এখনই আমাদের Telegram Community গ্রুপে যোগ দিন।। এখানে WBBSE বোর্ডের পঞ্চম শ্রেণি থেকে দশম শ্রেণির যেকোনো বিষয়ভিত্তিক সমস্যা শেয়ার করতে পারেন এবং একে অপরের সাহায্য করতে পারবেন। এছাড়া, কোনও সমস্যা হলে আমাদের শিক্ষকরা তা সমাধান করে দেবেন।

Telegram Logo Join Our Telegram Community

নবম শ্রেণি – বাংলা – ইলিয়াস (গল্প) লিও তলস্তয়

নবম শ্রেণির বাংলা পাঠ্যপুস্তকে অন্তর্ভুক্ত একটি বিখ্যাত গল্প হলো ইলিয়াস। এটি রচনা করেছেন বিশ্ববিখ্যাত রুশ লেখক লিও তলস্তয়। গল্পটি একটি গ্রামীণ পরিবেশে রচিত। গল্পের মূল চরিত্র হলো ইলিয়াস। সে একজন দরিদ্র কৃষক। তার পরিবারের সদস্য সংখ্যা বেশি। কিন্তু তার জমি কম। ফলে তার পরিবারের অভাব-অনটন লেগেই থাকে।

নবম শ্রেণি – বাংলা – ইলিয়াস (2)

লেখক পরিচিতি

ভূমিকা – লিও তলস্তয় রুশ সাহিত্যের একজন খ্যাতনামা লেখক। ১৮২৮ খ্রিস্টাব্দের ৯ সেপ্টেম্বর রাশিয়ার টুলা প্রদেশে তিনি জন্মগ্রহণ করেন।

শিক্ষাজীবন – ছেলেবেলায় বাড়িতেই তলস্তয়ের প্রাথমিক শিক্ষা শুরু হয়। মাত্র পাঁচ-ছয় বছর বয়সে তিনটি ভাষায় তাঁর হাতেখড়ি হয়- মাতৃভাষা রুশ, জার্মান এবং ফরাসি। ১৮৪৪ খ্রিস্টাব্দে কাজান বিশ্ববিদ্যালয়ে আইন এবং প্রাচ্যদেশের ভাষা শিখতে আরম্ভ করলেও শেষপর্যন্ত তিনি বিশ্ববিদ্যালয় ছেড়ে কৃষক হওয়ার উদ্দেশ্যে বাবার জমিদারিতে ফিরে আসেন। প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষায় সফল না হলেও রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের মতোই তিনি প্রকৃত অর্থে স্ব-শিক্ষিত ছিলেন। নিজের চেষ্টায় তিনি গ্রিক, আরবি, লাতিন, ইংরেজি – সহ বহু ভাষায় দক্ষতা অর্জন করেন। চিত্রকলা এবং সংগীতশাস্ত্রেও তলস্তয় দক্ষ ছিলেন।

কর্মজীবন – ১৮৫১ খ্রিস্টাব্দে তিনি সেনাবাহিনীতে যোগ দেন এবং ক্রিমিয়ার যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন। এই সময়েই তাঁর সাহিত্যিক প্রতিভার বিকাশ ঘটে।

সাহিত্যজীবন – সেনাবাহিনীতে থাকাকালীন তলস্তয় প্রথম আত্মজীবনীমূলক উপন্যাস Childhood রচনা করেন। তাঁর প্রথম উপন্যাস হিসেবে এটি The Contemporary তে প্রকাশিত হয়। সেনাবাহিনী ত্যাগ করার পর তিনি আত্মজীবনীমূলক ট্রিলজির দ্বিতীয় ও তৃতীয় খণ্ড প্রকাশ করেন যথাক্রমে Boyhood ও Youth নামে। ১৮৬৯ খ্রিস্টাব্দে তাঁর অন্যতম শ্রেষ্ঠ উপন্যাস War and Peace প্রকাশিত হয়। সাহিত্যমহল এই কাহিনিতে গভীরভাবে আলোড়িত হয়। এরপর ১৮৭৩-১৮৭৭ – এর মধ্যে তাঁর Anna Karenina উপন্যাসটি। প্রকাশিত হয়। এ ছাড়া তাঁর উল্লেখযোগ্য ছোটো উপন্যাস হল The Death of Ivan Ilych এবং Father Sergius। এগুলি ছাড়াও তলস্তয় প্রচুর ছোটোগল্প, প্রবন্ধ এবং নাটক লিখেছেন।

সাহিত্যরীতি – তলস্তয় দার্শনিকের দৃষ্টিভঙ্গিতে জগৎকে বিচার করেছেন। বাস্তবজীবনের অভিজ্ঞতাকেই তিনি তাঁর লেখার মধ্যে সুন্দরভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন। জীবনের প্রকৃত অর্থ খোঁজা এবং অতি সহজে ও সংক্ষেপে জীবনের প্রকৃত রূপ তুলে ধরাই তাঁর ছোটোগল্পগুলির উদ্দেশ্য। তাঁর শিক্ষামূলক ছোটোগল্পগুলি নীতিবোধের শিক্ষা দেয়।

ব্যক্তিজীবন – ব্যক্তিগত জীবনে তলস্তয়ের মধ্যে প্রচুর পরস্পরবিরোধী চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য একসঙ্গে দেখতে পাওয়া যায়। যুবা বয়সে তিনি যেমন একদিকে বেহিসাবি জীবনযাপন করে অর্থের অপচয় করেছেন, তেমন পরিণত বয়সে তিনি সব কিছু ত্যাগ করে সন্তের মতো জীবন কাটিয়েছেন। খ্রিস্টান ধর্মের যাজক সম্প্রদায়ের সমালোচনা করায় তিনি খ্রিস্টধর্ম থেকে বহিষ্কৃত হন। একইভাবে, তিনি রাশিয়ার জার শাসনতন্ত্রের স্বৈরাচারের বিরুদ্ধেও সরব হন। দরিদ্র চাষির সন্তানদের জন্য তিনি স্কুল তৈরি করেন এবং নিজেই সেখানে শিক্ষকতা করতেন।

শেষজীবন – শেষজীবনে তিনি কাউকে না জানিয়ে বাড়ি ছেড়ে চলে যান। বাড়ি থেকে অনেক দূরে আস্টাপোভো নামক রেলস্টেশনে প্রচণ্ড শীতে নিউমোনিয়া রোগে আক্রান্ত হয়ে ১৯১০ খ্রিস্টাব্দের ৭ নভেম্বর তিনি মারা যান।

উৎস

লিও তলস্তয় রচিত ইলিয়াস গল্পটি ১৮৮৫ খ্রিস্টাব্দে রচিত। গল্পটি তলস্তয়ের Twenty Three Tales নামক গল্প সংকলনে প্রকাশিত হয়। পাঠ্য গল্পটি সেই গল্পটির অনুবাদ। অনুবাদটি করেছেন মণীন্দ্র দত্ত।

বিষয়সংক্ষেপ

পশ্চিম রাশিয়ার উফা প্রদেশে বাস্কির গোষ্ঠীভুক্ত ইলিয়াস নামে এক ব্যক্তি বাস করত। ইলিয়াসের বিয়ের এক বছর পর যখন তার বাবা মারা যান, তিনি খুব বেশি সম্পত্তি রেখে যেতে পারেননি। কিন্তু ইলিয়াসের বুদ্ধিতে এবং স্বামী-স্ত্রীর কঠোর পরিশ্রমে ক্রমশ তাদের অবস্থার উন্নতি হতে থাকে। পঁয়ত্রিশ বছরের অক্লান্ত পরিশ্রমে দুশো ঘোড়া, দেড়শো গোরু-মোষ, বারোশো ভেড়ার মালিক হয়ে ওঠে ইলিয়াস। দূরদূরান্ত থেকে আসা অতিথিদের আগমনে ইলিয়াসের প্রাসাদ গমগম করত। ইলিয়াসের প্রতিপত্তি বৃদ্ধিতে প্রতিবেশীরা তাকে হিংসা করতে শুরু করে।

ইলিয়াসের দুই ছেলে ও এক মেয়ে ছিল। তাদের সকলেরই বিয়ে হয়ে গিয়েছিল। ইলিয়াস বড়োলোক হওয়ার পর ধনসম্পত্তির অহংকারে তার ছেলেরা বিলাসী ও অলস হয়ে ওঠে। এইসময় তার বড়ো ছেলে একটি মারামারির ঘটনায় মারা যায়। ছোটো ছেলের বউও খুব ঝগড়াটে হওয়ায় ইলিয়াস তাদের সম্পত্তির ভাগ দিয়ে বাড়ি থেকে তাড়িয়ে দেয়।

পরবর্তীকালে মড়ক, দুর্ভিক্ষ এবং কিরবিজদের অত্যাচারে ক্রমশ ইলিয়াসের সম্পত্তি কমতে থাকে। সত্তর বছর বয়সে ইলিয়াস বাধ্য হয়েই তার শেষ সম্বল পশমের কোর্ট, কম্বল, ঘোড়ার জিন, তাঁবু এবং গৃহপালিত পশুগুলি বিক্রি করে সর্বহারা হয়ে পড়ে। ইতিমধ্যে ইলিয়াসের বিতাড়িত পুত্রও অনেক দূরদেশে চলে যায়। আবার তাদের মেয়েটি মারা যাওয়ায়ও বৃদ্ধ-বৃদ্ধাকে সাহায্যের কেউ থাকে না। তাই শেষ সম্বলটুকু নিয়ে ইলিয়াস ও তার স্ত্রী শাম-শেমাগি অচেনা এক ব্যক্তির বাড়িতে আশ্রয় নেয় এবং তাদের বাড়িতে মজুর হিসেবে কাজকর্ম করে কোনোরকমে দিন কাটায়। মহম্মদ শা নামে ইলিয়াসের এক প্রতিবেশী ছিল। তার অবস্থা খুব সচ্ছল না হলেও সে ভালো মনের মানুষ ছিল। ইলিয়াসের আতিথ্যের কথা মনে করে সে বৃদ্ধ ইলিয়াস দম্পতিকে নিজের বাড়িতে কাজের বিনিময়ে আশ্রয় দেয়। মহম্মদ শা-র এই উপকারের বিনিময়ে বৃদ্ধ ইলিয়াস ও তার স্ত্রী তাদের সাধ্যমতো পরিশ্রম করত।

একদিন মহম্মদ শা-র বাড়িতে এক ধর্মপ্রাণ মোল্লাসাহেব – সহ কিছু অতিথি আসেন। মহম্মদ শা তাঁদের আপ্যায়নের ফাঁকেই বৃদ্ধ ইলিয়াসকে দেখিয়ে অতিথিদের জানায় যে ইলিয়াস একসময় তাদের এলাকার ধনী ও অতিথিপরায়ণ ব্যক্তি ছিল। সেসময় তার খ্যাতি ছড়িয়ে পড়েছিল দূরদূরান্তে। বর্তমানে ইলিয়াস ও তার স্ত্রী সর্বহারা হয়ে তার বাড়িতেই মজুরের কাজ করে। এ কথা শুনে অতিথি খুব অবাক হয়ে জানান যে ভাগ্যের চাকা কাউকে ওপরে ওঠায় আবার কাউকে নীচে নামায়। বৃদ্ধ ইলিয়াসের সঙ্গে অতিথিরা কথা বলে তার অতীত জীবনের সুখসমৃদ্ধি এবং বর্তমান দুরবস্থায় তার মানসিক অবস্থার কথা জানতে চান। ইলিয়াস জানায় যে এই বিষয়ে তার স্ত্রী শাম-শেমাগি সম্পূর্ণ সত্যটা বলতে পারবে।

প্রশ্নের উত্তরে শাম-শেমাগি বলে তারা পঞ্চাশ বছরের ধনী জীবন কাটালেও সেই সময় সুখের সন্ধান পায়নি। কিন্তু বর্তমানে সর্বহারা ভাড়াটে মজুর হয়েও তারা যে সুখ পেয়েছে তারপর তাদের জীবনে আর কিছু চাই না। বৃদ্ধা আরও বলে যে যখন তারা ধনী ছিল তখন তাদের মনে এক মুহূর্তের জন্যও শান্তি ছিল না, মনের কথা বলার বা ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনার সময়ও ছি না। সর্বদা পাপবোধ এবং দুশ্চিন্তায় তাদের দিন কাটত। কিন্তু এখন তাদের স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে অন্তরের কথা আলোচনা হয়, ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনার সময়ও এখন তাদের রয়েছে। দীর্ঘ পঞ্চাশ বছর মনিবের জীবন কাটালেও এখনই তারা প্রকৃত সুখের হদিস পেয়েছে।

এ কথা শুনে অতিথিরা হেসে উঠলে ইলিয়াস বলে এটাই জীবনের সারসত্য। সম্পত্তির মোহে অন্ধ ছিল বলে তারা সম্পত্তি হারিয়ে কেঁদেছিল। কিন্তু ঈশ্বর তাদের সম্পত্তিহারা করলেও জীবনের প্রকৃত সত্য ও সুখের হদিস দিয়েছেন।

এ কথা শুনে মোল্লাসাহেব বলেন যে ইলিয়াসের সকল কথাই সত্য এবং জ্ঞানের কথা। এগুলি পবিত্র গ্রন্থে লেখা আছে। মোল্লা সাহেবের কথা শুনে অতিথিরা চিন্তামগ্ন হলেন।

নামকরণ

যে – কোনো সাহিত্যকর্মের ক্ষেত্রেই নামকরণ একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। নামের মধ্য দিয়েই সাহিত্যের মূল ভাবটি পাঠকের কাছে স্পষ্ট হয়। যে-কোনো সাহিত্যকর্মেই সাধারণত ঘটনা বা চরিত্র অনুযায়ী কিংবা ব্যঞ্জনাধর্মী নামকরণ হয়ে থাকে। লিও তলস্তয় রচিত গল্পটির ইলিয়াস নামটি স্পষ্টতই চরিত্রকেন্দ্রিক।

গল্পের নাম-চরিত্রই এখানে গল্পের মুখ্য চরিত্র যাকে কেন্দ্র করে কাহিনি বিস্তার লাভ করেছে। একজন সাধারণ বাকির ইলিয়াস কঠোর পরিশ্রমে এবং বুদ্ধির দ্বারা ক্রমশ ধনী ব্যক্তিতে পরিণত হয়। পঁয়ত্রিশ বছরের নিরলস প্রচেষ্টায় অর্জিত সুনামের কারণে দূরদূরান্তে ইলিয়াসের প্রতিপত্তির কথা ছড়িয়ে পড়ে। ইলিয়াস ছিল অতিথিপরায়ণ মানুষ। তার বাড়িতে আসা অতিথিদের সে আন্তরিকতার সঙ্গে খাতির-যত্ন করত। কিন্তু ভাগ্যের নিদারুণ পরিহাসের কারণে সর্বহারা হয়ে পড়ে তারা। ফলস্বরূপ ইলিয়াস দম্পতি মহম্মদ শা নামক এক প্রতিবেশীর বাড়িতে কাজের বিনিময়ে আশ্রয় ও খাবার পায়। দীর্ঘ পঞ্চাশ বছরের ধনী বিলাসবহুল জীবন কাটিয়েও যে সুখ ইলিয়াস ও তার স্ত্রী পায়নি, ভাড়াটে মজুরের জীবনযাপনের মধ্য দিয়ে তারা সেই সুখের সন্ধান পায়। নিজের জীবনের এই আচমকা পরিবর্তনের মধ্য দিয়েই ইলিয়াস প্রকৃত সত্য জানতে পারে। তাই সে অকপটে স্বীকার করেছে যে, সে এবং তার স্ত্রী সম্পত্তির মোহে অন্ধ ছিল বলেই সম্পত্তি হারিয়ে কেঁদেছিল।

কিন্তু ভাড়াটে মজুরের জীবনেই ঈশ্বর তাদের কাছে জীবনের প্রকৃত সত্যকে তুলে ধরেছেন। নিজের জীবন থেকে পাওয়া শিক্ষা বা জীবনদর্শনের সন্ধান ইলিয়াস সমস্ত অতিথিদের দান করেছে এবং পাঠকের কাছেও তা মহৎ দৃষ্টান্তে পরিণত হয়েছে। বাবার মৃত্যুর পর ইলিয়াসের জীবনসংগ্রামের ঘটনা দিয়েই গল্পের শুরু। আবার শেষে ইলিয়াসের জীবনসংগ্রাম থেকে পাওয়া জীবনদর্শনেই গল্পের পরিণতি। তাই সব দিক বিচার করে গল্পের চরিত্রকেন্দ্রিক নামকরণটি যে সার্থক, তা বলাই যায়।

ইলিয়াস গল্পটি একটি অত্যন্ত শিক্ষামূলক গল্প। গল্পটি আমাদের জীবনের বিভিন্ন বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা দেয়। গল্পটি আমাদের অনুপ্রাণিত করে আমাদের লক্ষ্য অর্জনের জন্য কঠোর পরিশ্রম করতে।

Share via:

মন্তব্য করুন