আজকের এই আর্টিকেলে অষ্টম শ্রেণির বাংলা বিষয়ের ত্রয়োদশ অধ্যায় ‘দাঁড়াও’ এর ব্যাখ্যাভিত্তিক সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন ও উত্তর নিয়ে আলোচনা করা হবে। এই প্রশ্নগুলো অষ্টম শ্রেণির বাংলা পরীক্ষার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, কারণ পরীক্ষায় এই অধ্যায় থেকে প্রায়ই প্রশ্ন আসে।
মতো শব্দ ব্যবহার করা হয় কখন? তোমার যুক্তির পক্ষে দুটি উদাহরণ দাও।
মতো শব্দটি কোনো ব্যক্তি, বস্তু, ভাব বা বিষয়ের সঙ্গে অপর কোনো ব্যক্তি, বস্তু, ভাব বা বিষয়ের সাদৃশ্য বা সার্ধম্য বোঝাতে ব্যবহার করা হয়।
ব্যক্তির সঙ্গে সাদৃশ্যমূলক অর্থ বোঝাতে ‘মতো’ শব্দকে ব্যবহার করা হয়। যেমন, মেয়েটিকে ঠিক তার মায়ের মতো দেখতে।
বস্তু, ভাব বা বিষয়ের সঙ্গে ‘মতো’ শব্দের ব্যবহার হয়। যেমন – জলটা বরফের মতো ঠান্ডা।
কবি পাখির মতো পাশে দাঁড়াতে বলছেন কেন?
পাখি যেমন মনের আনন্দে উড়ে বেড়ায়, গান করে, তার মনের মধ্যে যেমন নেই এতটুকুও সংকীর্ণতা বা হীনতা, কবি চাইছেন মানুষের মনও সেইরকম আনন্দময় ও সুন্দর হয়ে উঠুক। পাখির মধ্যে রয়েছে স্বাধীনতাপ্রিয়তা এবং তাদের মধ্যে রয়েছে পারস্পরিক ভালোবাসা, পাখির কলকাকলিতে প্রকৃতির রূপ মধুর হয়ে ওঠে। কবি আশা করছেন মানুষও সেইরকমভাবেই পাখির মতো আনন্দ ও ভালোবাসা নিয়ে অন্য অসহায় মানুষের পাশে এসে দাঁড়াক।
মানুষই ফাঁদ পাতছে – কবি এ কথা কেন বলেছেন? ‘মানুষ’ শব্দের সঙ্গে ‘ই’ ধ্বনি যোগ করেছেন কেন-তোমার কী মনে হয়?
শিকারি যেমন ফাঁদ পেতে পশুপাখিকে বন্দি করে, তেমনই মানুষও যেন গোপনে চতুরতার সঙ্গে অন্য মানুষকে ধরতে চাইছে বা কাছে পেতে চাইছে। এই ফাঁদ ভালোবাসার ফাঁদও হতে পারে।
মানুষ একা ও অসহায় হলেও সেই মানুষই আবার মানবতার ফাঁদ পাতছে, এই কথাটি জোরের সঙ্গে বোঝানোর জন্য কবি ‘মানুষ’ শব্দের সঙ্গে ‘ই’ প্রত্যয়টি ব্যবহার করেছেন।
তোমার মতো মনে পড়ছে – এই পঙ্ক্তির অন্তর্নিহিত অর্থ কী?
বর্তমান অস্থির ও যন্ত্রণাদায়ক সামাজিক পরিবেশের মধ্যে দাঁড়িয়ে কবি গভীরভাবে মানবিকতার অভাবকে অনুভব করছেন এবং মানবতার স্পর্শে সুন্দর কোনো মানুষের সঙ্গ কামনা করছেন। সেই মানুষকেই কবি ‘তোমার মতো’ বলে চিহ্নিত করেছেন, অর্থাৎ যার মধ্যে ভালোবাসা, বিশ্বাস, দয়ামায়া এসব কিছু রয়েছে। এখানে ‘তোমার মতো’ বলতে ওই ধরনের গুণসম্পন্ন মানুষের মতো বলেই কবি ইঙ্গিত করেছেন।
এসে দাঁড়াও ভেসে দাঁড়াও এবং ভালোবেসে দাঁড়াও – এই পঙ্ক্তিটির বিশেষত্ব কোথায়? এই ধরনের দুটি বাক্য তুমি তৈরি করো।
এসে, ‘ভেসে’ ও ‘ভালোবেসে’ এই তিনটি শব্দের মধ্যে ধ্বনিগত সাদৃশ্য থাকায় পঙ্ক্তিটিতে অসাধারণ ছন্দমাধুর্যের বিশেষত্ব যেমন সৃষ্টি হয়েছে, তেমনই মানুষের পাশে থেকে তাকে কোমলভাবে অনুভব করে ভালোবাসার মধ্য দিয়ে কাছের করে নেওয়ার আবেদনটুকুও অপূর্বভাবে ধরা পড়েছে।
এই ধরনের দুটি বাক্য হল –
- অসহায় মানুষদের পাশে এসে দাঁড়াও।
- শত্রুকেও আপন করে নিয়ে তার পাশে ভালোবেসে দাঁড়াও।
মানুষ বড়ো কাঁদছে – কী কারণে কবি এই কথা বলেছেন?
আজকের স্বার্থপর নিষ্ঠুর সমাজের মানুষেরা কেউ কারও বিপদে বা দুঃখে পাশে থাকে না বলে অসহায় মানুষেরা কেবল বৃথাই চোখের জল ফেলছে। তাদের অশ্রুপাত কাউকে বিচলিত করছে না বলেই কবি এ কথা বলেছেন।
মানুষ বড়ো একলা, তুমি তাহার পাশে এসে দাঁড়াও – এই পঙ্ক্তিটি তিনবার ব্যবহার করার কারণ কী হতে পারে বলে তোমার মনে হয়?
অবক্ষয়িত সমাজে অসহায় নিঃসঙ্গ মানুষের পাশে মানবতাবোধসম্পন্ন মানুষকেই এসে দাঁড়াতে হবে, কবি এই আবেদন তাঁর কবিতায় প্রকাশ করেছেন। এই আবেদনকে আন্তরিক, জোরালো ও গভীরভাবে জানানোর জন্যই কবি এই পঙ্ক্তিটি তিনবার বিশেষভাবে ব্যবহার করেছেন।
কবি কাকে মানুষের পাশে দাঁড়াতে অনুরোধ করছেন বলে তোমার মনে হয়?
কবি আজকের যান্ত্রিক সমাজের সমস্ত স্বার্থপর মানুষকেই সবরকমের স্বার্থবুদ্ধি ও হীনতা সরিয়ে অসহায় মানুষদের পাশে, তথা সমগ্র মানবসমাজেরই পাশে এসে দাঁড়াতে অনুরোধ করেছেন। সকল মানুষই সকলের পাশে পরম নির্ভর হয়ে থাকুক-কবি এটাই চেয়েছেন।
কবিতাটি চলিত বাংলায় লেখা, শুধু একটা শব্দ সাধু ভাষার। শব্দটি খুঁজে বার করো এবং শব্দটিকে এভাবে ব্যবহার করেছেন কেন কবি?
কবি শক্তি চট্টোপাধ্যায়ের আগাগোড়া চলিতভাষায় লেখা ‘দাঁড়াও’ কবিতায় কেবল তিনবার ব্যবহৃত ‘তাহার’ শব্দটিই সাধু ভাষার।
সমাজের অসহায় মানুষদের অবস্থানকে বিশেষভাবে বোঝানোর জন্য এবং তাদের যন্ত্রণার গভীরতাকে ব্যঞ্জনা দেওয়ার জন্যই কবি স্বতন্ত্রভাবে ‘তাহার’ শব্দটি সাধুভাষায় ব্যবহার করেছেন। পাঠকের যাতে ওই শব্দটির উপর বিশেষ মনোযোগ আকৃষ্ট হয়, কবির সেটাই প্রত্যাশা।
আজকের এই আর্টিকেলে অষ্টম শ্রেণির বাংলা বিষয়ের ত্রয়োদশ অধ্যায় ‘দাঁড়াও’ এর ব্যাখ্যাভিত্তিক সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন ও উত্তর নিয়ে আলোচনা করেছি। এই প্রশ্নগুলো বাংলা পরীক্ষার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, কারণ পরীক্ষায় এ ধরনের প্রশ্ন প্রায়ই আসে। আশা করি, এই নিবন্ধটি আপনার জন্য উপকারী হয়েছে। যদি আপনার কোনো প্রশ্ন থাকে বা আরও সহায়তার প্রয়োজন হয়, আপনি টেলিগ্রামে আমার সাথে যোগাযোগ করতে পারেন। এছাড়াও, পোস্টটি আপনার বন্ধুদের সঙ্গে শেয়ার করতে ভুলবেন না, যাতে তারাও উপকৃত হতে পারে। ধন্যবাদ!