আজকের এই আর্টিকেলে আমরা ‘জনজীবনে সংবাদপত্রের ভূমিকা’ প্রবন্ধ রচনাটি নিয়ে আলোচনা করব। মাধ্যমিক বা স্কুল পরীক্ষায় এই রচনাটি প্রায়ই আসে এবং এটি একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রবন্ধ রচনা। একবার ভালোভাবে আয়ত্ত করলে ষষ্ঠ থেকে দ্বাদশ শ্রেণি—যেকোনো ক্লাসের পরীক্ষাতেই তোমরা এই রচনার প্রশ্নের উত্তর সহজেই লিখতে পারবে।

জনজীবনে সংবাদপত্রের ভূমিকা – প্রবন্ধ রচনা
ভূমিকা –
নিজেরা একা একা বা নিজেদের চারপাশের ক্ষুদ্র গণ্ডির মধ্যে আমরা কেউ-ই বেঁচে থাকতে পারি না। তাই আমাদের প্রয়োজন হয় বাকি পৃথিবীর খবর জানার। শহর, শহর পেরিয়ে রাজ্য, রাজ্য অতিক্রম করে দেশ এবং বিদেশের দৈনন্দিন জীবন, সামাজিক পরিস্থিতি, রাজনৈতিক হালহকিকত এবং সাংস্কৃতিক ঘটনাবলি-আমাদের সকলের মানসিক পুষ্টির জন্য জরুরি হয়ে ওঠে ‘সংবাদ’ বা ‘খবর’। তাই সংবাদপত্র জনগণের প্রতিদিনের সঙ্গে গভীরভাবে যুক্ত।
সংবাদপত্রের গোড়ার কথা –
একাদশ শতাব্দীতে চিনে এক প্রকারের সংবাদপত্র প্রকাশিত হত। ঔরঙ্গজেবের আমলে রাজকর্মচারীদের মধ্যে হাতে লেখা এক ধরনের খবরের কাগজ বিলি করা হত। ভারতবর্ষে 1744 খ্রিস্টাব্দে ইন্ডিয়া গেজেট প্রকাশিত হয়। এটিই ভারতের সর্বপ্রথম মুদ্রিত সংবাদপত্র বলে অনেকে মনে করেন। বাংলাদেশের (তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান) প্রথম সংবাদপত্রের নাম ছিল আজাদ।
সংবাদপত্রের বিবর্তন –
সভ্যতার বিকাশের সঙ্গে সঙ্গে সংবাদপত্রের গঠনগত রূপে বৈচিত্র্য এসেছে। দৈনিক, সাপ্তাহিক, অর্ধ-সাপ্তাহিক, পাক্ষিক, মাসিক, ত্রৈমাসিক ইত্যাদি বিভিন্ন ধরনের পত্রিকা এখন প্রকাশিত হয়ে থাকে। এইসকল পত্রপত্রিকায় দৈনন্দিন খবর পরিবেশনের পাশাপাশি বিশ্বের রাজনীতি, সমাজনীতি, জ্ঞান-বিজ্ঞান, ব্যাবসাবাণিজ্য, সাহিত্য, শিল্পকলা এবং বিনোদনমূলক বিষয়ও আলোচিত হয়।
প্রয়োজনীয়তা –
যুগে যুগে সংবাদপত্রের দায়িত্ব ও ভূমিকা বৃদ্ধি পাচ্ছে। এর প্রতিবাদী ভাষা বিশ্বের যে-কোনো অঞ্চলের, যে-কোনো সমস্যার বিরুদ্ধে গর্জে ওঠে। জ্ঞান-বিজ্ঞানের প্রসারেও এর ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ। ‘রয়টার’ নামের সংবাদ সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান পৃথিবীর সর্বত্র শাখা বিস্তার করেছে। এই জাতীয় সংস্থা থেকেই সংবাদ কিনে সেগুলি প্রকাশ করতে হয়। অন্যান্য প্রতিষ্ঠানগুলির মধ্যে এএফপি, এপি, তাস গুরুত্বপূর্ণ। খবরের কাগজ হচ্ছে গণতান্ত্রিক বিশ্বের জনমত গঠনের অন্যতম মাধ্যম। জনগণের আশা-আকাঙ্ক্ষা, চাহিদা, অভাব-অভিযোগ মূর্ত হয়ে ওঠে সংবাদপত্রের পাতায়, ফলে সরকার এগুলি সম্পর্কে অবহিত হন। ব্যাবসাবাণিজ্যের ক্ষেত্রেও সংবাদপত্রের অবদান অনস্বীকার্য। সংবাদপত্রের মাধ্যমেই কর্মহীন লোকেরা নিয়োগ বিজ্ঞপ্তির সন্ধান পান, ক্রীড়াপ্রেমীরা জানতে পারেন দেশ-বিদেশের খেলাধুলার বিবিধ তথ্য।
সংবাদপত্রের দায়িত্ব –
বলা হয়, Newspaper is the people’s parliament always in sessions, তাই সংবাদপত্রের একমাত্র লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য হল সদাসর্বদা নিরপেক্ষভাবে সংবাদ পরিবেশেন করা। সংবাদপত্র যত বেশি নিরপেক্ষ হবে, ততই তা দেশ ও জাতির পক্ষে মঙ্গলজনক।
আধুনিক জীবনে সংবাদপত্রের ভূমিকা –
বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির উন্নতি, শিল্প-সংস্কৃতির বিকাশ, রাজনৈতিক তাপ-উত্তাপের বৃদ্ধি পাওয়া-মোটকথা সভ্যতা যত উন্নত হয়েছে তথ্য ও সংবাদের প্রয়োজনীয়তা তত বেড়েছে। সংবাদের বিকৃতি নয়, বরং দেশদেশান্তরের খবরের সারসত্য যদি অবিকৃতভাবে হাজির করা যায়, তাহলেই জগৎ ও জাতির মঙ্গল।
শিক্ষাবিস্তারে সংবাদপত্রের ভূমিকা –
সংবাদপত্র নানান নিত্যনতুন আবিষ্কার, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির নানাবিধ খবরাখবর, শিল্প-সংস্কৃতির হালহকিকতকে তুলে ধরে। ফলে সাধারণের মধ্যে বিজ্ঞানচেতনা, সাংস্কৃতিক বোধের প্রসার ঘটে। সংবাদপত্রের বিভিন্ন কলামে, যেমন – সম্পাদকীয় কিংবা অন্যত্র বর্তমান সময় ও সমাজ সংক্রান্ত বিষয়কে ঘিরে বিশ্লেষণী নিবন্ধও প্রকাশিত হয়। এর ফলে চিন্তা ও বিচারের ক্ষেত্রও প্রসারিত হয়।
উপসংহার –
খবর শুধু তথ্য দেয় না, মানুষকে অন্যভাবে চিন্তা করতেও উদবুদ্ধ করে। জনগণ তার চারপাশের প্রতিবেশীকে চিনে নেয় এবং সমাজসচেতন হয়ে ওঠে। দেশকালের ক্ষয়ক্ষতি, উন্নতি-সবেরই চালচিত্র তার সামনে স্পষ্ট করে তুলে ধরে সংবাদপত্র। তাই সংশোধন ও সংস্কারের লক্ষ্য সে বুঝে নিতে পারে। এইভাবেই জনজীবনে সংবাদপত্র গুরুত্বপূর্ণ ও অপরিহার্য হয়ে ওঠে।
আরও পড়ুন – রক্তদান জীবনদান – প্রবন্ধ রচনা
আজকের এই আর্টিকেলে আমরা ‘জনজীবনে সংবাদপত্রের ভূমিকা’ প্রবন্ধ রচনাটি নিয়ে আলোচনা করেছি। মাধ্যমিক বা স্কুল পরীক্ষায় ‘জনজীবনে সংবাদপত্রের ভূমিকা’ রচনাটি প্রায়ই আসে এবং এটি একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রবন্ধ রচনা।
আশা করি এই আর্টিকেলটি আপনাদের জন্য উপকারী হয়েছে। আপনাদের কোনো প্রশ্ন বা অসুবিধা থাকলে, আমাদের সাথে টেলিগ্রামে যোগাযোগ করতে পারেন, আমরা উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করব। তাছাড়া, নিচে আমাদের এই পোস্টটি আপনার প্রিয়জনের সাথে শেয়ার করুন, যাদের এটি প্রয়োজন হতে পারে। ধন্যবাদ।
মন্তব্য করুন