জোয়ারভাটা কীভাবে সৃষ্টি হয় চিত্রসহ ব্যাখ্যা করো।

Rahul

এই আর্টিকেলে আমরা মাধ্যমিক ভূগোলের একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন “জোয়ারভাটা কীভাবে সৃষ্টি হয় চিত্রসহ ব্যাখ্যা করো।” নিয়ে আলোচনা করব। এই প্রশ্নটি মাধ্যমিক ভূগোল পরীক্ষার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। “জোয়ারভাটা কীভাবে সৃষ্টি হয় চিত্রসহ ব্যাখ্যা করো।” প্রশ্নটি মাধ্যমিক ভূগোলের তৃতীয় অধ্যায় “বারিমণ্ডল – সমুদ্রস্রোত ও জোয়ারভাটা” -এর একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন। এই প্রশ্নটি মাধ্যমিক পরীক্ষায় এবং চাকরির পরীক্ষায় প্রায়ই দেখা যায়।

জোয়ারভাটা কীভাবে সৃষ্টি হয় চিত্রসহ ব্যাখ্যা করো।
জোয়ারভাটা কীভাবে সৃষ্টি হয় চিত্রসহ ব্যাখ্যা করো।

জোয়ারভাটা কীভাবে সৃষ্টি হয় চিত্রসহ ব্যাখ্যা করো।

অথবা, জোয়ারভাটা কেন ঘটে তা চিত্রের সাহায্যে বোঝাও।

অথবা, চিত্রসহ জোয়ারভাটার সৃষ্টি বর্ণনা করো।

জোয়ারভাটার সৃষ্টি –

প্রধানত দুটি কারণে পৃথিবীতে জোয়ারভাটার সৃষ্টি হয়। যথা –

  1. পৃথিবীর ওপর চাঁদ ও সূর্যের মিলিত মহাকর্ষ বলের প্রভাব।
  2. পৃথিবীর আবর্তন জনিত কেন্দ্রাতিগ বলের প্রভাব।

পৃথিবীর ওপর চাঁদ ও সূর্যের মিলিত মহাকর্ষ বলের প্রভাব –

নিউটনের মহাকর্ষ সূত্র অনুসারে, এই মহাবিশ্বে প্রতিটি বস্তু প্রতিটি বস্তুকে তাদের সংযোজক সরলরেখা বরাবর পরস্পরকে আকর্ষণ করে। এই নিয়মেই পৃথিবী, চাঁদ ও সূর্য পরস্পর পরস্পরকে আকর্ষণ করে। যে বস্তুর ভর যত বেশি আকর্ষণ বল তার তত বেশি এবং যে বস্তুর দূরত্ব যত বেশি তার আকর্ষণ বল তত কম।

পৃথিবী থেকে সূর্য গড়ে 15 কোটি কিমি দূরে অবস্থিত এবং চাঁদ 3 লক্ষ 84 হাজার 400 কিমি দূরে অবস্থিত। তাই পৃথিবীর ওপর চাঁদের আকর্ষণ বল (2.2 গুণ) বেশি। প্রধানত চাঁদের আকর্ষণেই সমুদ্রের জলস্ফীত হয়ে জোয়ারের সৃষ্টি করে। জোয়ারের সমকোণস্থ অঞ্চলের জলতল নেমে গিয়ে ভাটার সৃষ্টি করে। সূর্য চন্দ্রের চেয়ে প্রায় 255 লক্ষ গুণ ভারী হলেও বহু দূরে (প্রায় 391 গুণ) অবস্থিত হওয়ার জন্য সূর্যের আকর্ষণে জোয়ার তত প্রবল হয় না। সিজিগি অবস্থানে পৃথিবীর একই স্থানে চাঁদ ও সূর্যের মিলিত আকর্ষণ কার্যকরী হওয়ায় জোয়ার খুব প্রবল হয়।

পৃথিবীর কেন্দ্রাতিগ বল ও মহাকর্ষ বলের প্রভাব
পৃথিবীর কেন্দ্রাতিগ বল ও মহাকর্ষ বলের প্রভাব

পৃথিবীর আবর্তনজনিত কেন্দ্রাতিগ বলের প্রভাব –

পৃথিবীর আবর্তনজনিত কারণে কেন্দ্রাতিগ বলের সৃষ্টি হয়, যার প্রভাবে সমুদ্রের জলরাশি বাইরের দিকে বিক্ষিপ্ত হওয়ার প্রবণতা লাভ করে। এই বল মহাকর্ষ বলের বিপরীতে কাজ করে। অর্থাৎ চাঁদের আকর্ষণে যে স্থানে জোয়ার (মুখ্য বা চান্দ্র জোয়ার) হয় তার বিপরীতে বা প্রতিপাদ-স্থানে কেন্দ্রাতিগ বল অধিক কার্যকরী হওয়ায় সেখানেও জোয়ার (গৌণ জোয়ার) হয়, তবে প্রাবল্য তুলনামূলক কম। জোয়ারের স্থানে বিপুল জলরাশি সরবরাহের জন্য এদের মধ্যবর্তী সমকোণস্থ স্থানগুলিতে জলতল নেমে গিয়ে ভাটার সৃষ্টি করে। এ ছাড়া –

  • সমুদ্রতলের ঢাল।
  • তটভূমির প্রকৃতি।
  • জলস্তরের ওঠা-নামা।
  • জলের পৃষ্ঠতলে বায়ুর গতিশক্তির ঘর্ষণ প্রভৃতি জোয়ারভাটা সৃষ্টিতে পরোক্ষভাবে প্রভাব বিস্তার করে।

কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নোত্তর

জোয়ার-ভাটা কী?

জোয়ার-ভাটা হলো সমুদ্র বা বৃহৎ জলাশয়ের জলের পর্যায়ক্রমে উত্থান (জোয়ার) ও পতন (ভাটা)। এটি প্রধানত চাঁদ ও সূর্যের মহাকর্ষীয় টান এবং পৃথিবীর আবর্তনের কারণে ঘটে।

জোয়ার-ভাটা কেন হয়?

জোয়ার-ভাটা সৃষ্টির মূল কারণ দুটি –
1. চাঁদ ও সূর্যের মহাকর্ষ বলের প্রভাব (চাঁদের প্রভাব বেশি, কারণ এটি পৃথিবীর কাছে)।
2. পৃথিবীর আবর্তনজনিত কেন্দ্রাতিগ বল (যা জলকে বাইরের দিকে ঠেলে দেয়)।

চাঁদ ও সূর্যের মধ্যে কার প্রভাব বেশি?

চাঁদের মহাকর্ষীয় টান সূর্যের চেয়ে বেশি শক্তিশালী, কারণ চাঁদ পৃথিবীর অনেক কাছে (প্রায় 3.84 লক্ষ কিমি দূরে), অন্যদিকে সূর্য প্রায় 15 কোটি কিমি দূরে। তাই চাঁদের আকর্ষণে জোয়ার বেশি শক্তিশালী হয়।

মুখ্য জোয়ার ও গৌণ জোয়ার কী?

1. মুখ্য জোয়ার – চাঁদের আকর্ষণে যে পাশের দিকের জল ফুলে ওঠে, তাকে মুখ্য জোয়ার বলে।
2. গৌণ জোয়ার – পৃথিবীর আবর্তনের ফলে বিপরীত দিকের জলও ফুলে ওঠে, একে গৌণ জোয়ার বলে।

ভাটা কীভাবে সৃষ্টি হয়?

যখন কোনো স্থানে জোয়ারের কারণে জল ফুলে ওঠে, তখন পার্শ্ববর্তী অঞ্চল থেকে জল সেখানে চলে যায়। ফলে সেই পার্শ্ববর্তী অঞ্চলে জলের স্তর নেমে যায়, একেই ভাটা বলে।

সিজিগি জোয়ার (Spring Tide) কী?

যখন চাঁদ, সূর্য ও পৃথিবী এক সরলরেখায় অবস্থান করে (অমাবস্যা বা পূর্ণিমা তিথিতে), তখন চাঁদ ও সূর্যের সম্মিলিত মহাকর্ষ বলের কারণে জোয়ার সবচেয়ে শক্তিশালী হয়। একে সিজিগি জোয়ার বলে।

নিপাত জোয়ার (Neap Tide) কী?

যখন চাঁদ ও সূর্য পৃথিবীর সাথে সমকোণে থাকে (অষ্টমী তিথিতে), তখন তাদের আকর্ষণ বল পরস্পর বিরোধিতা করে। ফলে জোয়ার দুর্বল হয়, একে নিপাত জোয়ার বলে।

জোয়ার-ভাটা দিনে কতবার হয়?

সাধারণত দিনে দু’বার জোয়ার ও দু’বার ভাটা হয় (প্রতি 12 ঘণ্টা 26 মিনিট পর)। তবে স্থানভেদে এর তারতম্য হতে পারে।

জোয়ার-ভাটা কি শুধু সমুদ্রেই হয়?

না, বড় নদী বা হ্রদেও জোয়ার-ভাটা দেখা যায়, তবে সমুদ্রের তুলনায় তা অনেক দুর্বল।

জোয়ার-ভাটার উপর তটভূমির প্রভাব কী?

তটভূমির ঢাল, সমুদ্রের গভীরতা ও উপকূলের আকৃতি জোয়ার-ভাটার উচ্চতা ও সময়কে প্রভাবিত করে। সংকীর্ণ উপসাগরে জোয়ার বেশি উঁচু হতে পারে (যেমন – বাংলাদেশের মেঘনা মোহনায়)।


এই আর্টিকেলে আমরা মাধ্যমিক ভূগোলের একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন “জোয়ারভাটা কীভাবে সৃষ্টি হয় চিত্রসহ ব্যাখ্যা করো।” নিয়ে আলোচনা করেছি। এই “জোয়ারভাটা কীভাবে সৃষ্টি হয় চিত্রসহ ব্যাখ্যা করো।” প্রশ্নটি মাধ্যমিক ভূগোলের তৃতীয় অধ্যায় “বারিমণ্ডল – সমুদ্রস্রোত ও জোয়ারভাটা” -এর একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন। এই প্রশ্নটি মাধ্যমিক পরীক্ষায় এবং চাকরির পরীক্ষায় প্রায়ই দেখা যায়। আশা করি এই আর্টিকেলটি আপনাদের জন্য উপকারী হয়েছে। আপনাদের কোনো প্রশ্ন বা অসুবিধা থাকলে, আমাদের সাথে টেলিগ্রামে যোগাযোগ করতে পারেন, আমরা উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করব। তাছাড়া, নিচে আমাদের এই পোস্টটি আপনার প্রিয়জনের সাথে শেয়ার করুন, যাদের এটি প্রয়োজন হতে পারে। ধন্যবাদ।

Please Share This Article

Related Posts

গ্যাসের বাষ্পঘনত্বকে আপেক্ষিক ঘনত্ব বলা হয় কেন? উষ্ণতার পরিবর্তনে কোনো গ্যাসীয় পদার্থের বাষ্পঘনত্বের কীরূপ পরিবর্তন ঘটবে?

গ্যাসের বাষ্পঘনত্বকে আপেক্ষিক ঘনত্ব বলা হয় কেন? উষ্ণতার পরিবর্তনে কোনো গ্যাসীয় পদার্থের বাষ্পঘনত্বের কীরূপ পরিবর্তন ঘটবে?

ভারতে জনসংখ্যা বৃদ্ধির ফলে সৃষ্ট সমস্যাগুলি আলোচনা করো

ভারতে জনসংখ্যা বৃদ্ধির ফলে সৃষ্ট সমস্যাগুলি আলোচনা করো।

ভারতের জনসংখ্যা বণ্টনে ভূপ্রকৃতি ও জলবায়ুর প্রভাব কীরূপ

ভারতের জনসংখ্যা বণ্টনে ভূপ্রকৃতি ও জলবায়ুর প্রভাব কীরূপ?

About The Author

Rahul

Tags

মন্তব্য করুন

SolutionWbbse

"SolutionWbbse" শিক্ষার্থীদের জন্য একটি অনলাইন অধ্যয়ন প্ল্যাটফর্ম। এখানে প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার প্রস্তুতি, মাধ্যমিক পরীক্ষার জন্য গাইডলাইন, এবং বিভিন্ন বিষয়ে পড়াশোনার সাহায্য প্রদান করা হয়। আমাদের মূল লক্ষ্য হলো ইন্টারনেটের মাধ্যমে সকল বিষয়ের শিক্ষণীয় উপকরণ সহজেই সকল শিক্ষার্থীর কাছে পৌঁছে দেওয়া।

Editor Picks

প্রমাণ ঘনত্বের সঙ্গে বাষ্পঘনত্বের সম্পর্ক প্রতিষ্ঠা করো।

2H2+O2=2H2O এই সমীকরণ থেকে কী কী তথ্য জানা যায়?

পারমাণবিক ভর, গ্রাম-পারমাণবিক ভর বা গ্রাম-পরমাণু এবং গ্রাম-পরমাণু সংখ্যা বলতে কী বোঝায়?

গ্যাসের বাষ্পঘনত্বকে আপেক্ষিক ঘনত্ব বলা হয় কেন? উষ্ণতার পরিবর্তনে কোনো গ্যাসীয় পদার্থের বাষ্পঘনত্বের কীরূপ পরিবর্তন ঘটবে?

ভারতে জনসংখ্যা বৃদ্ধির ফলে সৃষ্ট সমস্যাগুলি আলোচনা করো।