অষ্টম শ্রেণি – বাংলা – বোঝাপড়া – রচনাধর্মী প্রশ্ন ও উত্তর

Sourav Das

আজকের এই আর্টিকেলে অষ্টম শ্রেণীর বাংলা বিষয়ের প্রথম অধ্যায়বোঝাপড়া’ নিয়ে রচনাধর্মী প্রশ্ন ও উত্তর সম্পর্কে আলোচনা করবো। এই প্রশ্নগুলো অষ্টম শ্রেণীর বাংলা পরীক্ষার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, কারণ এগুলো প্রায়ই পরীক্ষায় আসে।

বোঝাপড়া – রচনাধর্মী প্রশ্ন ও উত্তর
বোঝাপড়া – রচনাধর্মী প্রশ্ন ও উত্তর
Contents Show

ভালো মন্দ যাহাই আসুক/সত্যেরে লও সহজে। – তুমি কি কবির সঙ্গে একমত? জীবনে চলার পথে নানা বাধাকে তুমি কীভাবে অতিক্রম করতে চাও?

প্রশ্নোক্ত অংশটি কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘বোঝাপড়া’ নামক কবিতা থেকে গ্রহণ করা হয়েছে। আলোচ্য কবিতায় কবি বলেছেন যে জীবনে ভালোমন্দ যাই আসুক না কেন, সহজেই তাকে স্বীকার করে নিতে হবে, মেনে নিতে হবে – কবির এই অভিমতের সঙ্গে আমিও সম্পূর্ণভাবে সহমত হচ্ছি। কারণ জীবনে চলার পথে সুখের সঙ্গে দুঃখকে যেমন মেনে নিতে হয়, তেমনই ভালোর সঙ্গে মন্দকেও মেনে নিতেই হবে। এই মানসিক বোঝাপড়াতেই জীবনে আনন্দ আসে।

জীবনে চলার পথে নানা বাধা আসবেই, সেই বাধা আমাদের জীবনকে বিপন্ন করে তোলে। আমরা অনেক সময় তাতে বিভ্রান্ত হয়ে পড়ি, দিশাহারা হই। তবে আমার মনে হয় এভাবে বাধাকে ভয় পেলে চলবে না; ঠান্ডা মাথায় বুদ্ধি, সহনশীলতার সঙ্গে বাধাকে অতিক্রম করতে হবে। মেনে নিতে হবে যে বাধা থাকবেই, নাহলে জীবন তো গতিহীন হয়ে পড়বে। বাধার সঙ্গে যুদ্ধ করতে হবে, তাকে অতিক্রম করার চেষ্টায় প্রবৃত্ত হতে হবে, যা সত্য তাকে মেনে নিতেই হবে। এভাবেই জীবনে চলার পথের বাধাকে আমি অতিক্রম করতে চাই।

মনেরে আজ কহ যে, ভালো মন্দ যাহাই আসুক/সত্যেরে লও সহজে। – কবির মতো তুমি কি কখনও মনের সঙ্গে কথা বলো? সত্যকে মেনে নেবার জন্য মনকে তুমি কীভাবে বোঝাবে – একটি পরিস্থিতি কল্পনা করে বুঝিয়ে লেখো।

প্রশ্নে উদ্ধৃত অংশটি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘বোঝাপড়া’ নামক কবিতা থেকে নেওয়া হয়েছে। কবি বলেছেন, মনকে বোঝাতে হবে যে সে যেন সত্যকে মেনে নেয়। হ্যাঁ, কবির মতো আমিও নিজের মনের সঙ্গে অনেক সময়েই কথা বলি। বিশেষ করে কোনো সিদ্ধান্ত নিতে হলে, দ্বিধা তৈরি হলে বা প্রতিকূল অবস্থায় পড়লেই আমি আমার মনের সঙ্গে কথা বলে থাকি।

কল্পিত কাহিনি – সামনেই আমার পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে। আমি সবসময় অঙ্কটা নিয়ে ভয়ে থাকি। পরীক্ষার প্রশ্নপত্র হাতে পেয়েই আমার মাথা ঘুরে যাওয়ার মতো পরিস্থিতি তৈরি হবে। ছোটো প্রশ্নের অধিকাংশই আমার অচেনা। ভাবতে ভাবতে কিছুটা সময় কেটে যাবে। তখন মনকে বলব ‘আমি পারব, আমাকে পারতেই হবে।’ কিন্তু চতুর্থ অঙ্কটি করতে গিয়েই আমি আটকে যাব। তখন সেটা ছেড়ে পাটিগণিত করতে গিয়ে দেখব – প্রথমটিই আমার অজানা। আমার শরীর দিয়ে তখন ঘাম ঝরতে শুরু করবে, তখন আমি আমার মনের সঙ্গে কথা বলব। মনকে বোঝাব-আমার বন্ধুরা যখন পারবে, আমিও তখন পারব। আমাকে ভালো ফল করতেই হবে। কঠিন প্রশ্ন তো হতেই পারে। সবসময় আমার মনের মতো প্রশ্ন হবে নাকি? মন থেকে এটা মানতেই হবে যে – সহজ যেমন থাকবে, কঠিনও থাকবে। এটা তো পরীক্ষারই অঙ্গ-জীবনের অঙ্গ। মন আমার কথায় সহমত পোষণ করে জানাবে – ‘তুমি পারবে, তুমি মাথা ঠান্ডা করে আবার অঙ্কগুলি দেখো।’ এবার একটু চোখ বন্ধ করে অবস্থাটা একটু বুঝে নেব। তারপর আবার অঙ্কগুলি করতে থাকব। এবার দেখব অঙ্কগুলি সুন্দরভাবে হয়ে যাচ্ছে। শেষপর্যন্ত পরীক্ষাটা খারাপ হবে না। এইভাবে সত্যকে মেনে নিয়ে মনকে বুঝিয়ে প্রতিকূল অবস্থা থেকেও সাফল্য আসবে।

তেমন করে হাত বাড়ালে/সুখ পাওয়া যায় অনেকখানি। – তেমন করে কথাটির অর্থ বুঝিয়ে দাও। এখানে কবি কী ধরনের সুখের ইঙ্গিত করেছেন – লেখো।

প্রশ্নোক্ত উদ্ধৃতিটি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘বোঝাপড়া’ নামক কবিতা থেকে গ্রহণ করা হয়েছে। ‘তেমন করে’ বলতে বোঝানো হয়েছে মন থেকে। মানুষ অনেক সময় নিজ নিজ অহংবোধে মগ্ন থাকে, ফলে মন খুলে অপরের সঙ্গে মিশতে পারে না। তারা তখন নিজের চারদিকেই অন্ধকারের আড়াল তৈরি করে। তখন তারা জগতের প্রকৃত সুখ থেকে বঞ্চিত থাকে। কিন্তু যদি অহংটাকে সরিয়ে ফেলে মানুষ নিজের চারদিকের আড়াল সরিয়ে সকলের মাঝে এসে দাঁড়ায়, তবেই সে বিশ্বচরাচরের অনেকখানি সুখ উপলব্ধি করতে পারবে। ‘তেমন করে’ অর্থে প্রাণের অন্তঃস্থল থেকে হাত বাড়াতে হবে সকলের কাছে-বিশ্বপ্রকৃতির কাছে। অন্তরে আঁধার রেখে চললে এই সুখ পাওয়া যাবে না। পবিত্র মনে এগিয়ে আসতে হবে। ‘তেমন করে’ বলতে কবি এ কথাই বুঝিয়েছেন।

কবি এখানে পার্থিব সম্পদসুখের কথা বলেননি। এখানে তিনি মানসিক সুখের কথা ব্যক্ত করেছেন। সেই সুখে মন শান্ত, উদার হয়।

তাহার পরে আঁধার ঘরে/প্রদীপখানি জ্বালিয়ে তোলো – তাহার পরে বলতে কী বোঝানো হয়েছে? প্রদীপ জ্বালানোর প্রয়োজন হবে কেন?

প্রশ্নোক্ত অংশটি কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘বোঝাপড়া’ নামক কবিতা থেকে নেওয়া হয়েছে।

তাহার পরে বলতে মনের সঙ্গে বোঝাপড়া করে নেওয়ার পরের কথা বোঝানো হয়েছে। বিধির সঙ্গে বিবাদ করে কোনো কাজে সাফল্য পাওয়া যায় না, তাতে নিজের ক্ষতিই হয়। সেই ক্ষতি থেকে মুক্তি পেতে চোখের জলে নিজের মনকে হালকা করতে হবে। অর্থাৎ তখনই মনের সঙ্গে একরকমের বোঝাপড়া করে নিতে হবে। তারপরে প্রদীপ জ্বালানো সহজ হয়ে উঠবে।

আলো হল সমৃদ্ধির প্রতীক, সুখের প্রতীক। মনের মধ্যে জমে ওঠা অন্ধকারকে দূর করতে হলে তো প্রদীপকে জ্বালাতেই হবে। মনে আঁধার জমলে সেই আঁধার ঘরকেও আবৃত করে ফেলে। তখন-সংসারে নেমে আসে দুঃখদারিদ্র্য। এর থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্যই তো প্রদীপশিখার প্রয়োজন। এই প্রদীপের আলোতে আঁধার দূর হয়ে সুখের আলো বিকিরিত হবে, সংসার হয়ে উঠবে মঙ্গলময়। এই কারণেই প্রদীপ জ্বালানোর প্রয়োজন হবে বলে কবি মনে করেছেন।

ভালো মন্দ যাহাই আসুক/সত্যেরে লও সহজে। – কবি কেন বারে বারে এই কথাটি উচ্চারণ করেছেন?

প্রশ্নোক্ত উদ্ধৃতিটি কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের লেখা বোঝাপড়া’ কবিতা থেকে নেওয়া হয়েছে।

আলোচ্য কবিতায় কবি বলেছেন মানুষের জীবনে নানাধরনের সমস্যা আসে, সেই সমস্যা থেকে মুক্ত হওয়ার জন্য সবার আগে মনের সঙ্গে বোঝাপড়া করতে হয়। কারণ মনই আমাদের চালিত করে। আমাদের মনে রাখতে হবে সবাই আমাকে সমাদর করবে না, আবার আমিও কখনোই সবাইকে ভালোবাসি না। কেউ নিজের সর্বস্ব বিকিয়ে দেয়, কেউ আবার কানাকড়িও দেবে না অপরকে। অনেক ঝড়-ঝঞ্ঝা কাটিয়ে যখন মনে হয় সুখের দেখা মিলতে চলেছে, তখনই হয়তো নতুন বিপদ এসে দেখা দিতে পারে। এক্ষেত্রে ভেঙে পড়লে চলবে না, বিধির সঙ্গে বিবাদ করলে চলবে না, মনের সঙ্গে বোঝাপড়া করতে হবে। যেখানে কোনো বিপদের আশঙ্কা কেউ করে না সেখানে বিপদ দেখা দিতে পারে। যার সঙ্গে যতটুকু তফাত আছে-তা মিটিয়ে ফেলতে হবে। নাহলে জীবন থেকে দূরে সরে যেতে হয়, পৃথিবীর আনন্দযজ্ঞে অংশগ্রহণ করা যায় না। চিরসত্যকে সর্বদাই সহজে স্বীকার করে নিতে হয়-মনের সঙ্গে বোঝাপড়ার মাধ্যমেই।

এই কারণেই আলোচ্য কবিতায় কবি প্রশ্নোক্ত অংশটি পাঁচবার উচ্চারণ করেছেন।


আজকের এই আর্টিকেলে অষ্টম শ্রেণীর বাংলা বিষয়ের প্রথম অধ্যায়বোঝাপড়া’ – এর রচনাধর্মী প্রশ্ন ও উত্তর নিয়ে আলোচনা করেছি। এই প্রশ্নগুলো অষ্টম শ্রেণীর বাংলা পরীক্ষার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, কারণ এগুলো প্রায়ই পরীক্ষায় আসতে দেখা যায়। আশা করি, এই নিবন্ধটি আপনার জন্য সহায়ক হয়েছে। যদি আপনার কোনো প্রশ্ন থাকে বা আরও সহায়তার প্রয়োজন হয়, তাহলে আপনি টেলিগ্রামে আমার সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারেন। এছাড়াও, আপনার বন্ধুদের সঙ্গে এই পোস্টটি শেয়ার করতে ভুলবেন না, যাতে তারাও উপকৃত হতে পারে। ধন্যবাদ!

Please Share This Article

Related Posts

নবাব সিরাজউদ্দোলা কে ছিলেন? পলাশীর যুদ্ধের কারণ ও ফলাফল লেখো।

পলাশীর যুদ্ধের কারণ ও ফলাফল

Class 8 English – The Happy Prince – About Author and Story

Class 8 English – The Happy Prince – About Author and Story

Class 8 English – The Happy Prince – Question and Answer

Class 8 English – The Happy Prince – Question and Answer

About The Author

Sourav Das

Tags

মন্তব্য করুন

SolutionWbbse

"SolutionWbbse" শিক্ষার্থীদের জন্য একটি অনলাইন অধ্যয়ন প্ল্যাটফর্ম। এখানে প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার প্রস্তুতি, মাধ্যমিক পরীক্ষার জন্য গাইডলাইন, এবং বিভিন্ন বিষয়ে পড়াশোনার সাহায্য প্রদান করা হয়। আমাদের মূল লক্ষ্য হলো ইন্টারনেটের মাধ্যমে সকল বিষয়ের শিক্ষণীয় উপকরণ সহজেই সকল শিক্ষার্থীর কাছে পৌঁছে দেওয়া।

Editor Picks

মাধ্যমিক ইতিহাস – বিশ শতকের ভারতে কৃষক, শ্রমিক ও বামপন্থী আন্দোলন: বৈশিষ্ট্য ও পর্যালোচনা – সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন উত্তর

মাধ্যমিক ইতিহাস – বিশ শতকের ভারতে কৃষক, শ্রমিক ও বামপন্থী আন্দোলন: বৈশিষ্ট্য ও পর্যালোচনা – অতিসংক্ষিপ্ত প্রশ্ন উত্তর

মাধ্যমিক ইতিহাস – বিশ শতকের ভারতে কৃষক, শ্রমিক ও বামপন্থী আন্দোলন: বৈশিষ্ট্য ও পর্যালোচনা – বিষয়সংক্ষেপ

মাধ্যমিক ইতিহাস – বিকল্প চিন্তা ও উদ্যোগ (উনিশ শতকের মধ্যভাগ থেকে বিশ শতকের প্রথম ভাগ পর্যন্ত): বৈশিষ্ট্য ও পর্যালোচনা – বিশ্লেষণমূলক প্রশ্ন ও উত্তর

মাধ্যমিক ইতিহাস – বিকল্প চিন্তা ও উদ্যোগ (উনিশ শতকের মধ্যভাগ থেকে বিশ শতকের প্রথম ভাগ পর্যন্ত): বৈশিষ্ট্য ও পর্যালোচনা – রচনাধর্মী প্রশ্ন ও উত্তর