আজকের এই আর্টিকেলে অষ্টম শ্রেণির বাংলা বিষয়ের বিংশ অধ্যায় ‘পাড়াগাঁর দু-পহর ভালোবাসি‘ নিয়ে ব্যাখ্যাভিত্তিক সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন ও উত্তর নিয়ে আলোচনা করব। অষ্টম শ্রেণির বাংলা পরীক্ষার জন্য এই প্রশ্নগুলো অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, কারণ এ ধরনের প্রশ্ন প্রায়ই পরীক্ষায় আসে।
পাড়াগাঁয়ের দ্বিপ্রহরকে কবি ভালোবাসেন কেন?
কবি পাড়াগাঁয়ের দ্বিপ্রহরকে ভালোবাসেন। কবি শৈশবের পাড়াগাঁকে ফেলে রেখে চলে এসেছেন বহুদুরে। কিন্তু বাংলার প্রকৃতির সঙ্গে কবির যোগ ছিন্ন হয়নি। বাংলার প্রকৃতির সঙ্গে একাত্ম হয়ে রয়েছে কবির জীবন। কবির হৃদয়ে গল্প, কাহিনি, স্বপ্ন, আশার যে স্মৃতি তাই নিয়ে কবিমন নিরন্তর সুখে ডুবে থাকে। বাংলার স্মৃতিমেদুর দুপুরের কথা কবির বারবার মনে পড়ে যায়। ঝরে যাওয়া হলুদ পাতার মতো কবির সেই স্বপ্নের দুপুরের নকশাপাড়া মেয়েটি সরে গেছে বহুদূরে; কিন্তু কবির হৃদয়ে রয়ে গেছে সেই স্মৃতিমেদুর দুপুরের ছবি। কবির মন তাই পাড়াগাঁয়ের দ্বিপ্রহরকে ভালোবাসেন।
স্বপ্নে যে-বেদনা আছে – কবির স্বপ্নে কেন বেদনার অনুভূতি?
মনোবিজ্ঞানী ফ্রয়েড বলেছেন, মানুষের অবচেতন মনের আকাঙ্ক্ষাই স্বপ্নে প্রকাশিত হয়। তাই স্বপ্নকে ঘিরে মানুষের মনে একটা বেদনার অনুভূতি কাজ করে। সবক্ষেত্রেই তাতে থাকে বাস্তবায়িত না হওয়ার যন্ত্রণা।
আলোচ্য কবিতায় কবির শৈশব অতিবাহিত হয়েছে গ্রামবাংলায়। কবির মনে শৈশবের দিনগুলির ছবি অমলিন। কবি গ্রামবাংলার প্রকৃতির প্রতি নিবিড় টান অনুভব করেন। গ্রামবাংলার জলসিড়ি নদী, শঙ্খচিল, হিজল, চালতার বুনো গন্ধ, ছোট্ট ডিঙি সবই কবির জীবনে রোদের গন্ধ মাখা শুকনো হলুদ পাতার মতো সরে সরে যায়। তাই কবি তাঁর স্বপ্নে স্মৃতিমেদুরতার বেদনাকে অনুভব করেছেন। কবি সেই কারণেই উল্লেখ করেছেন – ‘স্বপ্নে যে-বেদনা আছে’।
কোন্ গল্প, কী কাহিনি, কী স্বপ্ন যে বাঁধিয়াছে ঘর – তাৎপর্য লেখো।
প্রশ্নোক্ত উদ্ধৃতিটি জীবনানন্দের ‘পাড়াগাঁর দু-পহর ভালোবাসি’ নামক কবিতা থেকে নেওয়া হয়েছে।
কবি তাঁর পাড়াগাঁর দুপ্রহরকে ভালোবাসেন। দ্বিপ্রহরের রৌদ্রের গন্ধ তাঁর চেতনায় মাখামাখি হয়ে আছে। সেই রোদের মধ্যে কবির অনেক স্মৃতি, বহু অনুভূতি লীন হয়ে আছে। দ্বিপ্রহরের কত গল্পকাহিনি, কত স্বপ্ন কবির হৃদয়ে ঘর বেঁধে ছিল; তা কবিকে আলোড়িত করে। তা কবিকে নিয়ে যায় তার জন্মভূমির হারিয়ে ফেলা দ্বিপ্রহরগুলিতে। প্রশ্নোক্ত উদ্ধৃতির মাধ্যমে কবি এ কথাই বোঝাতে চেয়েছেন।
তাহাদের কাছে/যেন এ-জনমে নয় – প্রসঙ্গসহ ব্যাখ্যা করো।
প্রসঙ্গ – প্রশ্নোক্ত অংশটি কবি জীবনানন্দ দাশের ‘পাড়াগাঁর দু-পহর ভালোবাসি’ নামক কবিতা থেকে নেহ্ম ওয়া হয়েছে। কবি তাঁর স্মৃতির সাগরে ডুব দিয়েছেন। পাড়াগাঁ কবির জন্মস্থান, সেখানকার দ্বিপ্রহরের স্মৃতিচারণ প্রসঙ্গে তিনি আলোচ্য উক্তিটি করেছেন।
ব্যাখ্যা – কবি ভালোবাসেন তার পাড়াগাঁর দ্বিপ্রহরকে। এখনও তিনি অনুভব করেন সেই দ্বিপ্রহরের রৌদ্রের গন্ধকে। কবির কত স্বপ্ন কাহিনি হারিয়ে গেছে, কেবল প্রান্তর ও প্রান্তরের শঙ্খচিল তা জানে। কারণ কবির সঙ্গে এদের সম্পর্ক তো শুধু এই জীবনের নয় – জন্মজন্মান্তর ধরে কবির সঙ্গে তাদের চির অমলিন সম্পর্ক। তাদের কাছ থেকেই কবি নানান কথা শিখেছেন। পল্লিপ্রকৃতির সঙ্গে কবি আত্মিক সম্পর্কই নির্দেশ করেছে প্রশ্নোক্ত অংশে।
হলুদ পাতার মতো সরে যায়, – উদ্ধৃতিটির উৎস লেখো। উক্তিটির মাধ্যমে কবি কী বোঝাতে চেয়েছেন?
উদ্ধৃত অংশটি জীবনানন্দ দাশের ‘পাড়াগাঁর দু-পহর ভালোবাসি’ নামক কবিতা থেকে নেওয়া হয়েছে।
কবি তাঁর জীবনে কাটিয়ে আসা দিনের স্মৃতিচারণ করেছেন আলোচ্য কবিতায়। কবি তাঁর পাড়াগাঁর দ্বিপ্রহরকে ভালোবাসেন। আর সে-কথা বলতে গিয়েই দ্বিপ্রহরের রোদের কথা বলেছেন, যা তাঁকে আলোড়িত করে। নকশাপেড়ে মেয়েটির কথা আজ তাঁর স্মৃতিতে জেগে ওঠে। আজ সে বাস্তবে তাঁর সামনে নেই। স্মৃতি ক্রমে ঝরে ঝরে যায় কালের গতিতে। গাছের পাতা জীর্ণ হলে তা বৃন্তচ্যুত হয়ে ঝরে পড়ে। রোদের ভিতর হলুদ পাতা যেমন সরে সরে যায়, তেমনই মনের আকাশ থেকেও মেয়েটির স্মৃতি ক্রমে দূরে সরে সরে যায়। এক বিষণ্ণতার কাহিনি কবি তুলে ধরেছেন প্রশ্নোক্ত উদ্ধৃতিটির মাধ্যমে।
নুয়ে আছে বহুদিন ছন্দহীন – কে, কোথায় নুয়ে আছে? ‘ছন্দহীন’ বলার কারণ কী?
জীবনানন্দ দাশের ‘পাড়াগাঁর দু-পহর ভালোবাসি’ কবিতায় বুনো চালতার শাখা জলসিড়ি নদীর পাশে ঘাসের উপরে নুয়ে আছে।
কবি তাঁর পাড়াগাঁর দ্বিপ্রাহরিক প্রকৃতির এক ছবি অঙ্কন করেছেন আলোচ্য কবিতায়। জলসিড়ি নদীর পাশে বহুদিন ধরে নুয়ে আছে গ্রামের বুনো চালতা গাছটি। অপরিকল্পিতভাবে সেটি অবস্থান করছে, কেউ তাকে যত্ন নেয়নি বা এখনও নেয় না যত্ন। অবহেলা সয়েই সে বিস্তার করেছে তার শাখাপ্রশাখা। নিজের মতো করেই চালতা অবস্থান করছে, তাই সে এলোমেলো। এ কথা বোঝাতেই কবি ‘ছন্দহীন’ শব্দটি ব্যবহার করেছেন।
এই আর্টিকেলে অষ্টম শ্রেণীর বাংলা বিষয়ের বিংশ অধ্যায় ‘পাড়াগাঁর দু-পহর ভালোবাসি’ এর ব্যাখ্যাভিত্তিক সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন ও উত্তর নিয়ে আলোচনা করেছি। এই প্রশ্নগুলো অষ্টম শ্রেণীর বাংলা পরীক্ষার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, কারণ পরীক্ষায় প্রায়ই এগুলো থেকে প্রশ্ন আসে। আশা করি, এই নিবন্ধটি আপনার পড়াশোনায় সহায়ক হবে। কোনো প্রশ্ন থাকলে বা আরও সহায়তা প্রয়োজন হলে টেলিগ্রামে আমার সাথে যোগাযোগ করতে পারেন। এছাড়া, পোস্টটি বন্ধুদের সঙ্গে শেয়ার করে তাদেরকেও সাহায্য করতে ভুলবেন না। ধন্যবাদ!