আজকের এই আর্টিকেলে অষ্টম শ্রেণীর বাংলা বইয়ের ষট্বিংশ অধ্যায় ‘স্বাধীনতা’র বিষয়সংক্ষেপ নিয়ে আলোচনা করবো। এই বিষয়টি অষ্টম শ্রেণীর বাংলা পরীক্ষার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, কারণ এখান থেকে প্রশ্নোত্তর প্রায়শই পরীক্ষায় আসে। তাই, এই আলোচনা শিক্ষার্থীদের প্রস্তুতিতে বিশেষ সহায়ক হবে।
স্বাধীনতা অধ্যায়ের কবি পরিচিতি
ল্যাংস্টন হিউজ জন্মগ্রহণ করেছিলেন ১৯০২ খ্রিস্টাব্দে। তিনি একাধারে ছিলেন কবি, ঔপন্যাসিক, নাট্যকার এবং সমাজকর্মী। বিংশ শতকের কুড়ির দশকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের হার্লেস রেনেসাঁর অন্যতম নেতা হিসেবে তাঁর সমধিক পরিচিতি। তাঁর প্রথম কাব্যগ্রন্থের নাম – ‘The Weavy Blues’। তাঁর রচিত অন্যান্য বই ‘Male Bone’, ‘Jerico-Jim Crow’ প্রভৃতি। কাব্যস্রষ্টা হিসেবে তিনি যথেষ্ট সার্থকতা লাভ করেন এবং বহু পুরস্কারে তিনি সম্মানিত হয়েছিলেন। কবির মৃত্যু ঘটে ১৯৬৭ খ্রিস্টাব্দে।
স্বাধীনতা অধ্যায়ের পাঠপ্রসঙ্গ
স্বাধীনতা হল ‘স্ব’-এর অধীনতা, অর্থাৎ নিজের উপর নিজের অধিকার বা স্বাধিকার। স্বাধীনতায় মানুষ কেবল নিজের অধীন, স্ববশ, অনন্যপর। তাই স্বাধীনতা সকলেরই কাম্য। স্বাধীনতা হীনতায় কেউই বাঁচতে পারে না বা চায় না। স্বাধীনতা অনেক রকমে মানুষ অনুভব করে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি করে যে স্বাধীন সত্তাগুলি মানুষ চায় সেগুলি হল – ব্যক্তিস্বাধীনতা, মতপ্রকাশের স্বাধীনতা, বাকস্বাধীনতা ইত্যাদি। তবে রাজনৈতিকভাবে যে স্বাধীনতাবোধ বর্তমান দুনিয়ায় মানুষের মনে প্রবল, তা হল আর্থিক স্বাধীনতা। অর্থগত স্বাধীনতা যে ব্যক্তিজীবনে কতটা জরুরি তা প্রথম বিশ্বের দেশগুলির মানুষ সবচেয়ে গুরুত্ব সহকারে অনুভব করে। কবি ল্যাংস্টন হিউজ তাঁর বিমূর্ত ভাষাভঙ্গিতে মানুষের স্বাধীনতাবোধের চাওয়া পাওয়ার দ্বন্দ্বকে উপস্থাপিত করেছেন।
স্বাধীনতা অধ্যায়ের বিষয়সংক্ষেপ
স্বাধীনতার পথ খুব সহজ নয়। হয়তো সে কোনোদিনই আসবে না। ভয় পেয়ে, সমঝোতার মধ্য দিয়ে তাকে আয়ত্ত করাও সহজ নয়। প্রত্যেকেরই তো অন্য সকলের মতো অধিকার আছে দু-পায়ে ভর দিয়ে দাঁড়িয়ে থাকার, নিজস্ব কিছুটা জমির মালিকানার। সময়ে সবই হবে, কাল আসবে একটা নতুন দিন – এই কথাগুলো শুনে শুনে কান যেন পচে গেল। মৃত্যুর পর প্রাপ্ত স্বাধীনতা মূল্যহীন। আগামীকাল যে রুটি পাওয়া সম্ভব তা দিয়ে আজ যেন বাঁচার কোনো সম্ভাবনাই নেই। স্বাধীনতা হল একটা শক্তিশালী বীজপ্রবাহ – বাঁচার জন্য, বড়ো প্রয়োজনকে সিদ্ধ করার জন্য। আমরা সবাই একটা বৃহত্তম স্থানে বাস করি, তাই প্রাপ্তিতে সকলেরই সমান প্রয়োজন। কবি ল্যাংস্টন হিউজ তাঁর ‘স্বাধীনতা’ কবিতায় এ কথাই বলেছেন।
স্বাধীনতা অধ্যায়ের নামকরণ
আমেরিকান কবি ল্যাংস্টন হিউজের লেখা একটি কবিতা ‘স্বাধীনতা’। বাংলায় এটিকে তরজমা করেছেন কবি শক্তি চট্টোপাধ্যায় ও মুকুল গুহ। কবিতাটিতে যে মূল সুরটি ধ্বনিত হয়েছে, তা মানবমনের গহন কোণে ধ্বনিত প্রথম ব্যক্তিগত ও পরত সমষ্টিগত মানুষের স্বাধীনতাপ্রাপ্তির প্রবল এষণা। স্বাধীনতাবোধ মানবমনে সৃজিত এক প্রবল আলোড়ন সৃষ্টিকারী বোধ। যে বোধের আলোকে রাজনৈতিকভাবে পৃথিবী বারবার আলোড়িত হয়েছে।
কবি তাঁর উক্ত কবিতায় অত্যন্ত সংবেদনশীলতার সঙ্গে, নির্ভীকভাবে তাঁর মননের আলোড়ন এবং স্বাধীনতাপ্রাপ্তির প্রবল বাসনাকে বিমূর্তভাবে প্রকাশ করেছেন। প্রথমে স্বাধীনতা না পাওয়ার কারণে তীব্র হতাশা এবং পরে স্বাধীনতাপ্রাপ্তিকে সুনিশ্চিত করতে, একটা একজেদি মনোভাবকে কবি তীক্ষ্ণভাবে কবিতার ছত্রে ছত্রে এনেছেন। স্বাধীনতার প্রসঙ্গটি নিদারুণভাবে লালিত ও পল্লবিত হতে দেখা যায় কবিতায়। স্বাধীনতাবোধের জয়গানই এ কবিতার মূল বিষয়। কবিতার শেষে কবির ঘোষণাটিও তাই এক্ষেত্রে স্মরণযোগ্য – ‘তাই/স্বাধীনতা আমার প্রয়োজন/তোমার যেমন।’ অতএব কবিতার বক্তব্য বিষয়ের নিরিখে ‘স্বাধীনতা’ নামকরণটি এখানে বক্তব্যপ্রধান নামকরণ হিসেবে চূড়ান্তভাবে সার্থক বলা যেতে পারে।
স্বাধীনতা অধ্যায়ের শব্দার্থ ও টীকা
স্বাধীনতা – অন্যের অধীন নয়, এমন অবস্থা; নিজের উপর নিজের অধিকার, মুক্তি বা স্বাতন্ত্র্য। সমঝোতা – বোঝাপড়া; আপোস; বিরোধের ব্যাপারে বিবদমান দুটি পক্ষের মধ্যে মীমাংসাসূত্র বা চুক্তি। অধিকার – সত্ত্ব বা দাবি। দুকাঠা – জমির একধরনের মাপ, প্রায় ৭২০ বর্গফুট পরিমাণ জমি হল এক কাঠা; এক বিঘার কুড়ি ভাগের এক ভাগ হল কাঠা, তার দু-গুণ। মালিকানার – অধিকার বা সত্ত্বের। প্রয়োজন – দরকার। আগামীকাল – আসছে যে দিন। বীজপ্রবাহ – বীজের প্রবাহ বা সত্তার ঠিকানা।
আজকের এই আর্টিকেলে অষ্টম শ্রেণীর বাংলা বিষয়ের ষট্বিংশ অধ্যায় ‘স্বাধীনতা’ এর বিষয়সংক্ষেপ নিয়ে আলোচনা করেছি, যা শিক্ষার্থীদের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, এই অধ্যায়ের বিষয়বস্তু পরীক্ষায় প্রায়ই আসতে দেখা যায়। আশা করি, এই নিবন্ধটি আপনার জন্য উপকারী হয়েছে। যদি কোনো প্রশ্ন থাকে বা বাড়তি সহায়তা প্রয়োজন হয়, নির্দ্বিধায় টেলিগ্রামে আমার সাথে যোগাযোগ করতে পারেন। এছাড়াও, পোস্টটি আপনার বন্ধুদের সাথে শেয়ার করতে ভুলবেন না, যাতে তারাও এর থেকে উপকৃত হতে পারে। পড়ার জন্য ধন্যবাদ!