অষ্টম শ্রেণি – বাংলা – পাড়াগাঁর দু-পহর ভালোবাসি – রচনাধর্মী প্রশ্ন ও উত্তর

অষ্টম শ্রেণির বাংলা বিষয়ের পাড়াগাঁর দু-পহর ভালোবাসি অধ্যায়ের রচনাধর্মী প্রশ্ন ও উত্তর গুলি পরীক্ষার জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এইভাবে পাড়াগাঁর দু-পহর ভালোবাসি অধ্যায়ের রচনাধর্মী প্রশ্ন ও উত্তর গুলি যদি তোমরা প্রস্তুত করে না যাও তাহলে পরীক্ষায় পাড়াগাঁর দু-পহর ভালোবাসি অধ্যায়ের রচনাধর্মী প্রশ্ন ও উত্তর গুলোর উত্তর দিতে পারবে না। তাই পাড়াগাঁর দু-পহর ভালোবাসি অধ্যায়ের রচনাধর্মী প্রশ্ন ও উত্তর গুলি ভালো করে মুখস্ত করে গেলে তোমরা পরীক্ষায় খুব ভালো ফলাফল পাবে।

Table of Contents

কবি জীবনানন্দ দাশ বাংলা সাহিত্যের একজন বিখ্যাত কবি। গ্রামবাংলার কোলে বেড়ে ওঠা এই কবি প্রকৃতির প্রতি ছিলেন অত্যন্ত মুগ্ধ। তাঁর কবিতায় প্রকৃতির নানা দিক ফুটে উঠেছে। “দ্বিপ্রহর” কবিতাটি তার অন্যতম উল্লেখযোগ্য রচনা। এই কবিতায় কবি গ্রামবাংলার দ্বিপ্রহরের বর্ণনা দিয়েছেন এক অপূর্ব ভাষায়।

এই কবিতায় কবি দ্বিপ্রহরের রোদের স্মৃতি চরণে ফিরিয়ে এনেছেন। সেই রোদের গন্ধে কত স্বপ্ন, কত গল্প লুকিয়ে আছে। কবি মনে করেন গ্রামের প্রান্তর আর শঙ্খচিল তার কাছে কথা বলে, কত যুগ ধরে তারা কবির সাথে সঙ্গী। দ্বিপ্রহরের রোদে এক মেয়ে নকশাপেড়ে শাড়ি পরে হেঁটে যাচ্ছিল, কিন্তু আজ সে আর নেই। হিজল গাছের সাথে বাঁধা ঝাঁঝরা-ফোঁপরা ডিঙিটি মালিকহীন হয়ে পড়ে আছে। বুনো চালতা ঘাসের উপরে জলসিড়ি নদীর ধারে পড়ে আছে। সবকিছুতেই এক অযত্নের ছাপ।

পাড়াগাঁর দু-পহর ভালোবাসি – অষ্টম শ্রেণি – বাংলা – রচনাধর্মী প্রশ্ন ও উত্তর

যদিও কবি দ্বিপ্রহরের রোদকে ভালোবাসেন, তবুও এই রোদের ভেজা গন্ধে তার মনে এক অদ্ভুত বিষণ্ণতা জাগ্রত হয়। কবি বুঝতে পারেন যে, সময়ের সাথে সাথে সবকিছুই বদলে যাচ্ছে। তার শৈশবের স্মৃতি, প্রিয় মানুষ, সবকিছুই হারিয়ে গেছে। এই হারিয়ে ফেলার বেদনা কবির মনে গভীরভাবে বিদ্যমান।

“দ্বিপ্রহর” কবিতাটি কেবল প্রকৃতির বর্ণনা নয়, বরং জীবনের নश्वরতার এক বেদনাদায়ক অনুভূতি। কবি এই কবিতায় গ্রামবাংলার প্রতি তার গভীর মমতাবোধ ও জীবনের প্রতি তার দার্শনিক চিন্তাভাবনাকে ফুটিয়ে তুলেছেন।

প্রকৃতির কেমন ছবি কবিতাটিতে ফুটে উঠেছে তা আলোচনা করো।

জীবনানন্দ দাশ প্রকৃতির কবি। নিসর্গপ্রকৃতি কবির বাণীতে বাঙ্ময় হয়ে উঠেছে। কবির কবিতায় প্রকৃতির নিবিড়তা প্রকাশিত হয়েছে। ‘রূপসী বাংলা’ কাব্যের প্রতিটি কবিতাতেই গ্রামবাংলার নিসর্গপ্রকৃতির ছবি সুস্পষ্টরূপে ব্যক্ত হয়েছে। বাংলা প্রকৃতির রূপে কবি এমনভাবে আপ্লুত হয়েছেন যে, কবি ‘রূপসী বাংলা’র অপর এক কবিতাতে উল্লেখ করেছেন –

‘বাংলার মুখ আমি দেখিয়াছি তাই আমি
পৃথিবীর রূপ খুঁজিতে যাই না আর।’

আজন্ম বঙ্গপ্রকৃতির বুকে মগ্ন হয়ে থাকা কবি হৃদয় দিয়ে অনুভব করেছেন বাংলার নদী, মাঠ, প্রান্তরকে। কবির স্বপ্নে বারবার উঁকি দিয়ে গেছে বাংলার প্রকৃতি। গ্রামের আকাশের রোদ, উদাস প্রান্তর, দূর আকাশে উড়ে বেড়ানো শঙ্খচিল, জলসিড়ি নদীর ধারে নুয়ে পড়া চালতাগাছ, হিজল গাছের সঙ্গে বাঁধা একখানি ডিঙি এসবই কবির প্রকৃতি ভাবনার রূপ ধরে আমাদের সামনে সুস্পষ্ট হয়েছে। ঝরেপড়া শুকনো হলুদ পাতা, শালিক পাখির কলবর, ভাঙা মঠ-এসবই যেন বহুযুগ ধরে কবিকে সঙ্গ দিয়েছে, কথা শিখিয়েছে। বাংলার অপরূপ রূপে কবিকে যেমন মোহিত করেছে তেমনি কবি বঙ্গপ্রকৃতির অনিন্দ্যসুন্দর রূপকে বাণীরূপ দিয়ে পাঠকের সামনে তুলে ধরেছেন।

কেঁদে কেঁদে ভাসিতেছে আকাশের তলে – কবির এমন মনে হওয়ার কারণ কী বলে তোমার মনে হয়?

সাধারণভাবে দুঃখ তথা বেদনা-অনুভূতি প্রকাশের মাধ্যম হল কান্না। যন্ত্রণায় মানুষ এবং মানবেতর প্রাণ কান্নার মধ্য দিয়ে তাদের দুঃখানুভূতিকে প্রকাশ করে।

কবি জীবনানন্দ দাশ বঙ্গপ্রকৃতির রূপতন্ময় কবি। এই বাংলাপ্রকৃতির যুগযুগান্তের প্রবহমানতার সঙ্গে কবি একাত্মতা অনুভব করেছে। তাই কবি বাংলার অতি পরিচিত জলসিড়ি নদীর জলে একটি ভাসমান ডিঙি দেখে নিঃসঙ্গ, একাকী, মালিকহীন ডিঙিটির যন্ত্রণার শরিক হয়েছেন। ঝাঁঝরা-ফোঁপরা ডিঙিটি নির্জীব; কিন্তু একদিন এই ডিঙি ঘিরে প্রাণের উত্তাপ চিরসত্য ছিল। অথচ আজ তা শূন্য, ফাঁকা। কবির জীবনেও একদিন পাড়াগাঁয়ের রোদ, শঙ্খচিল, শালিকের কলরব, চালতা-হিজলের বুনো গন্ধ চিরসত্য ছিল; কিন্তু বর্তমানে তা ঝরেপড়া শুকনো হলুদ পাতার মতোই বহুদূরে সরে গেছে। কবির জন্মজন্মান্তরের প্রকৃতি যেন স্মৃতি মেদুরতায় স্বপ্নে জেগে রয়েছে। তাই কবির মনও যেন ওই নিঃসঙ্গ ডিঙি নৌকোর মতো আকাশের তলে কেঁদে কেঁদে ভেসে থাকে।

পাড়াগাঁর দু-পহর ভালোবাসি শীর্ষক কবিতাটি ‘রূপসী বাংলা’ কাব্যগ্রন্থের কত সংখ্যক কবিতা? ‘পাড়াগাঁর দু-পহর ভালোবাসি’ কবিতায় কবি জীবনানন্দের কবি-মানসিকতার পরিচয় কীভাবে ধরা দিয়েছে, তা বুঝিয়ে দাও?

পাড়াগাঁর দু-পহর ভালোবাসি কবিতাটি ‘রূপসী বাংলা’ কাব্যগ্রন্থের ২৫ সংখ্যক কবিতা।

রবীন্দ্রপরবর্তী বাংলা কাব্যসাহিত্যে একজন স্মরণীয় কবি হলেন জীবনানন্দ দাশ। ‘রূপসী বাংলা’ কাব্যের প্রতিটি কবিতায় জন্মভূমির প্রতি তাঁর গভীর অনুরাগের প্রকাশ লক্ষ করা যায়। বাংলার মাঠঘাট, পাখপাখালি, নদীনালা অর্থাৎ প্রকৃতি তাঁর কবিতায় সজীব হয়ে উঠেছে। নিসর্গপ্রকৃতি তাঁর লেখনীর মাধ্যমে কাব্যিক রূপ ধারণ করেছে। আলোচ্য কবিতাটিতেও তার প্রমাণ দেখতে পাই।

সাধারণভাবে জীবনের ফেলে আসা দিনগুলোর স্মৃতি মানুষের মনকে আলোড়িত করে। কবির ক্ষেত্রেও তাই হয়েছে। গ্রামীণ দুপুরের ক্লান্ত রোদ্দুর তাঁর মনে এখনও উজ্জ্বল। সেই রোদের গন্ধে কত স্বপ্নময় কাহিনি লুকিয়ে আছে – তা আর কেউ জানে না, জানেন কেবল কবি, গাঁয়ের প্রান্তর আর ওই প্রান্তরের শঙ্খচিল। শুষ্ক পাতা যেমনভাবে ঝরে যায়, তেমনভাবেই ঝরে গেছে শালিকের স্বর, নকশাপেড়ে শাড়ি পরিহিতা মেয়েটি ওই রোদের ভিতর। জীবনের রুক্ষ গদ্যকে কবি তাঁর কল্পনার স্পর্শে কাব্যিক ও ছন্দময় করে তুলেছেন আলোচ্য কবিতায়।

জীবনানন্দ একজন কবি, তাই তাঁর কাব্যচেতনার কোমল স্পর্শে বুনো চালতার ছন্দহীন শাখাগুলির অবস্থিতিও ছন্দময় হয়ে উঠেছে কবিতায়। ‘জলে তার মুখখানা দেখা যায়’ – এই উক্তি কবিত্বরসে পরিপূর্ণ হয়ে উঠেছে। রোদের বুকে ভিজে বেদনার গন্ধ কেবল কবিই অনুভব করতে পারেন। আর তাঁর লেখনীতেই তা পাঠকের মনে কাব্যরসের সঞ্চার ঘটায়। আলোচ্য কবিতায় তারই প্রমাণ পাওয়া গেল। এভাবেই ‘পাড়াগাঁর দু-পহর ভালোবাসি’ কবিতায় কবির কবিমানসিকতার প্রকাশ লক্ষ করা যায়।

কবিতাটির গঠন-প্রকৌশল আলোচনা করো।

রূপসী বাংলা কাব্যের কবিতাগুলিতে কবি প্রচলিত রচনারীতির বাইরে বেরিয়ে এসেছেন। এই কাব্যের কবিতাগুলি সনেট আকারে লেখা হয়েছে। সনেটের নিয়ম অনুসারে ১৪টি চরণে কবিতাটি বর্ণিত হয়েছে। প্রথম আটটি চরণ অর্থাৎ অষ্টক এবং পরের ছয়টি চরণ অর্থাৎ ষটক – এভাবে কবিতাটি গঠিত। অষ্টকে কবিতার ভাববস্তু বোঝানোর চেষ্টা করা হয়েছে, আর ষটকে তা পরিণতি পেয়েছে।

কবিতাটি সনেটের ক খ খ ক, ক খ খ ক, ঙ চ ছ, ঙ চ ছ ‘ – এই রীতি অনুসারে নির্মিত হয়েছে। তবে অষ্টম চরণের শেষ ধ্বনিটির ক্ষেত্রে একটু ব্যতিক্রম ঘটেছে। রীতি অনুসারে সেখানে ‘ছে’ ধ্বনির প্রয়োগের বদলে ‘সে’ ধ্বনিটি ব্যবহৃত হয়েছে।

কবিতাটির ১২টি চরণে ২২টি করে বর্ণ ব্যবহৃত হয়েছে। কিন্তু চতুর্থ ও সপ্তম চরণে যথাক্রমে ২১টি ও ২৩টি বর্ণ ব্যবহৃত হয়েছে। ফলে প্রতিটি চরণে সমসংখ্যক বর্ণ এখানে নেই-যা একটি ত্রুটি। তবুও আলোচ্য চতুর্দশপদী কবিতাটি একটি সনেট হয়ে উঠেছে।

গন্ধ লেগে আছে রৌদ্রে যেন ভিজে বেদনার – কবিতায় কীভাবে এই অপরূপ বিষণ্ণতার স্পর্শ এসে লেগেছে, তা যথাযথ পঙ্ক্তি উদ্ধৃত করে আলোচনা করো।

প্রশ্নে উদ্বৃত অংশটি জীবনানন্দ দাশের ‘পাড়াগাঁর দু-পহর ভালোবাসি’ নামক কবিতা থেকে নেওয়া হয়েছে। আলোচ্য কবিতায় এক বিষণ্ণতার ছবি স্পষ্ট হয়ে ফুটে উঠেছে।

কবি গ্রামীণ প্রকৃতির কোলে বড়ো হয়েছেন, গ্রামের প্রকৃতি তাই তাঁর হৃদয়ে গেঁথে আছে। সেই দ্বিপ্রহরগুলি তো তাঁর মনের মণিকোঠায় সযত্নে স্থান করে নিয়েছে। দ্বিপ্রহরের রোদ কত স্বপ্ন নিয়ে ধরা দিত –

রৌদ্রে যেন গন্ধ লেগে আছে স্বপনের – কোন গল্প, কী কাহিনি, কী স্বপ্ন যে বাঁধিয়াছে ঘর আমার হৃদয়ে, আহা, কেউ তাহা জানেনাকো-।

কবির স্বপ্ন হয়তো হারিয়ে গেছে; যে গল্পকাহিনি হৃদয়ে বাসা বেঁধেছিল তারাও কোথাও উধাও হয়ে গেছে, আজ তার কোনো হিসেব নেই। স্মৃতি এখানে বেদনা হয়ে ঝরে পড়েছে।

শালিকের স্বর, ভাঙা মঠ-নক্কাপেড়ে শাড়িখানা মেয়েটির রৌদ্রের ভিতর

অথবা

রৌদ্রে যেন ভিজে বেদনার গন্ধ লেগে আছে, আহা, কেঁদে-কেঁদে ভাসিতেছে আকাশের তলে।

কবি তার গাঁয়ের দু-প্রহরকে ভালোবাসেন। কিন্তু সেই দ্বিপ্রহরের কথা বলতে গিয়ে যেসব অনুষঙ্গ ব্যবহার করেছেন যেমন – ভাঙা মঠ, বুনো চালতা শাখা নুয়ে পড়া, ঝাঁঝরা-ফোঁপরা ডিঙি, রৌদ্রে ভিজে বেদনার গন্ধ – সে সব কিছু মিলে এক অসহায় বিষন্নতার ছবিই কবিতাটিতে ফুটে উঠেছে।

তাহাদের কাছে/যেন এ-জনমে নয়’ – প্রসঙ্গসহ ব্যাখ্যা করো।

প্রসঙ্গ – প্রশ্নোক্ত অংশটি কবি জীবনানন্দ দাশের ‘পাড়াগাঁর দু-পহর ভালোবাসি’ নামক কবিতা থেকে নেহ্ম ওয়া হয়েছে। কবি তাঁর স্মৃতির সাগরে ডুব দিয়েছেন। পাড়াগাঁ কবির জন্মস্থান, সেখানকার দ্বিপ্রহরের স্মৃতিচারণ প্রসঙ্গে তিনি আলোচ্য উক্তিটি করেছেন।

ব্যাখ্যা – কবি ভালোবাসেন তার পাড়াগাঁর দ্বিপ্রহরকে। এখনও তিনি অনুভব করেন সেই দ্বিপ্রহরের রৌদ্রের গন্ধকে। কবির কত স্বপ্ন কাহিনি হারিয়ে গেছে, কেবল প্রান্তর ও প্রান্তরের শঙ্খচিল তা জানে। কারণ কবির সঙ্গে এদের সম্পর্ক তো শুধু এই জীবনের নয় – জন্মজন্মান্তর ধরে কবির সঙ্গে তাদের চির অমলিন সম্পর্ক। তাদের কাছ থেকেই কবি নানান কথা শিখেছেন। পল্লিপ্রকৃতির সঙ্গে কবি আত্মিক সম্পর্কই নির্দেশ করেছে প্রশ্নোক্ত অংশে।

পাড়াগাঁর দু-পহর ভালোবাসি কবিতাটির ভাববস্তু আলোচনা করো।

কবি জীবনানন্দ দাশ গ্রামবাংলার কোলে বেড়ে ওঠা একজন কবি, ফলে গাঁয়ের প্রকৃতি তাঁর অনুভূতিতে সর্বদাই আলোড়ন তোলে। কবি স্মৃতির ডিঙিতে ভর করে চলে যেতে চান ফেলে আসা দিনগুলিতে। যেখানে তাঁর মনে জেগে ওঠে দ্বিপ্রহরের রোদের গন্ধ। সেই গন্ধে কত স্বপ্ন, কত গল্পকাহিনি লুকিয়ে আছে। তা আর কেউ না জানলেও কবির মতোই জানে গাঁয়ের প্রান্তর আর প্রান্তরের শঙ্খচিল, যাদের কাছে কবি কথা শিখেছেন বহু বহু যুগ ধরে – শুধু এই জন্মেই নয়। যে মেয়েটি নকশাপেড়ে শাড়ি পরেছিল রোদের মধ্যে, হলুদ পাতাদের ঝরে পড়ার মতো সেও ঝরে গেছে। বহুদিন ধরে একটি ঝাঁঝরা-ফোঁপরা ডিঙি হিজলের সঙ্গে বাঁধা পড়ে আছে, মালিকের দেখা নেই; অথবা ছন্দহীনভাবে বুনো চালতা ঘাসের উপরে নুয়ে জলসিড়ি নদীর ধারে পড়ে আছে। সবেতেই একটা অযত্নের ছাপ কবির চোখে ধরা পড়েছে। তবুও ওই দ্বিপ্রহরকে কবি ভালোবাসেন। ওই দ্বিপ্রহরের ভিজে রোদে কত কিছু হারিয়ে ফেলার বেদনাপূর্ণ গন্ধ অনুভব করেন কবি।

সমগ্র কবিতায় কবি যেমন তাঁর জন্মভূমির মমতাময় দ্বিপ্রহরের কথা তুলে ধরেছেন, তেমনই এক সীমাহীন বিষণ্ণতাও কবিতাটির সর্বাঙ্গ জুড়ে আছে।

কোনোদিন এই দিকে আসিবে না আর – প্রসঙ্গসহ উক্তিটির তাৎপর্য আলোচনা করো।

প্রসঙ্গ – প্রশ্নে উদ্ধৃত অংশটি জীবনানন্দ দাশের ‘পাড়াগাঁর দু-পহর ভালোবাসি’ নামক কবিতা থেকে নেওয়া হয়েছে। কবি তাঁর পাড়াগাঁর জীবনের চিত্র আলোচ্য কবিতায় তুলে ধরেছেন। কবি ভালোবাসতেন তাঁর পাড়াগাঁর দ্বিপ্রহরকে, কারণ দ্বিপ্রহরের বহু গল্পকাহিনির স্মৃতি তাঁর মনোজগৎকে আলোড়িত করে চলে। সেই প্রসঙ্গ ধরেই কবি আলোচ্য উদ্ধৃতিটির অবতারণা করেছেন।

তাৎপর্য – কবি দেখেন জলসিড়ি নদীর তীরে বহুকাল ধরে হিজল গাছের সঙ্গে বাঁধা রয়েছে একটি ডিঙি নৌকা। ঝাঁঝরা-ফোঁপরা হয়ে আছে সেটি। কিন্তু কে যে ডিঙিটির মালিক তা জানেন না কবি, কারণ মালিক বহুদিন আসেনি ডিঙিটির কাছে। কবির অনুমান মালিক হয়তো আর কোনোদিনই আসবে না। সময় গড়িয়ে চলে অসীমের পানে। বহুসময় অতিক্রান্ত হয়ে গেছে, হয়তো পাতা যেমন ঝরে পড়ে বৃন্ত থেকে, তেমনই মালিকও হারিয়ে গেছে পৃথিবী থেকে। তাই ডিঙি বাঁধাই রয়েছে হিজলে মালিকের দেখা নেই। নিদারুণ বিষণ্ণতার ছবি প্রকাশ করেছেন কবি প্রশ্নোক্ত উক্তিটির মাধ্যমে।

নীচের শব্দগুলির ধ্বনিতাত্ত্বিক বিচার করো –

পাড়াগাঁ, দু-পহর, স্বপন, জনম, ভিজে।

উত্তরধ্বনিতাত্ত্বিক বিচারধ্বনি পরিবর্তন
পাড়াগাঁপাড়া গ্রাম > পাড়াগাঁনাসিক্যীভবন।
দু-পহরদু-প্রহর > দু-পহরব্যঞ্জনলোপ
স্বপনস্বপ্ন > স্বপনস্বরভক্তি
জনমজন্ম > জনমস্বরভক্তি
ভিজেভেজা > ভিজেস্বরসংগতি

নীচের শব্দগুলির ব্যাসবাক্যসহ সমাসের নাম লেখো –

শঙ্খচিল, নকশাপেড়ে, ছন্দহীন।

উত্তরব্যাসবাক্যসমাসের শ্রেণি
শঙ্খচিলশঙ্খের ন্যায় শুভ্র যে চিলউপমান কর্মধারয়
নকশাপেড়েনকশা যুক্ত পাড়মধ্যপদলোপী কর্মধারয়
ছন্দহীনছন্দ হইতে হীনঅপাদান তৎপুরুষ

নীচের বাক্যগুলিতে ক্রিয়ার কাল নির্দেশ করো –

  • পাড়াগাঁর দু-পহর ভালোবাসি –
  • রৌদ্রে যেন গন্ধ লেগে আছে স্বপনের –
  • শাখাগুলো নুয়ে আছে বহুদিন ছন্দহীন বুনো চালতার-
  • ডিঙিও ভাসিছে কার জলে,
  • কোনোদিন এইদিকে আসিবে না আর,
বাক্যক্রিয়ার কাল
পাড়াগাঁর দু-পহর ভালোবাসি –সাধারণ বর্তমান।
রৌদ্রে যেন গন্ধ লেগে আছে স্বপনের –পুরাঘটিত বর্তমান।
শাখাগুলো নুয়ে আছে বহুদিন ছন্দহীন বুনো চালতার –পুরাঘটিত বর্তমান।
ডিঙিও ভাসিছে কার জলে, –ঘটমান বর্তমান।
কোনোদিন এইদিকে আসিবে না আর, –সাধারণ ভবিষ্যৎ।

কবিতার শেষে, কবি যেন গ্রাম্য জীবনের স্মৃতির সাথে বেদনাদায়ক বিদায় জানান। দ্বিপ্রহরের রোদের গন্ধ আর নকশাপেড়ে শাড়ি পরা মেয়েটির স্মৃতি কবির মনে জাগলেও, বর্তমানে সেখানে শুধু অযত্ন আর বিষণ্ণতা। ঝাঁঝরা-ফোঁপরা ডিঙি আর বুনো চালতা ঘাসের ছবি ত্যাগ করা গ্রামের প্রতিচ্ছবি বহন করে।

তবুও, কবি দ্বিপ্রহরকে ভালোবাসেন। তার ভেজা রোদের গন্ধে হারানো স্মৃতির বেদনা পেয়েও, কবি গ্রামের প্রতি তার মমত্বাবেগ ধরে রাখেন। এই স্থায়ী বেদনা আর মমতার মিশ্রণই “দ্বিপ্রহর” কবিতার মূল অনুভূতি।

“দ্বিপ্রহর” কবিতা কেবল গ্রাম্য জীবনের চিত্রায়ন নয়, বরং জীবনের অস্থায়িত্ব ও স্মৃতির বেদনার এক সার্বজনীন অনুভূতি প্রকাশ করে। কবির ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা যেমন কবিতায় স্পষ্ট, তেমনি পাঠকও নিজস্ব জীবনের স্মৃতির সাথে এর সাথে যুক্ত হতে পারে।

এই কবিতা বাংলা সাহিত্যের একটি অমূল্য সম্পদ যা পাঠকদের মনে দীর্ঘস্থায়ী ছাপ ফেলে। পাড়াগাঁর দু-পহর ভালোবাসি কবিতাটি বাংলা সাহিত্যের অন্যতম সেরা প্রকৃতি-ভিত্তিক কবিতা। গ্রামবাংলার সুন্দর দুপুরের বর্ণনা দিয়ে কবি আমাদের মনে গ্রামের প্রতি ভালোবাসা জাগিয়ে তোলেন।

Share via:

মন্তব্য করুন