো-কখনো পশুর দল নিয়ে ঘুরে বেড়াত।

সিন্ধু সভ্যতার পতনের পিছনে পরিবেশের প্রভাব কতখানি দায়ী ছিল বলে তুমি মনে করে?

সিন্ধু সভ্যতায় ইট পোড়ানোর জন্য যথেচ্ছভাবে গাছ কাটা হয়েছিল। এর ফলে জলবায়ুগত ব্যাপক পরিবর্তন শুরু হয়েছিল। এখান থেকেই খরা বা বন্যার সূত্রপাত। আবহাওয়া শুষ্ক প্রকৃতির হয়ে উঠেছিল। ফলে পরিবেশের অবনমন সিন্ধু সভ্যতার পতনকে ত্বরান্বিত করেছিল।

সিন্ধু সভ্যতার কৃষিকাজের বিবরণ দাও।

অথবা, হরপ্পা সভ্যতায় কোন্ কোন্ ফসলের চাষ হত?

সিন্ধু সভ্যতার গ্রাম্য এলাকায় কৃষিকাজ হত। গম, যব, জোয়ার, বাজরা, সরষে, ধান প্রভৃতি ফসলের চাষ হত। তবে ধানের চাষ কেবল গুজরাটের রংপুরে ও লোথালে হত বলে জানা গেছে। কালিবঙ্গানে কাঠের লাঙলের ফলার দাগের চিহ্ন পাওয়া গেছে। এর থেকে প্রমাণ হয় কৃষিকাজে লাঙলের ব্যবহার হত।

হরপ্পা সভ্যতার ধাতুশিল্পের পরিচয় দাও।

কাঁসা, তামা, ব্রোঞ্জ প্রভৃতি ধাতু হরপ্পা সভ্যতায় ব্যবহৃত হত। এইসব ধাতু দিয়ে বাটালি, ছুরি, কুঠার প্রভৃতি তৈরি করা হত। তবে হরপ্পা সভ্যতার মানুষেরা লোহার ব্যবহার জানত না।

হরপ্পা সভ্যতার মৃৎশিল্পের পরিচয় দাও।

ঘর-গৃহস্থালির ব্যবহারের জন্য হরপ্পা সভ্যতায় মাটির তৈরি সাদামাটা জিনিসপত্র তৈরি করা হত। মাটির পাত্রগুলিতে লাল রং লাগিয়ে উজ্জ্বল কালো রঙের নকশা আঁকা হত। এই লাল-কালো মাটির পাত্রগুলি হালকা হত। থালা, বাটি, রান্নার বাসন, জালা জাতীয় পাত্র মাটি দিয়ে তৈরি হত।

হরপ্পা সভ্যতার কারিগরি শিল্প হিসেবে ইটশিল্প কেমন ছিল, তা লেখো।

হরপ্পা সভ্যতায় কারিগরি শিল্পের বিভিন্ন দিক বিকশিত হয়েছিল। এর মধ্যে ইটশিল্প ছিল অন্যতম। ইট মাটি দিয়ে তৈরি করে রোদে শুকোনো হত। আবার আগুনে পুড়িয়েও ইট তৈরি করা হত। পাকা ইটগুলি দিয়ে বড়ো বড়ো বাড়িঘর তৈরি করা হত।

সিন্ধু সভ্যতায় কীভাবে সমাধি দেওয়া হত?

অথবা, হরপ্পা সভ্যতার মৃতদেহ সৎকার ব্যবস্থা সম্পর্কে কী জানো লেখো?

সিন্ধু সভ্যতায় মানুষের মৃত্যুর পর মৃতদেহের মাথা উত্তর দিকে রেখে তাকে সমাধি দেওয়া হত। সমাধিতে মৃত ব্যক্তির ব্যবহৃত নানা দ্রব্য যেমন – গয়না, মাটির পাত্র প্রভৃতি রেখে দেওয়া হত। কালিবঙ্গানে একটি ইটের তৈরি সমাধিক্ষেত্র পাওয়া গেছে।

তাম্র-প্রস্তর যুগে মানুষের জীবনে দুটি উল্লেখযোগ্য পরিবর্তনের উদাহরণ দাও।

তাম্র-প্রস্তর যুগে মানুষের জীবনে দুটি উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন ছিল –

  • তারা পাথরের বদলে তামার হাতিয়ার ব্যবহার করে।
  • নদীর ধারে তারা নগর গড়ে তোলে।

তাম্র-ব্রোঞ্জ যুগে রাষ্ট্রের উৎপত্তি হল কীভাবে?

তাম্র-ব্রোঞ্জ যুগে গোষ্ঠীভিত্তিক সমাজ গড়ে ওঠে। নানা কারণে এই গোষ্ঠীগুলির মধ্যে সংঘর্ষ হত। তাই নিজেদের নিরাপত্তার জন্য মানুষ তাদের গোষ্ঠীর নেতা নির্বাচন করত। পরে তাঁরাই হলেন রাজা এবং তাঁর এলাকা হল রাষ্ট্র।

সিন্ধু নদীর তীরে হরপ্পা সভ্যতা কেন গড়ে উঠেছিল?

সিন্ধু নদী ও তার শাখানদীগুলিতে পর্যাপ্ত জলের জোগান ছিল। সেই জল সিন্ধুবাসীরা পান করত, কৃষিজমিতে জলসেচ করত, সিন্ধু উপত্যকায় উর্বর জমি ছিল। যে জমিতে তারা চাষবাস করত। এছাড়া জলপথে স্থানীয়ভাবে এবং পশ্চিম এশিয়া সভ্যতাগুলির সঙ্গে ব্যাবসাবাণিজ্য করার সুযোগ ছিল। সেকারণে সিন্ধু নদের তীরে হরপ্পা সভ্যতা গড়ে উঠেছিল।

সভ্যতা গড়ে উঠতে গেলে কোন্ কোন্ বিষয় থাকা জরুরি?

একটি সভ্যতা গড়ে উঠতে গেলে একাধিক বিষয়ের জোগান থাকা অত্যন্ত জরুরি। যেমন বসবাসযোগ্য প্রাকৃতিক পরিবেশ, পর্যাপ্ত জল, স্থলপথে যোগাযোগের সুবিধা, প্রশাসন ব্যবস্থা ইত্যাদি। উর্বর জমি, জলপথ ও মানুষের নিরাপত্তা, সুষ্ঠ উল্লেখ্য এইসব সুযোগ-সুবিধাগুলি ছিল বলেই ভারতীয় উপমহাদেশে প্রাচীন মেহেরগড় সভ্যতা ও হরপ্পা সভ্যতা গড়ে উঠেছিল।

মেহেরগড়ের সমাধি সম্পর্কে লেখো।

অথবা, মেহেরগড় সভ্যতায় সমাধি কীভাবে দেওয়া হত?

মেহেরগড় সভ্যতায় মৃতদেহগুলি সোজাসুজি অথবা কাত করে শুইয়ে সমাহিত করা হত। মৃতের সঙ্গে রাখা হত তার ব্যবহৃত বিভিন্ন জিনিস, যথা – শাঁখ, গয়নাগাটি, কুড়ুল ইত্যাদি।

আদিম মানুষ কীভাবে সভ্য হল?

যত দিন গড়িয়েছে ততই আদিম মানুষ সভ্য হয়েছে। নব্য প্রস্তর যুগে যখন তারা কৃষিকাজ শেখে এবং চাকার ব্যবহার শেখে এবং ঘরবাড়ি বানাতে শেখে তখন থেকে তাদের আর পিছনে তাকাতে হয়নি। ক্রমে তারা ভাষা শিখেছে। গৃহস্থালির বিভিন্ন প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র তৈরি করতে শিখেছে। ব্যাবসায় তাদের হাতেখড়ি হয়েছে। তাম্র-প্রস্তর যুগে তাদের জীবনে। আরও পরিবর্তন হয়। এযুগে তারা লেখাপড়া শিখেছে। এইভাবে আদিম মানুষরা ক্রমান্বয়ে সভ্য হয়ে উঠেছিল।

মেহেরগড় সভ্যতার 33টি পর্ব উল্লেখ করো।

মেহেরগড় সভ্যতার 3টি পর্ব ছিল, যথাক্রমে –

  • প্রথম পর্ব – আনুমানিক খ্রিস্টপূর্ব 7000 থেকে খ্রিস্টপূর্ব 5000 অব্দ পর্যন্ত।
  • দ্বিতীয় পর্ব – আনুমানিক খ্রিস্টপূর্ব 5000 থেকে খ্রিস্টপূর্ব 4000 অব্দ পর্যন্ত।
  • তৃতীয় পর্ব – আনুমানিক খ্রিস্টপূর্ব 4300 থেকে খ্রিস্টপূর্ব 3800 অব্দ পর্যন্ত।

মহেন-জো-দারোয় প্রাপ্ত পুরোহিত রাজার মূর্তিটি কেমন ছিল?

মহেন-জো-দারোয় প্রাপ্ত রাজার মূর্তিটির চোখ ছিল আধবোজা, চুল ছিল আঁচড়ানো, গালে চাপদাড়ি ছিল; কপালে ও ডান বাহুতে একটা করে পাথর বসানো পটি বাঁধা ছিল এবং মূর্তিটির বাম কাঁধ থেকে একটি চাদর ঝুলছিল।

মহেন-জো-দারো থেকে পাওয়া জনৈক ব্যক্তির আবক্ষ মূর্তিকে পুরোহিত রাজা মনে করার কারণ কী?

সমসাময়িক অন্যান্য সভাতায়, যেমন মেসোপটেমিয়ায় ‘পুরোহিত রাজা’ ধারণার অস্তিত্ব ছিল। যেহেতু মেসোপটেমিয়া এবং হরপ্পা সভ্যতার মধ্যে বাণিজ্যিক তথা সাংস্কৃতিক আদানপ্রদান ছিল সেহেতু হরপ্পায় পাওয়া পুরুষ মূর্তিটিকে মেসোপটেমিয়ার অনুকরণে পুরোহিত রাজা নামে অভিহিত করা হয়েছে।

হরপ্পা সভ্যতাকে প্রায়-ইতিহাস যুগের সভ্যতা বলা হয় কেন?

হরপ্পা সভ্যতাকে প্রায়-ইতিহাস যুগের সভ্যতা বলা হয়, কারণ এযুগের মানুষ লিপির ব্যবহার জানত। তবে সে লিপি আজ পর্যন্ত পাঠোদ্ধার করা সম্ভব হয়নি।

হরপ্পা সভ্যতা অনেকগুলি কেন্দ্র নিয়ে গড়ে উঠেছিল। এগুলির মধ্যে অন্তত চারটি স্থানের নাম লেখো।

হরপ্পা সভ্যতার অন্তর্গত চারটি ক্ষেত্রের (বা শহর বা প্রত্নকেন্দ্র) নাম হল – হরপ্পা, মহেন-জো-দারো, লোথাল ও কালিবঙ্গান।

সিটাডেল বলতে কী বোঝো?

হরপ্পা সভ্যতার অন্তর্গত প্রত্ননগরগুলি দুটি ভাগে বিভক্ত ছিল। যথা – উচ্চশহর বা দুর্গ এলাকা এবং নিম্নশহর। এই উচ্চ শহরগুলিকেই বলা হত সিটাডেল। এগুলি ছিল সুরক্ষিত অঞ্চল। এখানে বড়ো বড়ো বাড়ি, স্নানাগার, শস্যাগার ইত্যাদি নির্মিত হত। খুব সম্ভব এখানে উচ্চবিত্তরা ও প্রশাসনিক কর্মকর্তারা বসবাস করতেন।

হরপ্পা সভ্যতার মানুষ কোন্ কোন্ ধাতুর ব্যবহার জানত?

হরপ্পা সভ্যতার মানুষ তামা, ব্রোঞ্জ, সিসা, সোনা, রুপো প্রভৃতি ধাতুর ব্যবহার জানত। তার অনেক প্রমাণ পাওয়া গেছে। সাধারণত এই ধাতুগুলি মূর্তি, তৈজসপত্র, যন্ত্র ও অলংকার তৈরির কাজে ব্যবহার করা হত।

হরপ্পা ও মেসোপটেমিয়া সভ্যতার মধ্যে বাণিজ্যিক সম্পর্ক কীরকম ছিল তা উল্লেখ করো।

হরপ্পা ও সমকালীন পশ্চিম এশীয় সভ্যতা মেসোপটেমিয়ার মধ্যে যে বাণিজ্যিক সম্পর্ক ছিল তার প্রমাণ পাওয়া গিয়েছে। মেসোপটেমিয়ায় প্রাপ্ত ২৩টি হরপ্পা সিলমোহর তারই ইঙ্গিত দেয়। জানা যায় যে, সেখান থেকে হরপ্পায় আসত আকীক, ক্যালসিডনি, লাল আকীক প্রভৃতি মূল্যবান পাথর। অন্যদিকে এখান থেকে সেখানে যেত সিন্ধম বা তুলো।

মহেন-জো-দারোতে কাপড় বানানোর নজির কীভাবে প্রমাণ করবে?

মহেন-জো-দারোতে পোড়া মাটির তৈরি একটি পুরুষ মূর্তি পাওয়া গেছে। মূর্তিটির গায়ে একটি সুন্দর কারুকাজ করা চাদর ছিল। এটি দেখে মনে করা হয় যে, মহেন-জো-দারোতে কাপড় বোনার নজির ছিল।

সিলমোহরগুলি থেকে হরপ্পা সভ্যতার কোন্ দুটি বিষয়ে জানতে পারা যায়?

হরপ্পা সভ্যতা থেকে অনেক সিলমোহর পাওয়া গেছে। সেগুলি থেকে এই সভ্যতার ব্যবসাবাণিজ্য তথা অর্থনীতি ও ধর্মবিশ্বাস সম্পর্কে জানতে পারা যায়।

সিলমোহর কী?

হরপ্পা সভ্যতা থেকে অনেক সিলমোহর পাওয়া গেছে। ঐতিহাসিকগণ মনে করেন এই সিলমোহরগুলি দিয়ে সেযুগে বাণিজ্যিক লেনদেন হত এবং বিভিন্ন দ্রব্যের গুণমান নির্ধারণ করা হত। এগুলি সাধারণত তৈরি হত একধরনের নরম পাথর দিয়ে। তাতে নানা লিপি, সাংকেতিক চিহ্ন ও পশুর ছবি খোদাই করা হত।

লোথাল কেন বিখ্যাত ছিল?

লোথাল ছিল হরপ্পা সভ্যতার একটি উল্লেখযোগ্য প্রত্ননগর। এখানে একটি জাহাজঘাটা বা বন্দরের নিদর্শন পাওয়া গেছে। পণ্ডিতগণ মনে করেন এই বন্দর দিয়ে পশ্চিম এশীয় সভ্যতাগুলির সঙ্গে সিন্ধুসভ্যতার বাণিজ্যিক লেনদেন হত। এই বন্দর জাহাজ রাখা, জাহাজ বানানো ও মেরামতির কাজে ব্যবহার করা হত।

হরপ্পা সভ্যতার লিপিতে কতগুলি চিহ্ন রয়েছে? এই লিপিগুলি কীভাবে লেখা হত?

হরপ্পা সভ্যতার মানুষ লিখতে পারতেন। তাঁদের লিপি পাওয়া গেছে। যাতে 375-400টির মতো সাংকেতিক চিহ্ন ব্যবহার করা হয়েছে। এই লিপিগুলি ডানদিক থেকে বামদিকে লেখা হত।

হরপ্পা সভ্যতায় মাতৃপুজোর চল ছিল বলে তোমার কেন মনে হয়?

হরপ্পা সভ্যতায় খননকার্য চালিয়ে প্রত্নতত্ত্ববিদগণ অনেকগুলি নারীমূর্তি আবিষ্কার করেছেন। এগুলির উপাদান ছিল পোড়ামাটি ও ধাতু (ব্রোঞ্জ)। মূর্তিগুলি দেখে পণ্ডিতগণ অনুমান করেছেন যে সেযুগের মানুষ মাতৃপুজোয় বিশ্বাসী ছিল।

পুরোহিত রাজা – টীকা লেখো।

মহেন-জো-দারো প্রত্নকেন্দ্র থেকে পোড়ামাটির তৈরি একটি পুরুষের আবক্ষমূর্তি আবিষ্কৃত হয়েছে। যার মুখে দাড়ি আছে। শরীরে জড়ানো আছে কারুকাজ করা দামি পোশাক। এছাড়া তাঁর অঙ্গে রয়েছে বিভিন্ন অলংকার। পণ্ডিতগণ এই মূর্তিটিকে পুরোহিত রাজা বলে মনে করেন। যিনি ছিলেন হরপ্পা সাম্রাজ্যের একজন শাসক।

আদি শিব সম্পর্কে কী জানো?

হরপ্পা সভ্যতায় খননকার্য চালিয়ে অনেক সিলমোহর পাওয়া গেছে। এমনই একটি সিলমোহরে একজন পুরুষ মূর্তি খোদিত হয়েছে। এই মূর্তির চারপাশে রয়েছে বেশ কিছু | বন্যপ্রাণী। তাঁর তিনটি মাথা। মাথায় রয়েছে পশু সিং-এর মুকুট। তিনি জোড়াসনে বসে আছেন। অনেকেই এই পুরুষ মূর্তিটিকে একজন দেবতা বলে দাবি করেছেন। এ প্রসঙ্গে স্যার জন মার্শালের মত ভিন্ন। তিনি একে আদিশিবের সঙ্গে তুলনা করেছেন।


আজকের এই আর্টিকেলে আমরা ষষ্ঠ শ্রেণীর ইতিহাসের তৃতীয় অধ্যায়, “ভারতীয় উপমহাদেশের প্রাচীন ইতিহাসের ধারা (প্রথম পর্যায় : আনুমানিক খ্রিস্টপূর্ব ৭০০০-১৫০০ অব্দ)” অধ্যায়ের গুরুত্বপূর্ণ অতিসংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর নিয়ে আলোচনা করেছি। এই প্রশ্নগুলো ষষ্ঠ শ্রেণীর শিক্ষার্থীদের পরীক্ষার প্রস্তুতি এবং প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষায় সহায়ক হবে, কারণ এগুলো প্রায়ই পরীক্ষায় আসে। আশা করি, এই নিবন্ধটি আপনাদের উপকারে এসেছে। যদি আপনার কোনো প্রশ্ন বা মতামত থাকে, তবে টেলিগ্রামে যোগাযোগ করতে পারেন। আপনাদের প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার জন্য আমি সর্বদা প্রস্তুত। ধন্যবাদ!

Please Share This Article

Related Posts

ষষ্ঠ শ্রেণী – ইতিহাস – নমুনা প্রশ্ন ও উত্তরপত্র (Sample Questions with Answers)

ষষ্ঠ শ্রেণী – ইতিহাস – নমুনা প্রশ্ন ও উত্তরপত্র (Model Question)

ভারত ও সমকালীন বহির্বিশ্ব (খ্রিস্টীয় সপ্তম শতকের প্রথম ভাগ পর্যন্ত) – রচনাধর্মী প্রশ্নোত্তর

ষষ্ঠ শ্রেণী – ইতিহাস – ভারত ও সমকালীন বহির্বিশ্ব (খ্রিস্টীয় সপ্তম শতকের প্রথম ভাগ পর্যন্ত) – রচনাধর্মী প্রশ্নোত্তর

ভারত ও সমকালীন বহির্বিশ্ব (খ্রিস্টীয় সপ্তম শতকের প্রথম ভাগ পর্যন্ত) – সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর

ষষ্ঠ শ্রেণী – ইতিহাস – ভারত ও সমকালীন বহির্বিশ্ব (খ্রিস্টীয় সপ্তম শতকের প্রথম ভাগ পর্যন্ত) – সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর

About The Author

Solution Wbbse

Tags

মন্তব্য করুন

SolutionWbbse

"SolutionWbbse" শিক্ষার্থীদের জন্য একটি অনলাইন অধ্যয়ন প্ল্যাটফর্ম। এখানে প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার প্রস্তুতি, মাধ্যমিক পরীক্ষার জন্য গাইডলাইন, এবং বিভিন্ন বিষয়ে পড়াশোনার সাহায্য প্রদান করা হয়। আমাদের মূল লক্ষ্য হলো ইন্টারনেটের মাধ্যমে সকল বিষয়ের শিক্ষণীয় উপকরণ সহজেই সকল শিক্ষার্থীর কাছে পৌঁছে দেওয়া।

Editor Picks

তাম্রলিপ্ত জাতীয় সরকার সম্পর্কে টীকা লেখো।

জাতীয় কংগ্রেসের অভ্যন্তরে বামপন্থী চিন্তাধারা বিকশিত হয়েছিল কেন?

বামপন্থী আন্দোলনের বিকাশে মানবেন্দ্রনাথ রায় কীরূপ ভূমিকা নিয়েছিলেন?

অধঃক্ষেপণ কাকে বলে? অধঃক্ষেপণের রূপভেদ গুলি আলোচনা করো।

মিরাট ষড়যন্ত্র মামলা সম্পর্কে টীকা লেখো।