এই আর্টিকেলে আমরা মাধ্যমিক ইতিহাসের একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন “হরিচাঁদ, গুরুচাঁদ ঠাকুরের নেতৃত্ব কিভাবে মতুয়া আন্দোলন প্রসার লাভ করে?” নিয়ে আলোচনা করব। এই প্রশ্নটি মাধ্যমিক ইতিহাস পরীক্ষার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই “হরিচাঁদ, গুরুচাঁদ ঠাকুরের নেতৃত্ব কিভাবে মতুয়া আন্দোলন প্রসার লাভ করে?” প্রশ্নটি মাধ্যমিক ইতিহাসের সপ্তম অধ্যায় “বিশ শতকের ভারতে নারী, ছাত্র ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর আন্দোলন: বৈশিষ্ট্য ও বিশ্লেষণ“ -এর একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন। এই প্রশ্নটি মাধ্যমিক পরীক্ষায় এবং চাকরির পরীক্ষায় প্রায়ই দেখা যায়।

হরিচাঁদ, গুরুচাঁদ ঠাকুরের নেতৃত্ব কিভাবে মতুয়া আন্দোলন প্রসার লাভ করে?
বাংলায় নমঃশূদ্র আন্দোলনের দুই প্রধান কান্ডারী ছিলেন হরিচাঁদ ঠাকুর ও তাঁর পুত্র গুরুচাঁদ ঠাকুর। তাঁদের সুযোগ্য নেতৃত্বে বাংলায় নমঃশূদ্র আন্দোলন দলিত আন্দোলনের অন্যতম দিশারিতে পরিণত হয়।
মতুয়া আন্দোলনের প্রসারে হরিচাঁদ, গুরুচাঁদ ঠাকুরের ভূমিকা
মতুয়া আন্দোলনের প্রসারে মতুয়া ধর্ম –
পূর্ববঙ্গের নিপীড়িত সম্প্রদায়কে নতুন জীবন দর্শনে উদ্বুদ্ধ করে তাদের মধ্যে আত্মশক্তি ও আত্মমর্যাদা বোধের জাগরণ ঘটান হরিচাঁদ ঠাকুর। তিনি ‘মতুয়া’ নামে একটি ধর্মীয় সংগঠন গড়ে তোলেন। তাঁর পুত্র গুরুচাঁদ ঠাকুর মতুয়া আন্দোলন ও মতাদর্শকে আরও জোরদার করে তোলেন।
মতুয়া আন্দোলনের প্রসারে নৈতিক জীবনাদর্শ প্রচার –
হরিচাঁদ, গুরুচাঁদ ঠাকুর তাঁদের অনুগামীদের মধ্যে প্রগতিমূলক আদর্শের প্রচার করেন। নিজেদের মধ্যে ঐক্য ও শক্তিবৃদ্ধির উদ্দেশ্যে গুরুচাঁদ ঠাকুর বলেন – “যার দল নাই, তার বল নাই।” মতুয়া ধর্মাবলম্বীদের তিনি ‘হাতে কাম ও মুখে নাম’ করার উপদেশ দেন। তিনি তাদের সৎ, সংযমী ও নৈতিক জীবনাদর্শ পালনের উপদেশ দেন।
মতুয়া আন্দোলনের প্রসারে শিক্ষা সংস্কার –
নমঃশূদ্রদের মধ্যে শিক্ষার প্রসারকে হরিচাঁদ, গুরুচাঁদ ঠাকুর সর্বাধিক গুরুত্ব দেন। গুরুচাঁদ বলেন – ‘বাঁচি কিংবা মরি তাতে ক্ষতি নাই, গ্রামে গ্রামে পাঠশালা চাই।’ তিনি মতুয়াদের মধ্যে শিক্ষার বিস্তার এবং তাদের আর্থ-সামাজিক উন্নতিতে যত্নবান হন। তাঁর উদ্যোগে বহু সংখ্যক প্রাথমিক বিদ্যালয় স্থাপিত হয়।
মতুয়া আন্দোলনের প্রসারে নমঃশূদ্র আন্দোলন –
মতুয়া ভাবধারাকে কেন্দ্র করে পূর্ববঙ্গের নমঃশূদ্রদের আর্থ-সামাজিক অগ্রগতি, উচ্চবর্ণের শোষণ প্রতিরোধ প্রভৃতির উদ্দেশ্যে আন্দোলন শুরু হয়। হরিচাঁদ, গুরুচাঁদ ঠাকুরের পৈতৃক ভিটে ওড়াকান্দি হয়ে ওঠে আন্দোলনের প্রাণকেন্দ্র।
মতুয়া আন্দোলনের মন্তব্য –
নমঃশূদ্ররা আজও মতুয়া সম্প্রদায়ের মধ্য দিয়ে নিজেদের স্বতন্ত্র অস্তিত্ব রেখে চলেছে। হরিচাঁদ, গুরুচাঁদ ঠাকুর মতুয়া সম্প্রদায়ের কাছে প্রণম্য ব্যক্তিত্ব।
কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নোত্তর
মতুয়া আন্দোলন কী?
মতুয়া আন্দোলন হলো বাংলার নমঃশূদ্র (অন্ত্যজ) সম্প্রদায়ের সামাজিক, ধর্মীয় ও রাজনৈতিক আন্দোলন, যা হরিচাঁদ ঠাকুর শুরু করেন এবং তাঁর পুত্র গুরুচাঁদ ঠাকুর তা বিস্তৃত করেন। এই আন্দোলনের মূল লক্ষ্য ছিল নিম্নবর্ণের মানুষের আত্মমর্যাদা, শিক্ষা ও সামাজিক ন্যায় প্রতিষ্ঠা করা।
হরিচাঁদ ঠাকুর মতুয়া আন্দোলন কীভাবে শুরু করেন?
হরিচাঁদ ঠাকুর নমঃশূদ্রদের মধ্যে ধর্মীয় ও সামাজিক সংস্কারের জন্য ‘মতুয়া’ ধর্মের প্রবর্তন করেন। তিনি নিপীড়িত মানুষদের মধ্যে আত্মশক্তি ও আত্মবিশ্বাস জাগিয়ে তোলেন এবং সমাজে তাদের মর্যাদাপূর্ণ অবস্থান প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করেন।
গুরুচাঁদ ঠাকুরের অবদান কী ছিল?
গুরুচাঁদ ঠাকুর তাঁর পিতার আদর্শকে আরও বিস্তৃত করেন। তিনি শিক্ষা, সংগঠন ও আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের উপর জোর দেন। তাঁর বিখ্যাত উক্তি – “যার দল নাই, তার বল নাই” – মতুয়া সম্প্রদায়কে ঐক্যবদ্ধ করে।
মতুয়া আন্দোলনে শিক্ষার ভূমিকা কী ছিল?
গুরুচাঁদ ঠাকুর শিক্ষাকে সর্বাধিক গুরুত্ব দেন। তাঁর বিখ্যাত বাণী – “বাঁচি কিংবা মরি তাতে ক্ষতি নাই, গ্রামে গ্রামে পাঠশালা চাই” – শিক্ষার প্রসারে তাঁর অঙ্গীকার প্রকাশ করে। তাঁর উদ্যোগে অসংখ্য প্রাথমিক বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হয়।
মতুয়া আন্দোলনের মূল স্লোগান বা আদর্শ কী ছিল?
মতুয়া আন্দোলনের মূল আদর্শ ছিল —
1. “হাতে কাম, মুখে নাম” (কর্ম ও ভক্তির সমন্বয়)।
2. সামাজিক সমতা ও শিক্ষার প্রসার।
3. নমঃশূদ্রদের ঐক্যবদ্ধ করে শোষণের বিরুদ্ধে লড়াই।
মতুয়া আন্দোলনের কেন্দ্রীয় স্থান কোথায় ছিল?
হরিচাঁদ ও গুরুচাঁদ ঠাকুরের পৈতৃক ভিটে ওড়াকান্দি (বর্তমানে বাংলাদেশের গোপালগঞ্জ জেলায়) মতুয়া আন্দোলনের প্রধান কেন্দ্র হিসেবে গড়ে ওঠে।
মতুয়া আন্দোলন নমঃশূদ্রদের কীভাবে প্রভাবিত করেছিল?
এই আন্দোলন নমঃশূদ্রদের মধ্যে আত্মসম্মানবোধ, শিক্ষা ও সংগঠনের চেতনা জাগ্রত করে। এটি তাদেরকে উচ্চবর্ণের শোষণ থেকে মুক্তির পথ দেখায় এবং সমাজে তাদের অবস্থানকে শক্তিশালী করে।
বর্তমানে মতুয়া সম্প্রদায়ের অবস্থান কী?
আজও মতুয়া সম্প্রদায় বাংলার দলিত ও নিম্নবর্ণের মানুষের মধ্যে একটি গুরুত্বপূর্ণ সামাজিক-ধর্মীয় শক্তি। হরিচাঁদ ও গুরুচাঁদ ঠাকুর তাদের আধ্যাত্মিক গুরু হিসেবে পূজিত হন।
মতুয়া আন্দোলনের রাজনৈতিক প্রভাব কী ছিল?
পরবর্তীতে মতুয়া আন্দোলন রাজনৈতিকভাবে শক্তিশালী হয়ে ওঠে এবং নমঃশূদ্রদের রাজনৈতিক অধিকার আদায়ে ভূমিকা রাখে। এটি বাংলার দলিত আন্দোলনের একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়।
এই আর্টিকেলে আমরা মাধ্যমিক ইতিহাসের একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন “হরিচাঁদ, গুরুচাঁদ ঠাকুরের নেতৃত্ব কিভাবে মতুয়া আন্দোলন প্রসার লাভ করে?” নিয়ে আলোচনা করেছি। এই “হরিচাঁদ, গুরুচাঁদ ঠাকুরের নেতৃত্ব কিভাবে মতুয়া আন্দোলন প্রসার লাভ করে?” প্রশ্নটি মাধ্যমিক ইতিহাসের সপ্তম অধ্যায় “বিশ শতকের ভারতে নারী, ছাত্র ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর আন্দোলন: বৈশিষ্ট্য ও বিশ্লেষণ” -এর একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন। এই প্রশ্নটি মাধ্যমিক পরীক্ষায় এবং চাকরির পরীক্ষায় প্রায়ই দেখা যায়। আশা করি এই আর্টিকেলটি আপনাদের জন্য উপকারী হয়েছে। আপনাদের কোনো প্রশ্ন বা অসুবিধা থাকলে, আমাদের সাথে টেলিগ্রামে যোগাযোগ করতে পারেন, আমরা উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করব। তাছাড়া, নিচে আমাদের এই পোস্টটি আপনার প্রিয়জনের সাথে শেয়ার করুন, যাদের এটি প্রয়োজন হতে পারে। ধন্যবাদ।
মন্তব্য করুন