এই আর্টিকেলে আমরা ষষ্ঠ শ্রেণীর ইতিহাসের দ্বিতীয় অধ্যায়, ‘ভারতীয় উপমহাদেশে আদিম মানুষ (যাযাবর জীবন থেকে স্থায়ী বসতি স্থাপন)’ অধ্যায়ের কিছু অতিসংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর নিয়ে আলোচনা করবো। এই প্রশ্নগুলো ষষ্ঠ শ্রেণীর শিক্ষার্থীদের পরীক্ষার প্রস্তুতির জন্য যেমন গুরুত্বপূর্ণ, তেমনি প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার জন্যও সহায়ক। কারণ ষষ্ঠ শ্রেণী এবং চাকরির পরীক্ষায় এই ধরনের প্রশ্ন প্রায়ই আসতে দেখা যায়।
এপ কাদের বলা হয়?
লক্ষ লক্ষ বছর আগে এক ধরনের শিম্পাঞ্জি ও গোরিলা জাতীয় লেজহীন বড়ো আকারের বানরের মতো প্রাণীকে এপ বলা হত।
আদিম মানুষের সন্ধান কোথায় পাওয়া গেছে?
গবেষক ও প্রত্নতাত্ত্বিকরা আফ্রিকা, এশিয়া ও ইউরোপের নানা জায়গা থেকে আদিম মানুষের মাথার খুলি, কঙ্কাল, হাড়গোড় আবিষ্কার করেছেন। এর থেকে প্রমাণ হয় যে, ওইসব অঞ্চলে আদিম মানুষের বাসস্থান ছিল। সবচেয়ে পুরোনো মানুষের খোঁজ পাওয়া গেছে পূর্ব আফ্রিকাতে।
আদিম মানুষ দেখতে কেমন ছিল?
অথবা, প্রাচীনপ্রস্তর যুগের মানুষের বৈশিষ্ট্য উল্লেখ করো।
আদিম মানুষ শিম্পাঞ্জি, গোরিলা কিংবা বড়ো বানরের মতো দেখতে ছিল। তাদের নাক ছিল চ্যাপটা ও ঠোঁট ছিল পুরু, ওলটানো এবং চোয়াল ছিল শক্ত ও সুগঠিত। তাদের হাত ছিল নীচ পর্যন্ত ঝোলানো।
এপ ও মানুষের মধ্যে প্রধান পার্থক্য কী ছিল?
এপ ও মানুষের মধ্যে প্রধান পার্থক্য ছিল এই যে, মানুষ হাতিয়ার তৈরি করতে পারত, কিন্তু এপরা তা পারত না।
আদিম মানুষ কীভাবে চলত?
আদিম মানুষ প্রথম থেকে কোনোক্রমে সোজা হয়ে দাঁড়াতে পারলেও হাঁটার সময়ে সামনের দিকে ঝুঁকে জবুথবু হয়ে চলত। তখন তাদের হাত হাঁটুর নীচ পর্যন্ত ঝোলানো থাকত।
পুরোনো পাথরের যুগের মানুষের হাতিয়ারগুলি কীরূপ ছিল?
পুরোনো পাথরের যুগে মানুষের হাতিয়ারগুলি ছিল বড়ো, ভারী ও এবড়োখেবড়ো পাথরের।
ভারতীয় উপমহাদেশে পুরোনো পাথরের যুগের কী কী হাতিয়ার পাওয়া গেছে?
ভারতীয় উপমহাদেশে পুরোনো পাথরের যুগে পাওয়া কয়েকটি হাতিয়ার হল – হাতকুঠার, বল্লম, ছুরি, হারপুন, র্যাঁদা প্রভৃতি।
মাঝের পাথরের যুগের মানুষের হাতিয়ারগুলি কীরূপ ছিল?
মাঝের পাথরের যুগের মানুষের হাতিয়ারগুলি ছিল ছোটো ছোটো পাথরের এবং সেগুলি ছিল হালকা ও ধারালো।
মাঝের পাথরের যুগের কয়েকটি হাতিয়ারের নাম করো।
মাঝের পাথরের যুগের কয়েকটি হাতিয়ারের নাম হল তিরধনুক, হারপুন, বড়শি প্রভৃতি।
নতুন পাথরের যুগের মানুষের হাতিয়ারগুলি কীরূপ ছিল?
নতুন পাথরের যুগের মানুষের হাতিয়ারগুলি ছিল অনেক মসৃণ, হালকা ও ধারালো। অর্থাৎ, আগের যুগের তুলনায় হাতিয়ারগুলি অনেক বেশি উন্নত ছিল।
নতুন পাথরের যুগের কয়েকটি হাতিয়ারের নাম করো।
নতুন পাথরের যুগের কয়েকটি হাতিয়ারের নাম হল – ফসল কাটার কাস্তে, কোদাল। এ ছাড়া কুলো, শিলনোড়া, হামানদিস্তা, জাঁতা, হাতুড়ি, বাটালি প্রভৃতি।
আদিম মানুষ হাতিয়ারের প্রয়োজন বোধ করেছিল কেন?
আদিম মানুষ হিংস্র প্রাণীর আক্রমণ থেকে বাঁচতে এবং খাবার সংগ্রহের জন্য হাতিয়ারের প্রয়োজন বোধ করেছিল।
পুরোনো পাথরের যুগ কাকে বলে?
আনুমানিক খ্রিস্টপূর্ব 20 লক্ষ বছর থেকে খ্রিস্টপূর্ব 10 হাজার বছর পর্যন্ত মানবসভ্যতার সময়কালকে পুরোনো পাথরের যুগ বলা হয়।
পুরোনো পাথরের যুগে মানুষ কোথায় বসবাস করত?
পুরোনো পাথরের যুগে মানুষ কখনও খোলা আকাশের নীচে, আবার কখনও গুহায় বসবাস করত।
নতুন পাথরের যুগের দুটি বৈশিষ্ট্য উল্লেখ করো।
নতুন পাথরের যুগের দুটি বৈশিষ্ট্য হল –
- এযুগে মানুষ প্রথম খাদ্য সংগ্রাহক থেকে খাদ্য উৎপাদকে পরিণত হয়েছিল।
- এযুগেই মানুষ স্থায়ীভাবে বসবাস করা ও বসতি বাড়ি তৈরি করতে শিখেছিল।
ভারতীয় উপমহাদেশের কোথায় কোথায় পুরোনো পাথরের যুগের অস্ত্র পাওয়া গেছে?
ভারতীয় উপমহাদেশের কাশ্মীরের সোয়ান উপত্যকা, পাকিস্তানের পাটোয়ার মালভূমি ও হিমাচল প্রদেশের শিবালিক পার্বত্য অঞ্চলে পুরানো পাথরের যুগের অস্ত্র পাওয়া গেছে।
মধ্যপ্রস্তর যুগের দুটি বৈশিষ্ট্য উল্লেখ করো।
মধ্যপ্রস্তর যুগের দুটি বৈশিষ্ট্য হল –
- মধ্যপ্রস্তর যুগের হাতিয়ারগুলি ছিল উন্নত ও মসৃণ।
- এযুগের মানুষরা পূর্বের মতো শিকার করে অথবা বনজঙ্গল থেকে ফলমূল সংগ্রহ করে খাদ্য সংগ্রহ করত।
মাঝের পাথরের যুগ কোন্ সময়কে বলে?
আনুমানিক খ্রিস্টপূর্ব 10 হাজার বছর থেকে খ্রিস্টপূর্ব 8 হাজার বছর পর্যন্ত মানবসভ্যতার সময়কালকে মাঝের পাথরের যুগ বলা হয়।
মাঝের পাথরের যুগে মানুষ কোথায় বসবাস করত?
মাঝের পাথরের যুগে মানুষ ছিল অনেকটা যাযাবরের মতো। তারা এইসময় গুহা থেকে বেরিয়ে ছোটো ছোটো বসতি বানিয়ে সেখানে বসবাস করতে শুরু করেছিল।
মাঝের পাথরের যুগে মানুষ কীভাবে পাত্র বানাত?
খুব সম্ভবত মাঝের পাথরের যুগের মানুষ ঝুড়ি জাতীয় পাত্রের চারধারে মাটির প্রলেপ দিয়ে পাত্র বানাত।
ভীমবেটকা কোথায় অবস্থিত? এর ছবিগুলিতে প্রধানত কোন্ দুটি রং ব্যবহার করা হয়েছিল?
ভীমবেটকা মধ্যপ্রদেশে অবস্থিত। এর ছবিগুলিতে প্রধানত লাল ও সাদা রং ব্যবহার করা হয়েছিল।
নতুন পাথরের যুগ কোন্ সময়কে বলে?
আনুমানিক খ্রিস্টপূর্ব 8 হাজার বছর থেকে খ্রিস্টপূর্ব 4 হাজার বছর পর্যন্ত মানবসভ্যতার সময়কালকে নতুন পাথরের যুগ বলা হয়।
নতুন পাথরের যুগে মানুষ কোথায় বসতি গড়ে তুলেছিল?
নতুন পাথরের যুগে মানুষ যাযাবর জীবন ছেড়ে কুটির বা বাড়ি তৈরি করে স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করেছিল। এই যুগে মানুষ ফসল রক্ষার জন্য জমির কাছে এবং জমিতে জলসেচ ও মাছ ধরার জন্য জলাশয়ের কাছে বসতি গড়ে তুলেছিল।
লুসির কঙ্কাল কবে, কোথায় খুঁজে পাওয়া যায়?
লুসির কঙ্কাল 1974 খ্রিস্টাব্দে আফ্রিকার ইথিয়ো- পিয়ায় হাদার নামক স্থানে খুঁজে পাওয়া যায়।
লুসি কী?
আফ্রিকার ইথিয়োপিয়ার হাদার নামে এক জায়গায় প্রায় 32 লক্ষ বছর আগের একটি ছোটো মেয়ের কঙ্কালের কিছু অংশ পাওয়া গিয়েছিল। এর নাম দেওয়া হয়েছিল লুসি।
ভীমবেটকা গুহা কী জন্য বিখ্যাত?
মধ্যপ্রদেশের ভীমবেটকা গুহার দেয়ালে পুরোনো পাথরের যুগের মানুষের আঁকা বিভিন্ন পশু-পাখির ছবি ও পশুশিকারের দৃশ্য রয়েছে। যা আদিম মানুষের জীবিকা ও শিল্প রসবোধের কথা স্মরণ করায়। এই সমস্ত কারণের জন্য ভীমবেটকা বিখ্যাত।
আলতামিরা গুহা কী জন্য বিখ্যাত?
অথবা, এই গুহা কোন্ দেশে অবস্থিত? এখানে কী পাওয়া যায়?
আলতামিরা গুহা স্পেনে অবস্থিত। এই গুহা বিখ্যাত তার কারণ হল, এই গুহার দেয়ালে আদিম মানুষের আঁকা বিশাল বড়ো একটি ষাঁড়ের ছবি পাওয়া গেছে। যা দেখে সে যুগের মানুষের শিল্প রসবোধের পরিচয় পাওয়া যায়।
হুন্সগি উপত্যকা কী জন্য বিখ্যাত?
অথবা, হুন্সগি কোথায় অবস্থিত? এটি কী জন্য বিখ্যাত?
কর্ণাটকের গুলবর্গা জেলার হুন্সগি উপত্যকায় আদিম মানুষের (হোমো ইরেকটাস প্রকৃতির মানুষ) ব্যবহৃত হাতকুঠার, ছোরা, চাঁছনি প্রভৃতি জিনিস আবিষ্কৃত হয়েছে। এই প্রত্নবস্তুগুলি প্রমাণ করে যে, এখানে একটি পুরোনো পাথরের যুগের সভ্যতা গড়ে উঠেছিল। সে কারণে হুন্সগি উপত্যকা বিখ্যাত।
হুন্সগি উপত্যকার হাতিয়ারগুলি কী কী ছিল?
কর্ণাটকের গুলবর্গা জেলার হুন্সগি উপত্যকার হাতিয়ার – গুলির বেশিরভাগই ছিল পাথরের, যেমন – হাতকুড়ুল, ছোরা, চাঁছুনি প্রভৃতি।
ভারতীয় উপমহাদেশের কোথায় মাঝের পাথরের যুগের হাতিয়ার পাওয়া গেছে?
ভারতীয় উপমহাদেশে উত্তরপ্রদেশের মহাদহা, মধ্যপ্রদেশের আদমগড় প্রভৃতি অঞ্চলে মাঝের পাথরের যুগের হাতিয়ার পাওয়া গেছে।
উপমহাদেশে নতুন পাথরের যুগের মানুষ কীভাবে ফসল উৎপাদন করতে শিখেছিল?
একসময়ে মেয়েরা গাছপালা দেখতে দেখতে বুঝতে পারে কীভাবে বীজ থেকে চারাগাছ হয়, চারাগাছ থেকে বড়ো গাছ হয়। তখন তারা মাটিতে বীজ পুঁতে ফসল উৎপাদন করতে শিখেছিল।
পুরোনো পাথরের যুগে ভারতীয় উপমহাদেশের মানুষ কীভাবে খাদ্য জোগাড় করত?
পুরোনো পাথরের যুগে ভারতীয় উপমহাদেশের মানুষ নিজেদের খাদ্য নিজেরা তৈরি করতে পারত না পশুপালনও তাদের জানা ছিল না। তাই তারা পশুশিকার করে ও ফলমূল জোগাড় করে খাদ্য সংস্থান করত। এর জন্য তাদের নানা জায়গায় ঘুরে ঘুরে দিন কাটাতে হত।
ভারতীয় উপমহাদেশের কোন্ কোন্ অঞ্চল থেকে পুরোনো পাথরের যুগের মানুষের প্রমাণ পাওয়া গেছে?
ভারতীয় উপমহাদেশে কাশ্মীরের সোয়ান উপত্যকা, হিমাচল প্রদেশের শিবালিক পর্বত অঞ্চল, কর্ণাটকের হুন্সগি উপত্যকা, রাজস্থানের দিদওয়ানা, মহারাষ্ট্রের নেভাসা, মধ্যপ্রদেশের নর্মদা উপত্যকা প্রভৃতি অঞ্চল থেকে পুরোনো পাথরের যুগের মানুষের প্রমাণ পাওয়া গেছে।
হোমো স্যাপিয়েন্স কথার অর্থ কী? এরা পশুর মাংস কীভাবে খেত?
হোমো স্যাপিয়েন্স কথার অর্থ বুদ্ধিমান মানুষ। এরা পশুর মাংস আগুনে ঝলসে খেত।
পাথরের যুগকে কত ভাগে ভাগ করা হয়?
পাথরের যুগকে তিন ভাগে যথা – পুরোনো পাথরের যুগ, ভাগ করা হয়। মাঝের পাথরের যুগ, নতুন পাথরের যুগ।
আদিম মানুষরা দলবদ্ধভাবে বসবাস করত কেন?
আদিম মানুষরা দলবদ্ধভাবে বসবাস করত, এর কারণ হল –
- একা থাকা নিরাপদ ছিল না। কারণ পাথরের যুগে হিংস্র জন্তুজানোয়ারদের আক্রমণের ভয় ছিল।
- দলবদ্ধভাবে বাস করলে পশুশিকার করা সহজ হত।
আদিম মানুষ যাযাবর ছিল কেন?
আদিম মানুষ যাযাবর ছিল, কারণ –
- মানবসভ্যতার আদিযুগে (প্রাচীন প্রস্তর যুগে) মানুষের খাদ্যের অভাব ছিল। বিশেষ করে পশু শিকারের সমস্যা ছিল।
- তারা যখন পশুপালন শেখে তখন পশুর খাদ্যের জন্য প্রচুর তৃণভূমির প্রয়োজন দেখা দিত।
এই সমস্যার জন্য তারা একস্থান থেকে অন্যস্থানে দলবেঁধে চলে যেত।
হোমো স্যাপিয়েন্স গোষ্ঠীর মানুষের দুটি বৈশিষ্টা উল্লেখ করো।
হোমো স্যাপিয়েন্স গোষ্ঠীর মানুষের দুটি বৈশিষ্ট্য হল –
- এই মানুষরা ছিল বুদ্ধিমান।
- আনুমানিক 2 লক্ষ 30 হাজার বছর আগে তাদের পৃথিবীতে আবির্ভাব ঘটে।
আজকের এই আর্টিকেলে আমরা ষষ্ঠ শ্রেণীর ইতিহাসের দ্বিতীয় অধ্যায়, “ভারতীয় উপমহাদেশে আদিম মানুষ (যাযাবর জীবন থেকে স্থায়ী বসতি স্থাপন)” অধ্যায়ের গুরুত্বপূর্ণ অতিসংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর নিয়ে আলোচনা করেছি। এই প্রশ্নগুলো ষষ্ঠ শ্রেণীর শিক্ষার্থীদের পরীক্ষার প্রস্তুতি এবং প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষায় সহায়ক হবে, কারণ এগুলো প্রায়ই পরীক্ষায় আসে। আশা করি, এই নিবন্ধটি আপনাদের উপকারে এসেছে। যদি আপনার কোনো প্রশ্ন বা মতামত থাকে, তবে টেলিগ্রামে যোগাযোগ করতে পারেন। আপনাদের প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার জন্য আমি সর্বদা প্রস্তুত। ধন্যবাদ!