অষ্টম শ্রেণি – বাংলা – পরবাসী – বিষয়সংক্ষেপ

Rahul

আজকের এই আর্টিকেলে অষ্টম শ্রেণীর বাংলা বিষয়ের দশম অধ্যায়পরবাসী’-এর বিষয়সংক্ষেপ নিয়ে আলোচনা করবো। এই বিষয়সংক্ষেপটি অষ্টম শ্রেণীর বাংলা পরীক্ষার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, কারণ এটি পরীক্ষায় প্রায়ই আসে।

পরবাসী – বিষয়সংক্ষেপ
পরবাসী – বিষয়সংক্ষেপ

পরবাসী অধ্যায়ের লেখক পরিচিতি

শ্রীযুক্ত অবিনাশচন্দ্র দে এবং মনোহারিণী দেবীর পঞ্চম সন্তান বিষ্ণু দে-র জন্ম হয় কলকাতার পটলডাঙায়, যদিও তাঁর পূর্বপুরুষদের আদি নিবাস ছিল হাওড়ায়। তাঁর জন্ম হয় ১৮ জুলাই, ১৯০৯ খ্রিস্টাব্দে এবং মৃত্যু ঘটে ৩ ডিসেম্বর, ১৯৮২ খ্রিস্টাব্দে।

১৯২৭ খ্রিস্টাব্দে তিনি ম্যাট্রিকুলেশন পাস করেন। ১৯৩৩ খ্রিস্টাব্দে ইংরেজি সাহিত্যে এমএ পাস করেন। এরপর একে একে রিপন কলেজ, প্রেসিডেন্সি কলেজ এবং মৌলানা আজাদ কলেজে ইংরেজি সাহিত্যের অধ্যাপনার মধ্য দিয়ে তাঁর কর্মজীবনের সূচনা ও সমাপ্তি ঘটে।

রবীন্দ্র পরবর্তীকালে বিষ্ণু দে একজন বিশ্বতোমুখী কবি প্রতিভা, যিনি স্বকীয়তায় সমুজ্জ্বল। ফ্যাসিবাদে বিশ্বাসী ছিলেন তিনি। সংগীত ও চিত্রকলাতেও তাঁর অনুসন্ধিৎসা ছিল প্রখর। ‘পরিচয়’, ‘সাহিত্যপত্র’ প্রভৃতি পত্রিকায় তিনি ছিলেন নিয়মিত গ্রন্থ সমালোচক। ‘সাহিত্য পত্র’ পত্রিকাটির প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন তিনি।

বন্ধুসান্নিধ্যে তিনি ছিলেন ভাগ্যবান। সুধীন্দ্রনাথ দত্ত, বুদ্ধদেব বসু, সত্যেন্দ্রনাথ দত্ত, শম্ভু মিত্র, যামিনী রায়, দেবব্রত বিশ্বাস, সুচিত্রা মিত্র প্রমুখ জ্ঞানীগুণীদের সান্নিধ্যে আসেন তিনি।

তাঁর কবিতা প্রকাশের আরম্ভ ১৯২৫-২৬ থেকেই। তাঁর কবিতা প্রথম থেকেই পাঠককে অন্যতর এক কাব্যরীতির সন্ধান দেয়। ‘চোরাবালি’ ‘সন্দীপের চর’ সর্বোপরি ‘স্মৃতিসত্তা ভবিষ্যৎ’ বাংলা কবিতার জগতে ইতিহাস সৃষ্টি করেছিল এবং এর জন্য তিনি ১৯৬৫ খ্রিস্টাব্দে ‘সাহিত্য আকাদেমি’ পুরস্কার পান। এরপর ১৯৭৩ খ্রিস্টাব্দের মার্চ মাসে ‘জ্ঞানপীঠ পুরস্কার’ এবং ‘সোভিয়েত ল্যান্ড নেহরু পুরস্কার’ – এ তিনি সম্মানিত হন।

কবি বিষ্ণু দে-র রচনাসমূহ –

  • কাব্যগ্রন্থসমূহ – ‘উর্বশী ও আর্টেমিস’, ‘চোরাবালি’, ‘পূর্বলেখ’, ‘সন্দীপের চর’, ‘অন্বিষ্ট’, ‘তুমি শুধু পঁচিশে বৈশাখ’, ‘স্মৃতি সত্তা ভবিষ্যৎ’, ‘আমার হৃদয়ে বাঁচো’ এবং আরও বহু কাব্যগ্রন্থ রয়েছে।
  • কবিতা সংকলন – ‘বিষ্ণু দে-র শ্রেষ্ঠ কবিতা’, ‘রুশতী পঞ্চশতী’, কবিতা সমগ্র-১, কবিতা সমগ্র-২, বিষ্ণু দে-র প্রেমের কবিতা। এ ছাড়াও কবিতাগ্রন্থ রয়েছে এবং বাংলা প্রবন্ধগ্রন্থ, ইংরেজি প্রবন্ধ গ্রন্থ এবং বহু অনুবাদগ্রন্থও রয়েছে।

পরবাসী অধ্যায়ের বিষয়সংক্ষেপ

একদিন যা ছিল সুন্দর ও স্বাভাবিক, তা ক্রমশ হারিয়ে যাচ্ছে। দুদিকে বনের মাঝে যে আঁকাবাঁকা পথ, তা সারি সারি গাছের ফাঁকফোকর থেকে আসা সূর্যের আলোয় ঝকঝক করছে। প্রকৃতির তালে তাল মিলিয়ে, দু-পাশের গাছপালা যেমন দাঁড়িয়ে রয়েছে, ঠিক তেমনটি রেখেই মাঝের পথটি যেন সাবলীল ছন্দে এঁকেবেঁকে চলেছে। রাতেরও একটা অদ্ভুত মোহময়ী আলো থাকে। আর সেই আলো-আঁধারিতে মাঝে মাঝেই দেখা যায় শ্বাপদের লুব্ধ চোখ। কচি কচি খরগোশেরা আনন্দে নৃত্যের তালে তালে যেন লাফিয়ে চলেছে।

টিলা অঞ্চলে সাধারণত কাঁকুড়ে মাটি দেখা যায় এবং এ মাটিতেই পলাশ গাছের আধিক্য। সেই নিটোল টিলায় পলাশ ফুলের যে ঝোপ হয়ে থাকে, সেখানে হঠাৎই আনন্দ-পুলকে বনময়ূরের যে পেখম তুলে নাচ, তা যেন কত্থক নৃত্যকেই স্মরণ করিয়ে দেয়। মাথা গোঁজার ক্ষণস্থায়ী ঠাঁই যে তাবু তার ছায়ায় নদীর তরঙ্গে সোনালি সেতারের মতো যে সংগীতসুষমা এবং বনময়ূরের নৃত্য, তা যেন একই সুরে মিলে গেছে।

সন্ধেবেলায় চারণভূমির কিনারে চঞ্চলা হরিণী নদীতে চুপি চুপি আসে, জল খায়; ঠিক এই মুহূর্তে কবির স্মরণে আসে অন্ধমুনির তৃষ্ণা নিবারণের জন্য তার পুত্র সিন্ধুমুনির নদী থেকে কলসি করে জল তোলার শব্দের কথা। হরিণের জলপানের মতো সিন্ধুমুনির নদী থেকে জল তোলার শব্দ কীভাবে একজন শিকারিকে প্রলুব্ধ করে আহ্বান জানায়, তা কবি সুন্দরভাবে চিত্রায়িত করেছেন। চিতাও তার বিহার সেরে ফেরে যেন। বুনো একটা অদ্ভুত ভয়ংকর কথাকলি নাচের মতো বেগবতী ছন্দে চিতা চলে যায়।

গাছগাছালি, বনবনানী সব সাফ হয়ে গেছে। বিস্তর এলাকা শুকনো প্রান্তর বই আর কিছুই নয়। বসতি উঠে গেছে। সজীব নয়, কেবল শুকনো হাওয়া হাহাকার করে ফেরে। গ্রামের পর গ্রাম উচ্ছেদ হয়ে গেছে। গ্রামও নেই, নতুন শহরেরও পত্তন হচ্ছে না। এমতাবস্থায় ময়ূর তার সৌন্দর্যের গরিমায় ভোগবাদী দুনিয়ার কাছে আজ পণ্যে পরিণত।

মানুষ আজ বোবা বনে গেছে। ভীষণই অসহায় যেন, সমগ্র প্রকৃতি তথা নদী, গাছ, পাহাড় আজ অপ্রয়োজনীয়। প্রকৃতি, মানুষ গ্রাম সবই ছিন্নমূল তথা উদ্‌বাস্তু। প্রকৃতি ও মানুষ আজ এখানে, কাল ওখানে-যেন এক তাঁবুর বাসিন্দা। সারা দেশে তাঁবু বয়ে বয়ে আর কাহাতক ঘোরা যায়। সুতরাং নিজের দেশেই নিজে পরবাসী, নিজের ঘরেই নিজে বেঘর। কবি কবিতার শেষ চরণে আক্ষেপ করে বলেছেন – পরবাসী কবে তার স্বভূমি গড়ে তুলতে পারবে? তবে সম্ভবত এই পিছিয়ে যাওয়া বৃহৎ প্রকৃতি তথা মানুষ তথা পরবাসী আর কখনোই তার নিজ জমিতে পা রাখতে পারবে না।

পরবাসী অধ্যায়ের নামকরণ

একটি গল্প বা কবিতা, প্রবন্ধ কিংবা উপন্যাস, যাই হোক না কেন, তার নামকরণেই আভাস মেলে বিষয়বস্তুর তথা রচনাটির মূল বক্তব্যের। কবির কোন্ অভিপ্রায় কাজ করছে ওই নামকরণের পিছনে, তাও বুঝতে পারা যায় নামকরণের মধ্য দিয়েই। নামকরণ ঘটনাকেন্দ্রিক, কিংবা চরিত্রকেন্দ্রিক বা ব্যঞ্জনাধর্মী সবরকমই হতে পারে। এখন কবি বিষ্ণু দে-র কবিতা ‘পরবাসী’ নামকরণটি কতটা সার্থক, তাই আমাদের বিচার্য।

কবিতাটির প্রথমে কবি প্রকৃতির নিপুণ চিত্রকর। নদী, অরণ্য, টিলা, পশুপাখি সকলের প্রতিই তিনি সমান উদার। প্রকৃতির বর্ণচ্ছটা, ময়ূরের নৃত্যবিভঙ্গ, হরিণের জল খাওয়া কিংবা চিতার লুব্ধদৃষ্টি তাঁর নজর এড়ায় না। অন্ত্যমিলহীন অথচ এক অপূর্ব ছন্দে চিত্রায়িত করেছেন তিনি গ্রামবাংলার পথঘাটের সজীবতা কিংবা সোনালি সেতারের অনুপ্রাসে বেজেছে নদীর কুলুকুলু সুরতরঙ্গ এবং শব্দসুষমা।

কবি অত্যন্ত নিখুঁতভাবে পর্যবেক্ষণ করেছেন সিন্ধুমুনির হরিণ আহ্বানকে এবং চিতার হিংস্র কথাকলি রূপকের আঙ্গিকে তার চলে যাওয়ার ছন্দকে।

কিন্তু প্রথম তিনটি স্তবকে কবি যে আশার বার্তা দিয়েছেন, চতুর্থ স্তবক থেকে কিন্তু ততটাই নৈরাশ্যের আঁধারে ডুবিয়ে দিয়েছেন পাঠককে। মার্কসীয় দর্শনপুষ্ট কবি এখানে বলেছেন প্রকৃতি আজ ধ্বংসপ্রায়। ময়ূর পণ্যে পরিণত। প্রকৃতি, মানুষ তথা কবি সকলেই আজ নিজভূমি থেকে উৎখাত তথা উদ্‌বাস্তু। আজ সকলেই নিজভূমে পরবাসী।

কবিমাত্রই পরবাসী। কেন-না তাঁর বোধের জগৎ, তাঁর চেতনা, ভালোবাসা অত্যন্ত গভীর। তাঁর দর্শনে পৌঁছোতে পারে না সাধারণ মানুষ। তাই তিনি সর্বদাই বহুর মাঝে একা এবং নিজের বাসাতে পরবাসী। প্রকৃতি ও মানুষ সকলেই উদ্‌বাস্তু। স্বস্থানেই পরবাসী। সুতরাং কবিতার নামকরণ একেবারেই সার্থক।

পরবাসী অধ্যায়ের শব্দার্থ ও টীকা

ঝিকিমিকি – আলোর চঞ্চল দীপ্তি; মৃদু ঝকমক করা। প্রকৃতি – বাহ্যজগৎ; নিসর্গ। জ্বলে – দীপ্ত হয়; জ্বলজ্বল করে। কচি-কচি – অতি-কাঁচা নবজাত; নবীন। খরগোশ – শশক; দ্রুতগামী লম্বা কান ও ছোটো লেজবিশিষ্ট নিরামিশাষী জন্তু। নিটোল – টোল পড়ে নি এমন; সুগোল; সুডৌল। টিলা – মৃত্তিকাদির উচ্চ স্তূপ; ক্ষুদ্র পাহাড়। পলাশ – ফুলবিশেষ বা তার গাছ; কিংশুক। ঝোপ – ছোটো গাছের ঝাঁক বা জঙ্গল; গুল্ম। পুলক – রোমাঞ্চ; ভাবাবেগবশত দেহের রোম খাড়া হয়ে ওঠা; আনন্দ; হর্ষ। বনময়ূর – যে ময়ূর গৃহপালিত নয় এবং বনে বিচরণ করে। কত্থক – ভারতীয় উচ্চাঙ্গ নৃত্যপদ্ধতি বিশেষ, বিশেষত জয়পুর, লখনউ, বেনারস ঘরানার নৃত্যশৈলী। তাঁবু – বস্ত্রগৃহ; শিবির। সোনালি – উজ্জ্বল পীতাভ বর্ণ; সোনার রং স্বর্ণাভ। সেতার – তিন তারবিশিষ্ট যন্ত্র। সুষমা – লাবণ্য; সৌন্দর্য; শোভা। সিন্ধুমুনি – সিন্ধু নামক তপস্বী (পুরাণে বর্ণিত)। আহ্বান – আমন্ত্রণ; নিমন্ত্রণ। চিতা – হরিদ্রাবর্ণের উপর কালো গোল ছাপযুক্ত বাঘ। লুব্ধ – লোভযুক্ত; লোলুপ; লোভী। হিংস্র – হিংসাকারী। ছন্দে – প্রবৃত্তি; ঝোঁক; অভিপ্রায়; স্বচ্ছন্দে। বন্য – বুনো। কথাকলি – কেরলের ধ্রুপদি নৃত্যশৈলী। বসতি – নিবাস; বাস করার বাড়ি। প্রান্তর – বৃক্ষ, জল, বসতি প্রভৃতি নেই এমন বিস্তৃত ভূমি। হাহাকার – শূন্যতাসূচক; খাঁ খাঁ। জঙ্গল – ছোটো বা অগভীর বন; অরণ্য। পত্তন – ভিত্তি; নির্মাণ; প্রতিষ্ঠা; সন্নিবেশ; আরম্ভ। পণ্য – বিক্রেয় বস্তু; বেসাত। মৌন – বাকসংযম; নীরবতা; নীরব; নিঃশব্দ। অসহায় – একক; নিঃসঙ্গ; নিঃসহায়। নদী – স্রোতস্বিনী; প্রবাহিণী; তটিনী; তরঙ্গিণী। গাছ – বৃক্ষ; তরু; বিটপী। পাহাড় – পর্বত। গৌণ – অপ্রধান। পরবাসী – কাব্যে প্রবাসী নিজভূমে পরবাসী। নিজবাসভূমি – নিজ-স্বীয়; স্বকীয়। বাসভূমি-বাসস্থান; বসবাসের ভিটে; বাড়ি।


আজকের এই আর্টিকেলে অষ্টম শ্রেণীর বাংলা বিষয়ের দশম অধ্যায়পরবাসী’–এর বিষয়সংক্ষেপ নিয়ে আলোচনা করেছি। এই বিষয়সংক্ষেপ অষ্টম শ্রেণীর বাংলা পরীক্ষার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, কারণ এটি প্রায়ই পরীক্ষায় আসে। আশা করি, নিবন্ধটি আপনার জন্য সহায়ক হয়েছে। যদি আপনার কোনো প্রশ্ন থাকে বা আরও সহায়তার প্রয়োজন হয়, তবে আপনি টেলিগ্রামে আমার সাথে যোগাযোগ করতে পারেন। এছাড়াও, দয়া করে আপনার বন্ধুদের সাথে এই পোস্টটি শেয়ার করতে ভুলবেন না, যাতে তারাও উপকৃত হতে পারে। ধন্যবাদ!

Please Share This Article

Related Posts

নবাব সিরাজউদ্দোলা কে ছিলেন? পলাশীর যুদ্ধের কারণ ও ফলাফল লেখো।

পলাশীর যুদ্ধের কারণ ও ফলাফল

Class 8 English – The Happy Prince – About Author and Story

Class 8 English – The Happy Prince – About Author and Story

Class 8 English – The Happy Prince – Question and Answer

Class 8 English – The Happy Prince – Question and Answer

About The Author

Rahul

Tags

মন্তব্য করুন

SolutionWbbse

"SolutionWbbse" শিক্ষার্থীদের জন্য একটি অনলাইন অধ্যয়ন প্ল্যাটফর্ম। এখানে প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার প্রস্তুতি, মাধ্যমিক পরীক্ষার জন্য গাইডলাইন, এবং বিভিন্ন বিষয়ে পড়াশোনার সাহায্য প্রদান করা হয়। আমাদের মূল লক্ষ্য হলো ইন্টারনেটের মাধ্যমে সকল বিষয়ের শিক্ষণীয় উপকরণ সহজেই সকল শিক্ষার্থীর কাছে পৌঁছে দেওয়া।

Editor Picks

উত্তর ভারতের নদনদীর সংক্ষিপ্ত পরিচয় দাও।

দেশীয় রাজ্যগুলির ভারতভুক্তিকরণের ক্ষেত্রে ভারত সরকার কী ধরনের পদ্ধতি অবলম্বন করেছিল?

ভারত বিভাজনের অনিবার্যতার কারণ বিশ্লেষণ করো।

ভাঙ্গর ও খাদার বলতে কি বোঝো? ভাঙ্গর ও খাদারের মধ্যে পার্থক্য

দেশীয় রাজ্যগুলি সম্পর্কে জাতীয় কংগ্রেসের মনোভাব আলোচনা করো।