এই আর্টিকেলে আমরা মাধ্যমিক ভূগোলের একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন — “দাক্ষিণাত্য মালভূমি অঞ্চলের ভূপ্রাকৃতিক বৈশিষ্ট্য আলোচনা করো।” — নিয়ে আলোচনা করব। এই প্রশ্নটি মাধ্যমিক ভূগোলের পঞ্চম অধ্যায় “ভারতের প্রাকৃতিক পরিবেশ” -এর “ভারতের ভূপ্রকৃতি” অংশ থেকে নেওয়া হয়েছে। মাধ্যমিক পরীক্ষা এবং বিভিন্ন চাকরির পরীক্ষায় এই প্রশ্নটি প্রায়ই আসে, তাই এটি শিক্ষার্থীদের জন্য বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ।

দাক্ষিণাত্য মালভূমি অঞ্চলের ভূপ্রাকৃতিক বৈশিষ্ট্য আলোচনা করো।
দাক্ষিণাত্য মালভূমি –
অবস্থান – ত্রিভুজাকৃতির এই মালভূমি উত্তরে সাতপুরা, মহাদেব, মহাকাল; পূর্বে পূর্বঘাট ও পশ্চিমে পশ্চিমঘাট পর্বত দ্বারা বেষ্টিত। এই অঞ্চলটির আয়তন 7 লক্ষ 5 হাজার বর্গকিমি।
ভূগঠন – দাক্ষিণাত্যের মালভূমিটি প্রাচীন গন্ডোয়ানাল্যান্ডের অংশবিশেষ। প্রধানত আর্কিয়ান যুগের গ্রানাইট ও নিস এবং ক্রিটেসিয়াস যুগের লাভা দ্বারা গঠিত। যুগ যুগ ধরে প্রাকৃতিক শক্তির ক্ষয়কার্যের ফলে মালভূমির অনেক অংশ সমপ্রায় ভূমিতে পরিণত হয়েছে।
ভূপ্রকৃতি – ব্যবচ্ছিন্ন মালভূমি, অবশিষ্ট পাহাড় প্রভৃতি ভূপ্রকৃতিতে বৈচিত্র্য এনেছে। সমগ্র অঞ্চলটির গড় উচ্চতা 500 – 1000 মিটার এবং ভূপ্রাকৃতিক ঢাল পশ্চিম থেকে পূর্বে। ভূপ্রাকৃতিক পার্থক্য অনুযায়ী সমগ্র অঞ্চলটিকে কয়েকটি ভাগে ভাগ করা হয়। যথা –
- সাতপুরা পর্বত – উপদ্বীপীয় মালভূমির উত্তরাংশে 900 কিমি দীর্ঘ সাতপুরা পর্বত অবস্থিত। নর্মদা নদীর দক্ষিণাংশে এই স্তূপ পর্বতটির পশ্চিমাংশ লাভা দ্বারা গঠিত হলেও পূর্বাংশ গ্রানাইট শিলা দ্বারা আবৃত। এর সর্বোচ্চ শৃঙ্গ হল ধূপগড় (1350 মিটার)।
- পশ্চিমঘাট বা সহ্যাদ্রি – উত্তরদিকে তাপ্তী নদীর মোহানা থেকে প্রায় 1600 কিমি দীর্ঘ পশ্চিমঘাট পর্বতমালা কন্যাকুমারিকা অন্তরীপ পর্যন্ত বিস্তৃত। এর উত্তরাংশ লাভা দ্বারা গঠিত হওয়ায় পর্বতের চূড়াগুলি চ্যাপটা। সর্বোচ্চ শৃঙ্গ আনাইমুদি (2695 মিটার)। পশ্চিমঘাট পার্বত্য অঞ্চলে অনেকগুলি গিরিপথ দেখা যায়, এর মধ্যে উল্লেখযোগ্যগুলি হল থলঘাট, ভোরঘাট, পালঘাট প্রভৃতি।
- মহারাষ্ট্র মালভূমি – অতি প্রাচীনকালে বিদার অগ্ন্যুৎপাতের কারণে অসম ধাপযুক্ত লাভা সঞ্চয়ের ফলে মহারাষ্ট্র মালভূমি গঠিত হয়। মাথা চ্যাপটা ভূভাগ ও মেসাসদৃশ ভূমিরূপ এই অংশে পশ্চিম থেকে পূর্বে ধাপে ধাপে নেমে এসেছে বলে একে ডেকানট্র্যাপ বলে।
- তেলেঙ্গানা মালভূমি – কর্ণাটক মালভূমির পূর্বদিকে অন্ধ্রপ্রদেশ রাজ্যের মধ্যে তেলেঙ্গানা মালভূমি অবস্থিত। এই মালভূমির ভূমিরূপ গোলাকৃতি, উপত্যকা প্রশস্ত এবং উত্তরাংশ বন্ধুর।
- কর্ণাটক মালভূমি – মহারাষ্ট্র মালভূমির দক্ষিণ দিকে কর্ণাটক মালভূমি অবস্থিত। এই ব্যবচ্ছিন্ন মালভূমির গড় উচ্চতা 600 মিটার। কর্ণাটক মালভূমির পশ্চিমভাগের বন্ধুর ও পর্বতময় অংশটি মালনাদ এবং পূর্বাংশের তরঙ্গায়িত উচ্চভূমি ময়দান নামে পরিচিত।
- ছত্তিশগড় মালভূমি – মধ্যপ্রদেশ রাজ্যের দক্ষিণ-পূর্বাংশে অবস্থিত এই মালভূমিটি প্রিক্যাম্ব্রিয়ান যুগের কাদাপাথর ও চুনাপাথর দ্বারা গঠিত। এর মধ্যভাগ সমতল।
- পূর্বঘাট বা মলয়াদ্রি – ক্ষয়জাত এই পর্বতটি পূর্ব উপকূল বরাবর একটানা বিস্তৃত না হয়ে বিচ্ছিন্নভাবে উত্তর থেকে দক্ষিণে প্রসারিত হয়েছে। এর গড় উচ্চতা 1100 মিটার এবং সর্বোচ্চ শৃঙ্গ আর্মাকোন্ডা (1680 মিটার) এই পর্বতমালাটি গ্রানাইট ও সিস্ট শিলা দ্বারা গঠিত।
- নীলগিরি পর্বত – উপদ্বীপীয় মালভূমির দক্ষিণাংশে নীলগিরি পর্বত অবস্থিত। এই পর্বতের সর্বোচ্চ শৃঙ্গ দোদাবেতা (2,637 মিটার)। নীলগিরির দক্ষিণে অবস্থিত আন্নামালাই পর্বত, এর সর্বোচ্চ শৃঙ্গ আনাইমুদি (2,695 মিটার)।

কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নোত্তর
দাক্ষিণাত্য মালভূমি কোথায় অবস্থিত?
দাক্ষিণাত্য মালভূমি ভারতের দক্ষিণাংশে অবস্থিত। এটি উত্তরে সাতপুরা, মহাদেব ও মহাকাল পর্বত, পূর্বে পূর্বঘাট এবং পশ্চিমে পশ্চিমঘাট পর্বত দ্বারা বেষ্টিত।
দাক্ষিণাত্য মালভূমির ভূতাত্ত্বিক গঠন কেমন?
এটি প্রাচীন গন্ডোয়ানাল্যান্ডের অংশবিশেষ। প্রধানত আর্কিয়ান যুগের গ্রানাইট ও নিস এবং ক্রিটেসিয়াস যুগের লাভা দ্বারা গঠিত। ক্ষয়কার্যের ফলে অনেক অংশ সমপ্রায় ভূমিতে পরিণত হয়েছে।
দাক্ষিণাত্য মালভূমির গড় উচ্চতা কত?
এর গড় উচ্চতা 500 – 1000 মিটার এবং ঢাল পশ্চিম থেকে পূর্বদিকে।
মহারাষ্ট্র মালভূমিকে ‘ডেকান ট্র্যাপ’ বলা হয় কেন?
ক্রিটেসিয়াস যুগে অগ্ন্যুৎপাতের ফলে স্তরে স্তরে লাভা সঞ্চিত হয়ে এই মালভূমি গঠিত হয়েছে। এর ঢাল পশ্চিম থেকে পূর্বে ধাপে ধাপে নেমে এসেছে, তাই একে ডেকান ট্র্যাপ (Deccan Trap) বলা হয়।
দাক্ষিণাত্য মালভূমির প্রধান ভাগগুলি কী কী?
1. সাতপুরা পর্বত (ধূপগড় সর্বোচ্চ শৃঙ্গ)।
2. পশ্চিমঘাট পর্বত (আনাইমুদি সর্বোচ্চ শৃঙ্গ)।
3. মহারাষ্ট্র মালভূমি (ডেকান ট্র্যাপ)।
4. তেলেঙ্গানা মালভূমি (অন্ধ্রপ্রদেশে অবস্থিত)।
5. কর্ণাটক মালভূমি (মালনাদ ও ময়দান অংশে বিভক্ত)।
6. ছত্তিশগড় মালভূমি (প্রিক্যাম্ব্রিয়ান শিলা দ্বারা গঠিত)।
7. পূর্বঘাট পর্বত (আর্মাকোন্ডা সর্বোচ্চ শৃঙ্গ)।
8. নীলগিরি পর্বত (দোদাবেতা সর্বোচ্চ শৃঙ্গ)।
নীলগিরি ও আনাইমালাই পর্বতের মধ্যে সম্পর্ক কী?
নীলগিরি পর্বতের দক্ষিণে আন্নামালাই পর্বত অবস্থিত, যার সর্বোচ্চ শৃঙ্গ আনাইমুদি (2695 মিটার)। এটি পশ্চিমঘাটেরই অংশ।
দাক্ষিণাত্য মালভূমির নদীগুলি কোন দিকে প্রবাহিত হয়?
মালভূমির ঢাল পশ্চিম থেকে পূর্বে হওয়ায় অধিকাংশ নদী (গোদাবরী, কৃষ্ণা, কাবেরী) পূর্বদিকে প্রবাহিত হয়ে বঙ্গোপসাগরে পতিত হয়েছে।
ছত্তিশগড় মালভূমির বিশেষত্ব কী?
এটি প্রিক্যাম্ব্রিয়ান যুগের কাদাপাথর ও চুনাপাথর দ্বারা গঠিত এবং এর মধ্যভাগ সমতল।
দাক্ষিণাত্য মালভূমির অর্থনৈতিক গুরুত্ব কী?
1. কৃষি – তুলা, আখ, কফি, চা চাষ হয়।
2. খনিজ সম্পদ – লৌহ আকরিক, বক্সাইট, ম্যাঙ্গানিজ, সোনা।
3. জলবিদ্যুৎ – পশ্চিমঘাটে অনেক জলবিদ্যুৎ প্রকল্প রয়েছে।
এই আর্টিকেলে আমরা মাধ্যমিক ভূগোলের একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন — “দাক্ষিণাত্য মালভূমি অঞ্চলের ভূপ্রাকৃতিক বৈশিষ্ট্য আলোচনা করো।” — নিয়ে আলোচনা করেছি। এই প্রশ্নটি মাধ্যমিক ভূগোলের পঞ্চম অধ্যায় “ভারতের প্রাকৃতিক পরিবেশ” -এর “ভারতের ভূপ্রকৃতি” অংশ থেকে নেওয়া হয়েছে। মাধ্যমিক পরীক্ষা এবং বিভিন্ন চাকরির পরীক্ষায় এই প্রশ্নটি প্রায়ই আসে, তাই এটি শিক্ষার্থীদের জন্য বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ। আশা করি এই আর্টিকেলটি আপনাদের জন্য উপকারী হয়েছে। আপনাদের কোনো প্রশ্ন বা অসুবিধা থাকলে, আমাদের সাথে টেলিগ্রামে যোগাযোগ করতে পারেন, আমরা উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করব। তাছাড়া, নিচে আমাদের এই পোস্টটি আপনার প্রিয়জনের সাথে শেয়ার করুন, যাদের এটি প্রয়োজন হতে পারে। ধন্যবাদ।
মন্তব্য করুন