এই আর্টিকেলে আমরা মাধ্যমিক ইতিহাসের একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন “দেশীয় রাজ্যগুলির ভারতভুক্তির ব্যাপারে সর্দার বল্লভভাই প্যাটেলের অবদান সংক্ষেপে আলোচনা করো।” নিয়ে আলোচনা করব। এই প্রশ্নটি মাধ্যমিক ইতিহাস পরীক্ষার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই “দেশীয় রাজ্যগুলির ভারতভুক্তির ব্যাপারে সর্দার বল্লভভাই প্যাটেলের অবদান সংক্ষেপে আলোচনা করো।” প্রশ্নটি মাধ্যমিক ইতিহাসের অষ্টম অধ্যায় “উত্তর-ঔপনিবেশিক ভারত: বিশ শতকের দ্বিতীয় পর্ব (1947-1964)“ -এর একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন। এই প্রশ্নটি মাধ্যমিক পরীক্ষায় এবং চাকরির পরীক্ষায় প্রায়ই দেখা যায়।

দেশীয় রাজ্যগুলির ভারতভুক্তির ব্যাপারে সর্দার বল্লভভাই প্যাটেলের অবদান সংক্ষেপে আলোচনা করো।
কষ্টার্জিত স্বাধীনতার পর ভারতরাষ্ট্র দেশীয় রাজ্যগুলির ভারতভূক্তি জনিত যে জটিল সমস্যার সম্মুক্ষীণ হয়, সর্দার বল্লভভাই প্যাটেলের বলিষ্ঠ নেতৃত্বগুণে অচিরেই ভারত সেই সমস্যা থেকে উত্তরণের পথ খুঁজে পায়।
দেশীয় রাজ্য দফতর –
দেশীয় রাজ্যগুলির স্বাধীনতাকাঙ্ক্ষা যে সদ্য স্বাধীন ভারত রাষ্ট্রের ঐক্য ও সংহতির পক্ষে বিপজ্জনক হতে পারে, সে বিষয়ে স্বাধীন ভারতের প্রথম স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সর্দার বল্লভভাই প্যাটেল তাঁর সচিব ভি. পি. মেনন যথেষ্টই ভাবিত ছিলেন। এই উদ্দেশ্যে স্বাধীনতার পূর্বেই প্যাটেলের নেতৃত্বে ‘দেশীয় রাজ্য দফতর’ নামে একটি স্বতন্ত্র প্রশাসনিক বিভাগ খোলা হয়।
দেশীয় রাজ্যগুলির ভারতভূক্তির বলিষ্ঠ পদক্ষেপ –
দেশীয় রাজ্যগুলির ভারতভূক্তির প্রশ্নে তৎকালীন গভর্নর জেনারেল লর্ড মাউন্টব্যাটেন 1947 খ্রিস্টাব্দের 20 জুলাই দেশীর রাজন্যবর্গের এক সভায় দেশীয় রাজ্যগুলিকে তাদের প্রতিরক্ষা, বিদেশনীতি ও যোগাযোগ ব্যবস্থা পরিচালনায় দায়িত্ব পরিকল্পিত ভারত সরকারের ওপর ছেড়ে দিয়ে নিজেদের স্বাধীন অস্তিত্ব বজায় রাখার পরামর্শ দেন। কিন্তু দৃঢ়চেতা প্যাটেল মাউন্ট ব্যাটেনের প্রস্তাব অস্বীকার করে 5 আগস্টের মধ্যে (1947 খ্রিস্টাব্দ) দেশীয় রাজ্যগুলিকে পরিকল্পিত ভারত ইউনিয়নে যোগ দেওয়ার আহ্বান জানান।
দেশীয় রাজ্যগুলির ভারতভুক্তি –
প্যাটেলের কঠোর অনমনীয় মনোভাব, কূটকৌশল, সামরিক অভিযানের হুমকি এবং সর্বোপরি প্রজাবিদ্রোহের আশঙ্কা প্রভৃতি কারণে দেশীয় রাজ্যগুলির অধিকাংশ স্বাধীনতার মাত্র তিন সপ্তাহের মধ্যে বিশাল ভাতা, খেতাব ও অন্যান্য সুযোগ-সুবিধার বিনিময়ে ‘Instrument of Accession’ নামক ভারতভুক্তির দলিলে স্বাক্ষর করে। তিনটি ব্যতিক্রমী রাজ্য হিসেবে কাশ্মীর, হায়দ্রাবাদ ও জুনাগড় যোগদানে সাময়িক বিরত থাকলেও অচিরেই প্যাটেলের কূটকৌশল ও সামরিক অভিযানের কাছে নতিস্বীকার করে সেগুলিও ভারতভুক্ত হয়।
দেশীয় রাজ্যগুলির ভারতভুক্তির মন্তব্য –
দেশীয় রাজ্যগুলির ভারতভুক্তির ব্যাপারে সর্দার প্যাটেলের ভূমিকা জার্মান রাষ্ট্রনায়ক বিসমার্ক অপেক্ষাও গুরুত্বপূর্ণ ও সফল ছিল। এই কারণেই তাঁকে ‘ভারতের লৌহমানব’ আখ্যা দেওয়া হয়েছে। ডঃ অমলেশ ত্রিপাঠির পরিভাষায় – “সর্দার প্যাটেল যদি না দৃঢ় হস্তে শত শত দেশীয় রাজ্যগুলিকে ভারতভুক্ত করতেন, তবে আমাদের দশা বলকানের মতো হতো।”
কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নোত্তর
দেশীয় রাজ্যগুলির ভারতভুক্তি কেন গুরুত্বপূর্ণ ছিল?
স্বাধীনতার পর 562টি দেশীয় রাজ্য (Princely States) ভারত বা পাকিস্তানে যোগদান না করলে দেশটি ছোট ছোট স্বাধীন রাজ্যে বিভক্ত হয়ে যেত। এর ফলে ভারতের ঐক্য ও সংহতি বিপন্ন হতো।
প্যাটেল কীভাবে দেশীয় রাজ্যগুলির ভারতভুক্তির প্রক্রিয়া শুরু করেছিলেন?
তিনি দেশীয় রাজ্য দফতর গঠন করেন এবং তাঁর সচিব ভি. পি. মেনন -এর সহায়তায় রাজ্যগুলিকে কূটনৈতিক চাপ, সুযোগ-সুবিধা ও সামরিক হুমকির সমন্বয়ে ভারতভুক্তিতে বাধ্য করেন।
দেশীয় রাজ্যগুলির ভারতভুক্তির ব্যাপারে সর্দার বল্লভভাই প্যাটেলের প্রধান কৌশলগুলি কী ছিল?
দেশীয় রাজ্যগুলির ভারতভুক্তির ব্যাপারে সর্দার বল্লভভাই প্যাটেলের প্রধান কৌশলগুলি ছিল –
1. কূটনীতি – রাজন্যবর্গকে খেতাব, ভাতা ও স্বায়ত্তশাসনের প্রলোভন দেওয়া।
2. সামরিক চাপ – হায়দ্রাবাদ (অপারেশন পোলো) ও জুনাগড়ে সৈন্য পাঠানো।
3. জনসমর্থন – রাজ্যগুলির জনগণের ইচ্ছাকে কাজে লাগানো (জুনাগড়ে গণভোট)।
ভারতভুক্তির ব্যাপারে কোন রাজ্যগুলি সবচেয়ে সমস্যাজনক ছিল?
1. জুনাগড় – পাকিস্তানে যোগ দিলে প্যাটেল সেনা পাঠান এবং গণভোটের মাধ্যমে ভারতভুক্তি নিশ্চিত করেন।
2. হায়দ্রাবাদ – নিজামের বিরুদ্ধে অপারেশন পোলো চালানো হয়।
3. কাশ্মীর – হরি সিং-এর স্বাক্ষরের মাধ্যমে ভারতভুক্তি হলেও পাকিস্তানের বিরোধিতায় সমস্যা দেখা দেয়।
ব্রিটিশ ভাইসরয় লর্ড মাউন্টব্যাটেনের ভূমিকা কী ছিল?
তিনি রাজ্যগুলিকে স্বাধীন থাকার অপশন দিলেও প্যাটেল তা প্রত্যাখ্যান করেন এবং দ্রুত Instrument of Accession-এ স্বাক্ষর করান।
দেশীয় রাজ্যগুলির ভারতভুক্তির ব্যাপারে সর্দার বল্লভভাই প্যাটেলের সাফল্যকে কীভাবে মূল্যায়ন করা হয়?
তিনি “ভারতের লৌহমানব” (Iron Man of India) নামে পরিচিত, কারণ তিনি অত্যন্ত দৃঢ়তার সাথে রাজ্যগুলির একত্রীকরণ করেছিলেন। ডঃ অমলেশ ত্রিপাঠির মতে, তাঁর অবদান না থাকলে ভারত বলকান অঞ্চলের মতো বিভক্ত হতো।
এই আর্টিকেলে আমরা মাধ্যমিক ইতিহাসের একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন “দেশীয় রাজ্যগুলির ভারতভুক্তির ব্যাপারে সর্দার বল্লভভাই প্যাটেলের অবদান সংক্ষেপে আলোচনা করো।” নিয়ে আলোচনা করেছি। এই “দেশীয় রাজ্যগুলির ভারতভুক্তির ব্যাপারে সর্দার বল্লভভাই প্যাটেলের অবদান সংক্ষেপে আলোচনা করো।” প্রশ্নটি মাধ্যমিক ইতিহাসের অষ্টম অধ্যায় “উত্তর-ঔপনিবেশিক ভারত: বিশ শতকের দ্বিতীয় পর্ব (1947-1964)” -এর একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন। এই প্রশ্নটি মাধ্যমিক পরীক্ষায় এবং চাকরির পরীক্ষায় প্রায়ই দেখা যায়। আশা করি এই আর্টিকেলটি আপনাদের জন্য উপকারী হয়েছে। আপনাদের কোনো প্রশ্ন বা অসুবিধা থাকলে, আমাদের সাথে টেলিগ্রামে যোগাযোগ করতে পারেন, আমরা উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করব। তাছাড়া, নিচে আমাদের এই পোস্টটি আপনার প্রিয়জনের সাথে শেয়ার করুন, যাদের এটি প্রয়োজন হতে পারে। ধন্যবাদ।
মন্তব্য করুন