এই আর্টিকেলে আমরা মাধ্যমিক ভৌতবিজ্ঞান বিষয়ের একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন — “জৈব এবং অজৈব যৌগের মধ্যে পার্থক্য লেখো। অথবা, জৈব ও অজৈব যৌগের তিনটি ধর্মের তুলনা করো।” — নিয়ে আলোচনা করব। এই প্রশ্নটি মাধ্যমিক ভৌতবিজ্ঞানের অষ্টম অধ্যায় “পদার্থের ভৌত ও রাসায়নিক ধর্মসমূহ” -এর “জৈব রসায়ন” অংশ থেকে নেওয়া হয়েছে। মাধ্যমিক পরীক্ষা এবং বিভিন্ন চাকরির পরীক্ষায় এই প্রশ্নটি প্রায়ই আসে, তাই এটি শিক্ষার্থীদের জন্য বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ।
জৈব এবং অজৈব যৌগের মধ্যে পার্থক্য লেখো।
অথবা, জৈব ও অজৈব যৌগের তিনটি ধর্মের তুলনা করো।
জৈব এবং অজৈব যৌগের মধ্যে পার্থক্য –
| জৈব যৌগ | অজৈব যৌগ |
| প্রত্যেকটি জৈব যৌগে অবশ্যই কার্বন পরমাণু থাকবে। | অজৈব যৌগগুলিতে কার্বনের মতো নির্দিষ্ট কোনো মৌলের উপস্থিতি দেখা যায় না। |
| জৈব যৌগগুলি প্রধানত সমযোজী। | এগুলি সাধারণত আয়নীয় বা অসমযোজী। |
| সমযোজী যৌগ বলে বেশিরভাগই উদ্বায়ী। একারণে জৈব যৌগগুলির গলনাঙ্ক এবং স্ফুটনাঙ্ক কম। | অজৈব যৌগগুলি আয়নীয় বা অসমযোজ্যতার দ্বারা গঠিত বলে এরা অনুদ্বায়ী। এজন্য অজৈব যৌগের গলনাঙ্ক এবং স্ফুটনাঙ্ক সাধারণত বেশি হয়। |
| জৈব যৌগ জলে সাধারণত অদ্রবণীয়। কিন্তু জৈব দ্রাবকে (যেমন – অ্যালকোহল, বেঞ্জিন প্রভৃতি) দ্রবণীয়। | এগুলি জলে দ্রাব্য কিন্তু জৈব দ্রাবকে সাধারণত অদ্রাব্য। |
| তড়িদবিশ্লেষ্য নয়। গলিত বা দ্রবীভূত অবস্থায় তড়িৎ পরিবহন করে না। | তড়িদবিশ্লেষ্য। গলিত বা জলে দ্রবীভূত অবস্থায় তড়িৎ পরিবহন করে। |
| বেশি সংখ্যক জৈবযৌগ সমাবয়বতা ধর্ম দেখায়। | খুব কম সংখ্যক অজৈব যৌগ সমাবয়বতা ধর্ম দেখায়। |
কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নোত্তর
জৈব ও অজৈব যৌগের সবচেয়ে মৌলিক পার্থক্য কী?
সবচেয়ে মৌলিক পার্থক্য হলো মৌলগত উপাদান। প্রায় সকল জৈব যৌগে কার্বন পরমাণু অবশ্যই থাকে এবং এগুলি প্রধানত সমযোজী বন্ধন দ্বারা গঠিত। অন্যদিকে, অজৈব যৌগে কার্বনের মতো কোনো নির্দিষ্ট মৌল থাকতে হবে না এবং এগুলি সাধারণত আয়নীয় বন্ধন দ্বারা গঠিত হয়।
কেন জৈব যৌগের গলনাঙ্ক ও স্ফুটনাঙ্ক অজৈব যৌগের তুলনায় কম হয়?
জৈব যৌগগুলি সমযোজী এবং সাধারণত অণু হিসেবে থাকে। এই অণুগুলির মধ্যে আন্তঃআণবিক আকর্ষণ বল দুর্বল হওয়ায় এগুলি সহজে গলে বা বাষ্পে পরিণত হয়। অন্যদিকে, অজৈব যৌগগুলি প্রায়শই আয়নীয় কেলাস এবং এগুলির মধ্যে ইলেক্ট্রোস্ট্যাটিক আকর্ষণ বল (আয়নীয় বন্ধন) অত্যন্ত শক্তিশালী হওয়ায় এদের গলতে বা বাষ্পীভূত হতে অনেক বেশি তাপশক্তির প্রয়োজন হয়।
জৈব যৌগ জলে দ্রবণীয় হয় না কেন?
জৈব যৌগগুলি সাধারণত অ-ধ্রুবীয় (Non-polar) বা কম ধ্রুবীয় (Less polar) প্রকৃতির হয়। কিন্তু জল একটি অত্যন্ত ধ্রুবীয় (Highly polar) দ্রাবক। “Like dissolves like” বা “একই ধরনের পদার্থ একে অপরকে দ্রবীভূত করে” — এই নিয়ম অনুযায়ী অ-ধ্রুবীয় জৈব যৌগ ধ্রুবীয় জলে দ্রবীভূত হতে পারে না। তবে, এরা তাদের মতো অ-ধ্রুবীয় জৈব দ্রাবক যেমন বেঞ্জিন বা ক্লোরোফর্মে সহজে দ্রবীভূত হয়।
কোন ধরনের যৌগ তড়িৎ পরিবহন করে এবং কেন?
অজৈব যৌগগুলি (বিশেষ করে আয়নীয় যৌগ যেমন – NaCl) গলিত বা জলে দ্রবীভূত অবস্থায় তড়িৎ পরিবহন করতে পারে। কারণ, এই অবস্থায় তারা মুক্ত আয়নে ভেঙে যায় এবং এই আয়নগুলো তড়িৎ পরিবহনের বাহক হিসেবে কাজ করে। বিপরীতে, জৈব যৌগগুলি সমযোজী বন্ধন দ্বারা গঠিত হওয়ায় দ্রবীভূত বা গলিত অবস্থায়ও আয়ন উৎপন্ন করে না, তাই এরা তড়িৎ পরিবহন করতে পারে না।
“সমাবয়বতা” বলতে কী বোঝায় এবং এটি প্রধানত কোন যৌগে দেখা যায়?
সমাবয়বতা (Isomerism) হলো এমন একটি বৈশিষ্ট্য যেখানে একই আণবিক সংকেত (Molecular formula) বিশিষ্ট ভিন্ন ভিন্ন যৌগ ভিন্ন গঠন ও ধর্ম প্রদর্শন করে। এটি প্রধানত জৈব যৌগে বেশি দেখা যায়, কারণ কার্বন পরমাণু দীর্ঘ শৃঙ্খল ও শাখা-প্রশাখা তৈরি করতে সক্ষম। অজৈব যৌগে এই ধর্ম খুবই সীমিত।
এই আর্টিকেলে আমরা মাধ্যমিক ভৌতবিজ্ঞান বিষয়ের একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন — “জৈব এবং অজৈব যৌগের মধ্যে পার্থক্য লেখো। অথবা, জৈব ও অজৈব যৌগের তিনটি ধর্মের তুলনা করো।” — নিয়ে আলোচনা করেছি। এই প্রশ্নটি মাধ্যমিক ভৌতবিজ্ঞানের অষ্টম অধ্যায় “পদার্থের ভৌত ও রাসায়নিক ধর্মসমূহ” -এর “জৈব রসায়ন” অংশ থেকে নেওয়া হয়েছে। মাধ্যমিক পরীক্ষা এবং বিভিন্ন চাকরির পরীক্ষায় এই প্রশ্নটি প্রায়ই আসে, তাই এটি শিক্ষার্থীদের জন্য বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ। আশা করি এই আর্টিকেলটি আপনাদের জন্য উপকারী হয়েছে। আপনাদের কোনো প্রশ্ন বা অসুবিধা থাকলে, আমাদের সাথে টেলিগ্রামে যোগাযোগ করতে পারেন, আমরা উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করব। তাছাড়া, নিচে আমাদের এই পোস্টটি আপনার প্রিয়জনের সাথে শেয়ার করুন, যাদের এটি প্রয়োজন হতে পারে। ধন্যবাদ।
মন্তব্য করুন