অষ্টম শ্রেণি – বাংলা – দাঁড়াও – বিষয়সংক্ষেপ

Rahul

আজকের এই আর্টিকেলে আমরা অষ্টম শ্রেণীর বাংলা বিষয়ের ত্রয়োদশ অধ্যায়দাঁড়াও’ এর বিষয়সংক্ষেপ নিয়ে আলোচনা করবো। এই বিষয়সংক্ষেপটি অষ্টম শ্রেণীর বাংলা পরীক্ষার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, কারণ এখান থেকে প্রশ্নোত্তর প্রায়ই পরীক্ষায় আসতে দেখা যায়।

অষ্টম শ্রেণি – বাংলা – দাঁড়াও

দাঁড়াও অধ্যায়ের লেখক পরিচিতি

বিশ শতকের বাংলা ভাষার অন্যতম প্রধান কবি শক্তি চট্টোপাধ্যায়। ১৯৩৩ খ্রিস্টাব্দের ২৫ নভেম্বর দক্ষিণ ২৪ পরগনার বহড়ু গ্রামে তিনি জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতা বামানাথ চট্টোপাধ্যায়, মাতা কমলাদেবী। চার বছর বয়সে পিতৃহারা শক্তি চট্টোপাধ্যায় মাতামহের সহযোগিতায় কলকাতায় আসেন এবং ১৯৪৮ খ্রিস্টাব্দে কলকাতার বাগবাজারে বসবাস শুরু করেন ও মহারাজা কাশিমবাজার পলিটেকনিক স্কুলে অষ্টম শ্রেণিতে ভরতি হন। এখানে মার্কসীয় দর্শন সম্পর্কে এক শিক্ষকের কাছ থেকে জানেন এবং ১৯৪৯ খ্রিস্টাব্দে ‘প্রগতি’ গ্রন্থাগার চালু করেন ও হাতে লেখা পত্রিকা ‘প্রগতি’ শুরু করেন। পরবর্তীকালে এই পত্রিকা ‘বহ্নিশিখা’ নামে প্রকাশিত হয়। ১৯৫১ খ্রিস্টাব্দে ম্যাট্রিকুলেশন পাস করে বাণিজ্য বিভাগে সিটি কলেজে ভরতি হন। পরে পুনরায় বাংলা স্নাতক স্তরে প্রেসিডেন্সি কলেজে চলে আসেন। ১৯৫৬ খ্রিস্টাব্দে তাঁর প্রথম কবিতা ‘যম’ প্রকাশিত হয় বুদ্ধদেব বসুর পত্রিকায়; এরপর ‘কৃত্তিবাস’ ও অন্যান্য পত্রপত্রিকায় তিনি লিখতে শুরু করেন।

তাঁর প্রথম কাব্যগ্রন্থ ‘হে প্রেম হে নৈঃশব্দ’ (১৯৬২)। হাংরি আন্দোলনের কবি হিসেবে ইনি পরিচিত।

কবির অন্যান্য উল্লেখযোগ্য কাব্যগ্রন্থগুলি হল – ‘ধর্মে আছি জিরাফেও আছি’, ‘অনন্ত নক্ষত্রবীথি তুমি অন্ধকারে’, ‘হেমন্তের অরণ্যে আমি পোস্টম্যান’, ‘চতুর্দশপদী কবিতাবলী’, ‘সোনার মাছি খুন করেছি’ ইত্যাদি। ১৯৮৬ খ্রিস্টাব্দে তিনি তাঁর বিখ্যাত কাব্যগ্রন্থ ‘যেতে পারি কিন্তু কেন যাব’-র জন্য ‘সাহিত্য আকাদেমি’ পুরস্কার পান। এ ছাড়া ‘আনন্দ পুরস্কার’ও তিনি পেয়েছিলেন। তাঁর বিখ্যাত উপন্যাস হল ‘কুয়োতলা’। ১৯৯৫ খ্রিস্টাব্দের ২৩ মার্চ কবির মৃত্যু হয়।

দাঁড়াও অধ্যায়ের বিষয়সংক্ষেপ

মানবসমাজ এক অদৃশ্য শৃঙ্খলে আবদ্ধ। ‘মানুষ’ শব্দটি এখানে মানবতার সমার্থক। মান এবং হুঁশ যার আছে প্রকৃত অর্থে সে-ই মানুষ। সমাজের অবক্ষয় কবিমনকে ব্যথিত করে তুলেছে। সমাজে অগ্রগণ্য মানুষ। কিন্তু তারা কেমন? আত্মকেন্দ্রিক, স্বার্থপর, সাহিত্য বিচিত্রা সুযোগসন্ধানী, ক্ষমতালোভী, অর্থলোভী। কবি সেই মানুষকেই খুঁজেছেন যে প্রেম-ভালোবাসা, দয়ামায়ার বন্ধনে মানুষকে আবদ্ধ করতে পারবে। মানবিকতার অবক্ষয়ে কবিমন তথা মানবমন ক্রন্দিত। প্রকৃত মানুষের মতো অসহায়, সম্বলহীন, বিপর্যস্ত মানুষের হৃদয়ে আশার সঞ্চার করতে হবে। বিধাতার শ্রেষ্ঠ সৃষ্টি মানুষ সমগ্র বিশ্বে তার ভালোবাসার ফাঁদ পাতা। পাখির মতো ইচ্ছাডানায় ভর করে তাদের পাশে দাঁড়িয়ে তার সহমর্মী রূপটিকে তুলে ধরতে হবে। নিঃসঙ্গ, অবসাদগ্রস্ত মানুষের সহযোগী আর-এক মানুষ। এই ‘তুমি’ কথাটি মানবতার সমার্থক। পাঠককে কবি যেন বলতে চেয়েছেন তার অন্তরে কখন মানবতাবোধের উদয় হয়। তিনি এই মানবিক মুখটিকে দিনরাত খুঁজে বেড়িয়েছেন এবং শুধু নিজের মনকেই নয় পাঠকমনকে মানবতাবোধে উদবুদ্ধ করে সহায়সম্বলহীন একাকী মানুষের পাশে দাঁড়ানোর অনুরোধ করেছেন।

সকল কঠিন মুহূর্তে খরা, বন্যা, ভূমিকম্প প্রভৃতি বিভিন্ন দুর্যোগে অসহায়, অনাহারী মানুষের পাশে দাঁড়ানোর অনুরোধ করেছেন কবি। সেই সহযোগিতা আন্তরিক, নিঃস্বার্থ এবং প্রেমপূর্ণ হোক কবির এই একমাত্র কামনা। ‘মানুষ বড়ো কাঁদছে’ – বাক্যটি বেশ কয়েকবার কবি ব্যবহার করেছেন। সম্ভবত এখানে তিনি বোঝাতে চেয়েছেন মানুষের অন্তরাত্মা কাঁদছে – সেই একাকিত্ব, নিঃসঙ্গবোধকে কাটানোর জন্য প্রকৃত সহযোগী মানুষ হয়ে উঠতে হবে। আমাদের যান্ত্রিক গতিশীল জীবনে এই অসহায় মানুষের জন্য মানুষ হয়ে আমরা কিছু সময় যেন ব্যয় করি, একটু অপেক্ষা করে তাদের সমব্যথী হয়ে উঠি আর ক্ষণিকের জন্য নিজেদের কর্তব্যবোধ, দায়বদ্ধতাকে পালন করার চেষ্টা করি।

মানবতার স্খলন বা পতন কবিচিত্তকে অস্থির করে তোলে। কবি যেন পক্ষান্তরে বলতে চেয়েছেন ‘মানুষ মানুষের জন্য, জীবন জীবনের জন্য, একটু সহানুভূতি কি মানুষ পেতে পারে না ও বন্ধু।

দাঁড়াও অধ্যায়ের নামকরণ

মানবিকবোধসম্পন্ন কবি বর্তমান সামাজিক পরিস্থিতিতে ব্যথিত হয়েছেন। মানুষের নৈতিক অবক্ষয়, মানবিকতার অবক্ষয়ে বিপর্যস্ত কবি আধুনিকতার জাঁতাকলে পিষ্ট যান্ত্রিক, গতিশীল আত্মকেন্দ্রিক মানুষকে একটু অপেক্ষা করার জন্য অনুরোধ করেছেন। কবি পাঠক তথা গতিশীল জীবনে অভ্যস্ত মানুষকে সামান্য অপেক্ষা করে নিজের অন্তরকে মানবতাবোধে উদবুদ্ধ করে তুলতে অনুরোধ জানিয়েছেন। সেই অর্থে কবিতাটির নাম সম্পূর্ণভাবে যথাযথ বলা যায়।

দাঁড়াও অধ্যায়ের শব্দার্থ ও টীকা

বড়ো – খুব। পাশে – কাছে। ফাঁদ – জাল। পাতছে – বিছাচ্ছে। একলা – একা। সকাল – প্রভাত। মতো – সদৃশ। রাত – নিশা।

আজকের এই আর্টিকেলে অষ্টম শ্রেণীর বাংলা বিষয়ের ত্রয়োদশ অধ্যায়দাঁড়াও’–এর বিষয়সংক্ষেপ নিয়ে আলোচনা করেছি। এই বিষয়সংক্ষেপ অষ্টম শ্রেণীর বাংলা পরীক্ষার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, কারণ এটি পরীক্ষায় প্রায়ই আসে। আশা করি, এই নিবন্ধটি আপনার জন্য উপকারী হয়েছে। যদি আপনার কোনো প্রশ্ন থাকে বা আরও সহায়তার প্রয়োজন হয়, অনুগ্রহ করে টেলিগ্রামে আমার সাথে যোগাযোগ করুন। এছাড়াও, আপনার বন্ধুদের সঙ্গে এই পোস্টটি শেয়ার করতে ভুলবেন না, যাতে তারা তাও উপকৃত হতে পারে। ধন্যবাদ!

Please Share This Article

Related Posts

নবাব সিরাজউদ্দোলা কে ছিলেন? পলাশীর যুদ্ধের কারণ ও ফলাফল লেখো।

পলাশীর যুদ্ধের কারণ ও ফলাফল

Class 8 English – The Happy Prince – About Author and Story

Class 8 English – The Happy Prince – About Author and Story

Class 8 English – The Happy Prince – Question and Answer

Class 8 English – The Happy Prince – Question and Answer

About The Author

Rahul

Tags

মন্তব্য করুন

SolutionWbbse

"SolutionWbbse" শিক্ষার্থীদের জন্য একটি অনলাইন অধ্যয়ন প্ল্যাটফর্ম। এখানে প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার প্রস্তুতি, মাধ্যমিক পরীক্ষার জন্য গাইডলাইন, এবং বিভিন্ন বিষয়ে পড়াশোনার সাহায্য প্রদান করা হয়। আমাদের মূল লক্ষ্য হলো ইন্টারনেটের মাধ্যমে সকল বিষয়ের শিক্ষণীয় উপকরণ সহজেই সকল শিক্ষার্থীর কাছে পৌঁছে দেওয়া।

Editor Picks

দীপালি সংঘ কেন প্রতিষ্ঠিত হয়? দীপালি সংঘের কার্যাবলি কী ছিল?

অ্যান্টি-সার্কুলার সোসাইটি সম্পর্কে সংক্ষিপ্ত বিবরণ দাও।

বর্জ্যের পুনর্ব্যবহার ও পুনর্নবীকরণ কাকে বলে? বর্জ্যের পুনর্ব্যবহার ও পুনর্নবীকরণের মধ্যে পার্থক্য

বীণা দাস বিখ্যাত কেন? বীনা দাস সম্পর্কে একটি সংক্ষিপ্ত টীকা লেখো।

রশিদ আলি দিবস কেন পালিত হয়? রশিদ আলি দিবস সম্পর্কে সংক্ষেপে আলোচনা করো।