ধারণযোগ্য উন্নয়ন বা সুস্থায়ী উন্নয়ন সম্পর্কে টীকা লেখো।

Rohit

 এই আর্টিকেলে আমরা মাধ্যমিক ভূগোলের একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন — “ধারণযোগ্য উন্নয়ন বা সুস্থায়ী উন্নয়ন সম্পর্কে টীকা লেখো।” — নিয়ে আলোচনা করব। এই প্রশ্নটি মাধ্যমিক ভূগোলের পঞ্চম অধ্যায় “ভারতের অর্থনৈতিক পরিবেশ” -এর “ভারতের জনসংখ্যা” অংশ থেকে নেওয়া হয়েছে। মাধ্যমিক পরীক্ষা এবং বিভিন্ন চাকরির পরীক্ষায় এই প্রশ্নটি প্রায়ই আসে, তাই এটি শিক্ষার্থীদের জন্য বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ।

ধারণযোগ্য উন্নয়ন বা সুস্থায়ী উন্নয়ন সম্পর্কে টীকা লেখো
ধারণযোগ্য উন্নয়ন বা সুস্থায়ী উন্নয়ন সম্পর্কে টীকা লেখো
Contents Show

ধারণযোগ্য উন্নয়ন বা সুস্থায়ী উন্নয়ন সম্পর্কে টীকা লেখো।

পৃথিবীর জনসংখ্যা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে বৃদ্ধি পাচ্ছে সম্পদের ব্যবহার। তারই সঙ্গে সমভাবে দূষণের মাত্রা বৃদ্ধি পাচ্ছে। মূলত আমরাই বাসযোগ্য পৃথিবীকে প্রতিনিয়ত কলুষিত করে চলেছি। প্রাকৃতিক পরিবেশকে এমন বিপৎসংকুল করেছি যা আমাদের জীবনকে বিপন্ন করে তুলেছে। নিজেদের সুস্থভাবে বেঁচে থাকার স্বার্থে পরিবেশকে অক্ষুণ্ণ রেখে সামঞ্জস্যপূর্ণ এবং দীর্ঘমেয়াদি মানব উন্নয়ন ব্যবস্থাই হল ধারণযোগ্য উন্নয়ন।

যে উন্নয়ন ব্যবস্থার মধ্য দিয়ে প্রাকৃতিক ভারসাম্য বজায় রেখে দেশ ও প্রকৃতির মঙ্গল করা যায়, তাকে ধারণযোগ্য উন্নয়ন বলে। এর দুটি দিক রয়েছে –

  1. উন্নয়নের প্রকৃত অর্থ যেমন – অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি, বিকাশ, মৌলিক চাহিদা পূরণ ইত্যাদি।
  2. উন্নয়নকে বজায় রাখার প্রয়োজনীয় শর্তসমূহ।

1987 খ্রিস্টাব্দে ‘World Commission on Environment & Development’ অনুষ্ঠানে ধারণযোগ্য উন্নয়ন ব্যবস্থায় দুটি মূল বিষয়ের ওপর গুরুত্ব আরোপ করা হয়। সেগুলি হল –

  1. বাস্তুতন্ত্র তথা পরিবেশকে অক্ষুণ্ণ রাখা।
  2. পরিবেশের গুণমানকে সুরক্ষিত রেখে মানবজীবনের স্থায়ী উন্নয়ন করা।

কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নোত্তর

ধারণযোগ্য উন্নয়ন বা সুস্থায়ী উন্নয়ন বলতে কী বোঝায়?

ধারণযোগ্য উন্নয়ন হলো এমন একটি উন্নয়ন প্রক্রিয়া যেখানে বর্তমান প্রজন্মের চাহিদা পূরণের সঙ্গে সঙ্গে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের চাহিদা পূরণের সামর্থ্যকে ক্ষুণ্ণ না করা হয়। এটি পরিবেশের ভারসাম্য বজায় রেখে অর্থনৈতিক ও সামাজিক উন্নয়ন নিশ্চিত করে।

ধারণযোগ্য উন্নয়নের প্রধান লক্ষ্য কী?

ধারণযোগ্য উন্নয়নের প্রধান লক্ষ্য হলো —
1. প্রাকৃতিক সম্পদের সুষম ব্যবহার নিশ্চিত করা।
2. পরিবেশ দূষণ ও ক্ষয়রোধ করা।
3. দারিদ্র্য বিমোচন ও অর্থনৈতিক উন্নয়ন সাধন করা।
4. সামাজিক ন্যায়বিচার ও সমতা প্রতিষ্ঠা করা।

ধারণযোগ্য উন্নয়নের দুটি মূল দিক কী কী?

ধারণযোগ্য উন্নয়নের দুটি মূল দিক হলো –
1. উন্নয়নের প্রকৃত অর্থ – অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি, মৌলিক চাহিদা পূরণ ও মানবকল্যাণ।
2. উন্নয়নকে বজায় রাখার শর্ত – প্রাকৃতিক সম্পদের সংরক্ষণ ও পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা।

WCED (World Commission on Environment and Development) কীভাবে ধারণযোগ্য উন্নয়নকে সংজ্ঞায়িত করেছে?

1987 সালে ব্রান্টল্যান্ড কমিশন (WCED) ধারণযোগ্য উন্নয়নকে এমন উন্নয়ন হিসেবে সংজ্ঞায়িত করে যা বর্তমানের প্রয়োজন মেটায় আবার ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য সম্পদ সংরক্ষণ করে।

ধারণযোগ্য উন্নয়নের জন্য কী কী পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন?

ধারণযোগ্য উন্নয়নের জন্য যে পদক্ষেপগুলি নেওয়া প্রয়োজন সেগুলি হলো –
1. নবায়নযোগ্য শক্তির ব্যবহার বৃদ্ধি (সৌরশক্তি, বায়ুশক্তি ইত্যাদি)।
2. বনায়ন ও জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ।
3. পুনর্ব্যবহারযোগ্য পদ্ধতির প্রচলন (Recycle, Reuse, Reduce)।
4. পরিবেশবান্ধব প্রযুক্তির ব্যবহার।
5. জনসচেতনতা বৃদ্ধি।

ধারণযোগ্য উন্নয়ন কেন প্রয়োজন?

ধারণযোগ্য উন্নয়ন প্রয়োজন কারণ –
1. প্রাকৃতিক সম্পদের অত্যধিক ব্যবহার ও দূষণের ফলে পৃথিবী বসবাসের অযোগ্য হয়ে উঠছে।
2. ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য সম্পদ সংরক্ষণ প্রয়োজন।
3. জলবায়ু পরিবর্তন ও প্রাকৃতিক দুর্যোগ রোধ করতে এটি অপরিহার্য।

ধারণযোগ্য উন্নয়নের বাধাগুলো কী কী?

ধারণযোগ্য উন্নয়নের বাধাগুলো হলো –
1. দ্রুত জনসংখ্যা বৃদ্ধি।
2. প্রাকৃতিক সম্পদের অত্যধিক শোষণ।
3. শিল্পায়ন ও নগরায়ণের ফলে দূষণ বৃদ্ধি।
4. রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক স্বার্থের সংঘাত।

ভারত বা বাংলাদেশের মতো দেশে ধারণযোগ্য উন্নয়ন কীভাবে বাস্তবায়ন করা যায়?

ভারত বা বাংলাদেশের মতো দেশে ধারণযোগ্য উন্নয়ন বাস্তবায়ন করার জন্য গৃহীত পদক্ষেপগুলি হলো –
1. কৃষিতে জৈব পদ্ধতির ব্যবহার বৃদ্ধি।
2. নদী ও বন সংরক্ষণ।
3. গ্রামীণ উন্নয়নে স্বচ্ছলতা আনা।
4. সরকারি ও বেসরকারি সংস্থার সমন্বয়ে প্রকল্প গ্রহণ।

SDG (Sustainable Development Goals) কী?

SDG হলো জাতিসংঘের 17টি বৈশ্বিক লক্ষ্য (2015-2030), যা দারিদ্র্য বিমোচন, জলবায়ু ব্যবস্থাপনা, শিক্ষা, লিঙ্গসমতা ইত্যাদি ক্ষেত্রে ধারণযোগ্য উন্নয়ন নিশ্চিত করতে তৈরি করা হয়েছে।

ব্যক্তিগত পর্যায়ে আমরা কীভাবে ধারণযোগ্য উন্নয়নে অবদান রাখতে পারি?

ব্যক্তিগত পর্যায়ে আমরা যেভাবে ধারণযোগ্য উন্নয়নে অবদান রাখতে পারি সেগুলি হলো –
1. প্লাস্টিকের ব্যবহার কমিয়ে পুনর্ব্যবহারযোগ্য পণ্য ব্যবহার।
2. জল ও বিদ্যুৎ সাশ্রয় করা।
3. গণপরিবহন বা সাইকেল ব্যবহার করে কার্বন নিঃসরণ কমানো।
4. গাছ লাগানো ও পরিবেশ সংরক্ষণে সচেতনতা বৃদ্ধি।


এই আর্টিকেলে আমরা মাধ্যমিক ভূগোলের একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন — “ধারণযোগ্য উন্নয়ন বা সুস্থায়ী উন্নয়ন সম্পর্কে টীকা লেখো।” — নিয়ে আলোচনা করেছি। এই প্রশ্নটি মাধ্যমিক ভূগোলের পঞ্চম অধ্যায় “ভারতের অর্থনৈতিক পরিবেশ” -এর “ভারতের জনসংখ্যা” অংশ থেকে নেওয়া হয়েছে। মাধ্যমিক পরীক্ষা এবং বিভিন্ন চাকরির পরীক্ষায় এই প্রশ্নটি প্রায়ই আসে, তাই এটি শিক্ষার্থীদের জন্য বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ। আশা করি এই আর্টিকেলটি আপনাদের জন্য উপকারী হয়েছে। আপনাদের কোনো প্রশ্ন বা অসুবিধা থাকলে, আমাদের সাথে টেলিগ্রামে যোগাযোগ করতে পারেন, আমরা উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করব। তাছাড়া, নিচে আমাদের এই পোস্টটি আপনার প্রিয়জনের সাথে শেয়ার করুন, যাদের এটি প্রয়োজন হতে পারে। ধন্যবাদ।

Please Share This Article

Related Posts

জনঘনত্ব ও মানুষ-জমি অনুপাত বলতে কী বোঝো

জনঘনত্ব ও মানুষ-জমি অনুপাত কী? জনঘনত্ব ও মানুষ-জমি অনুপাতের মধ্যে পার্থক্য

কাম্য জনসংখ্যা সম্পর্কে টীকা লেখো

কাম্য জনসংখ্যা সম্পর্কে টীকা লেখো।

ভারতের সীমান্তবর্তী রাজ্যগুলিতে জনঘনত্ব বেশি - কারণ ব্যাখ্যা করো

ভারতের সীমান্তবর্তী রাজ্যগুলিতে জনঘনত্ব বেশি – কারণ ব্যাখ্যা করো।

About The Author

Rohit

Tags

মন্তব্য করুন

SolutionWbbse

"SolutionWbbse" শিক্ষার্থীদের জন্য একটি অনলাইন অধ্যয়ন প্ল্যাটফর্ম। এখানে প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার প্রস্তুতি, মাধ্যমিক পরীক্ষার জন্য গাইডলাইন, এবং বিভিন্ন বিষয়ে পড়াশোনার সাহায্য প্রদান করা হয়। আমাদের মূল লক্ষ্য হলো ইন্টারনেটের মাধ্যমে সকল বিষয়ের শিক্ষণীয় উপকরণ সহজেই সকল শিক্ষার্থীর কাছে পৌঁছে দেওয়া।

Editor Picks

জনঘনত্ব ও মানুষ-জমি অনুপাত কী? জনঘনত্ব ও মানুষ-জমি অনুপাতের মধ্যে পার্থক্য

কাম্য জনসংখ্যা সম্পর্কে টীকা লেখো।

ধারণযোগ্য উন্নয়ন বা সুস্থায়ী উন্নয়ন সম্পর্কে টীকা লেখো।

ভারতের সীমান্তবর্তী রাজ্যগুলিতে জনঘনত্ব বেশি – কারণ ব্যাখ্যা করো।

আদমশুমারি সম্পর্কে টীকা লেখো।