এই আর্টিকেলে আমরা মাধ্যমিক ভৌতবিজ্ঞান বিষয়ের একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন — “যে জৈব যৌগের বৈশিষ্ট্যগুলি আলোচনা করো।” — নিয়ে আলোচনা করব। এই প্রশ্নটি মাধ্যমিক ভৌতবিজ্ঞানের অষ্টম অধ্যায় “পদার্থের ভৌত ও রাসায়নিক ধর্মসমূহ” -এর “জৈব রসায়ন” অংশ থেকে নেওয়া হয়েছে। মাধ্যমিক পরীক্ষা এবং বিভিন্ন চাকরির পরীক্ষায় এই প্রশ্নটি প্রায়ই আসে, তাই এটি শিক্ষার্থীদের জন্য বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ।

যে জৈব যৌগের বৈশিষ্ট্যগুলি আলোচনা করো।
জৈব যৌগের বৈশিষ্ট্য –
- জৈব যৌগসমূহের প্রত্যেকটি অণুতে কার্বন থাকে। কার্বন পরমাণু O, H, S, N প্রভৃতি মৌলের পরমাণুর সঙ্গে যুক্ত হয়ে শ্বেতসার, প্রোটিন এবং স্নেহজাতীয় অসংখ্য অণু গঠন করে থাকে।
- জৈব যৌগসমূহ আবশ্যিকভাবে সমযোজী হয়। তবে বিভিন্ন প্রকার এবং ছোটো ও বড়ো অণু গঠনের কারণে অনেক জৈব অণু তড়িদ্যোজী যৌগের কিছুকিছু ধর্ম ও প্রকৃতি মেনে চলে।
- জৈব যৌগসমূহের গলনাঙ্ক এবং স্ফুটনাঙ্ক যথেষ্ট কম হয়ে থাকে। এদের অনেকগুলি আবার উদ্বায়ী।
- অধিকাংশ জৈব যৌগ জলে অদ্রাব্য। এগুলি ইথাইল অ্যালকোহল, বেঞ্জিন প্রভৃতি জৈব দ্রাবকে দ্রাব্য। তবে চিনির মতো জৈব যৌগগুলি জলে দ্রাব্য।
- জৈব যৌগসমূহ তড়িৎ-অবিশ্লেষ্য। পৃথকভাবে কার্বন পরমাণু আয়নিত হয় না।
- জৈব যৌগের সমাবয়বতা ধর্ম দেখা যায়। অর্থাৎ, একই আণবিক সংকেতবিশিষ্ট ভিন্ন ধর্মের একাধিক যৌগ দেখা যায়।
কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নোত্তর
জৈব যৌগ বলতে কী বোঝায়?
জৈব যৌগ হল কার্বনের যৌগ (সাধারণত হাইড্রোজেন, অক্সিজেন, নাইট্রোজেন, সালফার, হ্যালোজেন ইত্যাদির সাথে) যা প্রধানত জীবন্ত বা এককালের জীবন্ত বস্তু থেকে পাওয়া যায়। এদের মূল কাঠামো গঠন করে কার্বন পরমাণু।
জৈব যৌগের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য কী?
জৈব যৌগের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য হল এর প্রতিটি অণুতেই কার্বন পরমাণু থাকে যা অন্যান্য কার্বন বা অন্যান্য মৌলের পরমাণুর সাথে সমযোজী বন্ধনে যুক্ত হয়ে অসংখ্য ও জটিল অণু গঠন করতে পারে।
কেন অধিকাংশ জৈব যৌগ সমযোজী হয়?
কার্বন পরমাণুর পরমাণু ক্রমাঙ্ক 6, যার যোজ্যতা শেলে 4টি ইলেকট্রন থাকে। এটি ধাতু ও অধাতু উভয়ের সাথে ইলেকট্রন শেয়ার করে স্থিতিশীল অক্টেট গঠন করতে পছন্দ করে, তাই এটি প্রধানত সমযোজী বন্ধন গঠন করে। আয়নিক বন্ধন গঠন করে না।
জৈব যৌগগুলোর গলনাঙ্ক ও স্ফুটনাঙ্ক সাধারণত কম হয় কেন?
জৈব যৌগগুলো সমযোজী অণু হিসেবে থাকে। এদের অণুগুলোর মধ্যে দুর্বল ভ্যান ডার ওয়ালস বল বা হাইড্রোজেন বন্ধনের মতো আন্তঃআণবিক বল কাজ করে। এই দুর্বল বল ভাঙার জন্য কম শক্তির প্রয়োজন হয়, ফলে তাদের গলনাঙ্ক ও স্ফুটনাঙ্ক কম হয়। অনেক জৈব যৌগ এই কম শক্তির কারণেই স্বাভাবিক তাপমাত্রায় বাষ্পীভূত হতে পারে, অর্থাৎ উদ্বায়ী হয়।
কেন অধিকাংশ জৈব যৌগ জলে দ্রবণীয় নয়?
জল একটি মেরু দ্রাবক, যেখানে আয়নিক ও মেরু যৌগগুলি ভালো দ্রবীভূত হয়। বেশিরভাগ জৈব যৌগ অমেরু বা কম মেরুযুক্ত হয়। “সমান সমানকে দ্রবীভূত করে” এই নীতির কারণে, অমেরু জৈব যৌগগুলি মেরু জল অণুগুলোর সাথে কার্যকরী মিথস্ক্রিয়া করতে পারে না, ফলে এরা জলে অদ্রবণীয় হয়। তবে, ইথার বা বেনজিনের মতো অমেরু জৈব দ্রাবকে এরা ভালো দ্রবীভূত হয়।
জৈব যৌগগুলি সাধারণত তড়িৎ-অবিশ্লেষ্য হয় কেন?
তড়িৎ পরিবহনের জন্য কোনো মাধ্যমে মুক্ত আয়নের উপস্থিতি থাকা আবশ্যক। যেহেতু জৈব যৌগগুলি সমযোজী বন্ধনে আবদ্ধ থাকে এবং জলে দ্রবীভূত বা গলিত অবস্থায় আয়নে বিচ্ছিন্ন হয় না (বা খুব অল্প হয়), তাই এগুলো তড়িৎ পরিবহন করতে পারে না। অর্থাৎ, এগুলো তড়িৎ-অবিশ্লেষ্য।
জৈব রসায়নে সমাবয়বতা (Isomerism) বলতে কী বোঝায়?
সমাবয়বতা হলো একটি গুরুত্বপূর্ণ ধর্ম, যেখানে একই আণবিক সংকেত (অর্থাৎ একই সংখ্যক পরমাণু) বিশিষ্ট দুই বা ততোধিক ভিন্ন যৌগ পরমাণুর গঠন বা বিন্যাসের ভিন্নতার কারণে ভিন্ন ভিন্ন ভৌত ও রাসায়নিক ধর্ম প্রদর্শন করে। যেমন – C₂H₆O আণবিক সংকেতবিশিষ্ট ইথাইল অ্যালকোহল ও ডাইমিথাইল ইথার দুটি ভিন্ন যৌগ।
এই আর্টিকেলে আমরা মাধ্যমিক ভৌতবিজ্ঞান বিষয়ের একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন — “যে জৈব যৌগের বৈশিষ্ট্যগুলি আলোচনা করো।” — নিয়ে আলোচনা করেছি। এই প্রশ্নটি মাধ্যমিক ভৌতবিজ্ঞানের অষ্টম অধ্যায় “পদার্থের ভৌত ও রাসায়নিক ধর্মসমূহ” -এর “জৈব রসায়ন” অংশ থেকে নেওয়া হয়েছে। মাধ্যমিক পরীক্ষা এবং বিভিন্ন চাকরির পরীক্ষায় এই প্রশ্নটি প্রায়ই আসে, তাই এটি শিক্ষার্থীদের জন্য বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ। আশা করি এই আর্টিকেলটি আপনাদের জন্য উপকারী হয়েছে। আপনাদের কোনো প্রশ্ন বা অসুবিধা থাকলে, আমাদের সাথে টেলিগ্রামে যোগাযোগ করতে পারেন, আমরা উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করব। তাছাড়া, নিচে আমাদের এই পোস্টটি আপনার প্রিয়জনের সাথে শেয়ার করুন, যাদের এটি প্রয়োজন হতে পারে। ধন্যবাদ।
মন্তব্য করুন