আজকের এই আর্টিকেলে আমরা অষ্টম শ্রেণীর বাংলা বিষয়ের চতুর্বিংশ অধ্যায় ‘গড়াই নদীর তীরে’ নিয়ে আলোচনা করবো, যেখানে থাকবে রচনাধর্মী প্রশ্ন ও উত্তর। এই প্রশ্নগুলো অষ্টম শ্রেণীর বাংলা পরীক্ষার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, কারণ এগুলো পরীক্ষায় প্রায়ই আসে এবং শিক্ষার্থীদের প্রস্তুতির জন্য সহায়ক হবে।
এ বাড়ির যত আনন্দ হাসি আঁকা জীবন্ত করি। – কবিতায় কবি প্রকৃতির সঙ্গে একাত্ম যে গ্রামীণ কুটিরের জীবন্ত ছবি এঁকেছেন তার বর্ণনা দাও।
পল্লিকবি জসীমউদ্দীন তাঁর ‘সোজনবাদিয়ার ঘাট’ কাব্যগ্রন্থের অন্তর্গত ‘গড়াই নদীর তীরে’ কবিতাটিতে গড়াই নদীর কূলে অবস্থিত একটি কুটিরের এক অপূর্ব চিত্র অঙ্কন করেছেন। প্রকৃতি নিজ স্নেহ-মমতার বন্ধনে এই কুটিরটিকে যেন আবদ্ধ করে রেখেছে। প্রকৃতির সঙ্গে এই গ্রামীণ কুটির যেন একাত্ম হয়ে গেছে এখানে।
কবি এখানে প্রকৃতির স্নেহবন্ধনে বাঁধা পড়া কুটিরটির এমন এক জীবন্ত চিত্র আমাদের সামনে তুলে ধরেছেন, যা আমাদের হৃদয়কেও স্পর্শ করে যায়। কুটিরটিকে ঘিরে রেখেছে লতাপাতা, আর তার মাঝে ফুটে থাকা নানান বর্ণের ফুল যেন এক মায়াময় পরিবেশ রচনা করেছে। সকাল-সন্ধ্যায় মলয় বাতাসে এই ফুলগুলি যেন হাসিমুখে আমাদের আহ্বান জানাচ্ছে, এ যেন এক সুখময়-শান্তিময় পরিবেশ রচনা করছে, যা আমাদের হৃদয়কেও শান্তি-সুখের সাগরে নিমজ্জিত করে। কুটিরের বাইরে মাচানে ছেয়ে রয়েছে সিমলতা আর লাউ-কুমড়োর ঝাড়, আর তা ভরে রয়েছে তাদের ফুলে। মাচানের তলায় রঙের ঢেউ তুলছে লাল নটেশাকের ঝাড়। কোনো এক মহাশিল্পী যেন এক অপূর্ব পটচিত্র অঙ্কন করেছে এখানে; সেই সৌন্দর্যকে আরও বাড়িয়েছে এর উপর মেলে দেওয়া কুটিরের কোনো এক বধূর লাল শাড়ি। এই রঙের সাগরে যখন মাঝে মাঝে জলচর পাখিরা তাদের ছোটো-ছোটো ছানা নিয়ে বেড়াতে আসে, সেখানে যেন লাগে প্রাণের জীবন্ত স্পর্শ। তারা যেন সুমিষ্ট স্বরে গান গেয়ে নিজেদের মনের ভাব ব্যক্ত করতে থাকে। গাছের শাখায় বনের পাখিরা ধরে গান; তারা তাদের মুক্ত বিচরণক্ষেত্র হিসেবেই ধরে নেয় এই কুটিরকে। মানুষ বসবাসের কোনো কৃত্রিমতার চিহ্ন সেখানে নেই, তাই এই পাখিরাও নির্ভয়ে বিচরণ করতে পারে এই সৌন্দর্যসাগরে। কুটিরের মানুষেরা তাদের সংসারে ব্যবহারের মটর-মশুর ডাল, কালো জিরা, ধনে, লংকা শুকোতে দেয় কুটিরের উন্মুক্ত প্রাঙ্গণে। সেখানেও যেন লাগে লাল রঙের ঢেউ। মনে হয় এগুলিই যেন নানান অক্ষরে রচনা করছে এই কুটিরের সুখের চিত্র। জীবনের সুখ-আনন্দ-আহ্লাদ যেন এখানে লেখা হয়ে রয়েছে। দূর আকাশের রঙিন মেঘেরাও উড়ে যাওয়ার সময় যেন থমকে দাঁড়িয়ে যায় এই কুটিরকে ভালোবেসে। তারাও যেন একাত্মতা অনুভব করে এর সঙ্গে। মাটি এবং আকাশের দূরত্ব ঘুচিয়ে দেয় এই কুটির। প্রকৃতির মেঘেরাও দূর থেকে যেন মাটির উপর এই প্রকৃতির স্নেহ-মমতার বন্ধনে বাঁধা পড়া কুটিরের সঙ্গে এক হয়ে যেতে চায়।
সোজনবাদিয়ার ঘাট কবিতায় কবি পরম মমতায় গ্রামীণ কুটিরের ছবি এঁকেছেন। আমাদের প্রত্যেকেরই নিজের বাড়ির সঙ্গে এমন একটি মমতাময় সম্পর্ক আছে। তুমি তোমার বাড়ির বিভিন্ন অনুষঙ্গের বিবরণ দিয়ে একটি অনুচ্ছেদ লেখো।
কবি জসীমউদ্দীন তাঁর ‘সোজনবাদিয়ার ঘাট’ কাব্য গ্রন্থের অন্তর্গত ‘গড়াই নদীর তীরে’ কবিতাটির মধ্যে এক গ্রামীণ কুটিরের অপরূপ সুন্দর চিত্র অঙ্কন করেছেন। প্রত্যেকেরই বাড়ির সঙ্গে জড়িয়ে থাকে এক মমতাময় নিবিড় সম্পর্ক। কবি যদিও গ্রামবাংলার চিত্র একেঁছেন, কিন্তু আমার বাড়ি খাস কলকাতা শহরে। বাড়িটি আমার অত্যন্ত প্রিয়। কারণ জন্মের পর থেকেই আমি ওই বাড়িটিতে রয়েছি। আমি ছাড়াও ওই বাড়িতে থাকেন আমার মা, বাবা, ঠাকুমা ও দাদু। প্রতিদিন সকালবেলা ঘুম থেকে উঠে আমি আমার দাদুর সঙ্গে পাশের একটি উদ্যানে যাই হাঁটতে। এরপর বাড়িতে এসে পড়তে বসি। মা-ঠাকুমা ব্যস্ত থাকেন রান্নার কাজে। বাবা বাজারে যান, দাদু সংবাদপত্র পড়তে বসেন। চা খাওয়ার সময় হলে আমাদের বাড়ির পোষা টিয়াপাখিটি ব্যস্ত হয়ে ওঠে বিস্কুট খাওয়ার জন্য। ঠাকুমা স্নান সেরে তুলসীমঞ্চে জল দেন। সকাল নটা বেজে গেলে স্নান সেরে খেতে বসি বিদ্যালয়ে যাওয়ার জন্য। আমাদের বাড়িতে আমরা ছাড়াও রয়েছে আমাদের কয়েকটি পোষা বিড়াল। আমাদের পরিবারে সকলের খাওয়ার পরই তাদের জন্য বরাদ্দ থাকে মাছ-ভাত। সে কারণে খেতে বসলেই তারা ঘরের দরজার বাইরে অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করে। এরপর বিদ্যালয়ের পথে যাত্রা করি। পথে যেতে যেতে দেখি কত অজানা মানুষ, গাছপালা, গাড়িঘোড়া ইত্যাদি। বিদ্যালয় থেকে ফিরে এসে বাড়ির উঠোনে খেলাধুলা করি। সন্ধেবেলায় জলখাবার খেয়ে পড়তে বসি। রাত্রিবেলায় খাওয়াদাওয়ার পরই ঠাকুমার কাছে গল্প শুনতে শুনতে ঘুমিয়ে পড়ি। আমার কাছে আমার পরিবার এবং আমাদের বাড়িটি অত্যন্ত ভালোবাসার ধন।
গড়াই নদীর তীরে কবিতাটির বিষয়বস্তু আলোচনা করো।
পল্লিকবি জসীমউদ্দীন রচিত ‘গড়াই নদীর তীরে’ কবিতায় ফুটে উঠেছে কবির প্রকৃতিপ্রেম। এই কবিতায় চিত্রিত হয়েছে পল্লিপ্রকৃতির এক অসামান্য রূপ। গড়াই নদীর তীরের এক ছোট্ট কুটির, যাকে ঘিরে রয়েছে প্রকৃতি। প্রকৃতি যেন তার সৌন্দর্যের ভালি উজাড় করে দিয়ে সাজিয়েছে এই শান্তির নীড়কে।
গড়াই নদীর তীরের এই কুটির বাঁধা পড়েছে প্রকৃতির মায়ার বন্ধনে, তার ফুল-লতা-পাতার বেষ্টনে। উঠোনের কোণে ফুটে ওঠা বুনো ফুল যেন তাদের হাস্যমুখের দ্বারা শান্তিতে ভরিয়ে দিচ্ছে এই কুটিরটিকে। আর মাচানের উপর বেড়ে ওঠা সিমলতা আর লাউ, কুমড়োর ঝাড়, তাতে ফুটে ওঠা ফুল যেন এই কুটিরের অঙ্গসজ্জা করেছে। তার নীচে লাল নটেশাক যেন রঙের ঢেউ খেলিয়ে দিয়েছে। আর তার উপর এই কুটিরের কোনো বধূর মেলে দেওয়া লাল শাড়ি যেন রূপের ঢেউ তুলেছে। সেই রূপের সমুদ্রে মাঝে মাঝে বিচরণ করতে আসে জলচর পাখিরা তাদের সন্তানদের নিয়ে। তারা যেন এঁদো ডোবা থেকে উঠে এসে এই জলসমুদ্রে মেতে ওঠে গানে আর কথায়। গাছে-গাছে গান গেয়ে বেড়ায় বনের পাখিরা, তারা এই কুটিরকে মনে করে যেন তাদের মুক্ত বনেরই অংশ। ফলে মানুষের ভয় তাদের মাঝে দেখা যায় না। এরই মাঝে উঠোনে শুকাতে থাকে কুটিরবাসীর মটর-মশুর ডাল, কালো জিরা আর ধনে-লংকা-মরিচ। মনে হয় যেন প্রকৃতির এই তরুলতার মাঝে এগুলো দিয়ে কেউ আঙিনায় এঁকে দিয়েছে আলপনা। কবির মনে হয়, এসবের মাঝেই যেন নানা অক্ষরে চিত্রিত হচ্ছে এই কুটিরের এক সুখচিত্র। এই কুটিরের মানুষের জীবনের সমস্ত হাসি-আনন্দই যেন প্রকৃতির এই সৌন্দর্যের মধ্য দিয়ে ব্যস্ত হাচ্ছে। এই সুখচিত্র দর্শনে যেন সুদূর আকাশের মেঘেরাও এই কুটিরকে ভালোবেসে তার উপরে অবস্থান করে নিজেদের রঙিন আভায় এই কুটিরকে আরও রঙিন করে তোলে। সবমিলিয়ে এই কুটিরকে কেন্দ্র করে কবি ফুটিয়ে তুলেছেন পল্লিপ্রকৃতির এক অসাধারণ রূপসৌন্দর্য।
গড়াই নদীর তীরে কবিতাটির নামকরণ আলোচনা করো।
নামকরণ সাহিত্যের এক গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। নামকরণের মধ্য দিয়ে পাঠক বিন্দুতে সিন্ধু দর্শনের মতো সাহিত্য-বিষয়টি পাঠ করার আগেই সাহিত্য-বিষয়টি সম্পর্কে খানিক ধারণা লাভ করতে পারেন। সাহিত্যে নামকরণ নানা উপায়ে হতে পারে। যথা – চরিত্রকেন্দ্রিক, ঘটনাকেন্দ্রিক, ব্যঞ্জনাধর্মী ইত্যাদি।
পল্লিকবি জসীমউদ্দিনের ‘গড়াই নদীর তীরে’ নামক কবিতায় চিত্রিত হয়েছে পল্লিপ্রকৃতির এক অসামান্য চিত্র। গড়াই নদীর তীরের ছোট্ট কুটিরটিকে ঘিরে রয়েছে এক সুন্দর প্রকৃতি। প্রকৃতি যেন তার সৌন্দর্যের ডালি উজাড় করে দিয়ে সাজিয়েছে এই শান্তির নীড়কে। গড়াই নদীর তীরের কুটিরের মানুষের জীবনের সমস্ত হাসি-আনন্দ যেন প্রকৃতির সৌন্দর্যের মধ্য দিয়ে ব্যস্ত হচ্ছে। সেই সুখচিত্র দর্শনে যেন সুদূর আকাশের মেঘেরাও কুটিরটিকে ভালোবেসে তার উপরে অবস্থান করে, নিজেদের রঙিন আভায় সেই কুটিরকে আরও রঙিন করে তোলে। কবি যে কুটিরকে কেন্দ্র করে পল্লিপ্রকৃতির এক অসাধারণ রূপসৌন্দর্য অঙ্কন করেছেন, সেই কুটিরটি গড়াই নদীর তীরে অবস্থিত। এ কারণে কবিতাটির নামকরণ সার্থকভাবে প্রযুক্ত হয়েছে বলে মনে হয়।
আজকের এই আর্টিকেলে অষ্টম শ্রেণীর বাংলা বিষয়ের চতুর্বিংশ অধ্যায় ‘গড়াই নদীর তীরে’ নিয়ে রচনাধর্মী প্রশ্ন ও উত্তরগুলো বিশদভাবে আলোচনা করেছি। এই প্রশ্নগুলো অষ্টম শ্রেণীর বাংলা পরীক্ষার জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ, কারণ এগুলো প্রায়ই পরীক্ষায় আসে। আশা করি, এই নিবন্ধটি আপনার প্রস্তুতিতে সহায়ক হয়েছে। যদি কোনো প্রশ্ন থাকে বা অতিরিক্ত সহায়তা প্রয়োজন হয়, তাহলে টেলিগ্রামে আমার সাথে যোগাযোগ করতে পারেন। এছাড়াও, এই পোস্টটি আপনার বন্ধুদের সাথে শেয়ার করতে ভুলবেন না, যাতে তারাও উপকৃত হতে পারে। ধন্যবাদ!