আজকের এই ব্লগ পোস্টে আমরা দৈনন্দিন জীবনে বিজ্ঞান ও কুসংস্কারের প্রভাব নিয়ে আলোচনা করবো। বিশেষ করে, আমরা মাধ্যমিক ও স্কুল-স্তরের পরীক্ষায় প্রায়শই দেখা যায় এমন “দৈনন্দিন জীবনে বিজ্ঞান/বিজ্ঞানমনস্কতা ও কুসংস্কার” প্রবন্ধ রচনা নিয়ে আলোচনা করবো। এছাড়াও, এই প্রবন্ধটি কীভাবে মুখস্থ করে পরীক্ষায় ভালো ফলাফল অর্জন করা যায়, সে বিষয়েও কিছু টিপস দেওয়া হবে।
ভূমিকা –
মানুষ যেদিন পাথরে পাথরে ঘষে আগুন জ্বালাতে শিখল, সেদিন থেকেই শুরু হল তার বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির পথে যাত্রা। আগুন আবিষ্কারই মানুষের বিজ্ঞানের জয়যাত্রার পথে প্রথম পদক্ষেপ। এইভাবে সভ্যতা যত এগিয়ে চলল, বিজ্ঞানের জয়রথও হল গতিশীল। আর আধুনিক যুগ তো সম্পূর্ণভাবেই বিজ্ঞাননির্ভর। বিজ্ঞান ছাড়া মানুষের এক পা-ও অগ্রসর হওয়ার ক্ষমতা নেই। প্রযুক্তি হল সেই বিজ্ঞানেরই প্রয়োগ।
প্রতিদিনের জীবনে বিজ্ঞান –
সকালে খবরের কাগজ আর এক কাপ চা দিয়ে জীবন শুরু তো অনেকদিন আগে থেকেই চলে আসছে। মাথার ওপর ফ্যান, রাতে বিদ্যুতের আলো, বাস, ট্রাম, ট্রেন, প্লেন—এগুলো তো বহুদিন আগেই আবিষ্কার হয়েছে। প্রতিদিন এগুলোকে ব্যবহার করেই আমরা দৈনন্দিন জীবনকে আরামদায়ক ও গতিশীল করেছি। ঠিক এই মুহূর্তে আমরা এতটাই বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিনির্ভর যে, এক পা এগিয়ে যাওয়া তো দূরের কথা, একজায়গায় দাঁড়িয়ে একটু নড়তেও পারি না। আমাদের আজকের জীবন সম্পূর্ণরূপে বিজ্ঞাননির্ভর। রান্নার কাজটাও এখন মানুষকে করতে হয় না, করে দেয় মাইক্রোওভেন। ইনটারনেটের সাহায্য নিয়ে বিভিন্ন সাইট থেকে অনলাইনে অর্থাৎ বাড়ি বসে জিনিস কেনাবেচা করা, এ ছাড়া ইনটারনেট ব্যাংকিংয়ের সাহায্যে টাকা জমা দেওয়া, ইলেকট্রিক ও টেলিফোনের বিল জমা দেওয়া—এইসবই এখন আমাদের হাতের মুঠোয় চলে এসেছে। শুধু তাই নয়, নবপ্রযুক্তিকে কাজে লাগিয়ে রোগ নির্ণয়ের বহু পদ্ধতিও আবিষ্কৃত হয়েছে। এ ছাড়া ঘরে বসেই আমরা জেনে নিতে পারি ডাউন রাজধানী এক্সপ্রেস এখন কোথায় আছে। রেল বা প্লেনের টিকিট কাটতে এখন আমাদের আর লাইনে দাঁড়ানোর প্রয়োজন হয় না। বাড়ি বসেই সব পাওয়া যায় মোবাইলের বোতাম টিপে। বলা যায় আমাদের আধুনিক জীবন একশো ভাগই বিজ্ঞাননির্ভর।
অতিরিক্ত বিজ্ঞাননির্ভরতার কুফল –
বিজ্ঞান প্রগতির ধারক ও বাহক-এ কথা অনস্বীকার্য। কিন্তু অতিরিক্ত বিজ্ঞাননির্ভরতা মানুষকে চেষ্টাহীন জড় পদার্থে পরিণত করছে। তার মাথা থেকে হারিয়ে যাচ্ছে নব নব সৃষ্টির আবেগ এবং সংগ্রামী চেতনা। এর ফলে মানুষে মানুষে সামাজিক সম্পর্কও শিথিল হয়ে পড়ছে। মানুষ যন্ত্রের ব্যবহার করতে গিয়ে নিজেই যেন একটা যন্ত্র হয়ে উঠেছে। হারিয়ে যাচ্ছে তার আবেগ। তাই সমাজবিজ্ঞানীরা বলছেন – বিজ্ঞান মানুষকে দিয়েছে বেগ, কিন্তু কেড়ে নিয়েছে আবেগ। আবেগহীন মানুষ তো যন্ত্র ছাড়া আর কিছুই নয়।
উপসংহার –
এমন দিন বোধহয় আর বেশি দূরে নেই, যেদিন বিজ্ঞানই আমাদের নিয়ন্ত্রণ করবে। এ কথাও অনস্বীকার্য যে, বিজ্ঞানকে বাদ দিয়ে আমাদের প্রাত্যহিক জীবন একেবারেই অচল। বিজ্ঞানের সাহায্যেই আমরা বহু প্রতিকূলতাকে অনায়াসে অতিক্রম করতে সক্ষম হচ্ছি। মনে রাখতে হবে, বিজ্ঞাননির্ভরতা আমাদের মানবিক বোধকে যেন নষ্ট না-করে। বাইরের জগৎকে আলোকিত করার সঙ্গে সঙ্গে বিজ্ঞান যেন আমাদের অন্তরকেও জ্ঞানের আলোকে আলোকিত করে তোলে।
আজকের আলোচনায় আমরা দেখেছি যে, বিজ্ঞান এবং বিজ্ঞানমনস্কতা আমাদের দৈনন্দিন জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ। বিজ্ঞানের অগ্রগতি আমাদের জীবনযাত্রার মান উন্নত করেছে, আমাদের চারপাশের বিশ্ব সম্পর্কে জ্ঞান অর্জনে সহায়তা করেছে এবং আমাদের সমস্যা সমাধানের নতুন নতুন উপায় দিয়েছে।
অন্যদিকে, কুসংস্কার আমাদের জীবনে নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। এটি আমাদেরকে অযৌক্তিক ও ভুল ধারণায় বিশ্বাস করতে বাধ্য করে, যা ব্যক্তিগত ও সামাজিক ক্ষতির কারণ হতে পারে।
সুতরাং, একটি উন্নত ও সমৃদ্ধ জীবনযাপনের জন্য আমাদের বিজ্ঞান ও বিজ্ঞানমনস্কতাকে গ্রহণ করতে হবে এবং কুসংস্কারকে প্রত্যাখ্যান করতে হবে। শিক্ষা, সচেতনতা বৃদ্ধি এবং সমালোচনামূলক চিন্তাভাবনার মাধ্যমে আমরা কুসংস্কারের বিরুদ্ধে লড়াই করতে পারি এবং একটি বিজ্ঞানভিত্তিক সমাজ গড়ে তুলতে পারি।