এখনই আমাদের Telegram Community গ্রুপে যোগ দিন।। এখানে WBBSE বোর্ডের পঞ্চম শ্রেণি থেকে দশম শ্রেণির যেকোনো বিষয়ভিত্তিক সমস্যা শেয়ার করতে পারেন এবং একে অপরের সাহায্য করতে পারবেন। এছাড়া, কোনও সমস্যা হলে আমাদের শিক্ষকরা তা সমাধান করে দেবেন।

Telegram Logo Join Our Telegram Community

ষষ্ঠ শ্রেণী – ইতিহাস – ইতিহাসের ধারণা – রচনাধর্মী প্রশ্নোত্তর

আজকের এই আর্টিকেলে আমরা ষষ্ঠ শ্রেণীর ইতিহাসের প্রথম অধ্যায়, ‘ইতিহাসের ধারণা’ অধ্যায়ের কিছু রচনাধর্মী প্রশ্নোত্তর নিয়ে আলোচনা করবো। এই প্রশ্নগুলো ষষ্ঠ শ্রেণীর শিক্ষার্থীদের পরীক্ষার প্রস্তুতির জন্য যেমন গুরুত্বপূর্ণ, তেমনি প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার জন্যও সহায়ক। কারণ ষষ্ঠ শ্রেণী এবং চাকরির পরীক্ষায় এই ধরনের প্রশ্ন প্রায়ই আসতে দেখা যায়।

ষষ্ঠ শ্রেণী ইতিহাস – ইতিহাসের ধারণা – রচনাধর্মী প্রশ্নোত্তর
ষষ্ঠ শ্রেণী ইতিহাস – ইতিহাসের ধারণা – রচনাধর্মী প্রশ্নোত্তর

ইতিহাসে নানা রকম সাল-তারিখের ব্যবহার দেখা যায় কেন?

মানুষ যখন থেকে লিখতে শেখে তার পরবর্তীকালের কথা আমরা সহজেই জানতে পারি। এর ফলে অনেক অজানা প্রশ্নের উত্তর পাওয়া সহজ হয়। পূর্বে সময়কে অনুমান করে নিতে হত, এখন সময়ের হিসাব করা সহজ হলেও সমস্যা হল নানা রকম সাল-তারিখ বা অব্দ গণনাকে কেন্দ্র করে। ইতিহাসে নানা রকম অব্দের ব্যবহার শুরু হলে সমস্যা আরও জটিল হয়ে পড়ে। সেসময় কনিষ্কাব্দ, গুপ্তাব্দ, হর্ষাব্দ ইত্যাদি সময় গণনার পদ্ধতি চালু ছিল। আসলে এই অব্দগুলি প্রচলিত হয়েছে রাজাদের বড়ো কোনো ঘটনা বা সিংহাসনে আরোহণকাল সম্বন্ধীয় বিষয়কে কেন্দ্র করে। ভারতবর্ষের অনেক রাজা তাদের সিংহাসনে বসার দিনটি স্মরণীয় করে রাখার জন্য নানা রকমের সাল-তারিখ ব্যবহার করেন। যেমন – কুষাণ সম্রাট কনিষ্ক সিংহাসনে বসে কনিষ্কাব্দ বা শকাব্দ চালু করেন। গুপ্ত সম্রাট প্রথম চন্দ্রগুপ্ত গুপ্তাব্দ, রাজা হর্ষবর্ধন চালু করেন হর্ষাব্দ।

কনিষ্কের মস্তকহীন মূর্তি
কনিষ্কের মস্তকহীন মূর্তি

জেনে রাখো – বিখ্যাত নৃতাত্ত্বিক ড. বিরজা শঙ্কর গৃহ মনে করেন ভারতে ছয়টি নৃতাত্ত্বিক গোষ্ঠীর মানুষ রয়েছে। এরা হল – 1. নিগ্রোবটু, 2. প্রোটো-অস্ট্রোলয়েড, 3. মোঙ্গলয়েড, 4. মেডিটারেনিয়ান, 5. নার্ডিক ও 6. ব্রাকিসিফেলিক। ঐতিহাসিক ভিনসেন্ট স্মিথ ভারতকে নৃতত্ত্বের জাদুঘর বলেছেন।

ভারতের বাইরেও সাল-তারিখের ব্যবহার চোখে পড়ে। যেমন – জিশুখ্রিস্টের জন্মের সময়কালকে ধরে যে-অব্দ বা সাল গণনা হয় তাকে খ্রিস্টাব্দ বলে। সারা বিশ্বে খ্রিস্টাব্দের মাধ্যমে সাল-তারিখের হিসাব করা হয়। আবার অনেক দেশে জিশুখ্রিস্টের জন্মের আগের সময়কাল ধরে বিসি বা খ্রিস্টপূর্বাব্দ ব্যবহার করে।

আমরা ইতিহাস পড়ি কেন?

মানুষের জন্মলগ্ন থেকে আজ পর্যন্ত মানুষের জীবনযাত্রার বিবরণকে ইতিহাস বলে। অতীতের বিভিন্ন বিষয় জানতে, বর্তমানকে বুঝতে এবং ভবিষ্যতের কাজ সঠিক পথে পরিচালিত করতে আমরা ইতিহাস পড়ি।

ইতিহাস পড়ার কারণগুলি হল –

মানুষের উৎপত্তি – বর্তমান মানব প্রজাতির উৎপত্তি হয়েছে প্রায় দু-লক্ষ বছর আগে। প্রায় ২৬ লক্ষ বছর আগে আদিম মানব প্রজাতির জন্ম হয়। এই প্রজাতির সম্বন্ধে জানতে আমাদের ইতিহাস পড়া দরকার।

জীবনযুদ্ধ – আদিম যুগের মানুষদের বেঁচে থাকতে হয়েছে বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগ, যেমন-ভূমিকম্প, ঝড়বৃষ্টি, তুষারপাত, বজ্রপাত এবং হিংস্র প্রাণীদের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করে। এসব জানতে গেলে ইতিহাস পড়তে হবে।

আদিম মানুষের জীবন যুদ্ধ
আদিম মানুষের জীবন যুদ্ধ

সভ্যতার পথে অগ্রসর – আদিম মানুষ ছিল পশুর মতো। তারা সেই অবস্থা থেকে কীভাবে সভ্যতার পথে অগ্রসর হয়েছে তা জানার জন্য ইতিহাস পড়া প্রয়োজন।

টুকরো কথা – তারতের মধ্যবর্তী স্থান দিয়ে বিস্তৃত বিন্ধ্য পর্বত ভারতকে দুই ভাগে ভাগ করেছে। যথা-আর্যাবর্ত ও দাক্ষিণাত্য। বিন্ধ্য পর্বতের উত্তরদিকের অংশ আর্যাবর্ত নামে পরিচিত। প্রাচীনকালে এই অঞ্চলে আর্যরা তাদের বসতি গড়ে তুলেছিল। তাই এই অঞ্চলের নাম ছিল আর্যাবর্ত। পূর্বে আর্যাবর্ত বলতে পুরো উত্তর ভারতকেই বোঝাত। বিন্ধ্য পর্বতের দক্ষিণ দিকের অংশ দাক্ষিণাত্য বা দক্ষিণাবর্ত নামে পরিচিত। এখানে যে – সভ্যতা গড়ে উঠেছিল তা দ্রাবিড় সত্যতা নামে পরিচিত ছিল। এই অঞ্চলের মানুষের ভাষা ছিল দ্রাবিড়। বিন্ধ্য পর্বত থেকে কন্যাকুমারিকা পর্যন্ত এই অঞ্চল বিস্তৃত ছিল।

প্রাচীন ভারতের ইতিহাসের উপাদানের শ্রেণিবিভাগ করো।

ইতিহাস লেখার জন্য যে – সকল প্রমাণপত্র লাগে তাকে ইতিহাসের উপাদান বলে। ইতিহাসের উপাদানগুলিকে মূলত লিখিত এবং অলিখিত – এই দু-ভাগে ভাগ করা যায়।

লিখিত উপাদান –

লিখিত উপাদানগুলি হল – (i) দেশি, (ii) বৈদেশিক।

  • দেশি – দেশীয় সাহিত্যকে আবার ধর্মনিরপেক্ষ সাহিত্য ও ধর্মভিত্তিক সাহিত্য প্রভৃতি ভাগে ভাগ করা যায়।
  • বৈদেশিক – গ্রিক, রোমান ও চৈনিক পর্যটকদের বিবরণ ছিল ভারতের গুরুত্বপূর্ণ বৈদেশিক বিবরণ।

এ ছাড়া লিখিত উপাদান হল – পাথরের গায়ে বা তামার। পাতে লেখা সরকারি নির্দেশ, রাজার লেখ বা প্রশস্তি, পশুর চামড়া ও গাছের ছালে লেখা বিভিন্ন পুথি।

অলিখিত উপাদান –

মাটি খুঁড়ে পাওয়া বিভিন্ন নিদর্শন হল অলিখিত বা প্রত্নতাত্ত্বিক উপাদান। এগুলি চার ভাগে ভাগ করা যায়, যথা – ক. স্থাপত্য-ভাস্কর্য, খ. লেখ, গ. মুদ্রা ও ঘ. ধ্বংসাবশেষ। এ ছাড়া প্রাচীন যুগের হাতিয়ার, যন্ত্রপাতি, চিত্রকলা, সমাধি প্রভৃতি হল অলিখিত উপাদান।

জেনে রাখো – মাটির নীচে পাওয়া প্রত্নতাত্ত্বিক উপাদানগুলি যেমন – মানুষের কঙ্কাল, মানুষের ব্যবহৃত মৃৎপাত্রগুলির বর্ণবিশ্লেষণ, কার্বন-14, ড্রেনড্রোকোনোলজি বিদ্যার সাহায্যে প্রাচীনত্ব নির্ণয় করা হয়। অর্থাৎ মাটির নীচ থেকে পাওয়া জিনিসগুলি কতদিন আগের তা জানতে এইসব পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়।

প্রাচীন ভারতের ইতিহাসের উপাদান হিসেবে ধর্ম- ভিত্তিক সাহিত্যের ভূমিকা বর্ণনা করো।

প্রাচীন ভারতের ইতিহাস রচনার ক্ষেত্রে সাহিত্যিক উপাদান খুবই কম। তবে যেটুকু সাহিত্যিক উপাদান পাওয়া যায়। সেগুলিকে ধর্মভিত্তিক ও ধর্মনিরপেক্ষ এই দুটি শ্রেণিতে ভাগ করা যায়। হিন্দুধর্মকে কেন্দ্র করে প্রাচীন ভারতে যে সমস্ত সাহিত্য গ্রন্থ রচিত হয়েছিল তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল –

  • বৈদিক সাহিত্য – ঋক, সাম, যজু, অথর্ব – এই চারটি বেদ এবং বেদ – এর সংহিতা, ব্রাহ্মণ, আরণ্যক ও উপনিষদ দেশীয় সাহিত্যের উপাদান হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ।
  • ধর্মশাস্ত্র – বেদ, রামায়ণ, মহাভারত প্রভৃতি অনেক গ্রন্থই। ধর্মকে ভিত্তি করে রচিত, যা থেকে ইতিহাসের উপাদান পাওয়া যায়।
  • বৌদ্ধ ও জৈন সাহিত্য – বৌদ্ধ ও জৈন ধর্মগ্রন্থসমূহ, সিংহলের দীপবংশ ও মহাবংশ, বৌদ্ধজাতক, জৈন-ভগবতীসূত্র, আচারঙ্গসূত্র ইত্যাদি গ্রন্থের ঐতিহাসিক মূল্য অপরিসীম।

ইতিহাস রচনায় প্রত্নতাত্ত্বিক উপাদানগুলি লেখো।

মাটি খুঁড়ে যে – সকল নিদর্শন পাওয়া যায় সেগুলিকে ইতিহাসের প্রত্নতাত্ত্বিক উপাদান বলে। ‘প্রত্নতত্ত্ব’ কথাটির অর্থ হল অতীতের বিষয়বস্তু নিয়ে চর্চা।

প্রত্নতাত্ত্বিক উপাদান –

লিপি – প্রাচীনকালে রাজার গুণকীর্তি যেখানে খোদাই থাকত তা লিপি নামে পরিচিত। ইতিহাস রচনায় লিপির গুরুত্ব অপরিসীম। প্রাচীনকালে মানুষ পাথরে বা ধাতুর পাতে লিপি খোদাই করে রাখত। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য লিপি হল – অশোকের শিলালিপি, সমুদ্রগুপ্তের এলাহাবাদ প্রশস্তি, রুদ্রদামনের জুনাগড় লিপি প্রভৃতি। এইসব লিপিগুলি তামা কিংবা পোড়ামাটির ফলকের ওপর লেখা থাকত। এগুলি থেকে রাজাদের গুণাগুণ, রাজত্বকাল, রাজ্যজয়, রাজ্যের সীমানা, ধর্মনীতি ইত্যাদি সম্বন্ধে জানতে পারি।

মুদ্রা – শাসকের ছাপযুক্ত নির্দিষ্টমানের ধাতুখণ্ডকে সাধারণ-ভাবে মুদ্রা বলা হয়। মুদ্রাগুলি সবই ছিল ধাতুর তৈরি। মুদ্রাগুলি হল – বৈদিক যুগে নিষ্ক, পাল যুগের নারায়ণী প্রভৃতি। মুদ্রা থেকে রাজাদের নাম, বংশ পরিচয় এবং রাজত্বকাল ইত্যাদি সম্পর্কে জানা যায়। ব্যাকট্রীয় গ্রিক, শক, পার্থিয়ান, কুষাণদের ইতিহাস রচনার অন্যতম উপাদান হল মুদ্রা।

স্থাপত্য-ভাস্কর্য – পাথর, ধাতু ও পোড়ামাটি খোদাই করে যে – সকল মন্দির, স্তূপ, বিহার, প্রাসাদ, স্মৃতিস্তম্ভ, পশুর মূর্তি বানানো হত সেগুলি হল স্থাপত্য ও ভাস্কর্য।

প্রাচীন স্থাপত্য
প্রাচীন স্থাপত্য

ধ্বংসাবশেষ – ভারতের বিভিন্ন জায়গায় মাটি খুঁড়ে প্রাচীন সভ্যতার ধ্বংসাবশেষ পাওয়া গিয়েছে। যেমন – উত্তর 24 পরগনার বসিরহাট মহকুমা-র বেড়াচাঁপার চন্দ্রকেতুগড়, ‘তক্ষশীলা প্রভৃতি জায়গায় সভ্যতার ধ্বংসাবশেষ থেকে ইতিহাস রচনার জন্য বহু প্রত্ননিদর্শন পাওয়া গেছে।


আজকের এই আর্টিকেলে আমরা ষষ্ঠ শ্রেণীর ইতিহাসের প্রথম অধ্যায়, “ইতিহাসের ধারণা” অধ্যায়ের গুরুত্বপূর্ণ রচনাধর্মী প্রশ্নোত্তর নিয়ে আলোচনা করেছি। এই প্রশ্নগুলো ষষ্ঠ শ্রেণীর শিক্ষার্থীদের পরীক্ষার প্রস্তুতি এবং প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষায় সহায়ক হবে, কারণ এগুলো প্রায়ই পরীক্ষায় আসে। আশা করি, এই নিবন্ধটি আপনাদের উপকারে এসেছে। যদি আপনার কোনো প্রশ্ন বা মতামত থাকে, তবে টেলিগ্রামে যোগাযোগ করতে পারেন। আপনাদের প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার জন্য আমি সর্বদা প্রস্তুত। ধন্যবাদ!

Share via:

মন্তব্য করুন