এই আর্টিকেলে আমরা মাধ্যমিক ভৌতবিজ্ঞান বিষয়ের একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন — “হাইড্রোক্লোরিক অ্যাসিড (HCl) এবং হাইড্রোজেন ক্লোরাইড -এর মধ্যে পার্থক্য লেখো।” — নিয়ে আলোচনা করব। এই প্রশ্নটি মাধ্যমিক ভৌতবিজ্ঞানের অষ্টম অধ্যায় “পদার্থের ভৌত ও রাসায়নিক ধর্মসমূহ” -এর “পরীক্ষাগার ও রাসায়নিক শিল্পে অজৈব রসায়ন” অংশ থেকে নেওয়া হয়েছে। মাধ্যমিক পরীক্ষা এবং বিভিন্ন চাকরির পরীক্ষায় এই প্রশ্নটি প্রায়ই আসে, তাই এটি শিক্ষার্থীদের জন্য বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ।

হাইড্রোক্লোরিক অ্যাসিড (HCl) এবং হাইড্রোজেন ক্লোরাইড -এর মধ্যে পার্থক্য লেখো।
হাইড্রোক্লোরিক অ্যাসিড (HCl) এবং হাইড্রোজেন ক্লোরাইড -এর মধ্যে পার্থক্য হল –
হাইড্রোক্লোরিক অ্যাসিড | হাইড্রোজেন ক্লোরাইড |
বর্ণহীন হয়। | সবুজাভ হলুদ বর্ণের। |
সাধারণ অবস্থায় তরল। | সাধারণ অবস্থায় গ্যাসীয়। |
হাইড্রোক্লোরিক অ্যাসিড জলীয় দ্রবণে বিয়োজিত হয়ে H₃O⁺ ও Cl⁻ আয়ন উৎপন্ন করে। | গ্যাসীয় অবস্থায় হাইড্রোজেন ক্লোরাইড অণু হিসেবে অবস্থান করায় আয়নিত হয় না। |
আয়নের উপস্থিতির জন্য হাইড্রোক্লোরিক অ্যাসিড তড়িতের সুপরিবাহী ও এটি তীব্র তড়িৎবিশ্লেষ্য পদার্থ। | হাইড্রোজেন ক্লোরাইড তড়িৎ অবিশ্লেষ্য পদার্থ। |
হাইড্রোক্লোরিক অ্যাসিড ধ্রুবীয় ও তীব্র আম্লিকধর্মী। | হাইড্রোজেন ক্লোরাইডের আণ্বিক ধর্ম নেই। |
কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নোত্তর
হাইড্রোজেন ক্লোরাইড গ্যাস (HCl) জলে দ্রবীভূত করলে কী হয়?
হাইড্রোজেন ক্লোরাইড গ্যাস জলে দ্রবীভূত হলে তা হাইড্রোক্লোরিক অ্যাসিডে পরিণত হয়। এই প্রক্রিয়ায় HCl গ্যাসের অণুগুলি জলের সাথে বিক্রিয়া করে হাইড্রোনিয়াম আয়ন (H₃O⁺) এবং ক্লোরাইড আয়ন (Cl⁻) উৎপন্ন করে, যা দ্রবণটিকে আম্লিক ধর্ম ও তড়িৎ পরিবাহী করে তোলে।
HCl(g) + H₂O(l) → H₃O⁺(aq) + Cl⁻(aq)
হাইড্রোজেন ক্লোরাইড গ্যাসের কোনো ক্ষতিকর প্রভাব আছে কি?
হ্যাঁ, হাইড্রোজেন ক্লোরাইড গ্যাস শ্বাসনালী ও ফুসফুসের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর এবং উত্তেজক। বাতাসে এর উপস্থিতি শ্বাসকষ্ট, কাশি এবং চোখ, নাক ও গলা জ্বালাপোড়া সৃষ্টি করতে পারে। এটি একটি বিপজ্জনক গ্যাস।
হাইড্রোক্লোরিক অ্যাসিডকে শক্তিশালী অ্যাসিড বলা হয় কেন?
হাইড্রোক্লোরিক অ্যাসিড জলে সম্পূর্ণরূপে বা প্রায় সম্পূর্ণরূপে আয়নিত হয়ে যায় (H₃O⁺ ও Cl⁻ আয়ন উৎপন্ন করে)। যে অ্যাসিড জলে সম্পূর্ণরূপে আয়নিত হয়, তাকে শক্তিশালী অ্যাসিড বলে। এই কারণে এটি তীব্র আম্লিক ধর্ম প্রদর্শন করে এবং তড়িৎ এর সুপরিবাহী হয়।
হাইড্রোক্লোরিক অ্যাসিডের দৈনন্দিন জীবনে ব্যবহার কী?
হাইড্রোক্লোরিক অ্যাসিডের নানাবিধ ব্যবহার রয়েছে –
1. পরিষ্কারক হিসেবে – বাথরুম ও সিরামিকের মেঝে থেকে চুনের দাগ সরাতে।
2. খাদ্য শিল্পে – জিলাটিন প্রস্তুতিতে এবং বিভিন্ন খাদ্য উপাদানের pH নিয়ন্ত্রণে।
3. চর্মশিল্পে – চামড়া প্রক্রিয়াকরণে।
4. ল্যাবরেটরিতে – বিভিন্ন রাসায়নিক পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য একটি মানক অ্যাসিড হিসেবে।
“শুষ্ক HCl গ্যাস” বলতে কী বোঝায় এবং এটি কি লিটমাস পেপারের রং পরিবর্তন করতে পারে?
“শুষ্ক HCl গ্যাস” বলতে কোনো জলীয় বাষ্প বা আর্দ্রতা ছাড়া শুদ্ধ হাইড্রোজেন ক্লোরাইড গ্যাসকে বোঝায়। যেহেতু শুষ্ক HCl গ্যাসে H⁺ (প্রোটন) বা H₃O⁺ আয়ন থাকে না (এটি আয়নিত অবস্থায় নেই), তাই এটি লিটমাস পেপারের রং পরিবর্তন করতে পারে না। লিটমাস পেপারের রং পরিবর্তন করার জন্য H₃O⁺ আয়নের প্রয়োজন, যা কেবলমাত্র HCl গ্যাস জলের সংস্পর্শে এলে (অর্থাৎ হাইড্রোক্লোরিক অ্যাসিডে পরিণত হলে) উৎপন্ন হয়।
হাইড্রোজেন ক্লোরাইড গ্যাসকে তড়িৎ-অবিশ্লেষ্য বলা হয় কেন?
তড়িৎ-বিশ্লেষ্য হওয়ার জন্য বস্তুটিতে মুক্তভাবে চলাচলকারী আয়নের উপস্থিতি আবশ্যক। হাইড্রোজেন ক্লোরাইড গ্যাসীয় অবস্থায় আণবিক অণু (HCl) হিসেবে থাকে এবং এতে কোনো মুক্ত আয়ন নেই। তাই তড়িৎ প্রয়োগ করলে কোনো আয়ন সঞ্চালন হতে পারে না, ফলে এটি তড়িৎ প্রবাহ বহন করতে অক্ষম। এজন্য একে তড়িৎ-অবিশ্লেষ্য পদার্থ বলা হয়।
এই আর্টিকেলে আমরা মাধ্যমিক ভৌতবিজ্ঞান বিষয়ের একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন — হাইড্রোক্লোরিক অ্যাসিড (HCl) এবং হাইড্রোজেন ক্লোরাইড -এর মধ্যে পার্থক্য লেখো।” — নিয়ে আলোচনা করেছি। এই প্রশ্নটি মাধ্যমিক ভৌতবিজ্ঞানের অষ্টম অধ্যায় “পদার্থের ভৌত ও রাসায়নিক ধর্মসমূহ” -এর “পরীক্ষাগার ও রাসায়নিক শিল্পে অজৈব রসায়ন” অংশ থেকে নেওয়া হয়েছে। মাধ্যমিক পরীক্ষা এবং বিভিন্ন চাকরির পরীক্ষায় এই প্রশ্নটি প্রায়ই আসে, তাই এটি শিক্ষার্থীদের জন্য বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ। আশা করি এই আর্টিকেলটি আপনাদের জন্য উপকারী হয়েছে। আপনাদের কোনো প্রশ্ন বা অসুবিধা থাকলে, আমাদের সাথে টেলিগ্রামে যোগাযোগ করতে পারেন, আমরা উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করব। তাছাড়া, নিচে আমাদের এই পোস্টটি আপনার প্রিয়জনের সাথে শেয়ার করুন, যাদের এটি প্রয়োজন হতে পারে। ধন্যবাদ।
মন্তব্য করুন