এই আর্টিকেলে আমরা মাধ্যমিক ভূগোলের একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন — “জনসংখ্যা বৃদ্ধি ও ধারণযোগ্য উন্নয়নের মধ্যে সম্পর্ক লেখো।” — নিয়ে আলোচনা করব। এই প্রশ্নটি মাধ্যমিক ভূগোলের পঞ্চম অধ্যায় “ভারতের অর্থনৈতিক পরিবেশ” -এর “ভারতের জনসংখ্যা” অংশ থেকে নেওয়া হয়েছে। মাধ্যমিক পরীক্ষা এবং বিভিন্ন চাকরির পরীক্ষায় এই প্রশ্নটি প্রায়ই আসে, তাই এটি শিক্ষার্থীদের জন্য বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ।

জনসংখ্যা বৃদ্ধি ও ধারণযোগ্য উন্নয়নের মধ্যে সম্পর্ক লেখো।
পরিবেশবিদ এভা বেলফোর প্রথম ‘Sustainable Develapment’ শব্দটি ব্যবহার করেন। এর বাংলা অর্থ ধারণযোগ্য উন্নয়ন বা স্থিতিশীল উন্নয়ন।
ধারণযোগ্য উন্নয়ন বা স্থিতিশীল উন্নয়ন সম্পর্কে ধারণা – নিজেদের সুস্থভাবে বেঁচে থাকার স্বার্থে পরিবেশকে অক্ষুণ্ণ রেখে সামঞ্জস্যপূর্ণ এক দীর্ঘমেয়াদি মানব উন্নয়ন ব্যবস্থা হল ধারণযোগ্য উন্নয়ন। অর্থাৎ যে উন্নয়ন ব্যবস্থার মাধ্যমে প্রাকৃতিক পরিবেশের ভারসাম্য অক্ষুণ্ণ রেখে দেশ ও দশের সার্বিক মঙ্গল করা হয়, তাকে স্থিতিশীল উন্নয়ন বা ধারণযোগ্য উন্নয়ন বলে।
ধারণযোগ্য উন্নয়ন বা স্থিতিশীল উন্নয়ন -এর মধ্যে সম্পর্কের ব্যাখ্যা – জনসংখ্যা বৃদ্ধির প্রাথমিক অবস্থায় মানুষ তার কায়িক শ্রম, প্রযুক্তি, বুদ্ধিমত্তার সাহায্যে সম্পদকে ব্যবহার করতে পারে। ফলে জনসংখ্যার পরিপ্রেক্ষিতে সম্পদ উৎপাদনের হার বেশি থাকে, ফলে অর্থনৈতিক ও আর্থ-সামাজিক উন্নতি ঘটে। তবে জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার সম্পদ উৎপাদন বৃদ্ধির হারকে অতিক্রম করে গেলে শ্রমশক্তি উদ্বৃত্ত হয়, শ্রমের অপচয় হয়। জমির ধারণক্ষমতার সঙ্গে সম্পদ উৎপাদনের নিবিড় সম্পর্ক আছে। অর্থাৎ জমির ধারণক্ষমতার বেশি সম্পদ উৎপাদন করলে শ্রমশক্তির অপচয় হয়, সম্পদ বিনষ্ট হয়। এক্ষেত্রে ধারণযোগ্য উন্নয়নের ধারণার জন্ম হয়। এই ধারণায় বলা হয়েছে, স্বল্প জন্মহার ও মৃত্যুহার -এর মাধ্যমে পৃথিবীর জনসংখ্যায় ভারসাম্য বজায় থাকবে। সেক্ষেত্রে জনসংখ্যার অনুপাতে সম্পদ সৃষ্টি হলে কাম্য জনসংখ্যার সৃষ্টি হবে। ফলে দেশে জীবনযাত্রার মান উন্নত হবে, বেকারত্ব থাকবে না, দেশের মানুষ যথার্থ পরিমাণ জমিতে সম্পদ উৎপাদন করতে পারবে। সম্পদের বিনষ্ট হবে না এবং জনসংখ্যা বৃদ্ধি না ঘটলে দেশে দুর্ভিক্ষ, মহামারি হবে না।
কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নোত্তর
ধারণযোগ্য উন্নয়ন (Sustainable Development) কি?
ধারণযোগ্য উন্নয়ন হল এমন একটি উন্নয়ন প্রক্রিয়া যেখানে বর্তমান প্রজন্মের চাহিদা মেটানো হয় ভবিষ্যৎ প্রজন্মের চাহিদা পূরণের ক্ষমতা ক্ষুণ্ন না করে। এটি পরিবেশের ভারসাম্য বজায় রেখে অর্থনৈতিক ও সামাজিক উন্নয়ন নিশ্চিত করে।
জনসংখ্যা বৃদ্ধি ও ধারণযোগ্য উন্নয়নের মধ্যে সম্পর্ক কী?
জনসংখ্যা বৃদ্ধি ও ধারণযোগ্য উন্নয়নের মধ্যে সম্পর্কগুলি হলো –
1. ইতিবাচক সম্পর্ক – সীমিত জনসংখ্যা বৃদ্ধি শ্রমশক্তি বাড়ায়, যা সম্পদ উৎপাদনে সাহায্য করে এবং অর্থনৈতিক উন্নয়ন ঘটায়।
2. নেতিবাচক সম্পর্ক – অত্যধিক জনসংখ্যা বৃদ্ধি সম্পদের ওপর চাপ সৃষ্টি করে, পরিবেশের ক্ষতি করে এবং ধারণযোগ্য উন্নয়নকে বাধাগ্রস্ত করে।
জনসংখ্যা বৃদ্ধি কীভাবে ধারণযোগ্য উন্নয়নে প্রভাব ফেলে?
যদি জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার সম্পদ উৎপাদনের হারের চেয়ে কম হয়, তাহলে অর্থনৈতিক উন্নয়ন ঘটে। যদি জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার সম্পদ উৎপাদনের হারের চেয়ে বেশি হয়, তাহলে সম্পদের ওপর চাপ পড়ে, বেকারত্ব বাড়ে এবং পরিবেশের ক্ষতি হয়।
ধারণযোগ্য উন্নয়ন নিশ্চিত করতে জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণ কেন গুরুত্বপূর্ণ?
ধারণযোগ্য উন্নয়ন নিশ্চিত করতে জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণ গুরুত্বপূর্ণ কারণ –
1. জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণ করলে সম্পদের সুষম বণ্টন সম্ভব হয়।
2. পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা পায়।
3. অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা বজায় থাকে।
4. ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য সম্পদ সংরক্ষিত হয়।
জনসংখ্যা ও সম্পদের মধ্যে ভারসাম্য রক্ষা করতে কী করা উচিত?
জনসংখ্যা ও সম্পদের মধ্যে ভারসাম্য রক্ষা করতে –
1. পরিবার পরিকল্পনা কার্যক্রম জোরদার করা।
2. শিক্ষা ও স্বাস্থ্য সেবার উন্নতি ঘটানো।
3. প্রাকৃতিক সম্পদের টেকসই ব্যবহার নিশ্চিত করা।
4. নবায়নযোগ্য শক্তির ব্যবহার বাড়ানো।
অতিরিক্ত জনসংখ্যা বৃদ্ধির ফলে কী সমস্যা দেখা দেয়?
অতিরিক্ত জনসংখ্যা বৃদ্ধির ফলে –
1. সম্পদের অভাব।
2. বেকারত্ব বৃদ্ধি।
3. পরিবেশ দূষণ।
4. খাদ্য সংকট।
5. স্বাস্থ্য সেবার ঘাটতি, ইত্যাদি সমস্যা দেখা দেয়।
ধারণযোগ্য উন্নয়ন অর্জনে কী পদক্ষেপ নেওয়া যায়?
ধারণযোগ্য উন্নয়ন অর্জনে গৃহীত পদক্ষেপগুলি হলো –
1. জনসচেতনতা বৃদ্ধি।
2. সবুজ প্রযুক্তির ব্যবহার।
3. নগরায়ণ পরিকল্পনা।
4. কৃষি ও শিল্পে টেকসই পদ্ধতি প্রয়োগ।
এই আর্টিকেলে আমরা মাধ্যমিক ভূগোলের একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন — “জনসংখ্যা বৃদ্ধি ও ধারণযোগ্য উন্নয়নের মধ্যে সম্পর্ক লেখো।” — নিয়ে আলোচনা করেছি। এই প্রশ্নটি মাধ্যমিক ভূগোলের পঞ্চম অধ্যায় “ভারতের অর্থনৈতিক পরিবেশ” -এর “ভারতের জনসংখ্যা” অংশ থেকে নেওয়া হয়েছে। মাধ্যমিক পরীক্ষা এবং বিভিন্ন চাকরির পরীক্ষায় এই প্রশ্নটি প্রায়ই আসে, তাই এটি শিক্ষার্থীদের জন্য বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ। আশা করি এই আর্টিকেলটি আপনাদের জন্য উপকারী হয়েছে। আপনাদের কোনো প্রশ্ন বা অসুবিধা থাকলে, আমাদের সাথে টেলিগ্রামে যোগাযোগ করতে পারেন, আমরা উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করব। তাছাড়া, নিচে আমাদের এই পোস্টটি আপনার প্রিয়জনের সাথে শেয়ার করুন, যাদের এটি প্রয়োজন হতে পারে। ধন্যবাদ।
মন্তব্য করুন