অষ্টম শ্রেণি – বাংলা – নিখিল-বঙ্গ-কবিতা-সংঘ

অষ্টম শ্রেণির বাংলা বিষয়ের নিখিল-বঙ্গ-কবিতা-সংঘ অধ্যায়ের প্রশ্ন ও উত্তর গুলি পরীক্ষার জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এইভাবে নিখিল-বঙ্গ-কবিতা-সংঘ অধ্যায়ের প্রশ্ন ও উত্তর গুলি যদি তোমরা প্রস্তুত করে না যাও তাহলে পরীক্ষায় নিখিল-বঙ্গ-কবিতা-সংঘ অধ্যায়ের প্রশ্ন ও উত্তর গুলোর উত্তর দিতে পারবে না। তাই নিখিল-বঙ্গ-কবিতা-সংঘ অধ্যায়ের প্রশ্ন ও উত্তর গুলি ভালো করে মুখস্ত করে গেলে তোমরা পরীক্ষায় খুব ভালো ফলাফল পাবে।

চার বান্ধবী – মালু, কালু, বুলু ও টুলু – ছাত্রীনিবাসে থাকত। তাদের বন্ধুত্ব ছিল অটুট, এবং তারা নিজেদের ‘গন্ডালু’ নামে ডাকত। স্কুলে ভর্তি হওয়ার পর, মালু তার মাসির বাড়ি থেকে কালুকে এক অদ্ভুত পদ্যে লেখা চিঠি পাঠায়। এই চিঠি মালুর কবিতা লেখার প্রতিভা সকলের কাছে প্রকাশ করে এবং ধীরে ধীরে স্কুলের সকলের মধ্যে কবিতা লেখার প্রতি আগ্রহ জাগ্রত করে।

বড়ো মিস বিশ্বাসের নজর এড়িয়ে, মালু, কালু, বুলু ও টুলু ‘নিখিল-বঙ্গ-কবিতা-সংঘ’ গঠন করে। কবিতা সংঘের অধিবেশনের জন্য উপযুক্ত স্থান খুঁজে পেতে সমস্যায় পড়ে তারা। অবশেষে, রাত বারোটায় খাবার ঘরে তাদের প্রথম অধিবেশন অনুষ্ঠিত হয়।

অধিবেশনের জন্য বিস্কুট আনার দায়িত্ব ছিল হাসির। টুলু বুলু, হাসি ও কাজলকে পয়সা দিয়ে পেয়ারা, বিস্কুট ও চিনে বাদাম কিনতে বলে। মাঝরাতে, যখন সকলেই আলোচনার জন্য রান্নাঘরে জড়ো হয়, তখন তারা দেখতে পায় খাবার ঘর উজ্জ্বল আলোয় ঝলমল করছে। টেবিলে সাদা ফুলকাটা চাদর বিছানো, ফুলদানিতে পদ্ম ও গোলাপ সাজানো, আর নানা রকমের খাবার সাজানো আছে কাচের বাসনে।

টেবিলে বসে আছে মণিকাদি, অণিমাদি, হিরণদি এবং মিস বিশ্বাস। সকলেই অবাক। সভা শুরু হয় কবিতা দিয়ে, এবং দিদিমণিরাও খুশি হন। প্রত্যেক মেয়ের নামে দুটি করে লাইন কবিতায় সম্পাদিকার রিপোর্ট শেষ হয়। মণিকাদি ও অন্যান্য দিদিরা সাহিত্য সভার প্রশংসা করেন। অণিমাদি শিক্ষিকাদের পক্ষ থেকে কবিতা সংঘকে অভিনন্দন জানান।

পরের দিন, অশিমাদি ছাত্রীদের লেখার প্রশংসা করেন। সাহিত্য সংঘটি আরও জমে ওঠে, সপ্তাহে সপ্তাহে অধিবেশন হয় এবং হাতে লেখা পত্রিকাও বের হয়। ক্লাসের সবাই যোগ দেয় এই সংঘে, এবং সকলেরই সাহিত্য চর্চায় আশ্চর্যজনক উন্নতি দেখা যায়।

এই গল্পটি স্কুলের মেয়েদের একটি দলের, যারা তাদের নিজস্ব সাহিত্য সংঘ গঠন করে। স্কুলের শাসন ব্যবস্থা ছিল বেশ কঠোর, তাই মেয়েরা মনে করেছিল পদ্য আবৃত্তির মাধ্যমে তারা মনের ভাব প্রকাশ করতে পারবে।

অষ্টম শ্রেণি – বাংলা – নিখিল-বঙ্গ-কবিতা-সংঘ

নিখিল-বঙ্গ-কবিতা-সংঘ অধ্যায়ের লেখক পরিচিতি

বিশিষ্ট লেখিকা নলিনী দাশ জন্ম এবং বৈবাহিকসূত্রে দুই প্রখ্যাত সাহিত্যিক পরিবারের সদস্যা ছিলেন। তিনি ছিলেন প্রতিভাবান ব্যক্তিত্ব সত্যজিৎ রায়ের সম্পর্কে ভগিনী। তার বিবাহ হয় বাংলা সাহিত্যের বিখ্যাত কবি জীবনানন্দ দাশের পুত্র অশোকানন্দ দাশের সঙ্গে। ১৯৭৪ খ্রিস্টাব্দে লেখিকা নলিনী দাশ ‘সন্দেশ’ পত্রিকার কার্যনির্বাহী সম্পাদকের পদে যোগদান করেন। এবং তার স্বামী যোগ দেন ওই সংবাদপত্রের প্রকাশকরূপে।

নিখিল-বঙ্গ-কবিতা-সংঘ অধ্যায়ের বিষয়সংক্ষেপ

চারজন সহপাঠী ছাত্রীনিবাসে থাকে। ক্লাসে উনিশটি মেয়ে থাকলেও মালু, কালু, বুলু ও টুলু অভিন্নহৃদয় বন্ধু। তারা তাদের সংহতিকে প্রাধান্য দিতে দলটির নাম দেয় ‘গন্ডালু’। চারজন একসঙ্গে থাকায় তারা ‘গন্ডা’ এবং সবার নামের শেষে ‘লু’ থাকায় নামটি বেশ মজাদার। স্কুলে ভরতি হওয়ার পর মালু মাসির বাড়ি থেকে কালুকে পদ্যে অদ্ভুত পত্র পাঠায়। সেই থেকে মালুর কবিখ্যাতি ছড়ায় স্কুলে। ধীরে ধীরে সবার মধ্যে কবিতা লেখার উৎসাহ জন্মায় এবং মালু সবার নামেই কবিতা লিখে চমকে দেয়। বড়ো মিস বিশ্বাসের কড়া নজর এড়িয়ে কবিতা লেখা চলতে থাকে এবং এইভাবে নিখিল-বঙ্গ-কবিতা-সংঘের জন্ম হয়।

কবিতা সংঘের অধিবেশন নিয়ে ব্যস্ততা শুরু হয়, কিন্তু উপযুক্ত স্থান পাওয়া যায় না। চারজনের বিশেষ উৎসাহ থাকলেও কাজল, ললিতা, বিজলি রবিবার দুপুরে অধিবেশন নিয়ে আপত্তি জানায়। এরপর বীণা, হাসি আর নন্দিতাও শনিবার বিকেলে অধিবেশনের ব্যাপারে আপত্তি করে। পরে ঠিক হয় রাত বারোটায় খাবার ঘরে প্রথম কবিতা সংঘের অধিবেশন হবে।

অধিবেশন উপলক্ষ্যে বিস্কুট আনার ভার পড়ে হাসির উপর। পেয়ারা, বিস্কুট আর চিনে বাদাম কেনার জন্য পয়সা বুলু, হাসি ও কাজলকে দিয়ে দেওয়ার কথা টুলুকে বলা হয়। মাঝরাতে ঘুম থেকে উঠে আলোচনার জন্যে সবাই হাজির রান্নাঘরে, কিন্তু খাবার ঘরটি উজ্জ্বল আলোয় পূর্ণ হয়েছে। ঘরের মধ্যে বড়ো টেবিলে শৌখিন সাদা ফুলকাটা চাদর পাতা ছিল। বড়ো বড়ো পিতলের ফুলদানিতে পদ্ম আর গোলাপ সাজানো ছিল। এ ছাড়া নানারকমের খাবার সাজানো ছিল কাচের বাসনে।

টেবিলে নানাধরনের খাবার। ভালো করে চোখ রগড়ে টুলু তাকিয়ে দেখে মণিকাদি, অণিমাদি, হিরণদি এবং মিস বিশ্বাস। সবাই বেশ বিস্মিত হল। সভা আরম্ভ হল এবং তা কবিতার মধ্য দিয়ে, তা দেখে দিদিমণিরাও খুশি হলেন। প্রত্যেক মেয়ের নামে দু-দু লাইন কবিতায় সম্পাদিকার রিপোর্ট শেষ হয়। মণিকাদি ও অন্যান্য দিদিরা সাহিত্যসভার প্রশংসা করলেন। অণিমাদি টিচারদের পক্ষে কবিতা সংঘকে অভিনন্দন জানান। পরের দিন অশিমাদি ছাত্রীদের লেখার প্রশংসা করেন। সাহিত্য সংঘ জমজমাট হয়, সপ্তাহে সপ্তাহে অধিবেশন হয় এবং হাতে লেখা পত্রিকাও বের হয়। ক্লাসের সবাই যোগ দিয়েছে এবং সবার আশ্চর্য উন্নতি হল সাহিত্যচর্চার ক্ষেত্রে।

নিখিল-বঙ্গ-কবিতা-সংঘ অধ্যায়ের শব্দার্থ ও টীকা

প্রতীক্ষা – অপেক্ষা। কৌতূহল – জানার বাসনা। কীর্তি – কৃতিত্ব। সাজসজ্জা – সাজাগোজা। উনবিংশতি – উনিশ। কলিকালে – সাম্প্রতিক সময়ে, বর্তমান সময়ে। সংবর্ধনা – সম্মান প্রদর্শন। দুর্বিষহ – ভীষণ যন্ত্রণা, যা সহ্য করা যায় না। আঁখি – চোখ। স্থাপন – প্রতিষ্ঠা। সন্তর্পণে – সতর্কতার সঙ্গে। নিখিল – সমগ্র। মুশকিল – সমস্যা। অধিবেশন – বৈঠক। উৎসাহ – আগ্রহ। কোশায্যক্ষ – হিসাবরক্ষক। হুড়মুড়িয়ে – তাড়াতাড়ি করে, ব্যস্ততার সঙ্গে। আপত্তি – অস্বীকার, প্রতিবাদ। মিটমাট – নিষ্পত্তি, রফা। বিরসবদনে – ম্লান মুখে। ফিশফিশ – খুব আস্তে কথা, যা অন্য কেউ শুনতে না পায়। দুনিয়ার – পৃথিবীর। উত্তেজনা – উৎসাহ, উৎসাহ দান। সাধ্য – ইচ্ছে। পরিকল্পনা – মনে মনে কল্পনা, মতলব। চিরকুট – টুকরো কাগজ। রিপোর্ট – বিবরণ প্রতিবেদন। পণ – প্রতিজ্ঞা।

এই গল্পটি স্কুলের মেয়েদের সাহস, সৃজনশীলতা এবং ঐক্যের প্রতিফলন। স্কুলের শাস্ত পরিবেশের মধ্যেও তারা তাদের সাহিত্যিক আগ্রহকে ধারণ করে এবং একটি সফল সাহিত্য সংঘ গঠন করে। এই ঘটনা স্কুলের মেয়েদের মধ্যে সাহিত্যচর্চাকে উৎসাহিত করে এবং তাদের সৃজনশীল প্রতিভাকে বিকশিত করতে সাহায্য করে।

মালু, কালু, বুলু ও টুলু – চার অভিন্নহৃদয় বন্ধু যাদের বন্ধুত্বের বন্ধন ছিল অটুট। ‘গন্ডালু’ নামের তাদের দলটি ছিল তাদের ঐক্য ও সহযোগিতার প্রতীক। স্কুলে ভর্তির পর মালুর কবিতা প্রতিভা সকলের নজর কাড়ে এবং ধীরে ধীরে স্কুলের সকলের মধ্যে কবিতা লেখার আগ্রহ জাগ্রত হয়।

কঠোর নিয়মকানুনের চোখ ফাঁকিয়ে, ‘নিখিল-বঙ্গ-কবিতা-সংঘ’ গঠনের মাধ্যমে তারা তাদের সাহিত্যচর্চার পথে এগিয়ে যায়। অধিবেশনের জন্য জায়গা খুঁজে পেতে সমস্যায় পড়লেও, তাদের অদম্য ইচ্ছাশক্তি তাদের এগিয়ে নিয়ে যায়। রাত বারোটায় খাবার ঘরে অনুষ্ঠিত তাদের প্রথম অধিবেশন ছিল অসাধারণ।

অধ্যাপিকাদের অজান্তে, মণিকাদি, অণিমাদি, হিরণদিদের সারপ্রাইজ উপস্থিতি তাদের আনন্দকে আরও বৃদ্ধি করে। কবিতা, গান, আলোচনার মাধ্যমে সাহিত্য সভার পরিবেশ ছিল মনোমুগ্ধকর।

এই ঘটনার পর ‘নিখিল-বঙ্গ-কবিতা-সংঘ’-এর কার্যক্রম আরও জোরালো হয়ে ওঠে। সপ্তাহে সপ্তাহে নিয়মিত অধিবেশন, হাতে লেখা পত্রিকা – সব মিলিয়ে তাদের সাহিত্যচর্চা ছিল অনুপ্রেরণাদায়ক।

ক্রমশ স্কুলের সকল ছাত্রীই এই সংঘের সদস্য হয়ে ওঠে এবং তাদের লেখার মান অসাধারণভাবে উন্নত হয়। ‘চার বান্ধবীর’ এই অসাধারণ গল্প আমাদের শেখায় যে, বন্ধুত্ব, একাগ্রতা এবং

নিষ্ঠার মাধ্যমে যেকোনো বাধা অতিক্রম করা সম্ভব এবং সাহিত্যচর্চার মাধ্যমে জীবনে আনা যায় অপার্থিব আনন্দ।

Share via:

মন্তব্য করুন