হিন্দু প্যাট্রিয়ট পত্রিকা কীভাবে নীল বিদ্রোহের মুখপত্রে পরিণত হয়েছিল?

Rahul

এই আর্টিকেলে আমরা মাধ্যমিক ইতিহাসের একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন “হিন্দু প্যাট্রিয়ট পত্রিকা কীভাবে নীল বিদ্রোহের মুখপত্রে পরিণত হয়েছিল? নিয়ে আলোচনা করব। এই প্রশ্নটি মাধ্যমিক ইতিহাস পরীক্ষার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই “হিন্দু প্যাট্রিয়ট পত্রিকা কীভাবে নীল বিদ্রোহের মুখপত্রে পরিণত হয়েছিল?“ প্রশ্নটি মাধ্যমিক ইতিহাসের দ্বিতীয় অধ্যায় “সংস্কার – বৈশিষ্ট্য ও পর্যালোচনা“ -এর একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন। এই প্রশ্নটি মাধ্যমিক পরীক্ষায় এবং চাকরির পরীক্ষায় প্রায়ই দেখা যায়।

হিন্দু প্যাট্রিয়ট পত্রিকা কীভাবে নীল বিদ্রোহের মুখপত্রে পরিণত হয়েছিল?
Contents Show

হিন্দু প্যাট্রিয়ট পত্রিকা কীভাবে নীল বিদ্রোহের মুখপত্রে পরিণত হয়েছিল?

বঙ্গীয় জাতীয় জাগরণ ও সাংবাদিকতার ইতিহাসে ‘হিন্দু প্যাট্রিয়ট’ এক উল্লেখযোগ্য নাম।

প্রকাশ –

1853 খ্রিস্টাব্দে শহর কলকাতা থেকে ব্রিটিশ ইন্ডিয়ান অ্যাসোসিয়েশনের মুখপত্র ইংরেজি সাপ্তাহিকরূপে ‘হিন্দু প্যাট্রিয়ট’ -এর পথচলা শুরু।

সম্পাদনা –

পত্রিকার প্রথম সম্পাদক ও প্রকাশক ছিলেন যথাক্রমে গিরিশচন্দ্র ঘোষ ও মধুসূদন রায়। 1855 খ্রিস্টাব্দ থেকে হরিশচন্দ্র মুখোপাধ্যায় এই পত্রিকার সম্পাদক তথা সত্ত্বাধিকারী হন।

নিরপেক্ষ সাংবাদিকতা –

হরিশচন্দ্রের সম্পাদনায় শুরু থেকেই এই পত্রিকা নিরপেক্ষ রাজনৈতিক সংবাদ ও মতামত প্রকাশ করতে থাকে। লর্ড ডালহৌসির নির্লজ্জ রাজ্যগ্রাসী নীতি, সরকারের নিষ্ঠুর দমন নীতি, দেশীয় জমিদারদের অত্যাচার প্রভৃতির খবর নিরপেক্ষভাবে প্রকাশিত হত ‘হিন্দু প্যাট্রিয়ট’ -এর পাতায় পাতায়। 1857 খ্রিস্টাব্দের বিদ্রোহকে সমর্থন না করলেও বিদ্রোহের খবরগুলিকে নিয়মিত শিরোনামে তুলে ধরত ‘হিন্দু প্যাট্রিয়ট’।

খবর-নীলবিদ্রোহ –

নীলকরদের অত্যাচারের বিরুদ্ধে ‘হিন্দু প্যাট্রিয়ট’ নীলচাষিদের প্রায় মুখপত্র হয়ে উঠেছিল। হরিশচন্দ্র নীলচাষিদের সমর্থনে এগিয়ে আসেন এবং তাঁর অনলবর্ষী লেখনীর মাধ্যমে নীলকরদের অত্যাচার এবং নীলবিদ্রোহ সংক্রান্ত বিভিন্ন সংবাদ নিয়মিত প্রকাশ করতে থাকেন। এই উদ্দেশ্যে তিনি পত্রিকায় ‘নীল জেলা’ নামে একটি স্বতন্ত্র বিভাগ খোলেন। নীলকররা তাঁর বিরুদ্ধে মানহানির মামলা করেন। তিনি মামলায় পরাজিত হন এবং ইতিমধ্যে তাঁর মৃত্যু ঘটে।

পরিণতি –

হরিশচন্দ্রের পরবর্তীকালে সম্পাদক কৃষ্ণদাস পালের নেতৃত্বে হিন্দু প্যাট্রিয়ট তার নিরপেক্ষতা ও স্বৈরাচার বিরোধিতার ধারা সুদীর্ঘকাল বজায় রেখেছিল। সংকট ও সমাদরের মধ্য দিয়ে দীর্ঘ সত্তর বছরের উজ্জ্বল অস্তিত্ব বিকিরণের পর 1924 খ্রিঃ নাগাদ হিন্দু প্যাট্রিয়টের প্রকাশনা বন্ধ হয়ে যায়।

মন্তব্য –

নিরপেক্ষতা ও স্বৈরাচার বিরোধিতার এক মূর্ত প্রতীক ‘হিন্দু-প্যাট্রিয়ট’। বাস্তবিকই ‘হিন্দু প্যাট্রিয়ট’ -এর ইতিহাস হল নীলবিদ্রোহের ইতিহাস।

কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নোত্তর

হিন্দু প্যাট্রিয়ট পত্রিকা কী?

হিন্দু প্যাট্রিয়ট ছিল একটি ইংরেজি সাপ্তাহিক পত্রিকা, যা 1853 সালে কলকাতা থেকে প্রকাশিত হয়। এটি ব্রিটিশ ইন্ডিয়ান অ্যাসোসিয়েশনের মুখপত্র হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল এবং পরবর্তীতে বাংলার নীল বিদ্রোহ ও জাতীয় জাগরণের ইতিহাসে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

হিন্দু প্যাট্রিয়ট পত্রিকার প্রথম সম্পাদক কে ছিলেন?

হিন্দু প্যাট্রিয়ট পত্রিকার প্রথম সম্পাদক ছিলেন গিরিশচন্দ্র ঘোষ এবং প্রকাশক ছিলেন মধুসূদন রায়। পরবর্তীতে 1855 সালে হরিশচন্দ্র মুখোপাধ্যায় পত্রিকার সম্পাদক ও সত্ত্বাধিকারী হন।

হিন্দু প্যাট্রিয়ট কীভাবে নীল বিদ্রোহের মুখপত্রে পরিণত হয়?

হরিশচন্দ্র মুখোপাধ্যায়ের সম্পাদনায় হিন্দু প্যাট্রিয়ট নীলচাষিদের অত্যাচারের বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়। তিনি নীলকরদের অত্যাচার ও নীলবিদ্রোহ সংক্রান্ত খবর নিয়মিত প্রকাশ করতে থাকেন এবং পত্রিকায় “নীল জেলা” নামে একটি স্বতন্ত্র বিভাগ চালু করেন। এভাবে পত্রিকাটি নীল বিদ্রোহের মুখপত্রে পরিণত হয়।

হরিশচন্দ্র মুখোপাধ্যায়ের ভূমিকা কী ছিল?

হরিশচন্দ্র মুখোপাধ্যায় হিন্দু প্যাট্রিয়টের সম্পাদক হিসেবে নীলবিদ্রোহের পক্ষে সক্রিয় ভূমিকা পালন করেন। তিনি নীলকরদের বিরুদ্ধে লেখালেখি করেন এবং নীলচাষিদের সমর্থনে এগিয়ে আসেন। তাঁর লেখনীর মাধ্যমে পত্রিকাটি নীলবিদ্রোহের ইতিহাসে একটি গুরুত্বপূর্ণ স্থান অধিকার করে।

হিন্দু প্যাট্রিয়ট পত্রিকা কীভাবে ব্রিটিশ শাসনের সমালোচনা করত?

হিন্দু প্যাট্রিয়ট পত্রিকা লর্ড ডালহৌসির রাজ্যগ্রাসী নীতি, ব্রিটিশ সরকারের দমননীতি এবং দেশীয় জমিদারদের অত্যাচারের বিরুদ্ধে সোচ্চার ছিল। এটি নিরপেক্ষভাবে রাজনৈতিক সংবাদ ও মতামত প্রকাশ করত।

হিন্দু প্যাট্রিয়ট পত্রিকার প্রকাশনা কখন বন্ধ হয়?

হিন্দু প্যাট্রিয়ট পত্রিকার প্রকাশনা 1924 সাল নাগাদ বন্ধ হয়ে যায়। প্রায় সত্তর বছর ধরে এটি বাংলার সাংবাদিকতা ও জাতীয় জাগরণের ইতিহাসে উজ্জ্বল ভূমিকা পালন করে।

হিন্দু প্যাট্রিয়ট পত্রিকার ঐতিহাসিক গুরুত্ব কী?

হিন্দু প্যাট্রিয়ট পত্রিকা বাংলার নীলবিদ্রোহ, ব্রিটিশ শাসনের সমালোচনা এবং স্বৈরাচার বিরোধিতার এক মূর্ত প্রতীক। এটি বাংলার সাংবাদিকতা ও জাতীয় জাগরণের ইতিহাসে একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়।

হরিশচন্দ্র মুখোপাধ্যায়ের মৃত্যু কীভাবে হয়?

হরিশচন্দ্র মুখোপাধ্যায় নীলকরদের বিরুদ্ধে লেখালেখির কারণে মানহানির মামলায় জড়িয়ে পড়েন এবং মামলায় পরাজিত হন। এর কিছুকাল পরেই তাঁর মৃত্যু ঘটে।

হিন্দু প্যাট্রিয়ট পত্রিকা কীভাবে বাংলার জাতীয় জাগরণে ভূমিকা রাখে?

হিন্দু প্যাট্রিয়ট পত্রিকা বাংলার নীলবিদ্রোহ, ব্রিটিশ শাসনের সমালোচনা এবং স্বাধীনচেতা সাংবাদিকতার মাধ্যমে বাংলার জাতীয় জাগরণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। এটি সাধারণ মানুষের অধিকার ও স্বাধীনতার পক্ষে সোচ্চার ছিল।

হিন্দু প্যাট্রিয়ট পত্রিকার সম্পাদক হিসেবে কৃষ্ণদাস পালের ভূমিকা কী ছিল?

হরিশচন্দ্র মুখোপাধ্যায়ের পর কৃষ্ণদাস পাল হিন্দু প্যাট্রিয়টের সম্পাদক হন। তিনি পত্রিকার নিরপেক্ষতা ও স্বৈরাচার বিরোধিতার ধারা বজায় রাখেন এবং বাংলার সাংবাদিকতায় গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখেন।


এই আর্টিকেলে আমরা মাধ্যমিক ইতিহাসের একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন “হিন্দু প্যাট্রিয়ট পত্রিকা কীভাবে নীল বিদ্রোহের মুখপত্রে পরিণত হয়েছিল?” নিয়ে আলোচনা করেছি। এই “হিন্দু প্যাট্রিয়ট পত্রিকা কীভাবে নীল বিদ্রোহের মুখপত্রে পরিণত হয়েছিল?” প্রশ্নটি মাধ্যমিক ইতিহাসের দ্বিতীয় অধ্যায় “সংস্কার – বৈশিষ্ট্য ও পর্যালোচনা” -এর একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন। এই প্রশ্নটি মাধ্যমিক পরীক্ষায় এবং চাকরির পরীক্ষায় প্রায়ই দেখা যায়। আশা করি এই আর্টিকেলটি আপনাদের জন্য উপকারী হয়েছে। আপনাদের কোনো প্রশ্ন বা অসুবিধা থাকলে, আমাদের সাথে টেলিগ্রামে যোগাযোগ করতে পারেন, আমরা উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করব। তাছাড়া, নিচে আমাদের এই পোস্টটি আপনার প্রিয়জনের সাথে শেয়ার করুন, যাদের এটি প্রয়োজন হতে পারে। ধন্যবাদ।

Please Share This Article

Related Posts

রাশিবিজ্ঞান-গড়, মধ্যমা, ওজাইভ, সংখ্যাগুরুমান-কষে দেখি 26.4-মাধ্যমিক গণিত

মাধ্যমিক গণিত – রাশিবিজ্ঞান: গড়, মধ্যমা, ওজাইভ, সংখ্যাগুরুমান – কষে দেখি 26.4

রাশিবিজ্ঞান-গড়, মধ্যমা, ওজাইভ, সংখ্যাগুরুমান-কষে দেখি 26.3-মাধ্যমিক গণিত

মাধ্যমিক গণিত – রাশিবিজ্ঞান: গড়, মধ্যমা, ওজাইভ, সংখ্যাগুরুমান – কষে দেখি 26.3

রাশিবিজ্ঞান-গড়, মধ্যমা, ওজাইভ, সংখ্যাগুরুমান - কষে দেখি 26.2-মাধ্যমিক গণিত

মাধ্যমিক গণিত – রাশিবিজ্ঞান: গড়, মধ্যমা, ওজাইভ, সংখ্যাগুরুমান – কষে দেখি 26.2

About The Author

Rahul

Tags

মন্তব্য করুন

SolutionWbbse

"SolutionWbbse" শিক্ষার্থীদের জন্য একটি অনলাইন অধ্যয়ন প্ল্যাটফর্ম। এখানে প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার প্রস্তুতি, মাধ্যমিক পরীক্ষার জন্য গাইডলাইন, এবং বিভিন্ন বিষয়ে পড়াশোনার সাহায্য প্রদান করা হয়। আমাদের মূল লক্ষ্য হলো ইন্টারনেটের মাধ্যমে সকল বিষয়ের শিক্ষণীয় উপকরণ সহজেই সকল শিক্ষার্থীর কাছে পৌঁছে দেওয়া।

Editor Picks

Madhyamik History Suggestion 2026 Wbbse – স্তম্ভ মেলাও

Madhyamik History Suggestion 2026 Wbbse – ঠিক বা ভুল নির্ণয়

Madhyamik History Suggestion 2026 Wbbse – একটি বাক্যে উত্তর দাও

Madhyamik History MCQ Suggestion 2026 Wbbse

মাধ্যমিক গণিত – রাশিবিজ্ঞান: গড়, মধ্যমা, ওজাইভ, সংখ্যাগুরুমান – কষে দেখি 26.4