এই আর্টিকেলে আমরা মাধ্যমিক ভূগোলের একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন — “জনঘনত্ব অনুসারে ভারতবর্ষকে শ্রেণিবিভাগ করো।” — নিয়ে আলোচনা করব। এই প্রশ্নটি মাধ্যমিক ভূগোলের পঞ্চম অধ্যায় “ভারতের অর্থনৈতিক পরিবেশ” -এর “ভারতের জনসংখ্যা” অংশ থেকে নেওয়া হয়েছে। মাধ্যমিক পরীক্ষা এবং বিভিন্ন চাকরির পরীক্ষায় এই প্রশ্নটি প্রায়ই আসে, তাই এটি শিক্ষার্থীদের জন্য বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ।

জনঘনত্ব অনুসারে ভারতবর্ষকে শ্রেণিবিভাগ করো।
ভারতের বিভিন্ন জনঘনত্বযুক্ত অঞ্চল –
2011 খ্রিস্টাব্দের সর্বশেষ জনগণনা অনুযায়ী ভারতের জনঘনত্ব প্রতি বর্গকিমিতে 382 জন হলেও জনঘনত্ব বা বণ্টন সর্বত্র সমান নয়। গড় জনঘনত্বের ওপর ভিত্তি করে ভারতকে 5টি অঞ্চলে ভাগ করা যায়।
অতি নিবিড় বা অত্যধিক জনঘনত্ব এলাকা
- জনঘনত্ব – 800 জনের বেশি প্রতি বর্গকিমি
- রাজ্য ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল – বিহার, পশ্চিমবঙ্গ, কেরল, উত্তরপ্রদেশ, দিল্লি, চন্ডীগড়, লাক্ষাদ্বীপ, পন্ডিচেরি, দমন-দিউ
- কারণ –
- মধ্য ও নিম্ন গাঙ্গেয় সমভূমি, বদ্বীপ সমভূমির উর্বর মৃত্তিকা, উন্নত জলসেচের কারণে উন্নত কৃষি (2-4 বার ধান, পাট, ইক্ষু, তৈলবীজ, শাকসবজি, ফুল চাষ), অসংখ্য শিল্প ও শিল্পাঞ্চল (হুগলি, হলদিয়া, দুর্গাপুর, আসানসোল, পাট, বয়ন, পেট্রোরসায়ন, লৌহ-ইস্পাত শিল্প), উন্নত পরিবহণ ব্যবস্থা।
- কেরলের উপকূলীয় সমভূমিতে উন্নত কৃষি, সহ্যাদ্রির ঢালে বাগিচা ফসল।
- কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলগুলিতে প্রশাসনিক কেন্দ্র, বাণিজ্যকেন্দ্র, শিল্প ও দ্রুত নগরায়ণ।
নিবিড় বা অতিরিক্ত জন-ঘনত্বযুক্ত অংশ
- জনঘনত্ব – 401-800 জন প্রতি বর্গকিমি
- রাজ্য ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল – পাঞ্জাব, হরিয়ানা, তামিলনাড়ু, ঝাড়খণ্ড, দাদরা ও নগর হাভেলী
- কারণ –
- পাঞ্জাব, হরিয়ানায় উর্বর পলিযুক্ত সমভূমিতে নিবিড়ভাবে কৃষিকাজ, সবুজবিপ্লব, শ্বেতবিপ্লব এবং বস্ত্র, চিনি ও ইঞ্জিনিয়ারিং শিল্পের উন্নতি।
- তামিলনাড়ুর কাবেরী নদীর অববাহিকা ও উপকূলের উন্নত কৃষিকাজ ও শিল্প।
- ঝাড়খণ্ডের খনিজ সম্পদ ও শিল্পোন্নতি।
মধ্যম জন-ঘনত্বযুক্ত অঞ্চল
- জনঘনত্ব – 201-400 জন প্রতি বর্গকিমি
- রাজ্য – গোয়া, মহারাষ্ট্র, অন্ধ্রপ্রদেশ, গুজরাট, কর্ণাটক, ওড়িশা, মধ্যপ্রদেশ, রাজস্থান, অসম
- কারণ –
- মহারাষ্ট্র ও গুজরাট কৃষি ও শিল্পে উন্নত, কিন্তু এই দুই রাজ্যের বিস্তীর্ণ অংশে শুষ্ক মরুপ্রায়, মালভূমি বর্তমান।
- অসম ও ত্রিপুরাতে চা, আনারস, ধান, পাট চাষ, খনিজ তেল উত্তোলন ও পরিশোধন হয়ে থাকে।
- অন্ধ্রপ্রদেশ, কর্ণাটক, ওড়িশা ও মধ্যপ্রদেশে খনিজ দ্রব্য ও খনিজ দ্রব্য ভিত্তিক শিল্প ও মাঝারি কৃষি।
- গোয়া পর্যটন ও মৎস্য আহরণের জন্য বিখ্যাত।
বিরল বা স্বল্প জনঘনত্বযুক্ত অঞ্চল
- জনঘনত্ব – 101-200 জন প্রতি বর্গকিমি
- রাজ্য ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল – 2019 খ্রিস্টাব্দে নবগঠিত কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল লাদাখ, জম্মু-কাশ্মীর, হিমাচল প্রদেশ, উত্তরাখণ্ড, মেঘালয়, মণিপুর, নাগাল্যান্ড, ছত্তিশগড়
- কারণ –
- উত্তর-পূর্বের রাজ্যগুলিতে দুর্গম পার্বত্য অঞ্চল, অনুন্নত কৃষি, প্রতিকূল পরিবেশ, শীতল ও আর্দ্র জলবায়ু।
- উত্তরের রাজ্যগুলি হিমালয় পার্বত্য অঞ্চলের অন্তর্গত কৃষি ও শিল্পে অনুন্নত।
অতি বিরল জনঘনত্ব যুক্ত অঞ্চল
- জনঘনত্ব – 100 জনের কম প্রতি বর্গকিমি
- রাজ্য ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল – অরুণাচল প্রদেশ, মিজোরাম, সিকিম, আন্দামান ও নিকোবর দ্বীপপুঞ্জ
- কারণ –
- সিকিম, মিজোরাম ও অরুণাচল প্রদেশ পার্বত্য অঞ্চল অধ্যুষিত, কৃষি ও শিল্পে অনুন্নত, গভীর বনভূমি, শীতল আর্দ্র জলবায়ু।
- আন্দামান ও নিকোবর দ্বীপপুঞ্জ মূল ভূখণ্ড থেকে বিচ্ছিন্ন, উষ্ণ-আর্দ্র আবহাওয়া, অধিক বৃষ্টিপাত, গভীর অরণ্য, যোগাযোগ ব্যবস্থা অনগ্রসর।

কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নোত্তর
জনঘনত্ব বলতে কী বোঝায়?
জনঘনত্ব হলো কোনো অঞ্চলের প্রতি বর্গকিলোমিটার এলাকায় বসবাসকারী মানুষের সংখ্যা। এটি নিম্নলিখিত সূত্র দ্বারা নির্ণয় করা হয় –
জনঘনত্ব = মোট জনসংখ্যা/মোট ভৌগোলিক ক্ষেত্রফল (বর্গকিমি)।
2011 সালের জনগণনা অনুযায়ী ভারতের গড় জনঘনত্ব কত?
2011 সালের জনগণনা অনুসারে, ভারতের গড় জনঘনত্ব প্রতি বর্গকিলোমিটারে 382 জন।
জনঘনত্বের ভিত্তিতে ভারতকে কয়টি শ্রেণিতে ভাগ করা হয়েছে?
জনঘনত্বের ভিত্তিতে ভারতকে ৫টি শ্রেণিতে ভাগ করা হয়েছে –
1. অতিনিবিড় জনঘনত্বযুক্ত অঞ্চল (800 জনের বেশি/বর্গকিমি)।
2. নিবিড় জনঘনত্বযুক্ত অঞ্চল (401-800 জন/বর্গকিমি)।
3. মধ্যম জনঘনত্বযুক্ত অঞ্চল (201-400 জন/বর্গকিমি)।
4. বিরল জনঘনত্বযুক্ত অঞ্চল (101-200 জন/বর্গকিমি)।
5. অতিবিরল জনঘনত্বযুক্ত অঞ্চল (100 জনের কম/বর্গকিমি)।
কোন রাজ্যগুলিতে অতিনিবিড় জনঘনত্ব দেখা যায়?
বিহার, পশ্চিমবঙ্গ, কেরল, উত্তরপ্রদেশ, দিল্লি, চণ্ডীগড়, লাক্ষাদ্বীপ, পুদুচেরি, দমন ও দিউ রাজ্যগুলিতে অতিনিবিড় জনঘনত্ব দেখা যায়।
নিবিড় জনঘনত্বযুক্ত রাজ্যগুলি কী কী?
নিবিড় জনঘনত্বযুক্ত রাজ্যগুলি হলো – পাঞ্জাব, হরিয়ানা, তামিলনাড়ু, ঝাড়খণ্ড, দাদরা ও নগর হাভেলি।
মধ্যম জনঘনত্বযুক্ত রাজ্যগুলি কোনগুলি?
মধ্যম জনঘনত্বযুক্ত রাজ্যগুলি হলো – গোয়া, মহারাষ্ট্র, অন্ধ্রপ্রদেশ, গুজরাট, কর্ণাটক, ওড়িশা, মধ্যপ্রদেশ, রাজস্থান, অসম।
বিরল জনঘনত্বযুক্ত অঞ্চলগুলির নাম লেখো।
বিরল জনঘনত্বযুক্ত অঞ্চলগুলির নাম হলো – লাদাখ, জম্মু-কাশ্মীর, হিমাচল প্রদেশ, উত্তরাখণ্ড, মেঘালয়, মণিপুর, নাগাল্যান্ড, ছত্তিশগড়।
অতি বিরল জনঘনত্বযুক্ত রাজ্যগুলি কী কী?
অতি বিরল জনঘনত্বযুক্ত রাজ্যগুলি হলো – অরুণাচল প্রদেশ, মিজোরাম, সিকিম, আন্দামান ও নিকোবর দ্বীপপুঞ্জ।
জনঘনত্বের তারতম্যের প্রধান কারণ কী?
জনঘনত্বের তারতম্যের প্রধান কারণগুলি হলো –
1. প্রাকৃতিক কারণ – জলবায়ু, ভূমিরূপ, মৃত্তিকার উর্বরতা।
2. অর্থনৈতিক কারণ – কৃষি, শিল্প, বাণিজ্যের বিকাশ।
3. সামাজিক কারণ – নগরায়ণ, স্বাস্থ্য ও শিক্ষার সুবিধা।
পশ্চিমবঙ্গে জনঘনত্ব বেশি হওয়ার কারণ কী?
পশ্চিমবঙ্গে জনঘনত্ব বেশি হওয়ার কারণগুলি হলো –
1. গাঙ্গেয় বদ্বীপের উর্বর মৃত্তিকায় কৃষির উন্নতি।
2. কলকাতা ও হুগলি শিল্পাঞ্চলের প্রসার।
3. নদীপথ ও রেলপথের সুবিধা।
এই আর্টিকেলে আমরা মাধ্যমিক ভূগোলের একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন — “জনঘনত্ব অনুসারে ভারতবর্ষকে শ্রেণিবিভাগ করো।” — নিয়ে আলোচনা করেছি। এই প্রশ্নটি মাধ্যমিক ভূগোলের পঞ্চম অধ্যায় “ভারতের অর্থনৈতিক পরিবেশ” -এর “ভারতের জনসংখ্যা” অংশ থেকে নেওয়া হয়েছে। মাধ্যমিক পরীক্ষা এবং বিভিন্ন চাকরির পরীক্ষায় এই প্রশ্নটি প্রায়ই আসে, তাই এটি শিক্ষার্থীদের জন্য বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ। আশা করি এই আর্টিকেলটি আপনাদের জন্য উপকারী হয়েছে। আপনাদের কোনো প্রশ্ন বা অসুবিধা থাকলে, আমাদের সাথে টেলিগ্রামে যোগাযোগ করতে পারেন, আমরা উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করব। তাছাড়া, নিচে আমাদের এই পোস্টটি আপনার প্রিয়জনের সাথে শেয়ার করুন, যাদের এটি প্রয়োজন হতে পারে। ধন্যবাদ।
মন্তব্য করুন