আজকের আর্টিকেলে আমরা ষষ্ঠ শ্রেণীর ইতিহাসের প্রথম অধ্যায়, ‘ইতিহাসের ধারণা’ -এর গুরুত্বপূর্ণ অতিসংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর নিয়ে আলোচনা করব। এই প্রশ্নগুলো ষষ্ঠ শ্রেণীর শিক্ষার্থীদের পরীক্ষার প্রস্তুতির জন্য যেমন সহায়ক, তেমনি বিভিন্ন প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার জন্যও কার্যকর। কারণ, ষষ্ঠ শ্রেণী থেকে শুরু করে চাকরির পরীক্ষায় এই ধরনের প্রশ্ন প্রায়ই দেখা যায়।
নদীমাতৃক সভ্যতা বলতে কী বোঝায়?
প্রাচীনকালে মানুষ নদীর জলকে সেচের কাজে ব্যবহার করে নদী উপত্যকাগুলিতে চাষবাস শুরু করে। সেখানে তারা পশুপালনও শুরু করে। ক্রমে কৃষিকে কেন্দ্র করে ওইসব স্থানে এক একটি মানব সভ্যতা (যেমন-সিন্ধু সভ্যতা) গড়ে ওঠে। যেহেতু সভ্যতাগুলি নদীকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছিল সেজন্য এই সভ্যতাকে বলা হয় নদীমাতৃক সভ্যতা।
জেনে রাখো – ভারতের তিনদিকে সমুদ্র এবং উত্তরদিকে হিমালয় পর্বত অবস্থান করার ফলে বিদেশিরা খুব সহজে প্রাচীন ভারতে প্রবেশ করতে পারেনি। আবার অন্যদিকে হিমালয় পর্বতের গিরিপথগুলির মধ্যদিয়ে বিদেশিরা ভারতে প্রবেশ করে এখানে মিশ্র সত্যতার জন্ম দিয়েছে, পরে ভারতে আসার জলপথ আবিষ্কার হওয়ার পর বহু বিদেশি শক্তি ভারতে প্রবেশ করেছিল।
সমতল অঞ্চলের লোকেরা খাদ্য হিসেবে ভাত গ্রহণ করে কেন?
সমতল অঞ্চলে নানা কারণে ধান চাষ বেশি হয়। এর ফলে এই অঞ্চলের লোকেরা ভাত প্রধান খাদ্য হিসেবে গ্রহণ করে।
মনে রেখো – প্রাচীন হিন্দু বিশ্বতত্ত্ববিদদের মতে, জম্বুদ্বীপের নয়টি দ্বীপ ছিল, তার মধ্যে একটি ভারতবর্ষ।
আর্যাবর্ত বলতে কী বোঝায়?
ভারতের উত্তর অংশে যেখানে আর্যরা বাস করত সেই অঞ্চলকে আর্যাবর্ত বলা হত। আর্যদের বাসস্থান এক জায়গায় স্থির ছিল না, নানা সময়ে পরিবর্তন হয়েছে। এক সময় সারা ভারতে তারা বাস করত।
দাক্ষিণাত্য বলতে কী বোঝায়?
বিন্ধ্য পর্বতের দক্ষিণ ভাগকে অর্থাৎ বিন্ধ্য থেকে কন্যা- কুমারিকা পর্যন্ত অঞ্চলকে দাক্ষিণাত্য বলা হয়।
জান কি? – ভারতবর্ষের ইতিহাসে হিমালয় পর্বতের গভীর প্রভাব দেখা যায়। ভারতের সংস্কৃতি, আবহাওয়া, প্রতিরক্ষা, সত্যতাতে হিমালয় পর্বত নানা প্রভাব ফেলেছে। তাই মিশরকে যেমন ‘নীলনদের দান’ বলা হয়, তেমনই ভারতকে ‘হিমালয়ের দান’ বলা হয়।
কোন্ অঞ্চলকে দ্রাবিড় দেশ বলা হত?
দ্রাবিড়রা বাস করত ভারতের দক্ষিণ দিকে। এই দক্ষিণ দিককে দাক্ষিণাত্য বলা হয়। কাবেরী নদীর দক্ষিণ অংশকে তাই দ্রাবিড় দেশ বলা হত।
তুষার যুগ কাকে বলে?
লক্ষ লক্ষ বছর আগে পৃথিবী বরফে ঢাকা ছিল; এই দীর্ঘ সময় পৃথিবী বরফে ঢাকা ছিল বলে এই সময়কে তুষার বা বরফের যুগ বলা হয়। পৃথিবীতে মোট চারবার তুষার যুগ আসে।
তামা ও ব্রোঞ্জের যুগ কাকে বলে?
যে যুগে মানুষ তামা ও ব্রোঞ্জের তৈরি বিভিন্ন পাত্র, যন্ত্রপাতি ও হাতিয়ার ব্যবহার করত সেই যুগকে বলা হয় তামা ও ব্রোঞ্জের যুগ।
প্রাক্-ঐতিহাসিক যুগ কাকে বলে?
ইতিহাসে একটা সময়ের কথা অনুমান করে নিতে হয়, যখন মানুষ লিখতে পারত না। এই সময়কে প্রাক্- ঐতিহাসিক যুগ বলা হয়।
প্রায়-ঐতিহাসিক যুগ কাকে বলে?
এক সময়ে মানুষ লিখতে শিখেছিল, সেই সময়ের অনেক লেখা পাওয়া যায়, কিন্তু সেগুলির পাঠোদ্ধার করা যায় না। পুরোনো দিনের এই সময়কে প্রায়-ঐতিহাসিক যুগ বলা হয়।
ঐতিহাসিক যুগ কাকে বলে?
যে সময়ের লেখা পাওয়া যায় ও পড়া যায় এবং তার থেকে মানুষ ও তাদের জীবনযাপন সম্পর্কে অনেক কথা জানা যায়, পুরোনো দিনের সেই সময়কে ঐতিহাসিক যুগ বলা হয়।
ইতিহাস কাকে বলে?
মানুষের জন্মলগ্ন থেকে আজ পর্যন্ত মানুষের জীবনযাত্রার ধারাবাহিক বিবরণকে ইতিহাস বলে।
জেনে রাখো – প্রাক্-ইতিহাস = লিপির আবিষ্কার হয়নি; প্রায়-ইতিহাস = লিপির আবিষ্কার হয়েছে, কিন্তু তার পাঠোদ্ধার করা আজও সম্ভব হয়নি; ইতিহাস = লিপির আবিষ্কার হয়েছে এবং তার পাঠোদ্ধার করা সম্ভব হয়েছে।
সময়ের হিসাব কীভাবে করা যায়?
সাল-তারিখ, বছর-অব্দ প্রভৃতি দিয়ে সময়ের হিসাব করা হয়।
খ্রিস্টপূর্বাব্দ কাকে বলে?
জিশুখ্রিস্টের জন্মের আগের সময়কে খ্রিস্টপূর্বাব্দ (BC = Before Christ) বলা হয়।
খ্রিস্টাব্দ কাকে বলে?
জিশুখ্রিস্টের জন্মকে ধরে যে-অব্দ বা সাল গণনা করা হয় তাকে খ্রিস্টাব্দ (AD = Anno Domini) বলা হয়।
শতাব্দ ও সহস্রাব্দ কী?
একশো বছরকে শতাব্দ বা শতাব্দী এবং হাজার বছরকে একসঙ্গে সহস্রাব্দ বলা হয়।
প্রত্নতাত্ত্বিক কাদের বলে?
দীর্ঘদিন ধরে মাটির নীচে চাপা পড়ে থাকা পুরোনো দিনের উপাদানগুলিকে যাঁরা খুঁজে বের করেন এবং ইতিহাস রচনার কাজে সেগুলিকে যথাযথভাবে ব্যবহার করেন তাঁদের প্রত্নতাত্ত্বিক বলে।
ইতিহাসের উপাদান কাকে বলে?
প্রাকৃতিক বা অন্য কোনো কারণে মাটির নীচে চাপা পড়ে যাওয়া মানুষের ব্যবহার করা নানা জিনিস, মুদ্রা, গয়না, অস্ত্রশস্ত্র, মূর্তি প্রভৃতি ইতিহাস রচনা করতে সাহায্য করে। এগুলিকেই ইতিহাসের উপাদান বলে।
প্রত্নতাত্ত্বিক উপাদান কাকে বলে?
বহুকাল পূর্বে মাটির নীচে চাপা পড়ে যাওয়া উপাদান গুলি যখন উদ্ধার হয় তাকে প্রত্নতাত্ত্বিক উপাদান বলে।
জান কি? – প্রাচীনকালের ইতিহাসের অন্যতম উপাদান হল গুহাগাত্রে অঙ্কিত জীবজন্তু, পশু শিকার ও যুদ্ধ কাহিনির চিত্র।
প্রত্নতাত্ত্বিক উপাদানগুলি কী কী?
প্রত্নতাত্ত্বিক উপাদানগুলি হল – প্রত্নবস্তু, লেখমালা, মুদ্রা, স্থাপত্য-ভাস্কর্য, চিত্রকলা ইত্যাদি।
শিলালেখ কাকে বলে?
পুরোনো দিনের যে সকল লেখাগুলি পাথরের গায়ে খোদাই করা আছে, সেই লেখাগুলিকে শিলালেখ বলে।
প্রশস্তি কাকে বলে?
প্রশস্তি অর্থাৎ গুণগান করা। অনেক শাসকের গুণগান লেখ হিসেবে খোদাই করা হত, এগুলিকে প্রশস্তি বলে।
প্রাচীন ভারতের চিত্রের নমুনা পাওয়া যায় এমন দুটি গুহার নাম লেখো।
প্রাচীন ভারতের চিত্রের নমুনা পাওয়া যায় এমন দুটি গুহার নাম – মধ্যপ্রদেশের ভূপালের ভীমবেটকা ও মহারাষ্ট্রের ঔরঙ্গাবাদের অজন্তা।
মুদ্রা থেকে কী জানা যায়?
মুদ্রা থেকে রাজার নাম, বংশ পরিচয়, মূর্তি, রাজ্যসীমা, রাজত্বকাল, ধর্মবিশ্বাস, শিল্পের প্রতি গভীর অনুরাগ, রাজ্যের উন্নতি এবং অর্থনৈতিক পরিকাঠামো প্রভৃতি কথা জানা যায়।
প্রাচীন ভারতের ইতিহাস রচনার ক্ষেত্রে তিন ধরনের বিদেশি বিবরণ কী কী?
প্রাচীন ভারতের ইতিহাস রচনার ক্ষেত্রে তিন ধরনের বিদেশি বিবরণ হল –
- ক. গ্রিক বিবরণ,
- খ. রোমান বিবরণ ও
- গ. চিনা পর্যটকদের বিবরণ।
সাহিত্যিক উপাদান কাকে বলে?
প্রাচীন ভারতের ইতিহাস রচনার ক্ষেত্রে যেসব সাহিত্য সাহায্য করে থাকে সেগুলিকে সাহিত্যিক উপাদান বলে। যেমন – রামায়ণ, মহাভারত।
আজকের আর্টিকেলে আমরা ষষ্ঠ শ্রেণীর ইতিহাসের প্রথম অধ্যায়, “ইতিহাসের ধারণা” থেকে গুরুত্বপূর্ণ অতিসংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর নিয়ে আলোচনা করেছি। এই প্রশ্নগুলো ষষ্ঠ শ্রেণীর শিক্ষার্থীদের পরীক্ষার প্রস্তুতিতে সহায়ক হবে এবং প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার জন্যও অত্যন্ত কার্যকর, কারণ এই ধরনের প্রশ্ন প্রায়ই পরীক্ষায় আসে। আশা করি, এই নিবন্ধটি আপনাদের উপকারে এসেছে। যদি কোনো প্রশ্ন বা মতামত থাকে, তাহলে টেলিগ্রামে যোগাযোগ করতে পারেন। আপনাদের প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার জন্য আমি সবসময় প্রস্তুত। ধন্যবাদ!