আকাশে সাতটি তারা কবি জীবনানন্দ দাশের রচিত একটি বিখ্যাত কবিতা। এটি নবম শ্রেণির বাংলা পাঠ্যপুস্তকে অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। কবিতাটিতে কবি আকাশের সাতটি তারার মধ্য দিয়ে মানুষের জীবন, প্রকৃতি ও জগৎ সম্পর্কে তার চিন্তাভাবনা ও অনুভূতি প্রকাশ করেছেন।
কবিতায় কবি আকাশের সাতটি তারাকে মানুষের জীবনের সাতটি অধ্যায়ের সাথে তুলনা করেছেন। প্রথম তারা হলো শৈশব, যা আনন্দময় ও স্বপ্নময়। দ্বিতীয় তারা হলো কৈশোর, যা উচ্ছ্বাস ও আবেগের সময়। তৃতীয় তারা হলো যৌবন, যা প্রেম, ভালোবাসা ও উদ্দীপনার সময়। চতুর্থ তারা হলো মধ্যবয়স, যা অভিজ্ঞতা ও জ্ঞানের সময়। পঞ্চম তারা হলো বার্ধক্য, যা স্মৃতি ও বিমূর্ততার সময়। ষষ্ঠ তারা হলো মৃত্যু, যা শেষ অধ্যায়। সপ্তম তারা হলো পরলোক, যা অজানা ও রহস্যময়।
পৃথিবীর কোনো পথ এ কন্যারে দেখে নি কো — এখানে কোন্ কন্যার কথা বলা হয়েছে? পৃথিবীর কোনো পথ তাকে দেখেনি কেন?
অথবা, পৃথিবীর কোনো পথ এ কন্যারে দেখে নি কো – এ কন্যা বলতে কাকে বোঝানো হয়েছে? কবির এরূপ ভাবনার কারণ কী
কন্যার পরিচয় – জীবনানন্দ দাশের আকাশে সাতটি তারা কবিতার উদ্ধৃত অংশে কবির কল্পনায় বাংলার সান্ধ্য – প্রকৃতি যে এলোকেশী মেয়ে দেখা দেয় তার কথা বলা হয়েছে।
পৃথিবীর কোনো পথের এই কন্যাকে না দেখার কারণ – জীবনানন্দ বাংলার সৌন্দর্যকে শুধু চোখ দিয়ে দেখেননি, সমস্ত ইন্দ্রিয় দিয়েও তাকে অনুভব করেছেন। সূর্যাস্তের ঠিক পরে ঘাসের উপর বসে আকাশের দিকে তাকিয়ে সদ্য-ফোটা সপ্তর্ষিমণ্ডলের পাশে কবি কল্পনায় এক এলোকেশী কন্যাকে দেখতে পান। কবি তাঁর চোখে-মুখে সেই রূপসির চুলের অর্থাৎ অন্ধকারের স্পর্শ অনুভব করেন। হিজল – কাঁঠাল – জাম গাছের পাতা ছুঁয়ে নেমে আসা অন্ধকার যেন সেই সুন্দরীর চুলের আদরের চুম্বন।
সন্ধ্যাকালীন গন্ধ – সেই এলোকেশীর চুলের মধুর গন্ধ কবিকে মুগ্ধ করে। এই গন্ধ আসলে পল্লিবাংলার প্রকৃতির সন্ধ্যাকালীন গন্ধ। ধান গাছ, কলমি শাক, শর, ঘাস, বট ফল, হাঁসের পালক, পুকুর, মাছ, মানুষ—সকলের গন্ধ মিশে তৈরি হয় এই বিশেষ গন্ধ।
এলোকেশী কন্যা – বুঝতে অসুবিধা হয় না, কবির কল্পনার এই এলোকেশী কন্যা আসলে পল্লিবাংলার সান্ধ্য-প্রকৃতি। গাছপালা, মানুষ, মনুষ্যেতর জীব — সবাইকে নিয়েই এই প্রকৃতির পরিপূর্ণতা। জীবনানন্দের চোখে রূপসি বাংলা অনন্যা — এমন মোহময়ী প্রাকৃতিক সৌন্দর্য পৃথিবীর আর কোথাও দেখতে পাওয়া যায় না।
এরই মাঝে বাংলার প্রাণ – এই পঙ্ক্তিটির মধ্য দিয়ে কবির যে গভীর অনুভূতির প্রকাশ ঘটেছে তা নিজের ভাষায় বর্ণনা করো।
অথবা, কবি কোথায় কীভাবে বাংলার প্রাণকে অনুভব করেছেন, আলোচনা করো।
কবির অনুভূতি- আকাশে সাতটি তারা কবিতাটিতে সন্ধ্যাবেলায় পল্লিবাংলার যে রূপ ফুটে ওঠে তা-ই কবি জীবনানন্দ দাশ অপূর্ব ভাষায় বর্ণনা করেছেন।
কামরাঙা-রঙের মেঘ – সূর্য অস্ত যাওয়ার পর গোধূলির লাল আভায় আকাশের মেঘ পাকা কামরাঙা ফলের মতো লাল হয়ে ওঠে। সেই লাল মেঘও যখন দিগন্তরেখায় মিশে যায় তখন দিনরাত্রির সন্ধিক্ষণে শান্ত, নীল সন্ধ্যা নেমে আসে।
তারার ফুটে ওঠা – আকাশে তখন সপ্তর্ষিমণ্ডলের সাতটি তারা সদ্য ফুটে উঠেছে।
এলোকেশী কন্যার ন্যায় সন্ধ্যা – ঘাসের উপর বসে আকাশের দিকে তাকিয়ে কবির মনে হয় যেন এক এলোকেশী কন্যার আবির্ভাব হয়েছে। মাটির বুকে ধীরে ধীরে নেমে আসা অন্ধকার যেন সেই কন্যার ছড়িয়ে পড়া কালো চুলের রাশি। জীবন্ত মানবীর চুলের মতো সেই অন্ধকারের স্পর্শ কবি অনুভব করেন। তাঁর মনে হয়, হিজল-কাঁঠাল-জামের পাতায় সেই চুলের আদরমাখা স্পর্শ অন্ধকার রূপে ঝরে পড়ছে। গাছপালা, লতাগুল্ম, মাটি, জল, মানুষ, মনুষ্যেতর প্রাণী— সবার গন্ধ মিশে তৈরি হয় সেই কন্যার চুলের গন্ধ। এইভাবেই কবি প্রকৃতি এবং জীবজগৎকে মিলিয়ে প্রাণময়ী বাংলাকে অনুভব করেছেন। প্রকৃতি তাঁর চেতনায় হয়ে উঠেছে এক জীবন্ত সত্তা ৷
আকাশে সাতটি তারা কবিতাটি জীবনানন্দ দাশের একটি মনোমুগ্ধকর কবিতা। এ কবিতায় কবি আকাশের সৌন্দর্য ও রহস্যের কথা বলেছেন। কবির ভাষায়, তারাদের আলোয় মানুষের জীবন আলোকিত হয়। তারারা মানুষকে ঈশ্বরের অস্তিত্ব সম্পর্কে সচেতন করে তোলে।
এই কবিতার মাধ্যমে কবি প্রকৃতির অপার সৌন্দর্য ও রহস্যের কথা ফুটিয়ে তুলেছেন। কবিতার ভাষা ও ছন্দ অত্যন্ত মনোমুগ্ধকর। কবিতার উপমার মাধ্যমে কবি আকাশের সৌন্দর্য ও রহস্যকে আরও সুন্দরভাবে তুলে ধরেছেন।