এই আর্টিকেলে আমরা মাধ্যমিক ভৌতবিজ্ঞান বিষয়ের একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন — “ধাতব পরিবাহী এবং তড়িবিশ্লেষ্যের পার্থক্য কী? অথবা, ধাতব তারের মধ্য দিয়ে তড়িৎ পরিবহণ এবং তড়িদ্বিশ্লেষণের সময় তড়িদ্বিশ্লেষ্যের মধ্য দিয়ে তড়িৎ পরিবহণের মধ্যে দুটি পার্থক্য লেখো।” — নিয়ে আলোচনা করব। এই প্রশ্নটি মাধ্যমিক ভৌতবিজ্ঞানের অষ্টম অধ্যায় “পদার্থের ভৌত ও রাসায়নিক ধর্মসমূহ” -এর “তড়িৎপ্রবাহ ও রাসায়নিক বিক্রিয়া” অংশ থেকে নেওয়া হয়েছে। মাধ্যমিক পরীক্ষা এবং বিভিন্ন চাকরির পরীক্ষায় এই প্রশ্নটি প্রায়ই আসে, তাই এটি শিক্ষার্থীদের জন্য বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ।

ধাতব পরিবাহী এবং তড়িদ্বিশ্লেষ্যের পার্থক্য কী?
অথবা, ধাতব তারের মধ্য দিয়ে তড়িৎ পরিবহণ এবং তড়িদ্বিশ্লেষণের সময় তড়িদ্বিশ্লেষ্যের মধ্য দিয়ে তড়িৎ পরিবহণের মধ্যে দুটি পার্থক্য লেখো।
ধাতব পরিবাহী এবং তড়িদ্বিশ্লেষ্যের পার্থক্য –
ধাতব পরিবাহী | তড়িদ্বিশ্লেষ্য |
ধাতব পরিবাহীতে মুক্ত ইলেকট্রন তড়িৎ পরিবহণ করে। | তড়িদ্বিশ্লেষ্যে আয়ন তড়িৎ পরিবহণ করে। |
ধাতব পরিবাহীর মধ্যে তড়িৎ প্রবাহিত হলে এদের কোনো রাসায়নিক পরিবর্তন ঘটে না। | তড়িদ্বিশ্লেষ্য পদার্থের মধ্যে তড়িৎ প্রবাহিত হলে এদের রাসায়নিক পরিবর্তন ঘটে। |
তড়িৎপ্রবাহের সময় ধাতব পরিবাহীর কোনো অংশের স্থানান্তর হয় না। | তড়িৎপ্রবাহের সময় তড়িবিশ্লেষ্য পদার্থ থেকে উৎপন্ন আয়নগুলি স্থান পরিবর্তন করে। |
কঠিন অবস্থায় তড়িৎ পরিবহণ করতে পারে। | কঠিন অবস্থায় তড়িৎ পরিবহণ করতে পারে না। গলিত বা জলে দ্রবীভূত অবস্থায় তড়িৎ পরিবহণ করতে পারে। |
কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নোত্তর
ধাতব পরিবাহী এবং তড়িদ্বিশ্লেষ্য বলতে কী বোঝায়?
ধাতব পরিবাহী হলো সেইসব পদার্থ (যেমন – তামা, অ্যালুমিনিয়ামের তার) যারা তাদের মধ্যে অবস্থানকারী মুক্ত ইলেকট্রনের মাধ্যমে তড়িৎ পরিবহন করে। অন্যদিকে, তড়িদ্বিশ্লেষ্য হলো সেইসব যৌগ (যেমন – লবণের জল, গলিত সোডিয়াম ক্লোরাইড) যা গলিত বা দ্রবীভূত অবস্থায় আয়নে বিচ্ছিন্ন হয়ে এবং সেই আয়নগুলোর চলাচলের মাধ্যমে তড়িৎ পরিবহন করে।
ধাতব পরিবাহী ও তড়িদ্বিশ্লেষ্যের মধ্যে মূল পার্থক্য কী?
ধাতব পরিবাহী ও তড়িদ্বিশ্লেষ্যের মধ্যে মূল পার্থক্যগুলো নিম্নরূপ—
1. তড়িৎ পরিবহনের বাহক – ধাতব পরিবাহীতে তড়িৎ বহন করে মুক্ত ইলেকট্রন। তড়িদ্বিশ্লেষ্যে তড়িৎ বহন করে ধনাত্মক ও ঋণাত্মক আয়ন।
2. রাসায়নিক পরিবর্তন – ধাতব পরিবাহীর মধ্য দিয়ে তড়িৎ প্রবাহিত হলে সাধারণত কোনো রাসায়নিক পরিবর্তন ঘটে না। তড়িদ্বিশ্লেষ্যের মধ্য দিয়ে তড়িৎ প্রবাহিত হলে রাসায়নিক পরিবর্তন (বিশ্লেষণ) ঘটে।
3. পদার্থের স্থানান্তর – ধাতব পরিবাহীতে তড়িৎপ্রবাহের সময় পরিবাহীর কোনো অংশের স্থানান্তর হয় না। তড়িদ্বিশ্লেষ্যে তড়িৎপ্রবাহের সময় আয়নগুলির স্থানান্তর ঘটে।
তড়িদ্বিশ্লেষ্য কঠিন অবস্থায় তড়িৎ পরিবহন করতে পারে না কেন?
তড়িদ্বিশ্লেষ্য কঠিন অবস্থায় আয়নগুলি একটি দৃঢ় স্ফটিক জালকের মধ্যে আবদ্ধ থাকে এবং তারা স্বাধীনভাবে চলাচল করতে পারে না। গলিত বা দ্রবীভূত অবস্থায় এই আয়নগুলি মুক্ত হয়ে যায় এবং তড়িৎ পরিবহনের জন্য চলাচল করতে সক্ষম হয়।
ধাতব পরিবাহীতে তড়িৎ প্রবাহের দিক কেমন?
ধাতব পরিবাহীতে ইলেকট্রন প্রবাহের দিক হয় ক্যাথোড (-) থেকে অ্যানোড (+) এর দিকে। কিন্তু প্রচলিত তড়িৎ প্রবাহের দিক ধরা হয় অ্যানোড (+) থেকে ক্যাথোড (-) পর্যন্ত।
তড়িদ্বিশ্লেষ্যে তড়িৎ প্রবাহের দিক কেমন?
তড়িদ্বিশ্লেষ্যে ধনাত্মক আয়ন (ক্যাটায়ন) গুলি ক্যাথোড (-) এর দিকে এবং ঋণাত্মক আয়ন (অ্যানায়ন) গুলি অ্যানোড (+) এর দিকে প্রবাহিত হয়।
তড়িদ্বিশ্লেষণের একটি ব্যবহারিক উদাহরণ দাও।
তড়িদ্বিশ্লেষণের একটি খুবই সাধারণ উদাহরণ হলো তড়িৎলেপন (Electroplating)। যেমন – লোহার তৈরি জিনিসকে তামার প্রলেপ দেওয়ার সময় তামার সলফেট (CuSO₄) দ্রবণকে তড়িদ্বিশ্লেষ্য হিসেবে ব্যবহার করা হয়।
কোনটি তড়িৎ পরিবহনে বেশি দক্ষ – ধাতব পরিবাহী নাকি তড়িদ্বিশ্লেষ্য?
সাধারণত ধাতব পরিবাহী তড়িৎ পরিবহনে অনেক বেশি দক্ষ। কারণ, ধাতুতে ইলেকট্রনের চলাচলের জন্য খুব কম প্রতিবন্ধকতা থাকে। তড়িদ্বিশ্লেষ্যে আয়নের চলাচল তুলনামূলকভাবে ধীর এবং বেশি বাধার সম্মুখীন হয়।
গ্রাফাইট কি ধাতব পরিবাহী নাকি তড়িদ্বিশ্লেষ্য?
গ্রাফাইট একটি অ-ধাতু হওয়া সত্ত্বেও এটি ইলেকট্রনের মাধ্যমে তড়িৎ পরিবহন করে। তাই এটির বৈশিষ্ট্য ধাতব পরিবাহীর মতো। এটি তড়িদ্বিশ্লেষ্য নয়, কারণ এখানে তড়িৎপ্রবাহে কোনো রাসায়নিক পরিবর্তন বা আয়নের স্থানান্তর জড়িত নেই (কেবল ইলেকট্রনের প্রবাহ আছে)।
এই আর্টিকেলে আমরা মাধ্যমিক ভৌতবিজ্ঞান বিষয়ের একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন — “ধাতব পরিবাহী এবং তড়িবিশ্লেষ্যের পার্থক্য কী? অথবা, ধাতব তারের মধ্য দিয়ে তড়িৎ পরিবহণ এবং তড়িদ্বিশ্লেষণের সময় তড়িদ্বিশ্লেষ্যের মধ্য দিয়ে তড়িৎ পরিবহণের মধ্যে দুটি পার্থক্য লেখো।” — নিয়ে আলোচনা করেছি। এই প্রশ্নটি মাধ্যমিক ভৌতবিজ্ঞানের অষ্টম অধ্যায় “পদার্থের ভৌত ও রাসায়নিক ধর্মসমূহ” -এর “তড়িৎপ্রবাহ ও রাসায়নিক বিক্রিয়া” অংশ থেকে নেওয়া হয়েছে। মাধ্যমিক পরীক্ষা এবং বিভিন্ন চাকরির পরীক্ষায় এই প্রশ্নটি প্রায়ই আসে, তাই এটি শিক্ষার্থীদের জন্য বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ। আশা করি এই আর্টিকেলটি আপনাদের জন্য উপকারী হয়েছে। আপনাদের কোনো প্রশ্ন বা অসুবিধা থাকলে, আমাদের সাথে টেলিগ্রামে যোগাযোগ করতে পারেন, আমরা উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করব। তাছাড়া, নিচে আমাদের এই পোস্টটি আপনার প্রিয়জনের সাথে শেয়ার করুন, যাদের এটি প্রয়োজন হতে পারে। ধন্যবাদ।
মন্তব্য করুন