নবম শ্রেণি বাংলা – আবহমান – সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর

Souvick

আজকের এই আর্টিকেলে আমরা নবম শ্রেণীর বাংলা বিষয়ের চতুর্থ পাঠের তৃতীয় অধ্যায়, ‘আবহমান’ -এর কিছু ব্যাখ্যাভিত্তিক সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর নিয়ে আলোচনা করবো। এই প্রশ্নোত্তরগুলো নবম শ্রেণীর শিক্ষার্থীদের পরীক্ষার প্রস্তুতির জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কারণ নবম শ্রেণীর বাংলা পরীক্ষায় এই ধরনের প্রশ্ন নিয়মিত আসে।

নবম শ্রেণি - বাংলা - আবহমান - ব্যাখ্যাভিত্তিক সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর
Contents Show

‘যা গিয়ে ওই উঠানে তোর দাঁড়া’, – কোন্ কবির কোন্ কবিতার অংশ? উদ্ধৃতিটির অন্তর্নিহিত অর্থ কী?

কবি ও উৎস – প্রশ্নোদ্ধৃত চরণটি কবি নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তীর লেখা ‘অন্ধকার বারান্দা’ কাব্যগ্রন্থের অন্তর্গত ‘আবহমান’ কবিতার অংশ।

অন্তর্নিহিত অর্থ – আলোচ্য কবিতায় কবি প্রবাসী বঙ্গবাসীদের গ্রামবাংলায় ফিরে যাওয়ার কথা বলেছেন। গ্রামের পরিচিত উঠোনে লাউমাচায় থাকা ছোট্ট লাউফুল সন্ধ্যার বাতাসে দোদুল্যমান। কবি গ্রামবাংলার এই প্রকৃতিলগ্ন জীবনের কাছাকাছি দাঁড়াতে বলেছেন –

“যা গিয়ে ওই উঠানে তোর দাঁড়া,
লাউমাচাটার পাশে।
ছোট্ট একটা ফুল দুলছে, ফুল দুলছে, ফুল
সন্ধ্যার বাতাসে।”

‘যা গিয়ে ওই উঠানে তোর দাঁড়া, লাউমাচাটার পাশে। ছোট্ট একটা ফুল দুলছে, ফুল দুলছে, ফুল/সন্ধ্যার বাতাসে।’ – কবিতায় উক্ত স্তবকটিকে একাধিকবার ব্যবহার করার কারণ কী? তোমার মতামতের পক্ষে যুক্তি দাও।

কারণ ও যুক্তি – ‘অন্ধকার বারান্দা’ কাব্যগ্রন্থের অন্তর্গত ‘আবহমান’ কবিতায়। কবি নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী উপরোক্ত স্তবকটি চারবার ব্যবহার করেছেন। কবি বলেছেন একসময় যারা বাংলাকে ভালোবেসে নিবিড় অনুরাগে ঘর বাঁধতে এসেছিল, তারা প্রয়োজনের কারণে মাতৃভূমি ত্যাগ করেছে। কিন্তু তা সত্ত্বেও প্রবাসী মন বারবার তার শৈশবে ফিরতে চেয়েছে, সমস্ত দিন রাত ধরে খুঁজেছে তার অতীত শান্তির আশ্রয়। পল্লিপ্রকৃতির প্রতি প্রবাসীর এই গভীর অন্তরঙ্গতা কবির বর্ণনায় মূর্ত হয়ে উঠেছে। কবি মানুষকে ফিরে যেতে বলেছেন বারবার। প্রকৃতির আহ্বান জানিয়েছেন আলোচ্য পঙক্তির মধ্য দিয়ে। প্রবাসীর মনে ফিরে আসার বাসনাকে জাগিয়ে তুলতে তাই কবি একাধিকবার ধ্রুবপদের মতো ব্যবহার করেছেন প্রশ্নোদ্ধৃত অংশটি।

‘ছোট্ট একটা ফুল দুলছে, ফুল দুলছে, ফুল/সন্ধ্যার বাতাসে।’ – কোন্ ফুলের কথা বলা হয়েছে? সন্ধ্যার বাতাসের সঙ্গে ফুল দোলার প্রাসঙ্গিকতা কোথায়?

ছোট্ট ফুল – ‘অন্ধকার বারান্দা’ কাব্যগ্রন্থের অন্তর্গত ‘আবহমান’ কবিতায় কবি নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী ‘ছোট্ট ফুল’ বলতে পল্লিপ্রকৃতির পরিচিত উঠোনের লাউমাচায় ছড়িয়ে থাকা ছোটো লাউফুলের কথা বলেছেন।

উক্ত অংশের প্রাসঙ্গিকতা – পল্লিবাংলার শান্ত-স্নিগ্ধ পরিবেশে সন্ধ্যার বাতাসে দোদুল্যমান লাউফুলগুলি গ্রামজীবনে নিরুপদ্রব শান্তির বাতাবরণ রচনা করেছে। সন্ধ্যার বাতাসে ছোট্ট ফুলের দোলা – এই চিত্রটি গ্রামবাংলার আবহমানকালের প্রচলিত রূপ। কবি পল্লিপ্রকৃতির সহজ ও চেনা রূপটিকে উক্ত চিত্রকল্পের মাধ্যমে তুলে ধরেছেন প্রবাসী মানুষের কাছে। ফলে সন্ধ্যার বাতাসের সঙ্গে ফুল দোলার প্রসঙ্গটি আলোচ্য কবিতায় সংগত হয়েছে।

“ছোট্ট একটা ফুল দুলছে, ফুল দুলছে, ফুল/সন্ধ্যার বাতাসে।” – পঙক্তিটি কবিতায় একাধিকবার ব্যবহারের প্রাসঙ্গিকতা লেখো।

নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তীর ‘আবহমান’ কবিতায় কবি ‘ছোট্টো একটা ফুল দুলছে, ফুল দুলছে, ফুল/সন্ধ্যার বাতাসে।’ – এই পঙক্তিটিকে চারবার উল্লেখ করেছেন।

পঙক্তির একাধিকবার ব্যবহারের প্রাসঙ্গিকতা – কবি আলোচ্য কবিতায় পল্লিপ্রকৃতির সৌন্দর্য ও তার প্রতি মুগ্ধ প্রবাসীর অন্তরঙ্গ সম্পর্ককে তুলে ধরেছেন। কর্মব্যস্ত মানুষ প্রয়োজনের কারণে পল্লিবাংলাকে ত্যাগ করলেও চিরকাল তার সৌন্দর্যে, অতীত স্মৃতিতে, ফিরে আসার বাসনায় স্বপ্ন বুনেছে। প্রকৃতি সময়ের সঙ্গে প্রবহমান। কবিতায় একদিকে প্রবাসীর ফিরে আসার ব্যাকুলতা ও অন্যদিকে প্রকৃতির বহমানতা – এই দুটি চিত্রকল্পকে কবি পাশাপাশি দেখিয়েছেন। আলোচ্য উদ্ধৃতিতে যে ছোটো ফুলের প্রসঙ্গ রয়েছে তা প্রকৃতির বহমানতার পরিচায়ক। কবির কথায় অতীতকাল থেকে ফুলটি এখনও দুলছে সন্ধ্যার বাতাসে। উল্লিখিত পঙক্তিটি একাধিকবার ব্যবহার করে আঙ্গিকসচেতন কবি পাঠকের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন। এই পুনরুক্তিতে বিষয়টি সুস্পষ্ট ও ব্যঞ্জনাবাহী হয়েছে। কবি বুঝিয়েছেন মানুষ ও প্রকৃতির অন্তরঙ্গতা ম্লান হবে না। তাদের পারস্পরিক আকুলতাও তাই প্রবহমান।

‘কে এইখানে এসেছিল অনেক বছর আগে,’ – কোন্ কবিতার অংশ? কবির নাম লেখো। ‘কে’ বলতে কার কথা বলা হয়েছে? এখন সে কোথায়?

প্রশ্নোদ্ধৃত চরণটি ‘অন্ধকার বারান্দা’ কাব্যগ্রন্থের অন্তর্গত আবহমান কবিতার অংশ।

আলোচ্য কবিতাটির কবি হলেন নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী।

‘কে’ -এর পরিচয়  প্রশ্নোদ্ধৃত চরণটিতে ‘কে’ বলতে গ্রামবাংলার সেইসব মানুষদের বোঝানো হয়েছে যারা এই পল্লিপ্রকৃতির বুকে বহুবছর আগে ‘এই মাটিকে’, ‘এই হাওয়া’কে ভালোবেসে ‘নিবিড় অনুরাগে’ ঘর বেঁধেছিল।

এখন সে যেখানে – কবি বলেছেন যারা গ্রামবাংলায় বাস করত, তারা কর্মসূত্রে বা অন্য কোনো কারণে প্রকৃতিলগ্ন জীবন ছেড়ে হারিয়ে গিয়েছে অন্য কোথাও, অন্য কোনোখানে।

‘কে এইখানে এসেছিল অনেক বছর আগে,’ – পঙক্তিটির অন্তর্নিহিত অর্থ লেখো।

অন্তর্নিহিত অর্থ – ‘অন্ধকার বারান্দা’ কাব্যগ্রন্থের অন্তর্গত ‘আবহমান’ কবিতা থেকে গৃহীত আলোচ্য চরণটিতে কবি নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী বাংলাদেশের মানুষের প্রকৃতিলগ্ন পল্লিজীবনকে ভালোবাসার অতীত ইতিহাসকে উল্লেখ করেছেন। কবি বলেছেন সভ্যতার সৃষ্টির সময় মানুষ এই বঙ্গপ্রকৃতিকে ভালোবেসে তার কাছে আশ্রয় নিয়েছিল। তাদের উত্তরপুরুষরা নানা কারণে পল্লিবাংলাকে ছেড়ে চলে গিয়েছে। তবে শিকড়ের টানকে তারা ভুলতে পারেনি। ‘অনেক বছর আগে’ আসা মানুষের মতো তারাও পল্লিপ্রকৃতির স্নেহের বন্ধনে জড়িত। এই ভালোবাসা কালের পথে প্রবহমান।

‘কে এইখানে ঘর বেঁধেছে নিবিড় অনুরাগে।’ – বক্তা কোন্ প্রসঙ্গে এরূপ উক্তি করেছেন? ‘নিবিড় অনুরাগে’ বিশেষণটি ব্যবহারের প্রাসঙ্গিকতা লেখো।

প্রসঙ্গ – নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী রচিত ‘আবহমান’ কবিতা থেকে গৃহীত আলোচ্য চরণটি বাংলাদেশের পল্লিপ্রকৃতির প্রতি বাঙালির আন্তরিক আকর্ষণকে প্রকাশ করার প্রসঙ্গে কবি ব্যবহার করেছেন।

প্রাসঙ্গিকতা – আলোচ্য কবিতায় কবি বলেছেন বহুযুগ আগে গ্রামবাংলার অনাবিল নিসর্গ সৌন্দর্যে মুগ্ধ হয়ে মানুষ তার আশ্রয় গড়ে তুলেছে বাংলার মাটিতে। তারা ভালোবেসেছে পল্লিপ্রকৃতির জল, হাওয়াকে। মাটির প্রতি মাতৃভূমির প্রতি মানুষের এই অবিচ্ছেদ্য ভালোবাসাকেই কবি ‘নিবিড় অনুরাগ’ শব্দ দিয়ে প্রকাশ করেছেন। শব্দটির ব্যবহার আলোচ্য অংশে সঙ্গত হয়েছে।

‘কে এইখানে হারিয়ে গিয়েও আবার ফিরে আসে,’ – বক্তা কে, তিনি কার হারিয়ে যাওয়ার কথা বলেছেন? সে কোথায় হারিয়ে গিয়েছিল? এখন সে আবার কোথায় ফিরে আসে?

বক্তা যার কথা বলেছে – ‘অন্ধকার বারান্দা’ কাব্যগ্রন্থের অন্তর্গত ‘আবহমান’ কবিতার উপরোক্ত চরণটির বক্তা স্বয়ং কবি নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী। প্রশ্নোদ্ধৃত চরণটিতে তিনি গ্রামবাংলার প্রকৃতিলগ্ন মানুষের বাংলাদেশ থেকে হারিয়ে যাওয়ার কথা বলেছেন।

হারানোর স্থান – সে হারিয়ে গিয়েছিল প্রকৃতিঘেরা বাংলার বাইরে অন্য কোথাও-বিদেশ, বিভুঁই-এ।

ফেরার স্থান – মাতৃভূমির প্রতি ‘নিবিড় অনুরাগ’বশত সে আবার ফিরে এসেছে পল্লিপ্রকৃতির নিবিড় সান্নিধ্যে।

‘কে এইখানে হারিয়ে গিয়েও আবার ফিরে আসে,’ পঙক্তিটির গূঢ়ার্থ লেখো।

পঙক্তিটির গূঢ়ার্থ – কবি নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তীর ‘আবহমান’ কবিতা থেকে সংগৃহীত উক্ত চরণটিতে ধরা পড়েছে এক চিরন্তন সত্য। বাংলাদেশের পল্লিপ্রকৃতির বুকে বড়ো হয়ে ওঠা মানুষ নানা কারণে কোনো-না-কোনো সময়ে মাতৃভূমি ছেড়ে চলে গেলেও ভালোবাসার অমোঘ আকর্ষণে তাকে পুনরায় ফিরতেই হয় সেই প্রকৃতিলগ্ন জীবনে। আবহমান কাল ধরে বাঙালির ঘরে ফেরার গল্প ফুরোয় না কখনোই; সে হারিয়ে গিয়েও আবার ফিরে আসে। যেমনভাবে বহুযুগ আগে নিবিড় অনুরাগে সে আশ্রয় নিয়েছিল।

‘এই মাটিকে এই হাওয়াকে আবার ভালোবাসে।’ – ‘এই মাটি’ বলতে কী বোঝানো হয়েছে? পঙক্তিটিতে ‘আবার’ শব্দটি ব্যবহৃত হয়েছে কেন?

‘এই ‘মাটি’ অর্থ – কবি নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী রচিত ‘আবহমান’ কবিতা থেকে সংকলিত প্রশ্নোদ্ধৃত চরণে ‘এই মাটি’ বলতে বাংলাদেশের মাটি তথা বাংলার প্রকৃতিলগ্ন গ্রামগুলিকে বোঝানো হয়েছে।

‘আবার’ শব্দের ব্যবহারের কারণ – আলোচ্য পঙক্তিটিতে ‘আবার’ শব্দটির ব্যবহার কবিতার মূল ভাব প্রকাশে সহায়তা করেছে। কবি বলেছেন মানুষ প্রথমে পল্লিপ্রকৃতিকে ভালোবেসে তার কোলে আশ্রয় নিয়েছিল। পরবর্তী সময়ে নানা কারণে কেউ কেউ আশ্রয় ত্যাগ করে অন্যত্র চলে গিয়েছে। কিন্তু নিসর্গ প্রকৃতি তার মধ্যে যে ভালোবাসার বীজ বুনেছিল; তারই আকর্ষণে প্রবাসী মানুষ বারবার ফিরে আসতে চায় মাতৃভূমিতে। তার ভালোবাসা, ফিরে আসার বাসনা ফুরিয়ে যায় না কখনও। কবিতায় কবি ‘আবার’ শব্দটির দ্বারা বঙ্গপ্রকৃতির সঙ্গে বাংলার মানুষের অন্তরঙ্গ সম্পর্কের আবহমানতাকে ব্যক্ত করেছেন।

‘ফুরয় না তার কিছুই ফুরয় না,’ – তাৎপর্য লেখো।

তাৎপর্য – কবি নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তীর ‘আবহমান’ কবিতা থেকে নেওয়া এই চরণটির মধ্য দিয়ে কবি বলতে চেয়েছেন মানুষের জন্মভূমিতে ফিরে আসার গল্প ফুরোবার নয়। আবহমান কাল ধরে বাংলার পল্লিপ্রকৃতির অমোঘ আকর্ষণে বঙ্গবাসী মানুষ হারিয়ে গিয়েও আবার ফিরে আসে। গ্রামজীবনের সঙ্গে, প্রকৃতির সঙ্গে লগ্ন হয়ে মানুষের বেঁচে থাকার স্বাদ এবং সাধ ফুরোয় না কখনও। সূর্যের যাওয়া-আসা, নদীর বয়ে চলার মতোই বঙ্গবাসীর সুখ-দুঃখ, আনন্দ-বেদনা, যন্ত্রণা-উন্মাদনা পুরোনো হয় না কখনও। তাই বঙ্গদেশে ফিরে আসার ইচ্ছা আজীবন অটুট থাকে বাঙালির।

‘নিটেগাছটা বুড়িয়ে ওঠে, কিন্তু মুড়য় না!’ – তাৎপর্য লেখো।

তাৎপর্য – কবি নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তীর ‘আবহমান’ কবিতা থেকে নেওয়া আলোচ্য চরণটিতে প্রকাশিত হয়েছে এক আশ্চর্য সত্য। কবি এ কবিতায় আবহমান কাল ধরে মানুষের পল্লিবাংলায় ফিরে আসার গল্পের কথা বলেছেন। রূপকথার গল্প শেষ হলে তবে নটেগাছটি মুড়িয়ে যায়। আলোচ্য কবিতায় আবহমান কাল ধরে মানুষের ঘরে ফেরার যে গল্প তিনি শোনান তা ফুরোনোর নয় বলেই নটেগাছটি না মুড়িয়ে বুড়িয়ে ওঠে।

‘সারাটা দিন আপন মনে ঘাসের গন্ধ মাখে,’ – আলোচ্য অংশে কার কথা বলা হয়েছে? ‘আপন মনে’ শব্দের অর্থ কী? পঙক্তিতে ‘ঘাসের গন্ধ’ বলতে কী বোঝানো হয়েছে?

যার কথা – কবি নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী রচিত ‘আবহমান’ কবিতা থেকে নেওয়া উপরোক্ত চরণে এই বাংলাদেশের প্রকৃতিলগ্ন মানুষের সারাদিন আপন মনে ঘাসের গন্ধ মাখার কথা বলা হয়েছে।

‘আপন মনে’ অর্থ – ‘আপনমনে’ শব্দটির অর্থ নিজের খেয়ালে। এখানে বলা হয়েছে প্রবাসী মানুষ নিজের মনে, চেতনায় ফেলে আসা দিনের আস্বাদ নেয়।

ঘাসের গন্ধ কী – আলোচ্য পঙক্তিতে ‘ঘাসের গন্ধ’ বলতে চেনা প্রকৃতির সাহচর্যের কথা বলা হয়েছে, যা প্রবাসী মানুষের চেতন-অবচেতন মন জুড়ে অবস্থান করছে।

‘সারাটা রাত তারায় তারায় স্বপ্ন এঁকে রাখে।’ – কে স্বপ্ন আঁকে? কেন স্বপ্ন এঁকে রাখে?

যে স্বপ্ন আঁকে – কবি নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী রচিত ‘আবহমান’ কবিতায় ঘরে ফেরা বাংলার মানুষ ‘তারায়-তারায়’ স্বপ্ন এঁকে রাখে।

স্বপ্ন আঁকার কারণ – নিজের প্রয়োজনে যারা একসময় জন্মভূমি বাংলা ত্যাগ করে অন্যত্র গিয়েছিল। কবি বলেছেন শিকড়ের টানকে তারা কখনও অস্বীকার করতে পারেনি। নানা কর্মব্যস্ততায় থেকেও প্রকৃতি মায়ের সাহচর্য, তার ফেলে আসা শৈশবকে সে মনের মধ্যে অনুভব করছে বারবার। নাগরিক যন্ত্রণায় ক্লান্ত মানুষ রাতের অন্ধকারে আশ্রয় খোঁজে নক্ষত্রখচিত আকাশে। চেনা পল্লিপ্রকৃতির অপরিসীম শান্তির খোঁজ তাকে নিয়ে চলে স্বপ্নালোকে। সে ফিরতে চায় পরিচিত উঠোনে লাউমাচার পাশে। অতীত স্মৃতি এবং জন্মভূমির সঙ্গে বিচ্ছেদ-যন্ত্রণা, আকুলতা মূর্ত হয়ে ওঠে স্বপ্নের জগতে।

‘হারায় না তার বাগান থেকে কুন্দফুলের হাসি।’ – তাৎপর্য লেখো।

তাৎপর্য – আলোচ্য উদ্ধৃতিটি নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তীর ‘আবহমান’ কবিতার অন্তর্গত। কবিতায় কবি পল্লিপ্রকৃতির সঙ্গে প্রবাসী মানুষের গভীর অন্তরঙ্গতার চিত্র অঙ্কন করেছেন। গ্রামবাংলাকে ভালোবেসে যারা একসময় ঘর বেঁধেছিল তাদের উত্তরপুরুষরা প্রয়োজনের কারণে বাংলা ছেড়ে চলে গিয়েছে। কবি অতীত সুখ ও গ্রামজীবনের শান্তির নীড়ের প্রতীক হিসেবে ‘কুন্দফুলের’ প্রসঙ্গ এনেছেন। পল্লিবাংলার পরিচিত ও সামান্য ফুলটি প্রবাসী মানুষের শৈশব জুড়ে রয়েছে। তারা আজ বাংলা থেকে বিচ্ছিন্ন। তাদের মনের অভ্যন্তরে বারবার জেগে ওঠে মাতৃভূমিতে ফিরে আসার বাসনা। সেই বাসনাকে কবি মূর্ত করেছেন ‘কুন্দফুলের হাসির’ মাধ্যমে। মানুষ ও প্রকৃতির পারস্পরিক সম্পর্কসূত্র চিরকালীন। তার টানে ফিরে আসার স্বপ্ন বুনতে থাকে তারা। যান্ত্রিকতার নাগপাশ থেকে মুক্তির খোঁজে তার মন পল্লিবাংলার চেনা সুখময়তাকে আবার আপন করতে চায়। এই চাওয়া, আকুলতা কখনওই ফুরিয়ে যায় না। তাই কবি উক্ত চরণটিতে সেই অফুরন্ত ইচ্ছের প্রকাশ ঘটিয়েছেন।

‘তেমনি করেই সূর্য ওঠে, তেমনি করেই ছায়া’
নামলে আবার ছুটে আসে সান্ধ্য নদীর হাওয়া।’ –
বক্তব্যটির প্রসঙ্গ উল্লেখ করে আলোচ্য অংশে একাধিকবার ‘তেমনি’ ব্যবহারের প্রাসঙ্গিকতা বিশ্লেষণ করো।

প্রসঙ্গ – প্রশ্নোদ্ধৃত চরণটি কবি নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তীর ‘অন্ধকার বারান্দা’ কাব্যগ্রন্থের অন্তর্গত ‘আবহমান’ কবিতার অংশ। এই কবিতায় কবি মানুষের সঙ্গে প্রকৃতির চিরন্তন সংযোগ প্রকাশ করেছেন। সেই প্রসঙ্গে গ্রাম বাংলার অতি সাধারণ ও স্নিগ্ধ রূপের বর্ণনা করেছেন। কবি বলেছেন কালের নিয়মে প্রকৃতি নিজের ছন্দে প্রবহমান। তার বহমানতা আলোচ্য উদ্ধৃতিতে ব্যক্ত হয়েছে।

প্রাসঙ্গিকতা – আলোচ্য চরণটিতে দুবার ‘তেমনি’ শব্দটি ব্যবহার করেছেন। আঙ্গিক সচেতন কবি ছন্দ রক্ষার কারণে ‘তেমনি’ শব্দটি রেখেছেন। সূর্যের ওঠা ও অস্ত যাওয়ার মধ্য দিয়ে সময়ের অবিরাম গতিকে বোঝান হয়েছে। ‘তেমনি’ শব্দটি এই বহমানতার প্রতীক, কবিতায় এর ব্যবহার তাই প্রাসঙ্গিক।

কে এইখানে ঘর বেঁধেছে – “ঘর বেঁধেছে” কথাটির তাৎপর্য কী?

তাৎপর্য – আশ্রয়ের প্রয়োজনে মানুষ ঘরবাড়ি তৈরি করে। কিন্তু নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তীর আবহমান কবিতায় উল্লিখিত “ঘর বাঁধা” কথাটি ব্যাপকতর অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে। এর অর্থ, শুধু ইট-কাঠ-পাথর দিয়ে বাসস্থান তৈরি হয় না; এর ভিত তৈরি হয় স্নেহ-মমতামাখা সম্পর্কের উষ্ণতা দিয়ে এবং আপন করে নেওয়ার চেষ্টা থেকেই। বাংলায় আসা মানুষজনও সেভাবেই এদেশকে ভালোবেসে এখানে ঘর বেঁধেছে।

“নটেগাছটা বুড়িয়ে ওঠে, কিন্তু মুড়য় না!” — পঙ্ক্তিটি ব্যাখ্যা করো।
অথবা, নটেগাছটা বুড়িয়ে উঠেও মুড়য় না কেন?

পঙ্ক্তির ব্যাখ্যা – নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী তাঁর আবহমান কবিতায় দেখিয়েছেন যে, একসময় মানুষ নিবিড় ভালোবাসায় ঘর বেঁধেছিল গ্রামবাংলায়। পরবর্তীকালে গ্রামসভ্যতার সমৃদ্ধি নষ্ট হয়ে যায় নাগরিক সভ্যতার আগ্রাসনে। কিন্তু প্রকৃতি সেখানে নিজের হাতে একইভাবে সাজিয়ে রাখে, জীবন বয়ে চলে স্বচ্ছন্দ সহজ গতিতে। আর শহরের ক্লান্ত মানুষেরা শান্তির খোঁজে বারবার ফিরে আসে গ্রামবাংলার বুকে। “নটেগাছটা বুড়িয়ে ওঠে; কিন্তু মুড়য় না”—অর্থাৎ তার গ্রহণযোগ্যতা শেষ হয় না।

“কে এইখানে হারিয়ে গিয়েও আবার ফিরে আসে” — কার কথা বলা হয়েছে? পঙ্ক্তিটির তাৎপর্য বিশ্লেষণ করো।

তাৎপর্য – নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী তাঁর আবহমান কবিতায় বলেছেন, মানুষ একদিন গভীর অনুরাগ দিয়ে গ্রামসভ্যতা গড়ে তুলেছিল। পরে সেই মানুষই নগরসভ্যতার বিকাশের সঙ্গে সঙ্গে স্বাচ্ছন্দ্য আর সমৃদ্ধির টানে গ্রাম ছেড়ে শহরে গিয়ে বাসা বেঁধেছে। কিন্তু শহরজীবন ঐশ্বর্য আর সমৃদ্ধি দিলেও মানুষকে শান্তি দিতে পারেনি। তাই গ্রাম থেকে হারিয়ে যাওয়া মানুষ আবার শান্তির খোঁজে বারবার গ্রামেই ফিরে আসে।

“ফুরয় না তার যাওয়া এবং ফুরয় না তার আসা” – এ কথা বলতে কবি কী বোঝাতে চেয়েছেন?

কবির বক্তব্য – নগরসভ্যতার সৃষ্টির সঙ্গেই মানুষের গ্রাম থেকে শহরের উদ্দেশ্যে চলা এক ধারাবাহিক প্রক্রিয়া। সুখ-স্বাচ্ছন্দ্যের খোঁজে মানুষের এই চলা অবিরাম। কিন্তু ফিরে আসার প্রক্রিয়াও এর মধ্যেই স্পষ্ট হয়ে থাকে। যন্ত্রসভ্যতার চাপে ক্লান্ত, অবসন্ন মানুষ চায় অবসর। তখনই সে ফিরে আসে গ্রামে। প্রকৃতির সহজ কোলে লালিত জীবনধারার সংস্পর্শে এসেই নাগরিক মানুষ পেতে চায় মুক্তির নিশ্বাস। এভাবেই অবিরাম যাওয়া-আসা চলতেই থাকে।

“সারাটা দিন আপন মনে ঘাসের গন্ধ মাখে” – কে, কেন ঘাসের গন্ধ মাখে?

উদ্দিষ্ট ব্যক্তি – নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তীর আবহমান কবিতায় যে মানুষ শহরজীবনে ক্লান্ত হয়ে পড়ে, আর তার সমৃদ্ধি আর স্বচ্ছলতার আড়ালে থাকে গ্রামজীবনে ফিরে আসার প্রবল ইচ্ছা—এখানে তার কথাই বলা হয়েছে।
ঘাসের গন্ধ মাখা – নাগরিক মানুষের মনের মধ্যে গ্রামে ফিরে আসার আকুলতাকেই কবি বলেছেন “একগুঁয়েটার দুরন্ত পিপাসা”। এই পিপাসাতেই সে সারাদিন প্রকৃতি আর গ্রামের সান্নিধ্য পাওয়ার আশাকে বাঁচিয়ে রাখে। “আপন মনে ঘাসের গন্ধ মাখে”—এই কথাটির মধ্য দিয়ে মানুষের প্রকৃতির প্রতি চিরকালের আকর্ষণকেই বোঝানো হয়েছে।

“হারায় না তার বাগান থেকে কুন্দফুলের হাসি” – পঙ্ক্তিটির মধ্য দিয়ে কবি কোন্ জীবনসত্যকে তুলে ধরেছেন?

কবির উল্লিখিত জীবনসত্য – নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তীর আবহমান কবিতায় কবি গ্রামবাংলার সহজ-সরল জীবনধারার কথা তুলে ধরেছেন। প্রকৃতিলালিত এই জীবনধারা গ্রামের মধ্যে চিরকাল ধরে বজায় রয়েছে। সেখানে দুঃখ-যন্ত্রণা থাকলেও প্রকৃতির স্নিগ্ধতা কোনোভাবেই বিঘ্নিত হয় না। জীবনের সহজ প্রবাহ এবং প্রকৃতির সৌন্দর্যের এই চিরকালীনতাকে বোঝাতে “হারায় না তার বাগান থেকে কুন্দফুলের হাসি” কথাটি ব্যবহার করা হয়েছে।

“এখনও সেই ফুল দুলছে” – পঙ্ক্তিটিতে ব্যবহৃত “এখনও” শব্দটির তাৎপর্য কী?

তাৎপর্য – নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তীর আবহমান কবিতায় গ্রামবাংলার প্রকৃতি এবং জীবনের চিরকালীনতাকে বোঝানো হয়েছে। একসময় গভীর অনুরাগে মানুষ সেখানে বসতি তৈরি করেছিল। যে মাটি আর হাওয়াকে ভালোবেসে গড়ে উঠেছিল গ্রামসভ্যতা, সময়ের সঙ্গে সঙ্গে তার গৌরব নষ্ট হয়ে গেলেও প্রকৃতির সৌন্দর্যের গরিমা একইরকম রয়ে গেছে। “এখনও সেই ফুল দুলছে” কথাটির মধ্য দিয়ে গ্রামজীবন ও গ্রাম্যপ্রকৃতির সেই চিরকালীনতাকেই বোঝানো হয়েছে।


আজকের এই আর্টিকেলে আমরা নবম শ্রেণীর বাংলা বিষয়ের চতুর্থ পাঠের তৃতীয় অধ্যায়, ‘আবহমান’ -এর কিছু ব্যাখ্যাভিত্তিক সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তরর নিয়ে আলোচনা করেছি। এই প্রশ্নোত্তরগুলো নবম শ্রেণীর শিক্ষার্থীদের পরীক্ষার প্রস্তুতির জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কারণ নবম শ্রেণীর বাংলা পরীক্ষায় এই ধরনের প্রশ্ন নিয়মিত আসে। আশা করি এই আর্টিকেলটি আপনাদের উপকারে এসেছে। যদি আপনার কোনো প্রশ্ন বা মতামত থাকে, তবে টেলিগ্রামে আমার সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারেন। আপনাদের প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার জন্য আমরা সর্বদা প্রস্তুত। ধন্যবাদ।

Please Share This Article

Related Posts

ভাস্বর বাতি, CFL বাতি ও LED বাতির মধ্যে পার্থক্য লেখো।

ভাস্বর বাতি, CFL বাতি ও LED বাতির মধ্যে পার্থক্য লেখো।

নবম শ্রেণী ইতিহাস - প্রাককথন: ইউরোপ ও আধুনিক যুগ

নবম শ্রেণী ইতিহাস – প্রাককথন: ইউরোপ ও আধুনিক যুগ

নবম শ্রেণী ইতিহাস - বিপ্লবী আদর্শ,নেপোলিয়নীয় সাম্রাজ্য ও জাতীয়তাবাদ - বিষয়সংক্ষেপ

নবম শ্রেণী ইতিহাস – বিপ্লবী আদর্শ, নেপোলিয়নীয় সাম্রাজ্য ও জাতীয়তাবাদ – বিষয়সংক্ষেপ

About The Author

Souvick

Tags

মন্তব্য করুন

SolutionWbbse

"SolutionWbbse" শিক্ষার্থীদের জন্য একটি অনলাইন অধ্যয়ন প্ল্যাটফর্ম। এখানে প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার প্রস্তুতি, মাধ্যমিক পরীক্ষার জন্য গাইডলাইন, এবং বিভিন্ন বিষয়ে পড়াশোনার সাহায্য প্রদান করা হয়। আমাদের মূল লক্ষ্য হলো ইন্টারনেটের মাধ্যমে সকল বিষয়ের শিক্ষণীয় উপকরণ সহজেই সকল শিক্ষার্থীর কাছে পৌঁছে দেওয়া।

Editor Picks

Madhyamik English Suggestion 2026

Madhyamik Bengali Suggestion 2026

Madhyamik Bengali Suggestion 2026 – প্রবন্ধ রচনা

Madhyamik Bengali Suggestion 2026 – প্রতিবেদন

Madhyamik Bengali Suggestion 2026 – সংলাপ