আজকের আর্টিকেলে আমরা অষ্টম শ্রেণীর বাংলা বিষয়ের সপ্তত্রিংশ অধ্যায় ‘লোকটা জানলই না’ এর উপর ব্যাখ্যাভিত্তিক সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন ও উত্তর নিয়ে আলোচনা করবো। এই প্রশ্নগুলো অষ্টম শ্রেণীর বাংলা পরীক্ষার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, কারণ এগুলো প্রায়ই পরীক্ষায় আসে।
বাঁদিকে বুক-পকেটটা সামলাতে সামলাতে – এখানে ‘বাঁদিকের বুক-পকেট’ বলতে কী বোঝানো হয়েছে?
প্রশ্নে প্রদত্ত উদ্ধৃতাংশটিতে কবি ‘বাঁদিকের বুক পকেট’ বলতে অর্থ গচ্ছিত রাখার মানসিকতাকে নির্দেশ করেছেন। সাধারণত লোকে তার বুকপকেটে টাকাপয়সা রাখে। আধুনিক যন্ত্রসভ্যতার যুগের মানুষ ধনসম্পত্তি রক্ষার দিকেই অধিক মনোযোগ দিয়ে থাকে। তাদের কাছে অর্থসর্বস্বতাই সবচেয়ে মূল্যবান। অর্থ সঞ্চিত করতে করতেই তাদের ইহকাল-পরকাল কেটে যায়।
ইহকাল পরকাল – এই শব্দদ্বয় এখানে কী অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে?
ইহকাল শব্দের সাধারণ অর্থ হল জন্ম থেকে মৃত্যুকালীন সময় অর্থাৎ জীবিতকাল এবং ‘পরকাল’ বলতে সাধারণত বোঝানো হয় মৃত্যুর পরে প্রাপ্ত অবস্থা। কবি সুভাষ মুখোপাধ্যায় তাঁর ‘লোকটা জানলই না’ কবিতার মধ্যে ‘ইহকাল পরকাল’ বলতে জীবিতকাল ও মৃত্যুকে বুঝিয়েছেন। কবি ওই শব্দদ্বয়ের মধ্য দিয়ে বোঝাতে চেয়েছেন যে, গচ্ছিত ধনসম্পদ সামলাতে সামলাতেই লোকটির সমগ্র জীবন কেটে যায় এবং মৃত্যু উপস্থিত হয়।
আলাদিনের আশ্চর্য-প্রদীপ আসলে কী? তাকে এরকম বলার কারণ বুঝিয়ে দাও।
আরব্য রূপকথার কাহিনির একটি উল্লেখযোগ্য চরিত্র হল আলাদিন। সে একটি জাদুপ্রদীপ পেয়েছিল। সেই প্রদীপটি ঘষলে তার মধ্য থেকে একটি দৈত্য বের হয়ে আসত। আলাদিনের নির্দেশ অনুযায়ী সে মুহূর্তের মধ্যে যে-কোনো প্রকার অসম্ভবকে সম্ভব করে তুলত।
কবি সুভাষ মুখোপাধ্যায় তাঁর ‘লোকটা জানলই না’ কবিতার মধ্যে ‘আলাদিনের আশ্চর্য-প্রদীপ’ বলেছেন হৃদয়কে। কারণ হৃদয়ই পৃথিবীর সর্বাপেক্ষা মূল্যবান বস্তু। হৃদয়বান ব্যক্তি পৃথিবীর যাবতীয় অসম্ভবকে সম্ভব করে তুলতে পারে তার চিত্ত তথা মননের তাগিদে।
তার কড়িগাছে কড়ি হলো – বলতে কবি কী বুঝিয়েছেন?
প্রশ্নোক্ত অংশটি কবি সুভাষ মুখোপাধ্যায়ের ‘লোকটা জানলই না’ নামক কবিতা থেকে নেওয়া হয়েছে। আলোচ্য কবিতায় কবি হৃদয়হীন, অর্থসর্বস্ব একজন মানুষের চিত্র অঙ্কন করেছেন। লোকটি আজীবন অর্থের পিছনে ছুটেছে এবং তার ফলস্বরূপ লক্ষ্মীদেবী অধিষ্ঠাত্রী হয়েছেন তার গৃহে। অর্থাৎ তার ধনসম্পদ বৃদ্ধি পেয়েছে ক্রমে ক্রমে। প্রসঙ্গত বলা যায় যে, ‘কড়ি’-কে পূর্বে বিনিময়ের মুদ্রারূপে ব্যবহার করা হত এদেশে। তাই ‘কড়িগাছ’ বলতে ধন বা সম্পদের কথাই বলেছেন কবি।
লোকটা জানলই না কবিতায় হৃদয়কে কীসের সঙ্গে তুলনা করা হয়েছে? কেন করা হয়েছে?
কবি সুভাষ মুখোপাধ্যায়ের ‘লোকটা জানলই না’ কবিতায় আলাদিনের আশ্চর্য প্রদীপের সঙ্গে হৃদয়ের তুলনা করা হয়েছে।
আরব্য রজনী উপন্যাসের উল্লেখযোগ্য চরিত্র আলাদিনের একটি প্রদীপ ছিল, যাকে ঘর্ষণ করলে তা থেকে অলৌকিক ক্ষমতাসম্পন্ন এক দৈত্য বেরিয়ে আসত এবং আলাদিনের নির্দেশ মতো সে অসম্ভবকে সম্ভব করে তুলতে পারত। কবি মনে করেন মানুষের অন্তর বা হৃদয় হল তেমনই অসম্ভবকে সম্ভব করে তোলার ক্ষমতাসম্পন্ন বস্তু বা শক্তি। হৃদয়ের মতো ঐশ্বর্যশালী বস্তু আর কিছুই নয়। প্রদীপ যেমন আলাদিনকে প্রভূত ঐশ্বর্য দিতে পারত, হৃদয়ও তেমনই দিতে পারে মানুষকে। তাই কবি হৃদয়কে আলাদিনের আশ্চর্য প্রদীপের সঙ্গে তুলনা করেছেন।
লোকটার হইকাল পরকাল গেল। – উদ্ধৃতাংশের তাৎপর্য আলোচনা করো।
প্রশ্নোক্ত অংশটি কবি সুভাষ মুখোপাধ্যায়ের ‘লোকটা জানলই না’ নামক কবিতা থেকে নেওয়া হয়েছে। আলোচ্য কবিতায় কবি একজন অর্থসর্বস্ব মানুষের চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য তুলে ধরেছেন। লোকটা সারাজীবন অর্থ-উপার্জন আর তা সঞ্চয়ের নেশায় ছুটে বেরিয়েছে। প্রচুর অর্থ সে সঞ্চয় করেছে। লক্ষ্মী দেবী তার গৃহে অধিষ্ঠান করে আছেন কিন্তু এই অর্থের পিছনে ছুটতে গিয়ে কখন যে জীবনটা শেষ হয়ে গেছে তা তার অনুভূতিতেও আসেনি। জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত সময় অর্থাৎ ইহকালে সে খোঁজ পেল না আসল সম্পদ হৃদয়ের, আর মৃত্যুর পরে যে কী আছে তা তো কারও জানাই নেই। এভাবে সমগ্র জীবনটাই তার অতিবাহিত হয়ে গেছে নিজের অজান্তেই।
খসে পড়ল তার জীবন – উক্তিটির তাৎপর্য লেখো।
সারাজীবন অর্থের পিছনে ছুটেছে লোকটা, সঞ্চয় করেছে প্রচুর সম্পদ। কিন্তু সকল সম্পদের সেরা যে হৃদয় তার খোঁজই জানল না লোকটা। আবার অর্থের পিছনে ছুটতে ছুটতে এবং গচ্ছিত অর্থকে সামলাতে সামলাতে একসময় জীবনটাই তার খসে পড়ল অর্থাৎ মৃত্যুর মাঝে হারিয়ে গেল সে। কখন যে ঝরে গেল জীবন-সেটাও সে বুঝতে পারেনি। প্রশ্নোক্ত উদ্ধৃতাংশের মাধ্যমে কবি এ কথাই বোঝাতে চেয়েছেন।
আজকের এই আর্টিকেলে আমরা অষ্টম শ্রেণীর বাংলা বিষয়ের সপ্তত্রিংশ অধ্যায় ‘লোকটা জানলই না’ – এর উপর ভিত্তি করে ব্যাখ্যাভিত্তিক সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন ও উত্তর নিয়ে আলোচনা করেছি। এই প্রশ্নগুলো অষ্টম শ্রেণীর বাংলা পরীক্ষার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, কারণ এগুলো পরীক্ষায় প্রায়ই আসে। আশা করি, এই নিবন্ধটি আপনার পড়াশোনার জন্য উপকারী হয়েছে। যদি আপনার কোনো প্রশ্ন থাকে বা আরও সাহায্যের প্রয়োজন হয়, তাহলে নির্দ্বিধায় টেলিগ্রামে আমার সাথে যোগাযোগ করতে পারেন। আপনার বন্ধুদের সঙ্গেও এই পোস্টটি শেয়ার করুন, যাতে তারাও এ থেকে উপকৃত হতে পারে। পড়ার জন্য ধন্যবাদ!