এই আর্টিকেলে আমরা মাধ্যমিক ভূগোলের একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন — “জনঘনত্ব ও মানুষ-জমি অনুপাত বলতে কী বোঝো? জনঘনত্ব ও মানুষ-জমি অনুপাতের মধ্যে পার্থক্য লেখো।” — নিয়ে আলোচনা করব। এই প্রশ্নটি মাধ্যমিক ভূগোলের পঞ্চম অধ্যায় “ভারতের অর্থনৈতিক পরিবেশ” -এর “ভারতের জনসংখ্যা” অংশ থেকে নেওয়া হয়েছে। মাধ্যমিক পরীক্ষা এবং বিভিন্ন চাকরির পরীক্ষায় এই প্রশ্নটি প্রায়ই আসে, তাই এটি শিক্ষার্থীদের জন্য বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ।

জনঘনত্ব ও মানুষ-জমি অনুপাত বলতে কী বোঝো?
জনঘনত্ব – কোনো স্থান বা অঞ্চল বা দেশে বসবাসকারী মোট জনসংখ্যাকে ওই অঞ্চল বা দেশের মোট জমির পরিমাণ দিয়ে ভাগ করলে যে সংখ্যা পাওয়া যায়, তাকে জনঘনত্ব বলে। অর্থাৎ, প্রতি বর্গকিমিতে কতজন লোক বাস করে তার পরিসংখ্যানকে জনঘনত্ব বলে।
উদাহরণ – 2011 খ্রিস্টাব্দের আদমশুমারি অনুযায়ী ভারতের জনঘনত্ব 382 জন/বর্গকিমি।
মানুষ-জমি অনুপাত – প্রতি বর্গকিমি কার্যকরী জমিতে যত সংখ্যক মানুষ বাস করে, তাকে মানুষ জমি অনুপাত বলে। অর্থাৎ মানুষ-জমি অনুপাত হল সামগ্রিক জনসংখ্যা ও মোট কার্যকরী জমির অনুপাত।
জনঘনত্ব ও মানুষ-জমি অনুপাতের মধ্যে পার্থক্য লেখো।
জনঘনত্ব ও মানুষ-জমি অনুপাতের মধ্যে পার্থক্য –
বিষয় | জনঘনত্ব | মানুষ-জমি অনুপাত |
সংজ্ঞা | কোনো দেশের জনসংখ্যা ও মোট জমির অনুপাতকে বলা হয় জনঘনত্ব। | কোনো দেশের মোট জনসংখ্যা ও সেই দেশের মোট কার্যকারী জমির অনুপাতকে বলা হয় মানুষ-জমি অনুপাত। |
সম্পর্ক | এটি একটি পরিমাণগত সম্পর্ক। | এটি একটি গুণগত সম্পর্ক। |
ধারণা | জনঘনত্ব দ্বারা কোনো অঞ্চলের জনসংখ্যার বণ্টন সম্পর্কে ধারণা লাভ করা যায় না। | মানুষ-জমি অনুপাতে মোট কার্যকারী জমিকে বিবেচনা করা হয়। |
কাম্য সংখ্যার ধারণা লাভ | এটি দ্বারা কোনো দেশের কাম্য জনসংখ্যা সম্পর্কে ধারণা লাভ করা যায় না। | এটি দ্বারা কাম্য জনসংখ্যা সম্পর্কে ধারণা লাভ করা যায়। |
জমির গুণগত মান | এটি দ্বারা জমির গুণগত মান নির্ণয় করা যায় না। | এটি দ্বারা জমির গুণগত মান বিচার করা যায়। |
দেশের অর্থনৈতিক অবস্থা | জনঘনত্ব দ্বারা দেশের অর্থনৈতিক অবস্থা সম্পর্কে ধারণা লাভ করা যায় না। | দেশের অর্থনৈতিক অবস্থা এটি দ্বারা ধারণা করা না গেলেও জীবনযাত্রার মান সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যায়। |
কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নোত্তর
জনঘনত্ব বলতে কী বোঝায়?
কোনো অঞ্চলের মোট জনসংখ্যাকে সেই অঞ্চলের মোট ভূমির আয়তন (বর্গকিলোমিটার) দিয়ে ভাগ করলে যে মান পাওয়া যায়, তাকে জনঘনত্ব বলে।
মানুষ-জমি অনুপাত কী?
এটি একটি অঞ্চলের মোট জনসংখ্যা ও কার্যকরী জমির (চাষযোগ্য, বসবাসযোগ্য) অনুপাত। এটি জনঘনত্বের চেয়ে বেশি বাস্তবসম্মত ধারণা দেয়।
জনঘনত্ব বেশি হলে কী সমস্যা হয়?
জনঘনত্ব বেশি হলে যে সমস্যা হয় সেগুলি হলো –
1. প্রাকৃতিক সম্পদের চাপ (জল, খাদ্য, জ্বালানির অভাব)।
2. বাসস্থান সংকট (অট্টালিকা, বস্তির বিস্তার)।
3. পরিবেশ দূষণ (বায়ু, জল, শব্দ দূষণ বৃদ্ধি)।
4. অবকাঠামো সমস্যা (যানজট, স্বাস্থ্য পরিষেবার ঘাটতি)।
মানুষ-জমি অনুপাত কেন গুরুত্বপূর্ণ?
মানুষ-জমি অনুপাত গুরুত্বপূর্ণ কারণ –
1. এটি জমির উৎপাদনশীলতা ও মানুষের জীবনযাত্রার মান বোঝায়।
2. কৃষিনির্ভর দেশে (ভারত, বাংলাদেশ) এটি অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা নির্ধারণে সাহায্য করে।
3. শহর ও গ্রামীণ অঞ্চলের মধ্যে ভারসাম্য বিচার করা যায়।
কোন দেশে জনঘনত্ব সবচেয়ে বেশি?
1. মনাকো (~26,150 জন/বর্গকিমি)।
2. সিঙ্গাপুর (~8,358 জন/বর্গকিমি)।
3. বাংলাদেশ (~1,300 জন/বর্গকিমি, 2023)।
জনঘনত্ব কম হলে কী সুবিধা?
জনঘনত্ব কম হলে যে সুবিধাগুলি হবে সেগুলি হলো –
1. প্রাকৃতিক সম্পদের চাপ কম।
2. পরিবেশ দূষণ নিয়ন্ত্রণ।
3. জীবনযাত্রার মান উন্নত।
4. কৃষি ও বনাঞ্চল রক্ষা সহজ।
এই আর্টিকেলে আমরা মাধ্যমিক ভূগোলের একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন — “জনঘনত্ব ও মানুষ-জমি অনুপাত বলতে কী বোঝো? জনঘনত্ব ও মানুষ-জমি অনুপাতের মধ্যে পার্থক্য লেখো।” — নিয়ে আলোচনা করেছি। এই প্রশ্নটি মাধ্যমিক ভূগোলের পঞ্চম অধ্যায় “ভারতের অর্থনৈতিক পরিবেশ” -এর “ভারতের জনসংখ্যা” অংশ থেকে নেওয়া হয়েছে। মাধ্যমিক পরীক্ষা এবং বিভিন্ন চাকরির পরীক্ষায় এই প্রশ্নটি প্রায়ই আসে, তাই এটি শিক্ষার্থীদের জন্য বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ। আশা করি এই আর্টিকেলটি আপনাদের জন্য উপকারী হয়েছে। আপনাদের কোনো প্রশ্ন বা অসুবিধা থাকলে, আমাদের সাথে টেলিগ্রামে যোগাযোগ করতে পারেন, আমরা উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করব। তাছাড়া, নিচে আমাদের এই পোস্টটি আপনার প্রিয়জনের সাথে শেয়ার করুন, যাদের এটি প্রয়োজন হতে পারে। ধন্যবাদ।
মন্তব্য করুন