এই আর্টিকেলে আমরা মাধ্যমিক ভূগোলের একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন — “জামশেদপুরে TISCO ইস্পাত কেন্দ্র গড়ে ওঠার কারণগুলি আলোচনা করো।” — নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করব।
এই প্রশ্নটি মাধ্যমিক ভূগোলের পঞ্চম অধ্যায় “ভারতের অর্থনৈতিক পরিবেশ” অংশের “ভারতের শিল্প” বিভাগ থেকে নেওয়া হয়েছে।
মাধ্যমিক পরীক্ষাসহ বিভিন্ন প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষায় এই প্রশ্নটি প্রায়শই আসে, তাই এটি শিক্ষার্থীদের জন্য বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ।

জামশেদপুরে TISCO ইস্পাত কেন্দ্র গড়ে ওঠার কারণগুলি আলোচনা করো।
অথবা, পূর্ব ভারতে একটি বেসরকারি ইস্পাত কেন্দ্র গড়ে ওঠার কারণগুলি আলোচনা করো।
1907 খ্রিস্টাব্দের 25 আগস্ট ভারতের জামশেদপুরে জামশেদজি টাটার উদ্যোগে TISCO বা Tata Iron and Steel Company স্থাপিত হয়।
অবস্থান – ঝাড়খণ্ডের সিংভূম জেলার জামশেদপুরে (সাকচি) সুবর্ণরেখা ও খরকাই নদীর সংগমস্থলে এই বেসরকারি বৃহত্তম ইস্পাত কারখানাটি স্থাপিত হয়। এটি লৌহ ও কয়লাখনির মধ্যবর্তী স্থানে অবস্থিত।

জামশেদপুরে TISCO ইস্পাত কেন্দ্র গড়ে ওঠার কারণ –
জামশেদপুরে TISCO ইস্পাত কেন্দ্র গড়ে ওঠার কারণগুলি হলো –
- কাঁচামালের সহজলভ্যতা –
- আকরিক লোহা – শিল্পকেন্দ্রটি ওড়িশার গুরুমহিষানী, বাদামপাহাড়, বোনাই, কেওনঝাড়, সুলাইপাত ও ময়ূরভঞ্জের মতো উৎস থেকে মাত্র 75-96 কিলোমিটার দূরত্বে এবং নোয়ামুন্ডি ও গুয়া থেকে প্রায় 130 কিলোমিটার দূরত্বে লৌহ আকরিক সহজেই পায়।
- কয়লা – ঝরিয়া ও রানিগঞ্জ কয়লাখনি থেকে 177 কিলোমিটারের মধ্যে উচ্চমানের কয়লা সহজে পাওয়া যায়।
- অন্যান্য খনিজ – বীরমিত্রপুর, গাংপুর ও হাতিবাড়ির মতো স্থান থেকে 177 কিলোমিটারের মধ্যেই চুনাপাথর, ডলোমাইট ও ম্যাঙ্গানিজের মতো সহায়ক খনিজ পাওয়া যায়।
- জল সরবরাহ – সুবর্ণরেখা নদী এবং ডিমনা জলাধার এই শিল্পের জন্য প্রয়োজনীয় জলের চাহিদা পূরণ করে।
- শক্তিসম্পদ – কারখানার নিজস্ব তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র ছাড়াও চন্দ্রপুরা ও বোকারো তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে পর্যাপ্ত বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হয়।
- শ্রমিকের প্রাপ্যতা – ঘনবসতিপূর্ণ ঝাড়খণ্ড রাজ্য এবং পার্শ্ববর্তী বিহার রাজ্য থেকে সুলভ মূল্যে প্রচুর পরিমাণে শ্রমিক পাওয়া যায়।
- উন্নত পরিবহণ ব্যবস্থা – এই ইস্পাত কেন্দ্রটি পূর্ব রেলওয়ে, দক্ষিণ-পূর্ব রেলওয়ে এবং জাতীয় সড়ক 33 (NH-33)-এর মাধ্যমে কলকাতা ও দেশের অন্যান্য প্রধান অঞ্চলের সাথে ভালোভাবে সংযুক্ত রয়েছে।
- বন্দর সুবিধা – কলকাতা ও হলদিয়া বন্দর মাত্র 250 কিলোমিটার দূরত্বে অবস্থিত হওয়ায় আমদানি-রপ্তানির জন্য অত্যন্ত সুবিধাজনক।
- বাজারের নৈকট্য – রাঁচি-হাতিয়া, জামশেদপুর নিজেই, দুর্গাপুর-আসানসোল এবং হুগলি শিল্পাঞ্চলের মতো সমৃদ্ধ ও বড় শিল্পাঞ্চল ও বাজারগুলির খুব কাছাকাছি অবস্থান বাজারজাতকরণে সুবিধা প্রদান করে।
জামশেদপুরে কাঁচামাল (লৌহ আকরিক, কয়লা, চুনাপাথর ইত্যাদি), জল, শক্তি, সুলভ শ্রমিক, উন্নত রেল ও সড়ক পরিবহণ, নিকটবর্তী বন্দর সুবিধা এবং বড় শিল্পাঞ্চল/বাজারের নৈকট্য – এই সমস্ত ভৌগোলিক ও অর্থনৈতিক সুবিধাগুলির একত্র সমাবেশই TISCO ইস্পাত কারখানা গড়ে উঠার মূল কারণ।
উৎপাদন – 2012-2013 খ্রিস্টাব্দে 8858 হাজার টন লৌহপিন্ড এবং 8130 হাজার টন ইস্পাত পিণ্ড উৎপাদিত হয়। 7941 হাজার টন বিক্রয়যোগ্য ইস্পাত উৎপাদিত হয়েছিল। (সূত্র – www.tatasteel.com)। এটি পৃথিবীর একাদশ বৃহত্তম ইস্পাত কোম্পানি এবং বর্তমান ভারতের দ্বিতীয় বৃহত্তম ইস্পাত কেন্দ্র।

কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নোত্তর
TISCO কী এবং এটি কবে প্রতিষ্ঠিত হয়?
TISCO (Tata Iron and Steel Company) হল ভারতের প্রথম বেসরকারি ইস্পাত কারখানা, যা 1907 সালের 25 আগস্ট জামশেদজি টাটার উদ্যোগে জামশেদপুরে প্রতিষ্ঠিত হয়।
TISCO -এর অবস্থান কোথায় এবং এটি কোন রাজ্যে অবস্থিত?
TISCO ঝাড়খণ্ড রাজ্যের সিংভূম জেলার জামশেদপুরে (সাকচি) অবস্থিত, যেখানে সুবর্ণরেখা ও খরকাই নদীর সংগমস্থল রয়েছে।
TISCO গড়ে ওঠার প্রধান কারণগুলি কী কী?
TISCO গড়ে ওঠার প্রধান কারণগুলি হলো –
1. কাঁচামালের সহজলভ্যতা – ওড়িশা ও ঝাড়খণ্ড থেকে লৌহ আকরিক, কয়লা, চুনাপাথর ও ম্যাঙ্গানিজ পাওয়া যায়।
2. জলের যোগান – সুবর্ণরেখা নদী ও ডিমনা জলাধার থেকে জল সরবরাহ হয়।
3. শক্তি সম্পদ – নিজস্ব তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র ও বোকারো তাপবিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে বিদ্যুৎ পাওয়া যায়।
4. পরিবহণ সুবিধা – রেলপথ (দক্ষিণ-পূর্ব রেলওয়ে) ও জাতীয় সড়ক (NH-33) দ্বারা সংযুক্ত।
5. বাজার সুবিধা – কলকাতা, দুর্গাপুর, রাঁচি-হাতিয়া শিল্পাঞ্চলের কাছাকাছি বাজার রয়েছে।
TISCO -তে ব্যবহৃত প্রধান কাঁচামালগুলি কোথা থেকে আসে?
TISCO-তে ব্যবহৃত প্রধান কাঁচামালগুলি নিম্নলিখিত উৎস থেকে সংগৃহীত হয় –
1. লৌহ আকরিক – ওড়িশার গুরুমহিষানী, বাদামপাহাড়, নোয়ামুন্ডি ও গুয়া।
2. কয়লা – ঝরিয়া ও রানিগঞ্জ কয়লাখনি থেকে।
3. চুনাপাথর ও ডলোমাইট – বীরমিত্রপুর, গাংপুর ও হাতিবাড়ি থেকে।
TISCO -এর জন্য জল সরবরাহ কীভাবে হয়?
সুবর্ণরেখা নদী ও ডিমনা জলাধার থেকে শিল্পের জন্য জল সরবরাহ করা হয়।
TISCO -এর পরিবহণ সুবিধা কী কী?
TISCO-তে ব্যবহৃত প্রধান কাঁচামালগুলি নিম্নলিখিত উৎস থেকে সংগৃহীত হয় –
1. রেলপথ – পূর্ব ও দক্ষিণ-পূর্ব রেলওয়ে দ্বারা সংযুক্ত।
2. সড়কপথ – জাতীয় সড়ক NH-33 দ্বারা কলকাতা ও অন্যান্য অঞ্চলের সঙ্গে যুক্ত।
3. বন্দর – কলকাতা ও হলদিয়া বন্দর 250 কিমি দূরে অবস্থিত।
TISCO -এর উৎপাদন ক্ষমতা কত?
2012-2013 অর্থবছরে TISCO-এর উৎপাদন ক্ষমতা ছিল –
1. লৌহপিণ্ড – 88.58 লক্ষ টন।
2. ইস্পাত পিণ্ড – 81.30 লক্ষ টন।
3. বিক্রয়যোগ্য ইস্পাত – 79.41 লক্ষ টন।
TISCO বর্তমানে বিশ্বে কততম বৃহত্তম ইস্পাত কোম্পানি?
TISCO বর্তমানে বিশ্বের 11তম বৃহত্তম ইস্পাত কোম্পানি এবং ভারতের দ্বিতীয় বৃহত্তম ইস্পাত উৎপাদক।
পূর্ব ভারতে বেসরকারি ইস্পাত শিল্প গড়ে ওঠার পেছনে প্রধান কারণ কী?
পূর্ব ভারতে বেসরকারি ইস্পাত শিল্প গড়ে ওঠার প্রধান কারণগুলি হলো –
1. প্রাকৃতিক সম্পদের সহজলভ্যতা (লোহা, কয়লা, ম্যাঙ্গানিজ)।
2. পরিবহণ ও বন্দর সুবিধা (কলকাতা বন্দর, রেল ও সড়ক সংযোগ)।
3. শ্রমিকের সহজপ্রাপ্যতা (ঝাড়খণ্ড, বিহার, ওড়িশা থেকে সুলভ শ্রমিক)।
4. বাজার সুবিধা (পূর্ব ও মধ্য ভারতের শিল্পাঞ্চল)।
TISCO -এর স্থাপনে জামশেদজি টাটার ভূমিকা কী ছিল?
জামশেদজি টাটা ভারতের শিল্পায়নের জন্য TISCO প্রতিষ্ঠা করেন এবং জামশেদপুর শহর গড়ে তোলেন, যা “স্টিল সিটি” নামে পরিচিত।
এই আর্টিকেলে আমরা মাধ্যমিক ভূগোলের একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন — “জামশেদপুরে TISCO ইস্পাত কেন্দ্র গড়ে ওঠার কারণগুলি আলোচনা করো।” — নিয়ে আলোচনা করেছি। এই প্রশ্নটি মাধ্যমিক ভূগোলের পঞ্চম অধ্যায় “ভারতের অর্থনৈতিক পরিবেশ”-এর “ভারতের শিল্প” অংশ থেকে নেওয়া হয়েছে। মাধ্যমিক পরীক্ষা এবং বিভিন্ন চাকরির পরীক্ষায় এই প্রশ্নটি প্রায়ই আসে, তাই এটি শিক্ষার্থীদের জন্য বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ।
আশা করি, এই আর্টিকেলটি আপনাদের জন্য উপকারী হয়েছে। আপনাদের কোনো প্রশ্ন বা অসুবিধা থাকলে আমাদের সঙ্গে টেলিগ্রামে যোগাযোগ করতে পারেন — আমরা যথাসাধ্য সাহায্য করার চেষ্টা করব। তাছাড়া, নিচে আমাদের এই পোস্টটি আপনার প্রিয়জনদের সঙ্গে শেয়ার করুন, যাদের এই তথ্যটি কাজে লাগতে পারে।
ধন্যবাদ।
মন্তব্য করুন