অষ্টম শ্রেণি – বাংলা – কী করে বুঝব – বিষয়সংক্ষেপ

Rahul

আজকের এই আর্টিকেলে অষ্টম শ্রেণীর বাংলা বিষয়ের ঊনবিংশ অধ্যায়কী করে বুঝব’ এর বিষয়সংক্ষেপ নিয়ে আলোচনা করবো। এই বিষয়সংক্ষেপটি অষ্টম শ্রেণীর বাংলা পরীক্ষার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, কারণ এখান থেকে প্রশ্নোত্তর প্রায়ই পরীক্ষায় আসে।

অষ্টম শ্রেণি – বাংলা – কী করে বুঝব

কী করে বুঝব অধ্যায়ের লেখক পরিচিতি

বাংলা সাহিত্যের সুবিখ্যাত লেখিকা আশাপূর্ণা দেবীর জন্ম ১৯০৯ খ্রিস্টাব্দে কলকাতায়। অত্যন্ত রক্ষণশীল পরিবারে জন্মগ্রহণ করায় কোনোদিন স্কুল-কলেজে পড়ার সুযোগ পাননি। কিন্তু নিজের আগ্রহে বাড়িতেই লেখাপড়া শেখেন। বাল্যকাল থেকেই তাঁর মধ্যে সাহিত্যিক প্রতিভার প্রকাশ দেখা যায়। মাত্র ১৩ বছর বয়সে ‘বাইরের ডাক’ নামক একটি কবিতা প্রকাশিত হয় ‘শিশুসাথী’ পত্রিকায়। এরপর ওই পত্রিকাতেই প্রকশিত হয় ‘পাশাপাশি’ নামক তাঁর একটি গল্প। অতি অল্প বয়সেই বিবাহ হলেও আজীবন অসামান্য দক্ষতার সঙ্গে সংসার এবং সাহিত্যজীবনের মধ্যে ভারসাম্য রক্ষা করে গেছেন।

১৯২২ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত শুধুই শিশুসাহিত্য রচনা করলেও পরবর্তীকালে বড়োদের জন্য লেখাতেও তিনি অসামান্য পারদর্শিতা দেখিয়েছিলেন। অজস্র গল্প ও উপন্যাসে তিনি মধ্যবিত্ত বাঙালি জীবনের ছবি যেভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন; তার থেকে তাঁর সূক্ষ্ম দৃষ্টি, সংবেদনশীলতা ও সামাজিক অভিজ্ঞতার পরিচয় পাওয়া যায়। তাঁর ‘প্রথম প্রতিশ্রুতি’ উপন্যাসের জন্য তিনি ‘জ্ঞানপীঠ পুরস্কার’ এবং ‘রবীন্দ্র পুরস্কার’ লাভ করেন। এ ছাড়াও তিনি ‘লীলা পুরস্কার’, ‘সাহিত্য আকাদেমি পুরস্কার’ এবং একাধিক বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিলিট উপাধিও লাভ করেন। তাঁর উল্লেখযোগ্য কিছু বই হল – ‘ছোটো ঠাকুরদার কাশীযাত্রা’, ‘রাজকুমারের পোশাকে’, ‘গজ উকিলের হত্যা রহস্য’, ‘প্রথম প্রতিশ্রুতি’, ‘সুবর্ণলতা’, ‘বকুল কথা’, ‘শশীবাবুর সংসার’, ‘অগ্নিপরীক্ষা’, ‘সোনার হরিণ’ ইত্যাদি। তাঁর বিভিন্ন বই অন্তত ৬৩টি বিভিন্ন ভাষায় অনূদিত হয়েছে। ১৯৯৫ খ্রিস্টাব্দে কলকাতায় তাঁর জীবনাবসান হয়।

কী করে বুঝব অধ্যায়ের পাঠপ্রসঙ্গ

আলোচ্য গল্পটি শুধুমাত্র ছোটোদের নয়, বড়োদের সচেতনতা জাগ্রত করার জন্যও অত্যন্ত প্রাসঙ্গিক। বাড়ির ছোটো সদস্যদের কথাবার্তা ও আচার-ব্যবহার কেমন হবে, তার পিছনে বাড়ির বড়োদের আচরণের গুরুত্ব যে কতখানি এবং বড়োরা নিজেদের আচরণ সম্বন্ধে সচেতন না হয়েই সাধারণত ছোটোদের শাসন করে থাকেন এই গল্পে তা চমৎকার কৌতুকপূর্ণ ভঙ্গিতে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে।

কী করে বুঝব অধ্যায়ের বিষয়সংক্ষেপ

ছয় বছরের ছেলে বুকু নিজের বাড়ির বাইরের রোয়াকে বসে খেলার সময় দুজন অত্যন্ত মোটা মহিলা ও বুকুরই বয়সি একটি মোটাসোটা ছেলে রিকশা চেপে এসে হাজির হন। তাঁরা নিজেদের বুকুর মা নির্মলার ‘ছেনুমাসি’ ও ‘বেণুমাসি’ বলে পরিচয় দেন ও তিনতলার রান্নাঘর থেকে নির্মলাকে ডাকতে বলেন। বুকু মা-কে খবর দিয়ে এসে দেখে যে মোটাসোটা ছেলেটি, যার নাম ডাম্বল, আলমারির তালা উপড়ে ফেলে বেশ কিছু বই মাটিতে ছড়িয়েছে। বুকু জানিয়ে দেয় যে ওগুলি তার রাগি সেজোকাকার বই এবং তিনি এসে এর জন্য প্রহারও করতে পারেন। ডাম্বলের মা ছেলেকে নামমাত্র ধমক দেন এবং বুকুর উপরেই মনে মনে অসন্তুষ্ট হন।

এই সময়ে বুকুর মা এসে এঁদের সাদর অভ্যর্থনা জানিয়ে বলেন যে, মাসিরা আসায় তিনি খুব খুশি হয়েছেন। কিন্তু বুকু ফাঁস করে দেয় যে, এই পাতানো মাসিদের খবর না দিয়ে অসময়ে আসার খবর শুনে তিনি অত্যন্ত বিরক্তি প্রকাশই করেছিলেন। সে আরও জানিয়ে দেয় যে তাদের সিনেমার টিকিট কেনা আছে, বাবা ফিরলেই তাদের সেখানে যাওয়ার কথা। তাই মা তাড়াতাড়ি রান্না সেরে নিচ্ছিলেন। বুকুর মা অত্যন্ত অপ্রতিভ হয়ে বুকুর কান মলে দেন এবং তার কথা অস্বীকার করে বলেন যে ওগুলি বুকু বানিয়ে বলছে। এরপর প্রসঙ্গ পালটানোর জন্য তিনি ডাম্বলের প্রশংসা শুরু করেন এবং তার পড়াশোনার খবর নেন। কিন্তু ডাম্বল সটান জানিয়ে দেয় যে ইস্কুলের মাইনে দিতে হবে বলে তার বাবা বলেছেন পড়ার দরকার নেই। ডাম্বলের মা-ও কথা ঘোরানোর জন্য বুকু যে বই-এ হাত দেওয়ার জন্য ডাম্বলকে শাসিয়েছে, এ কথা জানিয়ে দেন। ছেলের আচরণে নির্মলা লজ্জিত, কাঁদো কাঁদো হয়ে ওঠেন। ইতিমধ্যে ডাম্বল টেবিলল্যাম্প ভাঙে এবং চা-জলখাবার দিয়ে অতিথি আপ্যায়ন করা হয়। এরপর বুকু বলে দেয় যে তার বাবা বাড়ি ফিরে এই মাসিদের আসার খবর শুনে রেগে গেছেন, কারণ সিনেমার টিকিটগুলো নষ্ট হবে। বুকু অতিথিদের জানায় যে তারা তাড়াতাড়ি চলে না গেলে মা রান্না করা ও অতিথিদের নিন্দে করার সময় পাবেন না। এ কথা শুনে ক্রুদ্ধ অতিথিরা চলে গেলে মা বুকুকে প্রচণ্ড মারতে থাকেন। মারার কারণ জেনে বাবাও বুকুকে মারতে শুরু করেন। তাদের মতে, বুকু বাইরের লোকের কাছে বাবা-মাকে অপদস্থ করেছে। কিন্তু ছোটো বুকু বোঝে না কী তার অপরাধ। বাবা-মা তো তাকে সর্বদা সত্যি কথা বলতে এবং কোনো কথা কারুর কাছে না লুকোতে বলেছেন। কিন্তু সেটা সে করেছে বলেই তারা তাকে মারছেন। তাহলে কী করতে হবে সেটা সে কী করে বুঝবে?

কী করে বুঝব অধ্যায়ের নামকরণ

নামকরণ সাহিত্যের এক গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। নামকরণের মধ্য দিয়ে পাঠক বিন্দুতে সিন্ধু দর্শনের মতো সাহিত্য-বিষয়টি পাঠ করার আগে সাহিত্য-বিষয়টি সম্পর্কে খানিক ধারণা লাভ করতে পারেন। সাহিত্যে নামকরণ নানা উপায়ে হতে পারে। যথা – চরিত্রকেন্দ্রিক, ঘটনাকেন্দ্রিক, ব্যঞ্জনাধর্মী ইত্যাদি।

আগাগোড়া কৌতুকের মোড়কে এই গল্পে ছোটোদের করুণ অবস্থার কথা তুলে ধরা হয়েছে। ছয় বছরের শিশু বুকু বাইরের লোকেদের সামনে মা-বাবার আড়ালে বলা নানা কথা ফাঁস করে দিয়ে তাদের চরম অপদস্থ করেছে। মা-বাবা ছেলের এই সহবতহীন আচরণে ক্রুদ্ধ হয়ে তাকে মারতে থাকেন। তাঁরা বুঝতেই পারেন না কেন সে এমন করেছে। কিন্তু বুকু জানায় যে তারাই তাকে বলেছেন সর্বদা সত্যি কথা বলতে এবং কারুর কাছে কোনো কথা না লুকোতে। অথচ সেটা করেছে বলে তারাই তাকে এখন মারছেন। তাই সব শেষে তার প্রশ্ন – ‘কী করে বুঝব, আসলে কী করতে হবে?’ ছোটো বুকুর এই বুঝতে না-পারা অসহায় অবস্থাই এই গল্পের মূল কথা। তাই ‘কী করে বুঝব’ শিরোনামটি এই গল্পের জন্য সুপ্রযুক্ত হয়েছে।

কী করে বুঝব অধ্যায়ের শব্দার্থ ও টীকা

রোয়াক – ঘরের সামনের উঁচু বারান্দা; চাতাল। বেজায় – অতিরিক্ত; খুব। নেহাত – নিতান্ত। পেন্ডুলাম – ঘড়ির দোলক। বিজ্ঞ – জ্ঞানী। গম্ভীর – নিম্ন ও ভারী ধ্বনিযুক্ত; গভীর স্বর। আঁতকে – আতঙ্কিত হয়ে। বার দু-তিন – দুই-তিন বার। ইত্যবসরে – এই সুযোগে। পাল্লা – কপাট। হ্যাঁচকা – হঠাৎ জোরে টানা। অগ্রাহ্যভরে – অবহেলা করে। চোখ পিটপিট – বারবার চোখের পলক ফেলা। মোলায়েম – কোমল ও মসৃণ। ড্যাবড্যাব – করে চোখ বড়ো বড়ো করে। গমগম – গম্ভীর শব্দ। সাদর – আপ্যায়ন। ফ্যালফেলিয়ে – অবাক হয়ে; হতবুদ্ধি হয়ে। মাথায় বজ্রাঘাত – আকস্মিক বিপদে পড়া। হাটে হাঁড়ি ভাঙা – সবার মাঝে গোপন কথা প্রকাশ। চোখ কপালে ওঠা – অবাক হয়ে যাওয়া। ফাঁস – প্রকাশ (এখানে)। চালতা চালতা – ফোলা ফোলা। ব্যাকুল – অস্থির। টপ করে – শীঘ্র; দ্রুত। গাদাগাদি – ঠাসাঠাসি; ঘেঁষাঘেষি। বিচ্ছু – অতিদুরন্ত। বেয়ারা – বিশ্রি; বদ। আহামরি – প্রশংসাসূচক; বিদ্রূপসূচক ধ্বনি। প্রসন্ন – আনন্দিত। হাড়কেপ্পন – অতি কৃপণ; খুব কিপটে। মুখ চুন – লজ্জায় মুখ বিবর্ণ করা। যথেচ্ছ – ইচ্ছামতো প্রচুর। টের পান – বুঝতে পারেন। ধাতস্থ – প্রকৃতিস্থ; শান্ত। শাসাল – প্রতিশোধ নেওয়ার বা শাস্তি দেওয়ার ভয় দেখাল। আক্কেল গুড়ুম – হতভম্ব অবস্থা। হাড় ভাজা ভাজা হওয়া – অতিশয় জ্বালাযন্ত্রণা বা দুঃখভোগ করা। খণ্ডায় – নিবারণ করে। শেলফ – বইয়ের তাক। অপ্রতিভ – অপ্রস্তুত; হতবুদ্ধি। জলের দর – অত্যন্ত সস্তা। রেকাব – ছোটো থালার মতো পাত্র। চটেমটে লাল – অত্যন্ত রেগে। মাস – মাংস। বিশ্বম্ভর মূর্তি – আভিধানিক অর্থে বিশ্বকে যিনি ধারণ করেন; পাঠ্যাংশে ভয়ানক রূপ অর্থে; রুদ্রমূর্তি। হ্যাংলা – লোভী। রণচণ্ডী মূর্তি – ভয়ংকরী মূর্তি; ভীষণ রূপ। অপদস্থ – অপমানিত; লাঞ্ছিত। ঠ্যাঙান – মারেন; প্রহার করেন। বেধড়ক – অপরিমিত; প্রচুর। প্রহার – মার।

আজকের এই আর্টিকেলে অষ্টম শ্রেণীর বাংলা বিষয়ের ঊনবিংশ অধ্যায়কী করে বুঝব’ – এর বিষয়সংক্ষেপ নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেছি। এই বিষয়টি অষ্টম শ্রেণীর বাংলা পরীক্ষায় অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, কারণ এটি পরীক্ষায় প্রায়শই আসে। আশা করি, এই নিবন্ধটি আপনার জন্য উপকারী হয়েছে। যদি কোনো প্রশ্ন থাকে বা আরও তথ্যের প্রয়োজন হয়, আপনি টেলিগ্রামে আমার সাথে যোগাযোগ করতে পারেন। আপনার বন্ধুদের সঙ্গে এই পোস্টটি শেয়ার করতে ভুলবেন না, যাতে তারাও উপকৃত হতে পারে। ধন্যবাদ!

Please Share This Article

Related Posts

নবাব সিরাজউদ্দোলা কে ছিলেন? পলাশীর যুদ্ধের কারণ ও ফলাফল লেখো।

পলাশীর যুদ্ধের কারণ ও ফলাফল

Class 8 English – The Happy Prince – About Author and Story

Class 8 English – The Happy Prince – About Author and Story

Class 8 English – The Happy Prince – Question and Answer

Class 8 English – The Happy Prince – Question and Answer

About The Author

Rahul

Tags

মন্তব্য করুন

SolutionWbbse

"SolutionWbbse" শিক্ষার্থীদের জন্য একটি অনলাইন অধ্যয়ন প্ল্যাটফর্ম। এখানে প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার প্রস্তুতি, মাধ্যমিক পরীক্ষার জন্য গাইডলাইন, এবং বিভিন্ন বিষয়ে পড়াশোনার সাহায্য প্রদান করা হয়। আমাদের মূল লক্ষ্য হলো ইন্টারনেটের মাধ্যমে সকল বিষয়ের শিক্ষণীয় উপকরণ সহজেই সকল শিক্ষার্থীর কাছে পৌঁছে দেওয়া।

Editor Picks

দীপালি সংঘ কেন প্রতিষ্ঠিত হয়? দীপালি সংঘের কার্যাবলি কী ছিল?

অ্যান্টি-সার্কুলার সোসাইটি সম্পর্কে সংক্ষিপ্ত বিবরণ দাও।

বর্জ্যের পুনর্ব্যবহার ও পুনর্নবীকরণ কাকে বলে? বর্জ্যের পুনর্ব্যবহার ও পুনর্নবীকরণের মধ্যে পার্থক্য

বীণা দাস বিখ্যাত কেন? বীনা দাস সম্পর্কে একটি সংক্ষিপ্ত টীকা লেখো।

রশিদ আলি দিবস কেন পালিত হয়? রশিদ আলি দিবস সম্পর্কে সংক্ষেপে আলোচনা করো।