এখনই আমাদের Telegram Community গ্রুপে যোগ দিন। এখানে WBBSE বোর্ডের পঞ্চম শ্রেণি থেকে দশম শ্রেণির যেকোনো বিষয়ভিত্তিক সমস্যা শেয়ার করতে পারেন এবং একে অপরের সাহায্য করতে পারবেন। এছাড়া, কোনও সমস্যা হলে আমাদের শিক্ষকরা তা সমাধান করে দেবেন।

Telegram Logo Join Our Telegram Community

গগনেন্দ্রনাথ ঠাকুর কীভাবে ঔপনিবেশিক সমাজের সমালোচনা করেছিলেন? গগনেন্দ্রনাথ ঠাকুরের ব্যঙ্গচিত্র কীভাবে জাতীয়তাবাদী চেতনা বিস্তার করেছিলেন?

এই আর্টিকেলে আমরা মাধ্যমিক ইতিহাসের একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন “গগনেন্দ্রনাথ ঠাকুর কীভাবে ঔপনিবেশিক সমাজের সমালোচনা করেছিলেন? গগনেন্দ্রনাথ ঠাকুরের ব্যঙ্গচিত্র কীভাবে জাতীয়তাবাদী চেতনা বিস্তারে সহায়তা করেছিল?” নিয়ে আলোচনা করব। এই প্রশ্নটি মাধ্যমিক ইতিহাস পরীক্ষার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই “গগনেন্দ্রনাথ ঠাকুর কীভাবে ঔপনিবেশিক সমাজের সমালোচনা করেছিলেন? গগনেন্দ্রনাথ ঠাকুরের ব্যঙ্গচিত্র কীভাবে জাতীয়তাবাদী চেতনা বিস্তারে সহায়তা করেছিল?“ প্রশ্নটি মাধ্যমিক ইতিহাসের চতুর্থ অধ্যায় “সংঘবদ্ধতার গোড়ার কথা“ -এর একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন। এই প্রশ্নটি মাধ্যমিক পরীক্ষায় এবং চাকরির পরীক্ষায় প্রায়ই দেখা যায়।

গগনেন্দ্রনাথ ঠাকুর কীভাবে ঔপনিবেশিক সমাজের সমালোচনা করেছিলেন? গগনেন্দ্রনাথ ঠাকুরের ব্যঙ্গচিত্র কীভাবে জাতীয়তাবাদী চেতনা বিস্তারে সহায়তা করেছিল?
Contents Show

গগনেন্দ্রনাথ ঠাকুর কীভাবে ঔপনিবেশিক সমাজের সমালোচনা করেছিলেন?

গগনেন্দ্রনাথ ঠাকুর মূলত তাঁর ব্যঙ্গচিত্রের মাধ্যমে ঔপনিবেশিক সমাজের সমালোচনা করেছিলেন। গভীর সমাজসচেতনা ও সাম্রাজ্যবাদ-বিরোধী মানসিকতায় তাঁর ব্যঙ্গচিত্রগুলি অনবদ্য। স্বদেশবাসীর দুঃখ-কষ্টে তিনি নির্লিপ্ত থাকতে পারেননি। ব্যঙ্গচিত্রের চাবুকে তিনি ঔপনিবেশিক সমাজ ও রাষ্ট্রব্যবস্থার সমালোচনা করেছিলেন।

গগনেন্দ্রনাথ ঠাকুরের ব্যঙ্গচিত্র কীভাবে জাতীয়তাবাদী চেতনা বিস্তারে সহায়তা করেছিল?

অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ভাই গগনেন্দ্রনাথ ঠাকুর ছিলেন একজন বিশিষ্ট চিত্রশিল্পী। তার আঁকা বিভিন্ন ব্যঙ্গচিত্রে সমকালীন উপনিবেশিক সমাজের প্রতি সমালোচনা লক্ষ্য করা যায়। তাকে আধুনিক চিত্রশিল্পের পথিকৃৎ বলা হয়।

বিষয়বস্তু –

জাতীয়তাবোধ তথা ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শাসনের বিরোধিতা গগনেন্দ্রনাথ ঠাকুরকে ব্যঙ্গচিত্র আঁকতে অনুপ্রাণিত করেছিল। চিত্রকর গগনেন্দ্রনাথ দেশবাসীর দুঃখ-কষ্টে নির্লিপ্ত থাকতে পারেননি। তবে শুধু রাজনৈতিক নয় সমাজের নানা কুসংস্কার, ধর্মীয় গোঁড়ামি, প্রভৃতি তাঁর ব্যাঙ্গচিত্রের বিষয়বস্তুতে পরিনত হয়েছিল।

বিভিন্ন ব্যঙ্গচিত্র গগনেন্দ্রনাথ ঠাকুরের আঁকা ব্যঙ্গচিত্র সংকলনগুলির মধ্যে ‘বিরূপ বজ্র’, ‘নয়া হুল্লোড়’ ও ‘অদ্ভুত লোক’ বিশেষ উল্লেখযোগ্য। আর তাঁর আঁকা ব্যঙ্গচিত্রগুলির মধ্যে ‘জাতাসুর’, ‘পরভূতের কাকলি’, ‘বিদ্যার কারখানা’, ‘বাকযন্ত্র’ বিশেষ উল্লেখযোগ্য।

উচ্চবর্ণের সমালোচনা –

সমাজপতিদের অন্ধবিশ্বাস, গোঁড়ামি ও স্বার্থপরতা কীভাবে সামাজিক ঐক্যের পথে অন্তরায় ছিল তার ব্যঙ্গাত্মক বাস্তবচিত্র এঁকেছেন ‘জাতাসুর’ নামক চিত্রে। চিত্রটিতে দেখা যায়, একটি বিরাট আকারের জাতার ওপর বসে হোম ও পূজা-আহ্নিক করছেন মুণ্ডিত মস্তক বিশিষ্ট এক ব্রাহ্মণ, যার হাতে রয়েছে পুঁথি। জাতাটি ঘোরাচ্ছে হাস্যরত এক নরকঙ্কাল, আর জাতার নীচে পিষ্ট হচ্ছে অসংখ্য নিম্নবর্ণের মানুষ। তার ‘খলব্রাহ্মণ’ চিত্রেও সমাজ-পতিদের বিরুদ্ধে নির্মম সমালোচনা ফুটে উঠেছে।

ঔপনিবেশিক শিক্ষার সমালোচনা –

ঔপনিবেশিক শিক্ষা ব্যবস্থাকে একটি যন্ত্রের সাথে তুলনা করেছেন ‘বিদ্যার কারখানা’ নামক চিত্রে। দেখা যাচ্ছে কারখানায় প্রবেশের আগে ধুতি পাঞ্জাবি পরিহিত বাঙালি সারিবদ্ধ ভাবে দাঁড়িয়ে আছে আর নিষ্পেষিত হওয়ার পর সাহেবের পোশাক পোশাক পরিহিত অবস্থায় বেরিয়ে আসছে।

ঔপনিবেশিক শাসনের সমালোচনা –

বাঙালি সমাজের ইংরেজ প্রীতি এবং ঔপনিবেশিক শাসনের কঠোর সমালোচনা ধরা পড়েছে তার বিভিন্ন ব্যঙ্গচিত্রে। ‘চোর’ চিত্রে দেখা যায় দশাশয়ী পুলিশ শীত বস্ত্রে সুরক্ষিত, কিন্তু ঠান্ডায় কাঁপছে স্বল্পবাসী দরিদ্র ভারতীয়। জালিয়ানওয়ালাবাগের হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদে তার আঁকা ব্যঙ্গচিত্রেও ঔপনিবেশিক শাসনের স্বরূপ উন্মোচন করেছেন।

বাবুসংস্কৃতি ও পাশ্চাত্যানুরাগের সমালোচনা –

ব্রিটিশ শাসনকালে বাবু নামে পরিচিত শিক্ষিত ও পাশ্চাত্যানুরাগী এক শ্রেণির মানুষের সমালোচনা ফুটে উঠেছে গগনেন্দ্রনাথের চিত্রে। ‘বল রুম ড্যান্স’ নামক একটি চিত্রে দেখা যায়, একজন বাঙালি নারী বাংলার শাড়ি ও ইউরোপীয় জুতো পরে ইউরোপীয় পুরুষের সাথে নৃত্যরত।

মন্তব্য –

গভীর সমাজচেতনা এবং সাম্রাজ্যবাদ বিরাধেী মানসিকতায় গগনেন্দ্রনাথের ব্যঙ্গচিত্রগুলি অনবদ্য। স্বয়ং রবীন্দ্রনাথ ভ্রাতুস্পুত্র গগনেন্দ্রনাথ সম্পর্কে লিখেছেন – “তুলির এক টানে ব্রিটিশ গভর্নমেন্টকে ব্যতিব্যস্ত করে তুলেছে, আর সেইসঙ্গে দেশকেও টেনে তুলেছে।”

কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নোত্তর

গগনেন্দ্রনাথ ঠাকুর কে ছিলেন?

গগনেন্দ্রনাথ ঠাকুর ছিলেন একজন প্রখ্যাত বাঙালি চিত্রশিল্পী ও ব্যঙ্গচিত্রকার। তিনি ঠাকুর পরিবারের সদস্য এবং ঔপনিবেশিক যুগে সমাজের বিভিন্ন অসঙ্গতি ও ব্রিটিশ শাসনের সমালোচনা তাঁর শিল্পকর্মে ফুটিয়ে তুলেছিলেন।

গগনেন্দ্রনাথ ঠাকুরের বিখ্যাত ব্যঙ্গচিত্রগুলির নাম কী?

গগনেন্দ্রনাথ ঠাকুরের বিখ্যাত ব্যঙ্গচিত্রগুলির নাম ছিল –
1.‘জাতাসুর’ (বর্ণবৈষম্যের সমালোচনা),
2.‘বিদ্যার কারখানা’ (ঔপনিবেশিক শিক্ষাব্যবস্থার কঠোর সমালোচনা),
3.‘বল রুম ড্যান্স’ (পাশ্চাত্যানুরাগী বাবু সংস্কৃতির ব্যঙ্গ),
4.‘চোর’ (ব্রিটিশ পুলিশের দমননীতির সমালোচনা)।

গগনেন্দ্রনাথ ঠাকুরে শিল্পকর্মে জাতীয়তাবাদী চেতনা কীভাবে ফুটে উঠেছে?

তিনি ভারতীয়দের মধ্যে স্বদেশপ্রেম জাগ্রত করতে ব্রিটিশ শাসনের অত্যাচার, শিক্ষাব্যবস্থার অসারতা এবং সমাজের বিভেদমূলক নীতিকে চিত্রিত করেছিলেন। তাঁর শিল্পকর্মে ভারতীয় ঐতিহ্য ও স্বাধিকার চেতনা বিশেষ ভূমিকা রেখেছে।

গগনেন্দ্রনাথ ঠাকুরের শিল্পশৈলীর বৈশিষ্ট্য কী?

তাঁর শৈলীতে কিউবিজম (ঘনকবাদ) এবং ঐতিহ্যবাহী ভারতীয় শিল্পের মিশ্রণ দেখা যায়। ব্যঙ্গচিত্রগুলিতে সরল রেখা ও অতিরঞ্জিত অভিব্যক্তি ব্যবহার করে তিনি সমাজের অসঙ্গতিগুলো ফুটিয়ে তুলেছেন।

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সাথে গগনেন্দ্রনাথের সম্পর্ক কী ছিল?

গগনেন্দ্রনাথ ছিলেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ভ্রাতুষ্পুত্র (বড়ভাই দ্বিজেন্দ্রনাথ ঠাকুরের পৌত্র)। রবীন্দ্রনাথ তাঁর শিল্পকর্মের প্রশংসা করেছিলেন এবং বলেছিলেন যে তাঁর তুলির আঘাতে ব্রিটিশ সরকার ব্যতিব্যস্ত হয়ে পড়েছিল।

গগনেন্দ্রনাথ ঠাকুরের শিল্পকর্ম কোথায় দেখা যায়?

তাঁর চিত্রকলা ও ব্যঙ্গচিত্র কলকাতার ভারতীয় জাদুঘররবীন্দ্রভারতী সংগ্রহশালা এবং বিভিন্ন শিল্প প্রদর্শনীতে সংরক্ষিত আছে।

গগনেন্দ্রনাথ ঠাকুর কী শুধু ব্যঙ্গচিত্রই আঁকতেন?

না, তিনি জলরং, তেলরং, কালি-তুলির কাজ এবং মঞ্চসজ্জার ডিজাইনও করতেন। তবে ব্যঙ্গচিত্রের মাধ্যমেই তিনি সবচেয়ে বেশি পরিচিতি লাভ করেন।


এই আর্টিকেলে আমরা মাধ্যমিক ইতিহাসের একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন “গগনেন্দ্রনাথ ঠাকুর কীভাবে ঔপনিবেশিক সমাজের সমালোচনা করেছিলেন? গগনেন্দ্রনাথ ঠাকুরের ব্যঙ্গচিত্র কীভাবে জাতীয়তাবাদী চেতনা বিস্তারে সহায়তা করেছিল?” নিয়ে আলোচনা করেছি। এই “গগনেন্দ্রনাথ ঠাকুর কীভাবে ঔপনিবেশিক সমাজের সমালোচনা করেছিলেন? গগনেন্দ্রনাথ ঠাকুরের ব্যঙ্গচিত্র কীভাবে জাতীয়তাবাদী চেতনা বিস্তারে সহায়তা করেছিল?” প্রশ্নটি মাধ্যমিক ইতিহাসের চতুর্থ অধ্যায় “সংঘবদ্ধতার গোড়ার কথা” -এর একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন। এই প্রশ্নটি মাধ্যমিক পরীক্ষায় এবং চাকরির পরীক্ষায় প্রায়ই দেখা যায়। আশা করি এই আর্টিকেলটি আপনাদের জন্য উপকারী হয়েছে। আপনাদের কোনো প্রশ্ন বা অসুবিধা থাকলে, আমাদের সাথে টেলিগ্রামে যোগাযোগ করতে পারেন, আমরা উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করব। তাছাড়া, নিচে আমাদের এই পোস্টটি আপনার প্রিয়জনের সাথে শেয়ার করুন, যাদের এটি প্রয়োজন হতে পারে। ধন্যবাদ।

Share via:

মন্তব্য করুন