অষ্টম শ্রেণি – বাংলা – বোঝাপড়া – ব্যাখ্যাভিত্তিক – সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন ও উত্তর

Sourav Das

অষ্টম শ্রেণির বাংলা পাঠ্যক্রমে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর রচিত “বোঝাপড়া” কবিতা অন্তর্ভুক্ত। এই কবিতাটিতে কবি মানুষের জীবনে বোঝাপড়ার গুরুত্ব তুলে ধরেছেন। কবিতাটির বিভিন্ন দিক সম্পর্কে জ্ঞান অর্জনের জন্য শিক্ষার্থীদের জন্য ব্যাখ্যাভিত্তিক সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন ও উত্তর প্রদান করা হল।

Table of Contents

বোঝাপড়া” কবিতাটি একটি মর্মপূর্ণ কবিতা। এই কবিতাটি আমাদের জীবনে বোঝাপড়ার গুরুত্ব সম্পর্কে শিক্ষা দেয়। বোঝাপড়ার মাধ্যমে আমরা আমাদের জীবনকে আরও সুন্দর ও সমৃদ্ধ করে তুলতে পারি।

কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর “বোঝাপড়া” কবিতায় মনের সাথে মানুষের বোঝাপড়ার গভীর দিক তুলে ধরেছেন। জীবনযাত্রায় আমরা সুখ-দুঃখ, ভালোবাসা-ঘৃণা, প্রতারণা-বিশ্বাস, ত্যাগ-ভোগ সহ বিভিন্ন অভিজ্ঞতার সম্মুখীন হই। এই সকল ঘটনার মধ্য দিয়ে যাওয়া সহজ নয়, বরং বেদনাদায়ক এবং হতাশাজনকও হতে পারে।

কবি আমাদের মনে করিয়ে দেন যে, জীবনে সবকিছুই আমাদের ইচ্ছা অনুযায়ী হবে না। কেউ আমাদের ভালোবাসবে, আবার কেউ ভালোবাসবে না। কেউ হয়তো আমাদের প্রতারণা করবে, আবার কেউ আঘাত করবে। কেউ নিজেকে বিকিয়ে ফেলবে, আবার কেউ অন্যের জন্য ত্যাগ স্বীকার করবে।

সুখের আশায় বুক বেঁধে থাকলে, নতুন বিপদ এসে আঘাত হানতে পারে। তখন মন ভেঙে পড়তে পারে।

বোঝাপড়া – অষ্টম শ্রেণি – বাংলা –ব্যাখ্যাভিত্তিক – সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন ও উত্তর

সেইটে সবার চেয়ে শ্রেয়। – কোনটি সবার চেয়ে শ্রেয়?

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর রচিত ‘বোঝাপড়া’ কবিতা থেকে আলোচ্য উদ্ধৃতিটি গৃহীত। কবি উল্লেখ করেছেন –

ভেসে থাকতে পারো যদি
সেইটে সবার চেয়ে শ্রেয়।

অর্থাৎ অপ্রত্যাশিত আঘাতে বিচলিত না হয়ে, হতাশ না হয়ে অস্তিত্ব রক্ষা করাকেই কবি ‘ভেসে থাকা’ অর্থে প্রকাশ করেছেন। আর সেই কাজটিই সবচেয়ে ভালো এমন দাবি জানিয়েছেন।

তেমন করে হাত বাড়ালে/সুখ পাওয়া যায় অনেকখানি। – উদ্ধৃতিটির নিহিতার্থ স্পষ্ট করো।

প্রশ্নোক্ত অংশটি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘বোঝাপড়া’ নামক কবিতা থেকে নেওয়া হয়েছে।

পৃথিবীতে শুধু মন্দই নেই, ভালোও আছে। তবে তার জন্য নিজেকে কিছু স্বার্থত্যাগ করতে হবে। নিজের মনের মধ্যে আড়াল তৈরি করে মানুষ। সেই আড়ালকে সরিয়ে ফেলতে হবে নিজের প্রয়াসেই। এই বিশ্বচরাচরে প্রকৃতির মধ্যেও সুখের উপকরণ রয়েছে, তা থেকেও তৃপ্তি পাওয়া যেতে পারে। তবে সব কিছুর জন্য দরকার মনের সঙ্গে বোঝাপড়া করা আর অন্তর থেকে সব কিছুকে আপন করে নেওয়া। তাহলেই অনেকখানি সুখের অনুভব পাওয়া যাবে বলে কবি মনে করেছেন।

মরণ এলে হঠাৎ দেখি/মরার চেয়ে বাঁচাই ভালো। – ব্যাখ্যা করো।

প্রশ্নোক্ত উদ্ধৃতিটি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘বোঝাপড়া’ নামক কবিতা থেকে নেওয়া হয়েছে।

বেঁচে থাকতে আমরা বাঁচার সুখ বুঝতে চাই না-আমরা এমনই অবুঝ; কিন্তু যখনই বিপদে পতিত হই অর্থাৎ জীবনে খুবই সংকটজনক অবস্থায় পতিত হই, তখনই আমরা তার থেকে বেরিয়ে আসার জন্য ছটফট করতে থাকি। তখন আমাদের বেঁচে থাকার জন্য আকুলতা বেড়ে যায় বহুগুণ। অথচ তার আগে এমন বহুক্ষেত্রে হয় যে আমরা সমঝোতা বা বোঝাপড়া না করেই চলার চেষ্টা করি এবং শেষে আঘাতে আঘাতে ক্ষতবিক্ষতও হই। তখন মনে হয় মরণ হলেই বাঁচি। অথচ সত্যি মরণের সামনে যখন উপস্থিত হই তখন বাঁচার জন্য মনপ্রাণ ব্যাকুল হয়ে ওঠে।

তাহারে বাদ দিয়েও দেখি/বিশ্বভুবন মস্ত ডাগর। – উদ্ধৃতিটির মধ্য দিয়ে জীবনের কোন্ সত্য প্রকাশ পেয়েছে?

আলোচ্য উদ্ধৃতিটি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর রচিত ‘বোঝাপড়া’ নামক কবিতা থেকে চয়ন করা হয়েছে।

উদ্ধৃতিটির মধ্য দিয়ে কবি মানুষের সংসারজীবনের প্রতি মোহ ও আসক্তির স্বরুপ ব্যক্ত করেছেন। আশা-আকাঙ্ক্ষা, মায়ামমতার মোহপাশে ব্যক্তিজীবন আবির্তত হয়। সন্তানকে কেন্দ্র করে মায়ের জীবন, পরিবারকে কেন্দ্র করে ব্যক্তিজীবন আবর্তিত হয়। জীবনের সমস্ত সুখ তখন শুধুমাত্র আপনার জন, প্রিয়জনের জন্যই মনে হতে থাকে। বিশ্বের সুমহান আনন্দযজ্ঞের শরিক হিসেবে তখনও পর্যন্ত মানুষ নিজেকে ভাবতে পারে না। কিন্তু এমন একান্ত নিবিড় চাওয়ার বন্ধন যেদিন শিথিল হয়, তখন কিন্তু বিশ্বনিখিল এতটুকু কৃপণতা দেখায় না বাঁচার রসদ জুগিয়ে দেওয়ার জন্য। কারোর অনুপস্থিতি জীবনের গতিকে রোধ করতে পারে না। কারণ বিশ্বভুবন জুড়ে জীবনের বাণীই ধ্বনিত হয়ে চলে।

কীভাবে মনের সঙ্গে বোঝাপড়া করতে হবে?

কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ‘বোঝাপড়া’ নামক কবিতায় মনের সঙ্গে বোঝাপড়া করার প্রসঙ্গ আলোচনা করেছেন। আমাদের জীবনে ভালোমন্দ বহুরকমের ঘটনা ঘটে থাকে। তাতে মানুষ আঘাতও পায়। কিন্তু কবি বলেছেন – আমাদের কাজ হবে মনকে বোঝানো যে, কেউ আমাদের ভালোবাসবে, আবার অনেকেই ভালোবাসবে না, কেউ কেউ আমাদের ফাঁকিও দেবে, আবার আঘাতও খেতে হবে কখনো-কখনো। কেউ নিজেকে বিকিয়ে ‘দেবে, আবার কেউ আছে যে কানাকড়িও অন্যের জন্য খরচ করবে না। সুখের আশা যেই করতে শুরু করা হবে, তখনই হয়তো নতুন কোনো বিপদ এসে আঘাত হানবে, পাঁজর উঠবে কেঁপে।

যেখানে শঙ্কার কোনো সম্ভাবনা নেই, হয়তো সেখানেই ভরাডুবি হতেইবে। এই সকল ঘটনার মধ্য দিয়েই জীবনকে সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে। এখানেই মনকে বোঝাতে হবে যে এসব জীবনেরই অঙ্গ, এগুলিই সত্য এবং বাস্তব। এগুলিকে মেনে নিতেই হবে। এভাবেই মনের সাথে বোঝাপড়া করতে হবে।

দোহাই তবে এ কার্যটা/যত শীঘ্র পারো সারো। – কবি কোন্ কার্যের কথা বলেছেন? সেই কার্যটি শীঘ্র সারতে হবে কেন?

বিধি অর্থাৎ নির্দিষ্ট কিংবা ভবিতব্য যে নির্দেশ তাকে দেয় তা স্বীকার না করে নিজের জীবনকে আরও অসহনীয় করে তোলার যে প্রয়াস, সেই কাজের কথা কবি বলেছেন।

ব্যক্তিমানুষ না চাইলেও তার জীবনে এমন কিছু ঘটনা ঘটে, যার কার্যকারণ ব্যক্তিমানুষের নিয়ন্ত্রণে থাকে না। এমন ঘটনাকেই আমরা বিধিলিপি, নিয়তি, ভাগ্য বলে থাকি। আর এই সমস্ত ক্ষেত্রে সেই সত্যকে স্বীকার না করলে জীবনে দুর্ভোগের সীমা থাকে না। বরং ভবিতব্যকে মেনে নিয়ে মনের ভার হালকা করে নিলে তবেই আগামীর পথে চলতে পারবে জীবন। আর তা না হলে জীবন > ক্লান্ত, স্থবির হয়ে পড়ে। সেই কারণেই কবি উক্ত উক্তিটি করেছেন।

কখন আঁধার ঘরে প্রদীপ জ্বালানো সম্ভব?

অন্ধকার ঘরে প্রদীপ প্রজ্বলনের মধ্য দিয়ে অন্ধকারকে সরিয়ে আলোকের আগমন ঘটানো হয়। আলোচ্য অংশে ‘আঁধার ঘর’ শব্দটি অশান্ত, দুঃখভারাক্রান্ত মনের প্রতীক। প্রদীপ যেমন অন্ধকার ঘরের অন্ধকার দূর করে; তেমনই অশান্ত, দুঃখভারাক্রান্ত মনের ভার লাঘব হয় কান্নার মধ্য দিয়ে। মনোবেদনা অশ্রুভারে নির্গত হয়ে গেলে দমবন্ধকর অবস্থা থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। শূন্য মন তখন নতুন করে বাঁচার স্বপ্ন দেখে। আর তাই কবি বলতে চেয়েছেন শোকাতুর মন কান্নার মধ্য দিয়ে শোককে প্রশমিত করার পর আবার নতুন করে জীবনের স্বাভাবিক ছন্দে প্রত্যাবর্তন করে।

ভুলে যা ভাই, কাহার সঙ্গে/কতটুকুন তফাত হলো। – এই উদ্ধৃতিটির মধ্যে জীবনের চলার ক্ষেত্রে কোন্ পথের ঠিকানা মেলে?

বোঝাপড়া নামক কবিতায় কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, বলেছেন যে, মনকে বোঝাপড়া করে চলতে হবে। মানুষে মানুষে তফাত থাকেই কিন্তু তাকে ভুলে যেতে হবে। তবেই জীবনের উদ্দেশ্য সিদ্ধ হবে। আমাদের জীবনে প্রশ্নোক্ত অংশটির গুরুত্ব অসীম। প্রতিদিনের জীবনে কতভাবে একের সঙ্গে অপরের পার্থক্য দেখা যায়, কিন্তু তা নিয়ে পড়ে থাকলে তো জীবন চলে না। জীবনে অগ্রসর হতে আমরা এইসব তফাতকে ভুলে যাই। তফাত থেকেই তৈরি হয় বিভেদ, সেই বিভেদকে তো আমাদের ভুলে যেতেই হবে। সবাইকে মানিয়ে-বুঝিয়ে অর্থাৎ বোঝাপড়া করেই জীবনে বেঁচে থাকি আমরা। প্রশ্নোক্ত অংশটির মধ্যে জীবনে চলার পথের এমন ঠিকানাই খুঁজে পাওয়া যায়।

অনেক ঝঞ্ঝা কাটিয়ে বুঝি/এলে সুখের বন্দরেতে – ‘ঝঞ্ঝা কাটিয়ে আসা’ বলতে কী বোঝো?

জীবনের পথ কুসুমাস্তীর্ণ নয়। অনেক প্রতিবন্ধকতার মধ্য দিয়ে জীবন অগ্রসর হয়। প্রকৃতির বুকে যেমন দুর্যোগ তথা ঝড়-ঝঞ্ঝার দেখা মেলে তেমনি মানবজীবনেও প্রতিবন্ধকতা স্বরূপ ঝঞ্ঝার দেখা পাওয়া যায়। জীবন সংগ্রামময়; ভালোমন্দের দোলাচলতার মধ্য দিয়েই জীবন এগিয়ে চলে। প্রাকৃতিক ঝঞ্ঝা যেমন দুর্যোগ ঘনিয়ে আনে তেমনই দমবন্ধকর আবহাওয়া থেকে ‘মুক্তিও দিয়ে থাকে। মানুষ তেমনই সমস্ত বাধাবিঘ্নকে অতিক্রম করে জীবনের সুখানুভূতিকে অনুধাবন করতে সক্ষম হয়, বিপদের সম্মুখীন হলেই মানুষ একমাত্র তার দক্ষতা সম্পর্কে যথাযথ ধারণা লাভ করতে পারে। নিস্তরঙ্গ জীবন কোনো মানুষকেই আদর্শ জীবনে উন্নীত করতে পারে না। জীবনসংগ্রামে বেঁচে থাকার জন্য প্রয়োজন প্রতিবন্ধকতাকে অতিক্রম করে যাওয়া। প্রতিবন্ধকতাকে অতিক্রমের মধ্যেই একমাত্র সম্ভব যথার্থ জীবনলাভ। উদ্ধৃত উক্তির মধ্য দিয়ে কবি উক্ত বক্তব্যই প্রকাশ করেছেন।

সবার তরে নহে সবাই। – উৎস লিখে উদ্ধৃতাংশের তাৎপর্য আলোচনা করো।

প্রশ্নোক্ত অংশটি কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘বোঝাপড়া’ নামক কবিতা থেকে নেওয়া হয়েছে।

পৃথিবীতে মানবসভ্যতা এগিয়ে চলেছে বোঝাপড়ার মাধ্যমে। বোঝাপড়া না থাকলে মানুষ কিছুতেই সুখের সন্ধান পাবে না। এই বোঝাপড়া নিজের নিজের মনের সঙ্গে করতে হয়। মনকে বোঝাতে হয় যে, পৃথিবীর সবাই সবার জন্য হয় না। কেউ আমাকে ভালোবাসতে পারে আবার আমাকে ভালোবাসবে না এমনও অনেকে থাকবে। কেউ নিজের সর্বস্ব বিকিয়ে দেবে, কেউ কানাকড়িও দেবে না। এটা কিছু ক্ষেত্রে ব্যক্তির স্বভাব আবার কিছুটা ভাবের গতিকের উপরেই নির্ভরশীল। তবে মনের বুঝে নেওয়া দরকার যে, সকলের জন্য সর্বদাই সকলে এগিয়ে আসে না। উদ্ধৃতাংশের মাধ্যমে কবি এ কথাই বোঝাতে চেয়েছেন।

তোমারি কি এমন ভাগ্য/বাঁচিয়ে যাবে সকল জখম! – অংশটির সপ্রসঙ্গ ব্যাখ্যা দাও।

প্রশ্নোক্ত উদ্ধৃতিটি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘বোঝাপড়া’ নামক কবিতা থেকে নেওয়া হয়েছে।

পৃথিবীতে সবাই যে সবার জন্য ভাবনাচিন্তা করবে তা নয়; কখনো-কখনো আমি ফাঁকে পড়ব, আবার কখনও আমার মাধ্যমে কেউ ফাঁকিতে পড়বে। কখনো-কখনো আমি লাভ করব, আবার কখনও অপরের ভাগ্যে গিয়ে পড়বে সেই লাভের অঙ্ক। পৃথিবীতে এটাই হয়ে আসছে যুগ-যুগ ধরে – এটাই যেন রীতি। আঘাতের ভাগীদার কখনো-কখনো হতেই হবে। আর সহজ মনে এটাকে স্বীকার করে নিতেই হবে। কখনও আমি আঘাতগ্রস্ত হব না-এটা ভাবাটাই নির্বুদ্ধিতা বা চরম বোকামি। প্রশ্নোক্ত অংশটির মাধ্যমে কবি এ কথাই বোঝাতে চেয়েছেন।

তাই নিয়ে কি সবার সঙ্গে/ঝগড়া করে মরতে হবে? – কবির এমন অভিমতের কারণ লেখো।

আলোচ্য ‘বোঝাপড়া’ কবিতায় কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বলেছেন যে, আমাদের সর্বদা মনের সঙ্গে বোঝাপড়া করে চলতে হবে। মনকে বোঝাতে হবে যে – আমি যা ভাবব সেটাই সর্বদা হবে না। যেমন – অনেক বিপদ-আপদ, ঝড়-ঝঞ্ঝা কাটিয়ে যখন মনে হয় এবার সুখের নাগাল পাওয়া যাবে, তখনই হয়তো আড়াল থেকে হঠাৎ করে নতুন কোনো বিপদ এসে দেখা দিল জীবনে। আর তার আঘাতে জীবনটা যেন চূর্ণবিচূর্ণ হয়ে যায়। কিন্তু এমন বিপদ আসবে না ভাবার কোনো পথ নেই। জীবনে এমন ঘটতেই পারে। এর জন্য মনে মনে অযথা বিবাদ করলে কোনো সুরাহা হবে না। একে স্বীকার করেই জীবনে চলতে হয়। অযাচিত বিপদ এসেছে বলে কারও সঙ্গে ঝগড়া করতে যাওয়াটা বোকামি বলে মনে করেছেন কবি। তাই তিনি প্রশ্নোক্ত মন্তব্যটি করেছেন।

মরার চেয়ে বাঁচাই ভালো। — কখন এমন মনে হয়? এমন মনে হওয়ার কারণ লেখো।

প্রশ্নোক্ত অংশটি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘বোঝাপড়া’ নামক কবিতা থেকে নেওয়া হয়েছে। মানুষ যখন নিজের মৃত্যুকে সামনে থেকে দেখতে পায়, তখন তার মনে হয় মরার চেয়ে বাঁচাই ভালো।

মানুষ নানা বাধাবিপত্তিকে সঙ্গে নিয়ে চলে। জীবনে অতিষ্ঠ হয়ে কখনও সে মৃত্যু কামনা করে। কিন্তু যদি সত্যি সত্যিই সে মৃত্যুর সামনে উপস্থিত হয়; তখন তার আর মৃত্যুর বাসনা থাকে না, জীবনের বাসনা মূর্ত হয়ে ওঠে। সুনীল আকাশ, ভোরের আলোর মাধুর্য তাকে হাতছানি দিয়ে ডাকে জীবনের আনন্দ উপভোগ করে নেওয়ার জন্য। তখন মনে হয় – ‘মরিতে চাহি না আমি সুন্দর ভুবনে’। তখন মনে হয় ব্যক্তিবিশেষের কারণে বিশ্বচরাচরের আনন্দযজ্ঞ থেকে দূরে সরে থাকা ঠিক নয়। তাই কবির মনে হয়েছে বাঁচাই ভালো।

কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর “বোঝাপড়া” কবিতায় জীবনের বাস্তবতার সাথে মানিয়ে নেওয়ার গুরুত্বের উপর জোর দিয়েছেন। জীবন চলার পথে আমাদের সুখ-দুঃখ, ভালোবাসা-ঘৃণা, প্রতারণা-বিশ্বাস, ত্যাগ-ভোগ সহ নানা অভিজ্ঞতার মুখোমুখি হতে হয়। এই সকল ঘটনার সাথে মানিয়ে নেওয়া সহজ নয়, বরং বেদনাদায়ক ও হতাশাজনকও হতে পারে।

কবি আমাদের স্মরণ করিয়ে দেন যে, জীবনে সবকিছুই আমাদের ইচ্ছা অনুযায়ী হবে না। কেউ আমাদের ভালোবাসবে, আবার কেউ ভালোবাসবে না। কেউ হয়তো আমাদের প্রতারণা করবে, আবার কেউ আঘাত করবে। কেউ নিজেকে বিকিয়ে ফেলবে, আবার কেউ অন্যের জন্য ত্যাগ স্বীকার করবে। সুখের আশায় বুক বেঁধে থাকলে, নতুন বিপদ এসে আঘাত হানতে পারে। তখন মন ভেঙে পড়তে পারে।

JOIN US ON WHATSAPP

JOIN US ON TELEGRAM

Please Share This Article

About The Author

Related Posts

লোকটা জানলই না – অষ্টম শ্রেণি – বাংলা – অতিসংক্ষিপ্ত প্রশ্ন ও উত্তর

অষ্টম শ্রেণি – বাংলা – লোকটা জানলই না – অতিসংক্ষিপ্ত প্রশ্ন ও উত্তর

লোকটা জানলই না – অষ্টম শ্রেণি – বাংলা – ব্যাখ্যাভিত্তিক সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন ও উত্তর

অষ্টম শ্রেণি – বাংলা – লোকটা জানলই না –  ব্যাখ্যাভিত্তিক সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন ও উত্তর

লোকটা জানলই না – অষ্টম শ্রেণি – বাংলা – রচনাধর্মী প্রশ্ন ও উত্তর

অষ্টম শ্রেণি – বাংলা – লোকটা জানলই না – রচনাধর্মী প্রশ্ন ও উত্তর

Tags

মন্তব্য করুন

SolutionWbbse

Trending Now

Class 9 – English – A Day in The Zoo – Question and Answer

Class 9 – English Reference – Tom Loses a Tooth – Question and Answer

Class 9 – English Reference – The North Ship – Question and Answer

Class 9 – English – His First Flight – Question and Answer

Class 9 – English – A Shipwrecked Sailor – Question and Answer