অষ্টম শ্রেণি – বাংলা – ছন্নছাড়া – ছন্নছাড়া অধ্যায়ের বিষয়সংক্ষেপ

Rahul

আজকের এই আর্টিকেলে অষ্টম শ্রেণির বাংলা বিষয়ের পঞ্চদশ অধ্যায়ছন্নছাড়া’ থেকে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়সংক্ষেপ নিয়ে আলোচনা করবো। এই বিষয়টি অষ্টম শ্রেণির বাংলা পরীক্ষার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, কারণ প্রায়ই এই অধ্যায় থেকে প্রশ্ন আসে এবং এটি ভালোভাবে বোঝা শিক্ষার্থীদের জন্য পরীক্ষায় ভালো ফলাফল অর্জনে সহায়ক হতে পারে।

অষ্টম শ্রেণি – বাংলা – ছন্নছাড়া

ছন্নছাড়া অধ্যায়ের কবি পরিচিতি

অচিন্ত্যকুমার সেনগুপ্ত বাংলা সাহিত্যের একজন সাহিত্য প্রতিভাসম্পন্ন ব্যক্তিত্ব। ১৯০৩ খ্রিস্টাব্দে অধুনা বাংলাদেশের নোয়াখালিতে তিনি জন্মগ্রহণ করেন। মাত্র ১৩ বছর বয়সে, পিতার মৃত্যুর পর কলকাতায় চলে এসে তিনি স্কুলশিক্ষা সমাপ্ত করেন। তিনি সাউথ সুবার্বন কলেজ থেকে ইংরেজি সাহিত্যে স্নাতক ডিগ্রি এবং কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করেন। পরবর্তীকালে তিনি আইনের ডিগ্রি অর্জন করেন এবং বিচারবিভাগীয় কর্মে নিযুক্ত ছিলেন। ‘নীহারিকা দেবী’ ছদ্মনামে তিনি প্রথম সাহিত্যরচনা শুরু করেন। তিনি বাংলা সাহিত্যের প্রায় প্রতিটি ক্ষেত্রেই স্বচ্ছন্দ বিচরণ করেছেন। তিনি ‘কল্লোল’ পত্রিকাটির সম্পাদকের দায়িত্ব সামলেছেন কিছু সময়ের জন্য। তাঁর লেখা কয়েকটি উল্লেখযোগ্য উপন্যাস হল – ‘বেদে’, ‘আকস্মিক’, ‘বিবাহের চেয়ে বড়ো’, ‘ইন্দ্রাণী’, ‘প্রথম কদম ফুল’ ইত্যাদি। তাঁর উল্লেখযোগ্য কয়েকটি গল্প সংকলনের নাম হল – ‘অকাল বসন্ত’, ‘অধিবাস’, ‘পলায়ন’, ‘কাঠ-খড়-কেরোসিন’ ইত্যাদি। এ ছাড়াও ‘অমাবস্যা’, ‘আমরা’, ‘নীল আকাশ’, ‘পূর্ব পশ্চিম’, ‘উত্তরায়ণ’ ইত্যাদি নামে কতকগুলি উল্লেখযোগ্য কাব্যগ্রন্থ তিনি রচনা করেন। তিনি শ্রীরামকৃষ্ণদেব, বিবেকানন্দ, গিরিশচন্দ্র প্রমুখের আত্মজীবনীও রচনা করেছিলেন। ১৯৭৬ খ্রিস্টাব্দে এই প্রথিতযশা ব্যক্তিত্বটি মৃত্যুবরণ করেন।

ছন্নছাড়া অধ্যায়ের পাঠপ্রসঙ্গ

বিংশ শতাব্দীর কবিদের মধ্যে অচিন্ত্যকুমার সেনগুপ্ত একজন বিবেকবান কবি-সমালোচক হিসেবে পরিচিত। তিনি যখন কলম ধরেন তখন অশান্ত বাংলার বুকে মানবিকতা সুদূর নির্বাসিত। সেখানে আছে ক্রমবর্ধমান বেকারি এবং হতভাগ্য। বেকারদের প্রতি তীব্র অবহেলা। কিন্তু তারাই শিক্ষিত, প্রতিষ্ঠিত, অমানবিক মানুষদের প্রকৃত শিক্ষক। সবার আগে তারাই ছুটে যায় মানুষের ত্রাণকর্তারূপে। তাই ‘ছন্নছাড়া’ কবিতাটি খুবই প্রাসঙ্গিক এবং সময়োপযোগী সন্দেহ নেই।

ছন্নছাড়া অধ্যায়ের বিষয়সংক্ষেপ

কবি অচিন্ত্যকুমার সেনগুপ্ত একটি জরুরি কাজে ট্যাক্সি করে যাওয়ার সময় একটি ডালপালাহীন, শুষ্ক, জীর্ণ, কঙ্কালসার গাছ দেখতে পান। বিগত সবুজের কাঠামো নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকা গাছকে গাছের প্রেতচ্ছায়া বলেও ব্যঙ্গ করলেন তিনি। দূরে রাস্তার মাঝখানে দাঁড়িয়ে থাকা একদল ছন্নছাড়া বেকার ছেলেদের দেখে ড্রাইভার এড়িয়ে যেতে চাইলেও কবি ওখান দিয়েই যেতে চান। ড্রাইভারের কথা অনুযায়ী বিরাট নেই রাজ্যের বাসিন্দা ছেলেগুলিকে কাছ থেকে দেখতে চান তিনি। কারণ যাদের জন্য কলেজে সিট নেই, অফিসে চাকরি নেই, কারখানায় কাজ নেই; শুধু নেই-নেই আর নেই। অবহেলিত মধ্যবিত্ত সমাজের প্রতি নেই কারও কণামাত্র ভালোবাসা – সেই স্ফুলিঙ্গহীন ভিজে বারুদের স্তূপকে কবি কাছ থেকে দেখতে চান। ট্যাক্সি ওদের সামনে দাঁড়াতেই ওরা লিফট পেয়েছে বলে সোল্লাসে চেঁচিয়ে উঠেই ছুটে চলল অনতিদূরে এক গাড়ি চাপা পড়া বেওয়ারিশ ভিখিরির দিকে। রক্তমাংসে দলা পাকিয়ে যাওয়া মানুষটা তথা ভিখিরির এখনও প্রাণ আছে বলে তারা আনন্দে নেচে উঠল আর সেইসঙ্গে প্রাণের স্পন্দে ছন্দময় হয়ে উঠল প্রকৃতি। জীর্ণ, শীর্ণ, কঙ্কালসার প্রেতচ্ছায়ারূপী গাছটায় লাগল সবুজের প্রলেপ। পাষাণরূপ হৃদয়ে লাগল কোমলতার ছোঁয়া; তৃপ্ত হল প্রকৃতি। মানুষ ও প্রকৃতির মধ্যে আত্মিক সম্পর্ক গড়ে উঠল।

ছন্নছাড়া অধ্যায়ের নামকরণ

নামকরণ সাহিত্যের এক গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। নামকরণের মধ্য দিয়ে পাঠক বিন্দুতে সিন্ধু দর্শনের মতো সাহিত্য-বিষয়টি পাঠ করার আগেই সাহিত্য-বিষয়টি সম্পর্কে খানিক ধারণা লাভ করতে পারেন। সাহিত্যে নামকরণ নানা উপায়ে হতে পারে। যথা – চরিত্রকেন্দ্রিক, ঘটনাকেন্দ্রিক, ব্যঞ্জনাধর্মী ইত্যাদি।

জরুরি কাজে ট্যাক্সি করে যাওয়ার সময় কবি এক ডালপালাহীন, শুষ্ক, জীর্ণ, কঙ্কালসার গাছ দেখতে পান। বিগত সবুজের কাঠামো নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকা গাছকে গাছের প্রেতচ্ছায়া বলেও ব্যঙ্গ করলেন তিনি। দূরে রাস্তার মাঝখানে দাঁড়িয়ে থাকা একদল ছন্নছাড়া বেকার ছেলেদের দেখে ড্রাইভার এড়িয়ে যেতে চাইলেও কবি ওখান দিয়েই যেতে চান। ড্রাইভারের কথা অনুযায়ী বিরাট নেই রাজ্যের বাসিন্দা ছেলেগুলিকে কাছ থেকে দেখতে চান তিনি। কারণ যাদের জন্য কলেজে সিট নেই, অফিসে চাকরি নেই, কারখানায় কাজ নেই; শুধু নেই-নেই আর নেই। অবহেলিত মধ্যবিত্ত সমাজের প্রতি নেই কারও কণামাত্র ভালোবাসা-সেই স্ফুলিঙ্গহীন ভিজে বারুদের স্তূপকে কবি কাছ থেকে দেখতে চান। ট্যাক্সি ওদের সামনে দাঁড়াতেই ওরা লিফট পেয়েছে বলে সোল্লাসে চেঁচিয়ে উঠেই ছুটে চলল অনতিদূরে এক গাড়ি চাপা পড়া বেওয়ারিশ ভিখিরির দিকে। রক্তমাংসে দলা পাকিয়ে যাওয়া মানুষটা তথা ভিখিরির এখনও প্রাণ আছে বলে তারা আনন্দে নেচে উঠল আর সেইসঙ্গে প্রাণের স্পন্দে ছন্দময় হয়ে উঠল প্রকৃতি।

কল্লোলীয় আধুনিকতা হল তথাকথিত অপ্রাসঙ্গিক রোমান্টিকতার এক সময়োপযোগী জবাব। তাই ছন্নছাড়া বেকার দামালদের এই মানবিকতা সত্যিই প্রশংসার যোগ্য। তাদের জীবনে সুখ-শান্তি-প্রেম সবই ছন্দহীন হওয়ায় ছন্নছাড়া সমাজকে কোথায় যেন এক সূত্রে গেঁথে দিল ওরা। তাই কবিতার ব্যঞ্জনাকেন্দ্রিক নামকরণ হিসেবে ‘ছন্নছাড়া’ সার্থকভাবে প্রযুক্ত হয়েছে।

ছন্নছাড়া অধ্যায়ের শব্দার্থ ও টীকা

প্রেতচ্ছায়া – পিশাচ বা প্রেতের ছায়া। কঙ্কাল – হাড়পাঁজরা; দেহের খাঁচা। রুক্ষ্ম – কর্কশ; খসখসে। রুষ্ট – ক্রুদ্ধ; অসন্তুষ্ট। রিক্ত – শূন্য; খালি। জীর্ণ – শীর্ণ হয়েছে এমন; ভগ্ন অবস্থা। বাকল – গাছের ছাল। আঁচড় – দাগ। প্রতিশ্রুতি – কথা দেওয়া; অঙ্গীকার – প্রতিজ্ঞা। সরস – রসযুক্ত। সম্ভাবনা – ভবিষ্যতের আশা। জরুরি – প্রয়োজনীয়; দরকারি। ড্রাইভার – (ইং Driver) গাড়ির চালক। ছন্নছাড়া – বাউন্ডুলে। বেকার – কর্মহীন। ছোকরা – যুবক। চোঙা – চোঙের ন্যায় আকৃতির। চোখা – তীক্ষ্ণ; ধারালো। রোখা – রুক্ষ। ঠোকা – আঘাত; ধাক্কা। লিফট – (ইং Lift) তুলে নিয়ে যাওয়া। নৈরাজ্য – অরাজকতা; বিশৃঙ্খলা। বাসিন্দে – অধিবাসী। ভিটে – বংশানুক্রমে বাস করা হয় এমন বাস্তুভূমি। ভিত – বনিয়াদ। রীতি – প্রণালী; ধারা। নীতি – নিয়ম। আইন – সরকারি বিধি বা বিধান। কানুন – আইন; বিধান; বিধিব্যবস্থা। বিনয় – বিনীতভাব। শ্লীলতা – ভদ্রতা; শিষ্টতা। শালীনতা – লজ্জাশীলতা। সিট – আসন। বেড – শয্যা। অনুসরণ – অনুগমন। প্রেরণা – উৎসাহ সঞ্চার। সম্ভাষণ – সম্বোধন। দরদ – সহানুভূতি; সমবেদনা; ভালোবাস। ক্ষুধাহরণ – খাবার ইচ্ছা চলে যাওয়া। সুধাক্ষরণ – অমৃত নিঃসরণ। এক চিলতে – লম্বা ফালির মতো একটা সরু জায়গা। ফালতু – বাড়তি; অতিরিক্ত। রক – রোয়াক; বাড়ির সামনের খোলা চাতাল। লোপাট – নিশ্চিহ্ন। সড়ক – দূরগামী বড়ো রাস্তা। স্ফুলিঙ্গ – অগ্নিকণা। শর্টকাট – সংক্ষিপ্ত সোজা পথ। লে হালুয়া – উৎসাহ বা আনন্দসূচক উক্তি। সোল্লাসে – উল্লাস সহকারে। পানসি – ছোটো আকারের নৌকো। কদ্দুর – কতদূর। অভ্যর্থনা – অ্যাপায়ন। নিরীহ – শান্ত; সরল। ধাওয়া – দৌড়োনো; ধাবিত হওয়া। বেওয়ারিশ – দাবিদার নেই এমন। পাঁজাকোলা – কোনো লোককে তার কাঁধ, পিঠ বা উরুর নীচে হাত দিয়ে তোলা হলে। সমস্বরে – একসঙ্গে। ঝংকৃত – ঝনঝন শব্দে ধ্বনিত। ভব্যতা – ভদ্রতা। সহসা – হঠাৎ; আকস্মিক। কর্কশ – খসখসে; রুক্ষ। কংক্রিট – মজবুত; দৃঢ়। দুর্বার – বাধা দেওয়া শক্ত এমন। প্রত্যয় – বিশ্বাস। তপ্ত – গরম; উষ্ণ। অস্তিত্বের – স্থিতির; বিদ্যমানতার। অধিকার – দাবি; আধিপত্য। বৈরাগ্য – সংসারে অনাসক্তি। বিদীর্ণ – ভগ্ন। মর্মরিত – মর্মরধ্বনিযুক্ত। গুচ্ছে – রাশিতে। উথলে – উচ্ছলিত হয়ে। স্নেহার্দ্র – স্নেহ দ্বারা আর্দ্র। শ্যামল – সবুজ। অবিশ্বাস্য – বিশ্বাস করা যায় না যা। প্রচ্ছন্ন – আবৃত, আচ্ছন্ন। মাধুর্য – মাধুরী; সৌন্দর্য। বিস্তীর্ণ – বিশাল। সম্পদ – বিষয়সম্পত্তি। মর্যাদা – মানসম্মান।

আজকের এই আর্টিকেলে অষ্টম শ্রেণির বাংলা বিষয়ের পঞ্চদশ অধ্যায়ছন্নছাড়া’ এর বিষয়সংক্ষেপ নিয়ে আলোচনা করেছি। এই অধ্যায়ের বিষয়সংক্ষেপ অষ্টম শ্রেণির বাংলা পরীক্ষার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, কারণ বিষয়সংক্ষেপ পরীক্ষায় প্রায়ই আসে। আশা করি, এই নিবন্ধটি আপনার জন্য সহায়ক হয়েছে। যদি আপনার কোনো প্রশ্ন থাকে বা আরও সহায়তার প্রয়োজন হয়, টেলিগ্রামে আমার সাথে যোগাযোগ করতে পারেন। এছাড়া, আপনার বন্ধুদের সঙ্গে এই পোস্টটি শেয়ার করতে ভুলবেন না, যাতে তারাও উপকৃত হতে পারে। ধন্যবাদ!

Please Share This Article

Related Posts

নবাব সিরাজউদ্দোলা কে ছিলেন? পলাশীর যুদ্ধের কারণ ও ফলাফল লেখো।

পলাশীর যুদ্ধের কারণ ও ফলাফল

Class 8 English – The Happy Prince – About Author and Story

Class 8 English – The Happy Prince – About Author and Story

Class 8 English – The Happy Prince – Question and Answer

Class 8 English – The Happy Prince – Question and Answer

About The Author

Rahul

Tags

মন্তব্য করুন

SolutionWbbse

"SolutionWbbse" শিক্ষার্থীদের জন্য একটি অনলাইন অধ্যয়ন প্ল্যাটফর্ম। এখানে প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার প্রস্তুতি, মাধ্যমিক পরীক্ষার জন্য গাইডলাইন, এবং বিভিন্ন বিষয়ে পড়াশোনার সাহায্য প্রদান করা হয়। আমাদের মূল লক্ষ্য হলো ইন্টারনেটের মাধ্যমে সকল বিষয়ের শিক্ষণীয় উপকরণ সহজেই সকল শিক্ষার্থীর কাছে পৌঁছে দেওয়া।

Editor Picks

দীপালি সংঘ কেন প্রতিষ্ঠিত হয়? দীপালি সংঘের কার্যাবলি কী ছিল?

অ্যান্টি-সার্কুলার সোসাইটি সম্পর্কে সংক্ষিপ্ত বিবরণ দাও।

বর্জ্যের পুনর্ব্যবহার ও পুনর্নবীকরণ কাকে বলে? বর্জ্যের পুনর্ব্যবহার ও পুনর্নবীকরণের মধ্যে পার্থক্য

বীণা দাস বিখ্যাত কেন? বীনা দাস সম্পর্কে একটি সংক্ষিপ্ত টীকা লেখো।

রশিদ আলি দিবস কেন পালিত হয়? রশিদ আলি দিবস সম্পর্কে সংক্ষেপে আলোচনা করো।