কার্পাস শিল্পকে শিকড় আলগা শিল্প বলে কেন? ভারতের পূর্বাঞ্চলে কার্পাস বয়নশিল্পের কেন্দ্রীভবনের কারণ

Rohit

এই আর্টিকেলে আমরা মাধ্যমিক ভূগোলের একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন — “কার্পাস শিল্পকে শিকড় আলগা (Foot Loose) শিল্প বলে কেন? ভারতের পূর্বাঞ্চলে কার্পাস বয়নশিল্পের কেন্দ্রীভবনের কারণগুলি কী কী?” — নিয়ে আলোচনা করব। এই প্রশ্নটি মাধ্যমিক ভূগোলের পঞ্চম অধ্যায় “ভারতের অর্থনৈতিক পরিবেশ” -এর “ভারতের শিল্প” অংশ থেকে নেওয়া হয়েছে। মাধ্যমিক পরীক্ষা এবং বিভিন্ন চাকরির পরীক্ষায় এই প্রশ্নটি প্রায়ই আসে, তাই এটি শিক্ষার্থীদের জন্য বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ।

কার্পাস শিল্পকে শিকড় আলগা (Foot Loose) শিল্প বলে কেন
কার্পাস শিল্পকে শিকড় আলগা (Foot Loose) শিল্প বলে কেন
Contents Show

কার্পাস শিল্পকে শিকড় আলগা (Foot Loose) শিল্প বলে কেন?

অধিকাংশ শিল্পের অবস্থান নির্ধারিত হয় এক বা একাধিক শিল্পস্থাপনের উপাদানের প্রভাবে। কার্পাস বয়ন শিল্পের প্রধান কাঁচামালের বিশেষ বৈশিষ্ট্যের জন্য এই শিল্প স্থাপনে স্বতন্ত্র অবস্থা দেখা যায়। কার্পাস একটি বিশুদ্ধ হালকা প্রকৃতির কাঁচামাল। বিশুদ্ধ হওয়ায় কাঁচামাল থেকে শিল্পজাত দ্রব্যে পরিণত হওয়ার সময় এর ওজনগত পরিমাণ কমে যায় না। হালকা হওয়ায় একসঙ্গে প্রচুর পরিমাণে পরিবহণ করা যায়। তা ছাড়া শুকনো অবস্থায় অপচনশীল হওয়ায় বহুদিন মজুত রাখা যায়। সুতরাং, এই শিল্প স্থাপনে কাঁচামালের নিয়ন্ত্রকের ভূমিকা নেই বললেই চলে। তাই কার্পাস বয়ন শিল্পকে কাঁচামাল উৎপাদক অঞ্চল বা বাজার কিংবা এই দুই -এর মধ্যবর্তী যে-কোনো স্থানে গড়ে তোলা যায়। সেই কারণে কার্পাস বয়ন শিল্পকে শিকড় আলগা (Foot Loose Industry) শিল্প বলে।

ভারতের পূর্বাঞ্চলে কার্পাস বয়নশিল্পের কেন্দ্রীভবনের কারণগুলি কী কী?

ভারতের পূর্বাঞ্চলে কার্পাস বয়নশিল্পের কেন্দ্রীভবনের কারণ নিম্নরূপ –

পশ্চিমবঙ্গ, বিহার, ঝাড়খণ্ড, ওড়িশা, অসম প্রভৃতি রাজ্যসমূহ পূর্বাঞ্চলের অন্তর্গত। এই অঞ্চলের উল্লেখযোগ্য শিল্পকেন্দ্রগুলি হল –

  • পশ্চিমবঙ্গে অবস্থিত শিল্পকেন্দ্রগুলি হল গার্ডেনরিচ, বেলঘরিয়া, হাওড়া, শ্রীরামপুর, শ্যামনগর, ঘুষুড়ি, ফুলিয়া, মুর্শিদাবাদ, এবং বিষ্ণুপুর।
  • বিহারে অবস্থিত শিল্পকেন্দ্রগুলি হল পাটনা, গয়া, এবং ভাগলপুর।
  • ঝাড়খণ্ডে অবস্থিত শিল্পকেন্দ্র হল রাঁচি।
  • ওড়িশায় অবস্থিত শিল্পকেন্দ্রগুলি হল কটক, সম্বলপুর, এবং ভুবনেশ্বর।

ভারতের পূর্বাঞ্চলে কার্পাস বয়ন শিল্প গড়ে ওঠার কারণ

  1. দক্ষিণ-পূর্ব, পশ্চিম রেলওয়ে ও 6নং জাতীয় সড়কপথের মাধ্যমে পশ্চিম ভারতের তুলা সহজেই পূর্বাঞ্চলে আনা যায়।
  2. ভাগীরথী, হুগলি, এবং মহানদী নদীর মৃদু স্বচ্ছ জলের সুবিধা রয়েছে।
  3. ঝরিয়া ও রানিগঞ্জের কয়লা, বজবজ, ব্যান্ডেল, কোলাঘাটের তাপবিদ্যুৎ, এবং দামোদর ও ময়ূরাক্ষী নদী প্রকল্পের জলবিদ্যুৎ সরবরাহ হয়।
  4. কলকাতা, পারাদ্বীপ ও হলদিয়া বন্দরের মাধ্যমে যন্ত্রপাতি ও যন্ত্রাংশ আনা এবং উৎপাদিত পণ্যের রপ্তানির সুবিধা আছে।
  5. কলকাতা-হাওড়া অঞ্চলে বাজারের ব্যাপক চাহিদা বর্তমান।
  6. পূর্বাঞ্চল অত্যন্ত ঘনবসতিযুক্ত হওয়ায় বস্ত্রের বিপুল চাহিদা ও শ্রমিকের সহজলভ্যতা আছে।
  7. কলকাতা ও তার পার্শ্ববর্তী অঞ্চলে বিভিন্ন ইঞ্জিনিয়ারিং, রাসায়নিক ও তথ্যপ্রযুক্তি শিল্পের বিকাশ লাভ ঘটেছে।
  8. বাঙালি ও মাড়োয়ারি শিল্পপতিদের যথেষ্ট মূলধন বিনিয়োগ প্রভৃতি কারণে পূর্বাঞ্চলে কার্পাস বয়নশিল্পের কেন্দ্রীভবন ঘটেছে।

কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নোত্তর

শিকড় আলগা (Foot Loose) শিল্প বলতে কী বোঝায়?

শিকড় আলগা শিল্প হল সেই শিল্প যেগুলো স্থাপনের জন্য নির্দিষ্ট ভৌগোলিক অবস্থানের ওপর নির্ভরশীল নয়। এগুলো কাঁচামালের উৎস বা বাজারের কাছাকাছি স্থাপন করা বাধ্যতামূলক নয়, বরং অন্যান্য সুবিধা (যেমন — পরিবহণ, শ্রমিক, শক্তি ইত্যাদি) বিবেচনা করে যেকোনো স্থানে গড়ে তোলা যায়।

কার্পাস শিল্পকে শিকড় আলগা শিল্প বলা হয় কেন?

কার্পাস শিল্পকে শিকড় আলগা শিল্প বলা হয় কারণ —
1. কার্পাস তুলা হালকা ও বিশুদ্ধ হওয়ায় পরিবহণে ব্যয় কম।
2. এটি শুকনো ও অপচনশীল হওয়ায় দীর্ঘদিন সংরক্ষণ করা যায়।
3. কাঁচামালের উৎস বা বাজারের কাছাকাছি স্থাপন করা বাধ্যতামূলক নয়।
4. যেকোনো সুবিধাজনক স্থানে (যেমন — পরিবহণ, শ্রমিক, শক্তি সুবিধাযুক্ত অঞ্চলে) কার্পাস শিল্প গড়ে তোলা যায়।

কার্পাস শিল্পের কাঁচামালের কী বিশেষ বৈশিষ্ট্য রয়েছে?

কার্পাস শিল্পের কাঁচামাল (তুলা) -এর বিশেষ বৈশিষ্ট্য হলো —
1. হালকা প্রকৃতির – সহজে বহনযোগ্য।
2. বিশুদ্ধ – প্রক্রিয়াকরণের সময় ওজন কমে যায় না।
3. অপচনশীল – দীর্ঘদিন সংরক্ষণ করা যায়।

অন্যান্য শিল্পের তুলনায় কার্পাস শিল্প কেন বেশি নমনীয়?

অধিকাংশ শিল্প কাঁচামাল বা বাজারের কাছাকাছি স্থাপিত হয়, কিন্তু কার্পাস শিল্পের ক্ষেত্রে তা জরুরি নয়। তাই এটি যেকোনো সুবিধাজনক স্থানে স্থাপন করা যায়, ফলে এটি বেশি নমনীয়।

ভারতে কার্পাস শিল্পের কেন্দ্রীভবন কোথায় বেশি দেখা যায়?

ভারতে কার্পাস শিল্প প্রধানত পশ্চিমাঞ্চল (মুম্বাই, আহমেদাবাদ) ও পূর্বাঞ্চল (কলকাতা, হাওড়া, মুর্শিদাবাদ) -এ কেন্দ্রীভূত হয়েছে।

পূর্বাঞ্চলে কার্পাস শিল্পের বিকাশের কারণ কী?

পূর্বাঞ্চলে (পশ্চিমবঙ্গ, বিহার, ঝাড়খণ্ড, ওড়িশা) কার্পাস শিল্পের বিকাশের কারণগুলি হলো —
1. পরিবহণ সুবিধা – রেল ও সড়কপথে পশ্চিম ভারত থেকে তুলা আমদানি করা যায়।
2. জলসুবিধা – হুগলি, ভাগীরথী, মহানদী নদীর জল শিল্পে ব্যবহার করা যায়।
3. শক্তির উৎস – ঝরিয়া-রানিগঞ্জের কয়লা, দামোদর উপত্যকার জলবিদ্যুৎ।
4. বন্দর সুবিধা – কলকাতা, হলদিয়া বন্দর দিয়ে যন্ত্রপাতি আমদানি ও পণ্য রপ্তানি করা যায়।
5. বাজার ও শ্রমিক – কলকাতার কাছাকাছি ঘনবসতিপূর্ণ অঞ্চলে বিপুল চাহিদা ও সুলভ শ্রমিক পাওয়া যায়।

কার্পাস শিল্পের জন্য কলকাতা অঞ্চল গুরুত্বপূর্ণ কেন?

কলকাতা অঞ্চলে কার্পাস শিল্পের গুরুত্বপূর্ণ হওয়ার কারণ —
1. বন্দর সুবিধা – আমদানি-রপ্তানি সহজ।
2. শিল্পাঞ্চল – হুগলি শিল্পাঞ্চলে কার্পাস শিল্পের বিকাশ ঘটেছে।
3. বাজার – কলকাতা মহানগরীর বিপুল জনসংখ্যার কারণে চাহিদা বেশি।
4. শ্রমিক ও মূলধন – বাঙালি ও মাড়োয়ারি শিল্পপতিদের বিনিয়োগ।

কার্পাস শিল্পের অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্রগুলি কী কী?

কার্পাস শিল্পের অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্রগুলি হলো —
1. পশ্চিমবঙ্গ – গার্ডেনরিচ, বেলঘরিয়া, হাওড়া, শ্রীরামপুর, মুর্শিদাবাদ।
2. বিহার – পাটনা, ভাগলপুর।
3. ঝাড়খণ্ড – রাঁচি।
4. ওড়িশা – কটক, ভুবনেশ্বর।


এই আর্টিকেলে আমরা মাধ্যমিক ভূগোলের একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন — “কার্পাস শিল্পকে শিকড় আলগা (Foot Loose) শিল্প বলে কেন? ভারতের পূর্বাঞ্চলে কার্পাস বয়নশিল্পের কেন্দ্রীভবনের কারণগুলি কী কী?” — নিয়ে আলোচনা করেছি। এই প্রশ্নটি মাধ্যমিক ভূগোলের পঞ্চম অধ্যায় “ভারতের অর্থনৈতিক পরিবেশ” -এর “ভারতের শিল্প” অংশ থেকে নেওয়া হয়েছে। মাধ্যমিক পরীক্ষা এবং বিভিন্ন চাকরির পরীক্ষায় এই প্রশ্নটি প্রায়ই আসে, তাই এটি শিক্ষার্থীদের জন্য বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ। আশা করি এই আর্টিকেলটি আপনাদের জন্য উপকারী হয়েছে। আপনাদের কোনো প্রশ্ন বা অসুবিধা থাকলে, আমাদের সাথে টেলিগ্রামে যোগাযোগ করতে পারেন, আমরা উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করব। তাছাড়া, নিচে আমাদের এই পোস্টটি আপনার প্রিয়জনের সাথে শেয়ার করুন, যাদের এটি প্রয়োজন হতে পারে। ধন্যবাদ।

Please Share This Article

Related Posts

ভারতের নগরায়ণের সমস্যাগুলি ব্যাখ্যা করো

ভারতের নগরায়ণের সমস্যাগুলি ব্যাখ্যা করো।

ভারতে নগর গড়ে ওঠার কারণগুলি আলোচনা করো

ভারতে নগর গড়ে ওঠার কারণগুলি আলোচনা করো।

গ্যাসের অণুর গড়বেগ কাকে বলে? গ্যাসের অণুর গতিবেগের ওপর তার চাপ কীভাবে নির্ভর করে?

গ্যাসের অণুর গড়বেগ কাকে বলে? গ্যাসের অণুর গতিবেগের ওপর তার চাপ কীভাবে নির্ভর করে?

About The Author

Rohit

Tags

মন্তব্য করুন

SolutionWbbse

"SolutionWbbse" শিক্ষার্থীদের জন্য একটি অনলাইন অধ্যয়ন প্ল্যাটফর্ম। এখানে প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার প্রস্তুতি, মাধ্যমিক পরীক্ষার জন্য গাইডলাইন, এবং বিভিন্ন বিষয়ে পড়াশোনার সাহায্য প্রদান করা হয়। আমাদের মূল লক্ষ্য হলো ইন্টারনেটের মাধ্যমে সকল বিষয়ের শিক্ষণীয় উপকরণ সহজেই সকল শিক্ষার্থীর কাছে পৌঁছে দেওয়া।

Editor Picks

ভারতের নগরায়ণের সমস্যাগুলি ব্যাখ্যা করো।

মাধ্যমিক ভৌতবিজ্ঞান – গ্যাসের আচরণ – বয়েলের সূত্র

ভারতে নগর গড়ে ওঠার কারণগুলি আলোচনা করো।

গে-লুসাকের চাপের সূত্রটি বিবৃতি করো। চাপের সূত্রানুযায়ী P-T লেখচিত্রটি দেখাও

মোলার গ্যাস ধ্রুবক R -এর তাৎপর্য কী? SI পদ্ধতিতে মোলার গ্যাস ধ্রুবকের মান নির্ণয় করো।