এখনই আমাদের Telegram Community গ্রুপে যোগ দিন।। এখানে WBBSE বোর্ডের পঞ্চম শ্রেণি থেকে দশম শ্রেণির যেকোনো বিষয়ভিত্তিক সমস্যা শেয়ার করতে পারেন এবং একে অপরের সাহায্য করতে পারবেন। এছাড়া, কোনও সমস্যা হলে আমাদের শিক্ষকরা তা সমাধান করে দেবেন।

Telegram Logo Join Our Telegram Community

অষ্টম শ্রেণি – বাংলা – পরাজয় – রচনাধর্মী প্রশ্ন ও উত্তর

আজকের এই আর্টিকেলে অষ্টম শ্রেণীর বাংলা বিষয়ের চতুর্ত্রিংশ অধ্যায়পরাজয়’-এর রচনাধর্মী প্রশ্ন ও উত্তর নিয়ে বিশদ আলোচনা করা হবে। এই প্রশ্নগুলো অষ্টম শ্রেণীর বাংলা পরীক্ষার প্রস্তুতির জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, কারণ এগুলো প্রায়শই পরীক্ষায় আসে।

Table of Contents

অষ্টম শ্রেণি – বাংলা – পরাজয় – রচনাধর্মী প্রশ্ন ও উত্তর
অষ্টম শ্রেণি – বাংলা – পরাজয় – রচনাধর্মী প্রশ্ন ও উত্তর

রাগে ফুঁসছিল রঞ্জন। – তার এই রাগের কারণ কী?

শান্তিপ্রিয় বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘পরাজয়’ নামক গল্প থেকে প্রশ্নোক্ত উদ্ধৃতিটি নেওয়া হয়েছে। উক্ত গল্পের নায়ক চরিত্র রঞ্জন একজন দক্ষ ফুটবল খেলোয়াড়। পয়লা বৈশাখের দিন ধুমধাম করে তাদের ক্লাবে বারপুজো অনুষ্ঠিত হয়েছে অথচ রঞ্জনকে ক্লাবের পক্ষ থেকে কোনো আমন্ত্রণ জানানো হয়নি। যে ক্লাবের হয়ে দীর্ঘ ১৫ বছর ধরে ঘাম-রক্ত ঝরিয়েছে, বিরাট পরিমাণ অর্থের প্রলোভন, এমনকি চাকরির প্রলোভন ত্যাগ করেছে নির্দ্বিধায়, সেই ক্লাবের বারপুজোর রিপোর্ট পরের দিন খবরের কাগজে প্রকাশিত হয়েছে। কিন্তু ক্লাবের পক্ষ থেকে চরম অবহেলা, অপমান করা হয়েছে তাকে আমন্ত্রণ না জানিয়ে। এত বড়ো অপমান সে মেনে নিতে পারছিল না। তাই রঞ্জন রাগে ফুঁসছিল।

এত দুঃখ, এত ব্যথা সে কোথাও পায়নি। – এই দুঃখযন্ত্রণার দিনে কীভাবে অতীতের সুন্দর দিনগুলির কথা রঞ্জনের মনে এসেছে?

শান্তিপ্রিয় বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘পরাজয়’ গল্পের নায়ক রঞ্জন সরকারকে তার ক্লাব বারপুজোর অনুষ্ঠানে আমন্ত্রণ না জানিয়ে চরম অপমান করেছে অথচ ক্লাবের সঙ্গে অতীতে তার কত হৃদ্যতার সম্পর্ক ছিল। বেদনাহত রঞ্জনের মনে ভেসে উঠেছে অতীতের সুন্দর দিনগুলির ছবি।

প্রতি বছর বারপুজোর আগে রঞ্জনকে ক্লাবের প্রেসিডেন্ট বা সেক্রেটারির পক্ষ থেকে আমন্ত্রণ জানানো হয়। পয়লা বৈশাখের দিন সকালবেলা রঞ্জন স্নান সেরে তৈরি হয়ে থাকে ক্লাবে যাওয়ার জন্য, ক্লাব থেকেই তার কাছে গাড়ি পাঠিয়ে দেওয়া হত। ক্লাবের কর্মকর্তারা দল গঠনের ব্যাপারে তার সঙ্গে পরামর্শ করত-কাকে নতুন করে আনা যায় দলে। সেই দলের সঙ্গে দীর্ঘ ১৫ বছর কত সুখ-দুঃখ ভাগ করে নিয়েছে সে। এভাবেই অতীতের সুন্দর দিনগুলির কথা দুঃখযন্ত্রণার দিনে রঞ্জনের মনে এসেছে।

রঞ্জনের ক্লাবের সঙ্গে তার পনেরো বছরের সম্পর্ক কীভাবে ছিন্ন হল? এই বিচ্ছেদের জন্য কে দায়ী বলে তোমার মনে হয়?

রঞ্জনের ক্লাবের সঙ্গে তার ১৫ বছরের সম্পর্ক ছিন্ন হওয়ার সূত্রপাত হয়েছিল বছরখানেক আগেই। তার প্রতি ক্লাবের গা-ছাড়া মনোভাব সে অনুভব করছিল কিন্তু ততটা গুরুত্ব দেয়নি। আর এই বছর বারপুজোর দিনে ক্লাবের পক্ষ থেকে কেউ তাকে আমন্ত্রণ জানানোর প্রয়োজনই বোধ করেনি। এই ঘটনায় দুঃখ, অভিমানে রঞ্জনের মন ভরে ওঠে। নানাজনের প্রশ্নবাণে সে জর্জরিত হতে থাকে। এরপর দুইদিন সে অপেক্ষা করে এই আশায় যে ক্লাবকর্তারা তার সঙ্গে যোগাযোগ করবে কিন্তু ডাক আসে না। চূড়ান্ত অপমানিত রঞ্জন ক্লাব ত্যাগের সিদ্ধান্ত নেয় এবং দলবদলের প্রথম দিনেই অপর বড়ো ক্লাবে স্বাক্ষর করে পুরোনো ক্লাবের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করে।

এই বিচ্ছেদের জন্য প্রথমেই দায়ী ক্লাবের কর্মকর্তারা। যে মানুষটি দীর্ঘ পনেরো বছর ধরে ক্লাবের জন্য রক্ত ঝরিয়েছে, তার প্রতি ক্লাবকর্তারা চরম অবহেলা ও অপমান প্রদর্শন করেছে, যা রঞ্জনকে ক্লাবের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করতে বাধ্য করেছে। এ ছাড়া অপর বড়ো ক্লাবের কর্তারাও কিছুটা অংশে এক্ষেত্রে দায়ী। তারা সুযোগের অপেক্ষাতেই ছিল, তাই রঞ্জনের অভিমানে প্রলেপ না দিয়ে, ব্যথার আগুনে ঘৃতাহুতি দিয়েছে – যা রঞ্জনকে ক্লাব ত্যাগে উৎসাহিত করেছে।

কী করবে ও ঠিক করে ফেলেছে। – এখানে কার কথা বলা হয়েছে? সে কী ঠিক করে ফেলেছে? তার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী সে পরবর্তী সময়ে চলতে পারল কি?

প্রশ্নে প্রদত্ত উদ্ধৃতাংশে শান্তিপ্রিয় বন্দ্যোপাধ্যায় রচিত ‘পরাজয়’ গল্পের প্রধান চরিত্র রঞ্জন সরকারের কথা বলা হয়েছে।

রঞ্জন ঠিক করেছিল যে সে পরবর্তী দুইদিন অপেক্ষা করবে, যদি কেউ ক্লাবের পক্ষ থেকে তার সঙ্গে যোগাযোগ করে, এই আশায়। তা না হলে সে ক্লাব ত্যাগ করবে কিন্তু খেলা ছাড়বে না কিছুতেই, অপমানের যোগ্য জবাব তাকে দিতেই হবে।

হ্যাঁ, দুইদিন অপেক্ষা করে রঞ্জন অপর বড়ো দলে যোগ দিল এবং নিজেকে নতুন করে প্রমাণ করল পুরোনো ক্লাবকে গোল দিয়ে পরাজিত করে। সে নতুন দলকে জিতিয়ে দেখিয়ে দিতে পেরেছিল যে সে এখনও শেষ হয়ে যায়নি। তবে এই জয়ের পরেও একটা চাপা কষ্ট অনুভব করেছিল। তাই তার চোখে নেমে এসেছিল বেদনার অশ্রু।

তৃতীয় দিন রাত্তিরে টেলিফোন করল অন্য বড়ো ক্লাবের সেক্রেটারিকে। – কোন্ দিন থেকে তৃতীয় দিন -এর কথা বলা হয়েছে? এই দিন তিনেক সময় তার কীভাবে কেটেছে? টেলিফোনটি করায় কোন্ পরিস্থিতি তৈরি হল?

প্রশ্নোক্ত অংশটি শান্তিপ্রিয় বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘পরাজয়’ নামক গল্প থেকে নেওয়া হয়েছে। এখানে রঞ্জনদের ক্লাবের বারপুজোর দিন থেকে শুরু করে পরবর্তী তৃতীয় দিনটির কথা বলা হয়েছে।

এই তিনদিন চরম মানসিক অস্থিরতার মধ্যে রঞ্জনের সময় কেটেছে। তার প্রতি ক্লাবের অবহেলা, অপমান তাকে দগ্ধ করেছে প্রতিক্ষণ। নানা জনের কাছে তাকে নানা প্রশ্নের উত্তর দিতে হয়েছে। ক্লাব ত্যাগ করবে কি না সে ব্যাপারে তাকে ভাবতে হয়েছে। তীব্র অপমানের জ্বালা তাকে আহত করেছে। গঙ্গার ধারে গিয়ে প্রকৃতির সৌন্দর্যে মনকে শান্ত করতে চেয়েছে সে। সে অনুভব করেছে বুকের মধ্যে চেপে থাকা যন্ত্রণাটা যেন কন্ঠায় এসে দলা পাকিয়ে আটকে আছে। ক্লাবের কর্মকর্তাদের ডাক আসার অপেক্ষায় দুইদিন অধীরভাবে সময় অতিবাহিত করেছে। এমন অস্থিরতার মধ্যে দিন তিনেক রঞ্জনের সময় কেটেছে।

টেলিফোনটি করায় অন্য বড়ো দলের কর্তারা রঞ্জনকে নিজেদের দলে নেওয়ার সুযোগ পায় এবং তারা রঞ্জনের ক্রোধের আগুনে ঘৃতাহুতি দিয়ে, তার দলবদলের সিদ্ধান্তকে প্রশস্ত করে তোলে। ফলে রঞ্জন পুরোনো ক্লাবের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করে।

দুই প্রধানের লড়াইকে কেন্দ্র করে অনেক বছর পরে কলকাতা আবার মেতে উঠেছে। – গল্প অনুসরণে সেই লড়াইয়ের উত্তেজনাপূর্ণ ফুটবল ম্যাচের বিবরণ দাও।

দেখতে দেখতে উপস্থিত হয় মরশুমের প্রথম দুই প্রধানের লড়াইয়ের দিন-রঞ্জনের সকল অপমানের জবাব দেওয়ার দিন। যুবভারতী ক্রীড়াঙ্গনে ১ লক্ষ ২০ হাজার দর্শক খেলা দেখতে পারেন, তবুও টিকিটের হাহাকার পড়ে গেছে চারদিকে। খেলাটিকে কেন্দ্র করে সারা দেশের উদ্দীপনার চাহিদা মেটাতে গণমাধ্যমগুলির সাংবাদিকরা ভীষণভাবে ব্যস্ত হয়ে পড়েছিল। একটা প্রচণ্ড জেদ রঞ্জনকেও টানটান করে তুলেছিল।

একসময় শুরু হল খেলা। রঞ্জনকে সামলাতে হিমসিম খাচ্ছে তার পুরোনো দলের রক্ষণভাগের খেলোয়াড়রা। তবে সহ-খেলোয়াড়রা তাকে ঠিকমতো সহযোগিতা করতে পারছে না। গোলশূন্যভাবে শেষ হয় প্রথমার্ধের খেলা।

দ্বিতীয়ার্ধে খেলার চেহারা সম্পূর্ণ বদলে গেল। রক্ষণাত্মক মনোভাব ত্যাগ করে আক্রমণে ঝাঁপিয়ে পড়ল পুরোনো দল। তবে তাতে সুবিধা হল রঞ্জনের, সে অনেকটা ফাঁকা স্থান পেয়ে গেল। আক্রমণ প্রতি-আক্রমণে খেলার উত্তেজনা চরমে উঠল। রঞ্জন ভালো খেলছে ঠিকই কিন্তু যেভাবে জ্বলে উঠতে চেয়েছিল তা করতে পারছে না। সে নিজেদের হাফলাইনের কাছে নেমে এসেছে। এমন সময় রঞ্জনদের গোলরক্ষক একটি বল ধরেই ছুঁড়ে দিল অরক্ষিত রঞ্জনের দিকে। বলটা ধরে দুলকি চালে এগিয়ে চলল সে, সামনে বিপক্ষের তিনজন খেলোয়াড়কে দেখে সে বলটা ঠেলে দিল সমরের দিকে আর নিজে চলে গেল অপেক্ষাকৃত ফাঁকা স্থানে। সমর বলটা নিয়ে কয়েকপা এগিয়েই কোণাকোণি ফাঁকা জায়গায় বলটা বাড়িয়ে দিয়ে গোলের দিকে এগিয়ে গেল। রঞ্জন বলটা ধরে দুইজনকে কাটিয়ে পেনাল্টি সীমার কাছে সমরের মাথা লক্ষ করে লব করল বলটা আর সমর হেডে ভাসিয়ে দিল সেটা গোলের দিকে। নিজের গোলের দিকে মুখ করে ব্যাকভলি করল রঞ্জন, বুলেটের মতো গতিতে বলটা ঢুকে গেল বিপক্ষের গোলে। ব্যাপারটা বুঝতে একটু সময় লাগল সমর্থকদের। তারপর সারা মাঠ ফেটে পড়ল উল্লাসে। যুবভারতীর গ্যালারি বাজি আর পটকার শব্দে গমগম করতে লাগল।

কলকাতার দুই বড়ো ক্লাবের ফুটবল যুদ্ধের বর্ণনা লেখকের বর্ণনায় এমনভাবেই প্রকাশিত হয়েছে।

বলটা বুলেটের মতো ছুটে গিয়ে ঢুকে গেল গোলে। – এরপর সমর্থক আর সহ-খেলোয়াড়দের উল্লাসের বিপ্রতীপে রঞ্জনের বিষণ্ণতার কোন্ রূপ গল্পে ফুটে উঠেছে?

পুরোনো দলের বিরুদ্ধে গোল করে নতুন ক্লাবকে জেতানোর সঙ্গে সঙ্গে সমর্থকদের মধ্যে দেখা দিল তুমুল উন্মাদনা। যুবভারতীর গ্যালারি মুখরিত হল বাজি-পটকার শব্দে। সাজঘরে ফিরে এলে রঞ্জনকে নিয়েও চলল সহ-খেলোয়াড়দের হইচই।

জয়ী হয়ে পুরোনো ক্লাবকে অপমানের যোগ্য জবাব দিলেও রঞ্জনের মন ভরে গেল বিষাদে। তাকে আচ্ছন্ন করল একরাশ অব্যক্ত যন্ত্রণা। সাংবাদিকদের জিজ্ঞাসা, সমর্থকদের আনন্দোল্লাস বা অভিনন্দন-কোনো কিছুই ভালো লাগছিল না তার। পাশের ঘরে গিয়ে দুই হাতে মুখ ঢেকে একটা বেঞ্চিতে শুয়ে পড়ল রঞ্জন। সে অনুভব করল, তার দুই চোখ দিয়ে অঝোরে জল ঝরছে। ১৫ বছরের সম্পর্ক ছিন্ন করে নতুন ক্লাবে এসে সকল অপমানের জবাব দিয়েও নিজের কাছেই হেরে গেছে সে। বারপুজোয় তাকে না ডাকার অপমানে যে কষ্টটা দলা পাকিয়ে এতদিন ওর কণ্ঠার কাছে আটকে ছিল, সেই জ্বালা চোখের জল হয়ে ভাসিয়ে নিয়ে গেল স্ট্রাইকার রঞ্জন সরকারকে।

এভাবেই সহ-খেলোয়াড়দের উল্লাসের বিপ্রতীপে রঞ্জনের বিষণ্ণ রূপ আলোচ্য গল্পে প্রকাশিত হয়েছে।

গল্পের ঘটনা বিশ্লেষণ করে পরাজয় গল্পের নামকরণের সার্থকতা প্রতিপন্ন করো।

সাহিত্যের এক গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ হল নামকরণ। নামকরণের মাধ্যমেই রচনার বিষয়বস্তু সম্পর্কে আগাম ধারণা তৈরি হয় পাঠকের মনে। নামকরণ বিভিন্ন প্রকারের হতে পারে, যেমন – চরিত্রধর্মী, বিষয়ধর্মী, ব্যঞ্জনাধর্মী ইত্যাদি। এবার দেখা যাক শান্তিপ্রিয় বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘পরাজয়’ গল্পের নামকরণটি কতখানি সার্থকতা লাভ করেছে।

আলোচ্য গল্পটিতে রঞ্জন সরকার নামক একজন ফুটবলারের খেলোয়াড় জীবনের অন্তিম লগ্নে ঘটে যাওয়া মানসিক সংঘাতের পরিচয় আমরা পাই। দীর্ঘ ১৫ বছর ধরে রঞ্জন যে ক্লাবের সুখে-দুঃখে নিবিড়ভাবে যুক্ত রেখেছে নিজেকে, যে ক্লাবের জন্য ঘাম-রক্ত ঝরিয়েছে-সেই ক্লাবের কর্মকর্তাদের কাছ থেকে চরমভাবে অপমানিত হয়েছে সে। নববর্ষের বারপূজার দিনে ক্লাবের পক্ষ থেকে তাকে একবারের জন্যও আমন্ত্রণ জানানোর প্রয়োজন বোধ করেনি কেউ। গত বছর থেকেই তার প্রতি উদাসীন ব্যবহার শুরু হয়েছিল, সেটা অনুভব করেছিল রঞ্জন, তবে সে ভাবতে পারেনি যে এমনভাবে তাকে অবহেলা-অপমান করবে ক্লাব কর্তৃপক্ষ! মানসিক যন্ত্রণায় ছটফট করতে করতে সে একসময় যোগ দেয় অন্য ক্লাবে, কারণ সে যে ফুরিয়ে যায়নি, এখনও যে তার দক্ষতা বর্তমান, সেটা প্রমাণ করে দেবে সে, এভাবে পরাজয় কিছুতেই মেনে নেওয়া যাবে না। রঞ্জনের দলবদলের খবরটা প্রচারিত হবার পরেই ক্লাবের টনক নড়ে, তারা চেষ্টা করে তাকে ফিরিয়ে আনতে কিন্তু ব্যর্থ হয়। তারপর মরশুম শুরু হয়, একসময় চলে আসে মাহেন্দ্রক্ষণ-পুরোনো দলের মুখোমুখি হয় রঞ্জনদের দল। প্রায় লক্ষাধিক দর্শকের উপস্থিতিতে যুবভারতী ক্রীড়াঙ্গনে রঞ্জনের গোলে পরাজিত হল সেদিন রঞ্জনের পুরোনো ক্লাব। রঞ্জন যথাযোগ্য জবাব দিতে পেরেছে অপমানের, অবহেলার-সে বিজয়ী।

সাজঘরে পৌঁছে বিশ্রাম নিতে নিতে রঞ্জনের মনে বিষাদ উপস্থিত হল। সবাই আনন্দ করছে কিন্তু সে তো আনন্দে যোগ দিতে পারছে না। সে অনুভব করল-যে ক্লাব ছিল তার কাছে মা-এর মতো সম্মাননীয়া, যে ক্লাবের জন্য আজ তার নাম-খ্যাতি-সেই ক্লাব আজ পরাজিত হল তারই গোলে। বুকের মাঝে চরম অস্বস্তি অনুভব করে সে। অপমানের জবাব দিতে গিয়ে সে তো তার ভালোবাসার ক্লাবকেই পরাজিত করেছে। এই পরাজয় তো হৃদয় থেকে সে মেনে নিতে পারছে না। এটা তো তার নিজেরও পরাজয় এতে আনন্দ নেই, আছে গভীর বেদনাবোধ।

এভাবেই গল্পের নামকরণ ‘পরাজয়’ ব্যঞ্জনাবাহী এবং সার্থক হয়ে উঠেছে।

এ কথা ভাবাও যে পাপ। – উক্তিটির তাৎপর্য লেখো।

প্রশ্নোক্ত অংশটি শান্তিপ্রিয় বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘পরাজয়’ নামক গল্প থেকে নেওয়া হয়েছে। আলোচ্য গল্পের প্রধান চরিত্র রঞ্জন সরকার দীর্ঘ ১৫ বছর যে ক্লাবের হয়ে খেলার মাঠে ঘাম-রক্ত ঝরিয়েছে, সেই ক্লাবের বারপুজোর অনুষ্ঠানে তাকে একবার কেউ আমন্ত্রণ জানায়নি। রঞ্জনের অনুভব হয় যে, এমন অপমানের মাধ্যমে কর্তারা তাকে বোঝাতে চেয়েছে যে, ক্লাবে তার আর গুরুত্ব নেই। রঞ্জনের মনে সংশয় দেখা দেয়-তবে কি তাকে ক্লাব ছেড়ে দিতে হবে? যে ক্লাবের জার্সি তার কাছে মায়ের মতো, যে ১০ নম্বর জার্সিটা তাকে যশ-মান-অর্থ সব দিয়েছে-তাকেই ছাড়তে হবে এবার। এমন চিন্তা করাই অনুচিত এবং পাপ বলে মনে করেছে রঞ্জন, কারণ মাকে কখনও ত্যাগ করা যায় না।

দুটো দিন কেটে গেল — দুটো দিন কীভাবে কেটেছিল?

শান্তিপ্রিয় বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘পরাজয়’ নামক গল্পের প্রধান চরিত্র রঞ্জন সরকার যে ক্লাবে দীর্ঘ ১৫ বছর খেলেছে, সেই ক্লাবে পয়লা বৈশাখে বারপুজোর অনুষ্ঠানে এবার তাকে আমন্ত্রণ জানানো হয়নি-এখানে ‘দুটো দিন’ বলতে বারপুজোর পরের দুই দিনের কথা বোঝানো হয়েছে।

এই দুইদিন রঞ্জন ছটফট করে কাটিয়েছে, অফিস ছাড়া কোথাও বের হয়নি, কারও সঙ্গে ভালোভাবে কথাও বলেনি। অফিসে ওকে গম্ভীর দেখে সহকর্মী খেলোয়াড়রা তার কাছে ঘেঁষেনি, পুরো সময়টা সে অফিসে কাটিয়েছে। বাকি সময় বাড়িতে টেলিফোনের কাছাকাছি থেকেছে, যদি ক্লাবের কেউ যোগাযোগ করে এমন আশায়। ওর চোখ-মুখ দেখে বোঝা যাচ্ছিল টেনশনে আছে, তাই বাড়ির লোকেরা ঘাঁটায়নি ওকে। এভাবেই মানসিক অশান্তিতে রঞ্জনের দুটি দিন কেটে গিয়েছিল।

রঞ্জনের মন অনেকটা হালকা হয়ে যায়। – রঞ্জন কে? তার কী হয়েছিল? তার মন হালকা হল কীভাবে?

শান্তিপ্রিয় বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘পরাজয়’ গল্পের প্রধান চরিত্র হল রঞ্জন সরকার, সে একজন দক্ষ ফুটবলার।

রঞ্জন তার জীবনের পনেরোটি বছর যে ক্লাবের সঙ্গে সুখে-দুঃখে কাটিয়েছে, সেই ক্লাবে পয়লা বৈশাখ বারপুজোর অনুষ্ঠানে আমন্ত্রণ জানানো হয়নি রঞ্জনকে। এই ঘটনায় সে চরম অপমানিত ও ব্যথাহত, সেই অপমানের জ্বালা তাকে তীব্রভাবে দগ্ধ করছিল।

এই মানসিক অশান্তি থেকে সামান্য স্বস্তি পেতে সে পরের দিন অপরাহ্নে গঙ্গার ধারে একটি বেঞ্চির উপর বসল। গঙ্গার ধারে গাছের পাতায় ঝিরঝিরে হাওয়া, কানে ভেসে আসে পাখির ডাক আর জলের ঢেউ অতি মনোরম। সে দেখল দূরে ছোটো-বড়ো কয়েকটি জাহাজ নোঙর করে আছে, যাত্রীর অপেক্ষায় দাঁড়িয়ে আছে অনেকগুলি নৌকো। দূরে কোথাও একটা কোকিল গান গেয়ে উঠল। ওর মনে হল আজকাল কলকাতায় কোকিলের ডাক তো শোনাই যায় না। হৃদয় শান্ত করা মনোরম পরিবেশ রঞ্জনের মনের গুমোট পরিস্থিতিকে যেন অনেকটা আরাম দিয়েছিল। এভাবেই প্রকৃতির আনুকূল্যে রঞ্জনের মন অনেকটা হালকা হয়েছিল।

পরাজয় গল্পে প্রকৃত পরাজয় কার হয়েছে বলে তোমার মনে হয়? আলোচনা করে বুঝিয়ে দাও।

শান্তিপ্রিয় বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘পরাজয়’ নামক গল্পে দক্ষ ফুটবলার রঞ্জন সরকারের জীবনের এক কাহিনিকে তুলে ধরা হয়েছে। রঞ্জন দীর্ঘ পনেরো বছর ধরে যে ক্লাবের জন্য খেলার মাঠে ঘাম ঝরিয়েছে, যে ক্লাবের দুঃখ-সুখের সঙ্গে নিজেকে সম্পৃক্ত করেছে, সেই ক্লাব বারপুজোর অনুষ্ঠানে এবার তাকে আমন্ত্রণ না জানিয়ে চরমভাবে অপমানিত করেছে।

এই ঘটনায় যন্ত্রণায় ছটফট করেছে সে, তাও দুদিন অপেক্ষা করেছে-যদি ক্লাবের পক্ষে কেউ তার সঙ্গে যোগাযোগ করে, এমন আশায়। কিন্তু না, কেউ তার সঙ্গে যোগাযোগ করার সৌজন্য দেখায়নি। ব্যথাহত, ক্ষুব্ধ, অপমানিত রঞ্জন একসময় সিদ্ধান্ত নেয় যে, সে খেলার মাঠেই এর যোগ্য জবাব দেবে এবং সেইমতো অন্য বড়ো ক্লাবে যোগদানও করে সে। আর মরশুমের প্রথম বড়ো ম্যাচেই লক্ষাধিক সমর্থকের সামনে পুরোনো ক্লাবের বিরুদ্ধে গোল করে নতুন ক্লাবকে জিতিয়ে সব অপমানের জবাব দেয় রঞ্জন। সে পরাজিত করতে পেরেছে পুরোনো দলকে। সাজঘরে চলতে থাকে সহ-খেলোয়াড়দের মাতামাতি, উল্লাস। কিন্তু রঞ্জন অনুভব করে ওর দুই চোখ দিয়ে অঝোরে জল ঝরেছে। দুই হাতে মুখ ঢেকে কাঁদতে লাগল রঞ্জন। কিছুতেই নিজেকে সে সামলাতে পারছে না। যে ক্লাবের জার্সিকে সে মায়ের মতো সম্মান করেছে, সেই মাকে পরাজিত করে সে তো জয়ী হতে পারে না; পুরোনো ক্লাবকে পরাজিত করতে গিয়ে সে নিজেই তো পরাজিত হয়ে গেছে।


আজকের এই আর্টিকেলে আমরা অষ্টম শ্রেণীর বাংলা বিষয়ের চতুর্ত্রিংশ অধ্যায় পরাজয়’-এর রচনাধর্মী প্রশ্ন ও উত্তর নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেছি। এই প্রশ্নগুলো অষ্টম শ্রেণীর বাংলা পরীক্ষার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, কারণ এগুলো পরীক্ষায় প্রায়ই আসে। আশা করি, এই নিবন্ধটি আপনার জন্য সহায়ক হয়েছে। যদি আপনার কোনো প্রশ্ন থাকে বা আরও সহায়তার প্রয়োজন হয়, টেলিগ্রামে আমার সাথে যোগাযোগ করতে পারেন। এছাড়াও, আপনার বন্ধুদের সঙ্গে এই পোস্টটি শেয়ার করতে ভুলবেন না, যাতে তারাও উপকৃত হতে পারে। ধন্যবাদ!

Share via:

মন্তব্য করুন