অষ্টম শ্রেণি – বাংলা – বনভোজনের ব্যাপার – রচনাধর্মী প্রশ্ন ও উত্তর

Rahul

আজকের এই আর্টিকেলে অষ্টম শ্রেণীর বাংলা বিষয়ের পঞ্চম অধ্যায়বনভোজনের ব্যাপার’ নিয়ে আলোচনা করবো। বিশেষভাবে রচনাধর্মী প্রশ্ন ও উত্তরগুলো তুলে ধরব, যা অষ্টম শ্রেণীর বাংলা পরীক্ষার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, এই প্রশ্নগুলো প্রায়ই অষ্টম শ্রেণির বাংলা পরীক্ষায় আসে।

বনভোজনের ব্যাপার – রচনাধর্মী প্রশ্ন ও উত্তর
বনভোজনের ব্যাপার – রচনাধর্মী প্রশ্ন ও উত্তর
Contents Show

এই গল্পটির নাম বনভোজন না হয়ে বনভোজনের ব্যাপার হল কেন?

নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায়ের ‘বনভোজনের ব্যাপার’ গল্পটি বনভোজনের পরিকল্পনা, যাত্রাপথের বর্ণনা, বনভোজনের নির্মম পরিণতির মজাদার হাস্যরস পরিবেশনে সমাপ্ত হয়েছে। বনভোজনের পরিকল্পনার সূত্রে গল্প আরম্ভ। নানারকমের খাওয়াদাওয়ার ব্যবস্থা করার আয়োজন এবং চারজনের ভাবনার বিষয়বস্তু হয়ে ওঠে বনভোজন। টেনিদার নেতৃত্বে হাবুল সেন, প্যালা ও ক্যাবলা বনভোজনে যাওয়ার আলোচনা শুরু করে। টেনিদা পেটুক, অলস, ভীরু প্রকৃতির; কিন্তু সবার উপর খবরদারি করায় তার জুড়ি নেই। পটলডাঙার ছেলে হওয়ায় সে বারেবারে দুঃসাহসের পরিচয় দিতে তৎপর হয়, কিন্তু বারেবারে ধরা পড়ে তার ভীতু প্রকৃতির স্বভাব। ট্রেন থেকে নেমে জিনিসপত্র নিয়ে বনভোজনে যাওয়ার সময় নানা বিপত্তি এবং ক্যাবলার মামার বাড়ির বাগানে পৌঁছে কীভাবে বনভোজন পন্ড হল – তার সরস বর্ণনা গল্পে আছে। বনভোজনকে কেন্দ্র করেই ঘটনাসমূহের আয়োজন – এজন্য গল্পের নাম ‘বনভোজন’ না হয়ে ‘বনভোজনের ব্যাপার’ হয়েছে এবং নামকরণ যথার্থ সার্থক ও মজাদার হয়েছে।

এই গল্পে ক-টি চরিত্রের সঙ্গে তোমার দেখা হল? প্রত্যেকটি চরিত্র নিয়ে আলোচনা করো।

নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায়ের ‘বনভোজনের ব্যাপার’ গল্পে যে ক-টি চরিত্রের পরিচয় আছে তারা হল – হাবুল সেন, প্যালা, টেনিদা ও ক্যাবলা।

হাবুল সেন – গল্পের প্রারম্ভে হাবুল সেন বনভোজনে দারুণ রান্নার পরিকল্পনা দিয়েছে। সে বাঙাল, সেজন্য তার মুখে পূর্ববঙ্গের ভাষা ভীষণভাবে মানানসই ও সরস। সে সব কিছু মানিয়ে নিতে পারে এবং সে সহনশীল। তার হাতে ছিল ডিমের পুঁটলি, কিন্তু যাত্রাপথে কাদায় পিছলে পড়ে সে কর্দমাক্ত হয় এবং যখন উঠে দাঁড়ায় তখন দেখা যায় হলদে রস গড়াচ্ছে।

প্যালা – গল্পে এই চরিত্রটি বক্তার ভূমিকা পালন করেছে। বনভোজনে খাওয়ার পরিকল্পনায় সে বলেছিল – আলুভাজা, শুক্তো, বাটি চচ্চড়ি ও কুমড়োর ছোকা রান্না হোক। কিন্তু টেনিদার ক্রোধে সেপরিকল্পনা স্থান পায়নি। রাজহাঁসের ডিম সংগ্রহের জন্যে সে ভন্টাকে তোষামোদ করেছে এবং বাক্স থেকে ডিম বার করতে গিয়ে হাঁসের কামড়ে রক্তাক্ত হয়েছে। ট্রেন থেকে নেমে গন্তব্যে পৌঁছোতে গিয়ে কাদায় পড়ে গেলে হাবুলের দিদিমার দেওয়া আচার পড়ে গেছে এবং তার মাথা ও মুখ বেয়ে আচারের তেল গড়িয়েছে। আচার তার এত প্রিয় যে, পড়ে গেলেও তার স্বাদ নিতে সে তৎপর হয়েছে।

টেনিদা – গল্পের কেন্দ্রীয় চরিত্র টেনিদা নিজেকে সর্বদা পটলডাঙার বলে চিহ্নিত পৌরুষ তথা সাহস দেখাতে তৎপর হয়। পেটুক, অলস, কর্মনাশা চরিত্রটি সবার উপর খবরদারি করতে তৎপর। বনভোজনে যাওয়ার ব্যাপারে দামি দামি রান্নার পরিকল্পনা দিতে তার জুড়ি নেই। যাওয়ার সময় ক্ষুধার্ত টেনিদা লেডিকেনির হাঁড়ি সাবাড় করেছে, অন্যদের প্রতি মমত্ব প্রদর্শন করেনি। তার কথা বলার ভঙ্গিতেই যথার্থ মজা পাওয়া যায়। রসগোল্লার হাঁড়ি সে ছাড়েনি, কিন্তু কাদায় আছাড় খেলে সব রসগোল্লার নির্মম পরিণতির কথা ভেবে অপরাধবোধে কিংবা খেতে না পাওয়ার আক্ষেপে একটা কথাও বলেনি। গল্পের শেষে দেখা যায়, তার আলস্যের জন্য বনভোজন কীভাবে পণ্ড হয়েছে।

ক্যাবলা – চরিত্রটির মধ্যে বুদ্ধিদীপ্ত মজাদার বিষয় রয়েছে। বনভোজনের পরিকল্পনায় সেভাবে যুক্ত না হলেও পশ্চিমে কুঁদরুর তরকারি দিয়ে ঠেকুয়া খায় বলে টেনিদার বিরাগভাজন হয়েছে। সে অনেকদিন পশ্চিমে থাকায় হিন্দি কথা বলতে অভ্যস্ত। হাবুল ডিম নিয়ে পড়ে গেলে সে বলে, ডিমের ডালনার বারোটা বেজে গেল। প্যালা পড়ে গেলে বলে – আমের আচারের একটা বেজে গেল। টেনিদার হাতে ধরা রসগোল্লার হাঁড়ি পড়ে ভেঙে গেলে সে বলে, রসগোল্লার দুটো বেজে গেল। প্যালা কাঁচা তেলে মাছ দেওয়ায় সব তালগোল পাকিয়ে যাওয়ায় সে বলে মাছের কালিয়ার তিনটে বেজে গেল। আবার বনভোজন সর্বাংশে পণ্ড হওয়ায় সে বলে বনভোজনের চারটে বেজে গেল। তার উপস্থিত বুদ্ধি এবং ক্ষুধার মধ্যে মজা করার প্রয়াস যথেষ্ট শংসার দাবি রাখে।

এ গল্পটিতে হাস্যরস সৃষ্টির জন্য ভাষার দিক থেকে লেখক নানারকম কৌশল অবলম্বন করেছেন। কী কী কৌশল তুমি খেয়াল করেছ লেখো।

নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায় ‘বনভোজনের ব্যাপার’ গল্পে সরস হাস্যরস নির্মাণ করেছেন। এর জন্য মজাদার চরিত্র নির্মাণ, তাদের মুখের ভাষার সরসতা, ক্যাবলার মুখে হিন্দি ব্যবহার, হাবুল সেনের মুখে পূর্ববঙ্গের ভাষা ব্যবহার হাস্যরস নির্মাণে সাহায্য করেছে। টেনিদার নেতৃত্বে বনভোজনের আয়োজন, মতামত প্রদান এবং টেনিদার অন্যদের উপর আস্ফালন মজার পরিবেশ তৈরি করে। রাজহাঁসের ডিম আনতে প্যালার তৎপরতা, ভন্টাকে তোষামোদ করা এবং রাজহাঁসের কামড় খেয়ে রক্তাক্ত হওয়ার মধ্যে মজা তথা অমলিন আনন্দ গোপন থাকে না। যাত্রাপথে কাদার রাস্তায় হাবুল, প্যালা এবং টেনিদার পড়ে যাওয়া এবং একের পর এক বিপত্তি হাস্যরসকে বিস্তৃত করেছে। আবার ক্যাবলার সরস মন্তব্য এবং পরিণতিতে কয়েকটা বানরের জন্য কীভাবে বনভোজন পণ্ড হল – তার পরিচয় দানে গল্পে আনন্দের পরিবেশ উচ্ছল হয়ে আছে। প্রত্যেক চরিত্রের আচরণ, সংলাপ এবং কাহিনি বর্ণনাতেও লেখক সরস ভঙ্গিমা রক্ষা করেছেন।

শীতকালে পিকনিক নিয়ে তোমার অভিজ্ঞতার কথা জানিয়ে বন্ধুকে চিঠি লেখো/গল্প লেখো।

জি. ডি. ডি. মণ্ডল’ঘাট রোড
দক্ষিণেশ্বর, কলকাতা-৭০০০৭৬
২৮.১২.২০১৬

প্রিয় ঋক,

তুমি কেমন আছ? আমি ভালো আছি। আজ আমি একটি পিকনিকে যাওয়ার অভিজ্ঞতা জানিয়ে তোমার কাছে একটি পত্র লিখছি।

গত ২৬ ডিসেম্বর আমরা আত্মীয়পরিজন ও পরিবারের সকলে বর্ধমানের দামোদর নদীর তীরে বনভোজন করে এলাম। ছোটো একটা বাসে বেশ সকালে রওনা দিয়ে সাড়ে আটটায় পৌঁছে যাই। সকালে লুচি, তরকারি, মিষ্টি খেয়ে নদীর তীরে ঘুরতে বের হই, ছবি তুলি, নৌকোয় নদীতে ভ্রমণ করি। নদীর বালি নিয়ে মজাদার খেলায় মেতে উঠি সমবয়সিদের সঙ্গে। পাশেই ছিল আলু, সরিষা ও নানা সবজি খেতে কৃষকরা ব্যস্ত, তাদের সঙ্গে কথা বলি; ফুলকপি, বাঁধাকপির খেত দেখে মুগ্ধ হই। মনে হয় সব কিনে নিয়ে যাই শহরে।

দুপুরে আহারের পর আবার অন্যপ্রান্তে। নদীর বাঁধে ঘুরতে যাওয়া ও ছবি তোলার পর্ব সমাপ্ত করে গাড়িতে ওঠা। আমার এবং আমার মামাতো ভাই ঋভু ও ঋদ্ধির আরও কিছুটা সময় অতিবাহিত করার ইচ্ছে ছিল, কিন্তু বড়োদের ব্যস্ততায় অনিচ্ছা নিয়ে বাসে উঠি। চারদিকে সবুজের সমারোহ, বিচিত্র পাখিদের ডাক সব অবসাদ ও ক্লান্তি যেন দূর করে দেয়। অল্প সময়ের জন্য বেড়াতে এসে মনপ্রাণ ভরে যায়।

এই অভিজ্ঞতার কথা তোকে জানাতে পেরে আমার ভালো লাগছে। তোকে প্রীতি ও শুভেচ্ছা জানাই। ভালো থাকিস। কাকু ও কাকিমাকে প্রণাম জানাই। চিঠির প্রত্যাশায় শেষ করছি।

ইতি সৌজাত্য

ডাকটিকিট

ঋক সিনহা
প্রযত্নে-শ্রী বিনোদ সিনহা ২৬, শশিভূষণ দে স্ট্রিট
কলকাতা – ৭০০০১২

টেনিদা-র মতো আরো কয়েকটি দাদা চরিত্র বাংলা সাহিত্যে দেখতে পাওয়া যায়। এরকম তিনটি চরিত্র নিয়ে সংক্ষেপে আলোচনা করো।

নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায়ের বিশিষ্ট চরিত্র নির্মাণ টেনিদা, যার গুণে গল্পকার বাংলা সাহিত্যে সমস্ত শ্রেণির পাঠকের কাছে অমরত্ব লাভ করেছেন। এমন ‘দাদা’ চরিত্র বাংলায় উত্তরকালে আরও নির্মিত হয়েছে। সেগুলো হল – শরৎচন্দ্রের ‘মেজদা’, প্রেমেন্দ্র মিত্রের ‘ঘনাদা’, বুদ্ধদেব গুহর ‘ঋজুদা’, সত্যজিৎ রায়ের ‘ফেলুদা’। এই চরিত্রেরা কিশোর সাহিত্যে স্থান করে নিয়েছে। দাদা না হলেও সব দাদা চরিত্রের বড়ো দাদা শরদিন্দু বন্দ্যোপাধ্যায়ের ব্যোমকেশ বক্সী।

ঋজুদা – বুদ্ধদেব গুহর কিশোর সাহিত্যের এক বিশেষ চরিত্র ঋজুদা। কিশোরচিত্তের প্রকৃতিপ্রীতি, পাখি, গাছগাছালি এবং পরিচিত বৈচিত্র্যময় দেশের সাধারণ গ্রাম, পাহাড় ও বনে বসবাসকারী মানুষের সম্বন্ধে উৎসাহ ও ভালোবাসা তৈরির অভিপ্রায়ে ঋজুদা চরিত্র নির্মিত। কিশোরমনে অ্যাডভেঞ্চার, সাহস, শুভ-অশুভ ও ন্যায়-অন্যায়বোধ এবং অন্যায়ের বিরুদ্ধে লড়ার মানসিকতা গড়ে উঠতে পারে ঋজুদার গল্পগুলোর সঙ্গে একাত্ম হলে।

ফেলুদা – সত্যজিৎ রায়ের এক বুদ্ধিদীপ্ত, সাহসী, আত্মপ্রত্যয়ী, কর্মতৎপর, ধারালো ও মেধাসম্পন্ন চরিত্র ফেলুদা। নানা জটিল সমস্যা সমাধানে চরিত্রটি সিদ্ধহস্ত। বর্তমান কিশোরদের কাছে এই চরিত্রটি ভীষণ প্রিয় এবং বয়স্ক পরিণত পাঠকও চরিত্রটির দ্বারা প্রাণিত হতে পারেন। তীক্ষ্ণ মেধা না থাকলে যে গোয়েন্দা হওয়া যায় না তার প্রমাণ এই চরিত্রটি। অনুমাননির্ভরতা, পর্যবেক্ষণ শক্তি, অফুরন্ত প্রাণশক্তি, বিপদের মধ্যে ধৈর্য স্থির রাখা চরিত্রটির বৈশিষ্ট্য।

ঘনাদা – প্রেমেন্দ্র মিত্রের কিশোর সাহিত্যের এক উজ্জ্বল মজাদার চরিত্র ঘনাদা। চরিত্রটিকে নিয়ে লেখক হাস্যরস পরিবেশনের চেষ্টা করেছেন, কিন্তু বিশিষ্ট ছোটোগল্পকার হলেও তাঁর সৃষ্ট ঘনাদা চরিত্রটি সর্বাংশে সফল হয়নি। একসময় চরিত্রটি কিশোরদের কাছে প্রিয় ছিল মজার মজার কাণ্ড ঘটানোর জন্য। চরিত্রটি পাঠককে খুব ভাবায় না, কিন্তু মজাদার কথা বলা এবং মাঝে মাঝে অদ্ভুত আচরণের জন্য কিশোরমনে একসময় খুব জনপ্রিয় ছিল। তার অদ্ভুত আচরণ ও কথাবার্তা পাঠককে অনাবিল আনন্দদান করত। সম্প্রতি এই চরিত্রটির প্রতি কিশোরদের তেমন উৎসাহ বা আকর্ষণ নেই।

বনভোজনে যাত্রায় কী কী সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়েছিল?

শ্যামবাজার ইস্টিশান থেকে মার্টিন রেলে চড়ে টেনিদা, হাবুল সেন, ক্যাবলা আর প্যালা এই চারজনে মিলে খাবারদাবারের সমস্ত আয়োজন সঙ্গে নিয়ে ক্যাবলার মামার বাড়ির বাগানে বনভোজনের উদ্দেশ্যে যাত্রা করে। ইস্টিশানে নেমে প্রায় মাইলখানেক হাঁটাপথে ক্যাবলার মামার বাড়ি। যাওয়ার পথটা এঁটেল মাটির, সেখানে আগের দিন এক পশলা বৃষ্টি হয়ে গিয়ে প্যাঁচপ্যাঁচে কাদা হয়েছিল। তার উপর দিয়ে হাঁটতে গিয়ে হাবুল তার ডিমের পুঁটলিসহ একেবারে রামআছাড় খায়। তার ফলে সমস্ত ডিম ফেটে গিয়ে পুঁটলি দিয়ে হলুদ রস গড়াতে থাকে। এরপর টেনিদা নিজেও হাতে রসগোল্লার হাঁড়িসুদ্ধ কাদায় আছাড় ‘হাঁড়ি সাত হাত দূরে ছিটকে পড়ে, রসগোল্লাগুলো কাদায় পড়ে ‘লেবুর আচার’ – এর মতো দেখতে হয়ে যায়। পরে প্যালা আবার কাঁচা তেলে সমস্ত মাছ ভাজার জন্য ছেড়ে দিলে সব মাছ ঘেঁটে তালগোল পাকিয়ে যায়। এইভাবে বনভোজনে যাত্রার শুরু থেকেই একের পর এক ঘোর সমস্যা দেখা দিয়েছিল।

বনভোজন কীভাবে এবং কেন ফলভোজনে পরিণত হয়?

ক্যাবলার মামার বাড়ির বাগানে বনভোজন করতে গিয়ে টেনিদা খিচুড়ি রান্নার দায়িত্ব নেয়। ওদিকে হাবুল সেন বাগানে একটা জলপাই গাছ দেখতে পেয়ে প্যালা আর ক্যাবলাকে জানালে তখনই তারা তিনজনে গাছ থেকে পাকা জলপাই পেড়ে খেতে শুরু করে। ঘণ্টাখানেক পরে খিচুড়ির কথা মনে পড়লে তারা ফিরে এসে দেখে একটা নারকেল গাছে হেলান দিয়ে টেনিদা ঘুমোচ্ছে আর একটা গোদা বানর টেনিদার পিঠ চুলকে দিচ্ছে। অথচ টেনিদা ভাবছে বোধহয় ক্যাবলা তার পিঠ চুলকে দিচ্ছে। টেনিদার চারপাশে আরও চার-পাঁচটা বানর গোল হয়ে বসে চাল-ডাল মুঠো মুঠো করে মুখে পুরছে আর একটা গোদা বানর আলুগুলো সাবাড় করছে। প্যালাদের চিৎকারে বানরগুলো চাল-ডাল-আলুর পুঁটলি নিয়ে তাদের ভেংচি কেটে কাঁঠাল গাছে উঠে যায়। তখন খাবার বলতে আর কিছুই থাকে না। শেষপর্যন্ত তাই টেনিদাকে বাগানের পাকা জলপাই খাওয়ার জন্যই প্রবল খিদের তাগিদে ছুটে যেতে হয়। এইভাবে বনভোজনের বিষয়টি শেষপর্যন্ত ফলভোজনের পরিণতিতে এসে পৌঁছোয়।

টীকা লেখো – কলম্বাস, লেডিকেনি, বিরিয়ানি, ইউরেকা।

কলম্বাস – প্রসিদ্ধ ইউরোপীয় নাবিক। ১৪৩৬ খ্রিস্টাব্দে ইটালির জেনোয়ায় তাঁর জন্ম। তীক্ষ্ণ বুদ্ধিসম্পন্ন মানুষটি ইতিহাস, জ্যোতিষ, জ্যামিতি, ভূগোল প্রভৃতিতে পাঠগ্রহণ করে নৌযুদ্ধ বিভাগে প্রবেশ করেন। পরে ভাগ্যবিড়ম্বিত মানুষটি স্পেনের রাজা ফার্দিনান্দ ও রানি ইসাবেলার সাহায্যে ১৪৯২ খ্রিস্টাব্দের ৩ আগস্ট প্যালো বন্দর থেকে সমুদ্রযাত্রা করেন। কিউবা, সেন্ট ডিমেঙ্গো প্রভৃতি দ্বীপ আবিষ্কার করে প্যালো বন্দরে ফেরেন। ওই বছরই জ্যামেকা দ্বীপ আবিষ্কার করেন। ১৪৯৮ খ্রিস্টাব্দে তৃতীয়বার যাত্রায় আমেরিকা, ত্রিনিদাদ আবিষ্কৃত হয়। ১৫০২ খ্রিস্টাব্দে চতুর্থবারের জন্য বের হন। কিন্তু অসুস্থতার জন্য ১৫০৪ খ্রিস্টাব্দে ফিরে যান এবং ১৫০৬ খ্রিস্টাব্দে ৭০ বছর বয়সে ভেলালিড্ নগরে লোকান্তরিত হন।

লেডিকেনি – ছানার সঙ্গে ময়দা, সুজি, চালগুঁড়ো মিশিয়ে গোল আকৃতির তৈরি করে ঘি-এ ভেজে পরে রসের মধ্যে ফেললে এক উপাদেয় মিষ্টান্ন তৈরি হয়। এই মিষ্টান্নটি বাঙালিদের কাছে ভীষণ প্রিয় এবং এর নাম লেডিকেনি। জানা যায়, লর্ড ক্যানিং – এর স্ত্রীকে খুশি করার জন্য কলকাতার প্রখ্যাত ময়রা নবীনচন্দ্র এমন এক মিষ্টান্নের উদ্ভাবন করেন। এই মিষ্টান্ন গ্রহণ করে ক্যানিং – এর পত্নী ভীষণ খুশি হন এবং মিষ্টান্ন নির্মাতারা তাঁর প্রশংসাধন্য মিষ্টান্নটিকে তাঁরই নামে চিহ্নিত করে লেডিকেনি নাম দেন।

বিরিয়ানি – মাংসমিশ্রিত ভাত। এই ধরনের খাবারকে পলান্ন বলা হয়। এই ধরনের রান্নার কদর আছে হায়দরাবাদে। দেশের বিভিন্ন প্রান্তে এই খাবারের চাহিদা আছে। ‘বনভোজনের ব্যাপার’ গল্পে দেখা যায়, পেটুক টেনিদা ভালো ভালো খাবারের ব্যাপারে ভীষণ তৎপর এবং হাবুল সেন পরিকল্পনা মতো কয়েকটি ভালো ভালো পদ রান্নার কথা বললে টেনিদা নোলার জল টেনে বিরিয়ানি রান্নার কথা বলে। এই খাবার তৈরি করতে অনেক সময় ও খরচ হয়, কিন্তু এই ধরনের মুখরোচক ও দামি খাবারের লোভ শহরের মানুষের মধ্যে অধিক দেখা যায়।

ইউরেকা – ‘Eureka’ শব্দটি ইংরেজি শব্দ। এর আক্ষরিক অর্থ আবিষ্কারের আনন্দজনিত উল্লাসধ্বনি। ‘পেয়েছি পেয়েছি’ এই ধরনের আনন্দধ্বনি প্রকাশের ক্ষেত্রে শব্দটির যথার্থ ব্যবহার হয়। প্রসিদ্ধ গ্রিক গণিতজ্ঞ আর্কিমিডিস আপেক্ষিক গুরুত্ব তত্ত্বের আবিষ্কার করেন। জানা যায়, এই মানুষটি আবিষ্কারের নেশায় মত্ত ছিলেন এবং হঠাৎ আকস্মিকভাবে সমস্যার সমাধান হয়ে যাওয়ায় ‘Eureka-Eureka’ বলে চিৎকার করে ওঠেন। বনভোজনে গিয়ে সারাদিন প্রায় সবাই অভুক্ত থাকে। খিচুড়ি রান্নার চাল-ডাল-আলু বানরেরা সাবাড় করেছে। এহেন অবস্থায় প্যালা বাগানের একটি গাছে পাকা জলপাইয়ের সংবাদ দিলে টেনিদা উল্লাসের সঙ্গে তৎপর হয়ে বলে ওঠে ‘ইউরেকা’।


আজকের এই আর্টিকেলে অষ্টম শ্রেণীর বাংলা বিষয়ের পঞ্চম অধ্যায়বনভোজনের ব্যাপার’ এর রচনাধর্মী প্রশ্ন ও উত্তর নিয়ে আলোচনা করেছি। এই প্রশ্নগুলো অষ্টম শ্রেণীর বাংলা পরীক্ষার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, কারণ এগুলো প্রায়ই পরীক্ষায় আসে। আমি আশা করি, নিবন্ধটি আপনার জন্য সহায়ক হয়েছে। যদি আপনার কোনো প্রশ্ন থাকে বা আরও সহায়তার প্রয়োজন হয়, আপনি টেলিগ্রামে আমার সাথে যোগাযোগ করতে পারেন। এছাড়াও, আপনার বন্ধুদের সঙ্গে এই পোস্টটি শেয়ার করতে ভুলবেন না, যাতে তারাও উপকৃত হতে পারে। ধন্যবাদ!

Please Share This Article

Related Posts

নবাব সিরাজউদ্দোলা কে ছিলেন? পলাশীর যুদ্ধের কারণ ও ফলাফল লেখো।

পলাশীর যুদ্ধের কারণ ও ফলাফল

Class 8 English – The Happy Prince – About Author and Story

Class 8 English – The Happy Prince – About Author and Story

Class 8 English – The Happy Prince – Question and Answer

Class 8 English – The Happy Prince – Question and Answer

About The Author

Rahul

Tags

মন্তব্য করুন

SolutionWbbse

"SolutionWbbse" শিক্ষার্থীদের জন্য একটি অনলাইন অধ্যয়ন প্ল্যাটফর্ম। এখানে প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার প্রস্তুতি, মাধ্যমিক পরীক্ষার জন্য গাইডলাইন, এবং বিভিন্ন বিষয়ে পড়াশোনার সাহায্য প্রদান করা হয়। আমাদের মূল লক্ষ্য হলো ইন্টারনেটের মাধ্যমে সকল বিষয়ের শিক্ষণীয় উপকরণ সহজেই সকল শিক্ষার্থীর কাছে পৌঁছে দেওয়া।

Editor Picks

উত্তর ভারতের নদনদীর সংক্ষিপ্ত পরিচয় দাও।

দেশীয় রাজ্যগুলির ভারতভুক্তিকরণের ক্ষেত্রে ভারত সরকার কী ধরনের পদ্ধতি অবলম্বন করেছিল?

ভারত বিভাজনের অনিবার্যতার কারণ বিশ্লেষণ করো।

ভাঙ্গর ও খাদার বলতে কি বোঝো? ভাঙ্গর ও খাদারের মধ্যে পার্থক্য

দেশীয় রাজ্যগুলি সম্পর্কে জাতীয় কংগ্রেসের মনোভাব আলোচনা করো।