এই আর্টিকেলে আমরা মাধ্যমিক জীবনবিজ্ঞান বিষয়ের একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন — “মানবমস্তিষ্কের প্রধান অংশগুলির সংক্ষিপ্ত বিবরণ দাও। সুষুম্নাকাণ্ডের অবস্থান লেখো। অথবা, কেন্দ্রীয় স্নায়ুতন্ত্রের বিভিন্ন অংশের সংক্ষিপ্ত বিবরণ দাও।” — নিয়ে আলোচনা করব। এই প্রশ্নটি মাধ্যমিক জীবনবিজ্ঞানের প্রথম অধ্যায় “জীবজগতে নিয়ন্ত্রণ ও সমন্বয়” -এর “প্রাণীদের সাড়াপ্রদান ও ভৌত সমন্বয়-স্নায়ুতন্ত্র” অংশ থেকে নেওয়া হয়েছে। মাধ্যমিক পরীক্ষা এবং বিভিন্ন চাকরির পরীক্ষায় এই প্রশ্নটি প্রায়ই আসে, তাই এটি শিক্ষার্থীদের জন্য বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ।

মানবমস্তিষ্কের প্রধান অংশগুলির সংক্ষিপ্ত বিবরণ দাও। সুষুম্নাকাণ্ডের অবস্থান লেখো।
অথবা, কেন্দ্রীয় স্নায়ুতন্ত্রের বিভিন্ন অংশের সংক্ষিপ্ত বিবরণ দাও।
মানব মস্তিষ্ক প্রধানত অগ্রমস্তিষ্ক, মধ্যমস্তিষ্ক এবং পশ্চাদমস্তিষ্ক নিয়ে গঠিত –
- অগ্রমস্তিষ্ক – গুরুমস্তিষ্ক, থ্যালামাস, হাইপো-থ্যালামাস প্রভৃতি অংশ নিয়ে অগ্রমস্তিষ্ক গঠিত হয়।
- গুরুমস্তিষ্ক – দুটি প্রতিসম গোলার্ধের সমন্বয়ে গঠিত হয়। গোলার্ধ দুটি ফিসারের মাধ্যমে পরস্পর বিচ্ছিন্ন থাকে। গোলার্ধ দুটির প্রতিটিকে সেরিব্রাল হেমিস্ফিয়ার বলে। গোলার্ধদ্বয় করপাস ক্যালোসাম নামক যোজক দ্বারা যুক্ত থাকে। গুরুমস্তিষ্কের ওপরের অংশকে কর্টেক্স বলে। সেরিব্রাল কর্টেক্স পাঁচটি লোরে (ফ্রন্টাল, প্যারাইটাল, টেম্পোরাল, অক্সিপিটাল ও লিম্বিক) বিভক্ত।
- থ্যালামাসটি গুরুমস্তিষ্কের নীচে অবস্থিত ডিম্বাকার অংশ যার দৈর্ঘ্য 8 cm।
- হাইপোথ্যালামাসটি, থ্যালামাসের তলদেশে উপস্থিত ধূসর বস্তু যা বহির্বাহী এবং অন্তর্বাহী স্নায়ুতন্তু দিয়ে যুক্ত থাকে।
- মধ্যমস্তিষ্ক – মানব মস্তিষ্কের ডায়েনসেফালন এবং পশ্চাদমস্তিষ্কের মধ্যবর্তী স্থানে মধ্যমস্তিষ্কটি অবস্থিত। এটি মানব মস্তিষ্কের সর্বাপেক্ষা ক্ষুদ্র অংশ। এটি মূলত সেরিব্রাল পেডাংকল এবং টেকটাম নিয়ে গঠিত।
- পশ্চাদমস্তিষ্ক – এটি মস্তিষ্কের পেছনের অংশ যা লঘুমস্তিষ্ক, সুষুম্নাশীর্ষক এবং পনস নিয়ে গঠিত।

সুষুম্নাকাণ্ডের অবস্থান –
সুষুম্নাকাণ্ড মেরুদণ্ডের নিউরাল ক্যানেলের মধ্যে অবস্থান করে। করোটির ফোরামেন ম্যাগনাম নামক ছিদ্রের নিম্নপ্রান্ত থেকে মেরুদণ্ডের প্রথম কটিদেশীয় কশেরুকার (L1) নিম্নপ্রান্ত পর্যন্ত সুষুম্নাকাণ্ড বিস্তৃত।
কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নোত্তর
সুষুম্নাকাণ্ড (Spinal Cord) কোথায় অবস্থিত এবং এর প্রধান কাজ কী?
সুষুম্নাকাণ্ড করোটির ফোরামেন ম্যাগনাম ছিদ্র থেকে শুরু হয়ে মেরুদণ্ডের নালী (Vertebral Canal) এর ভিতর দিয়ে নেমে সাধারণত প্রথম লাম্বার কশেরুকা (L1) পর্যন্ত বিস্তৃত থাকে। এর প্রধান কাজ হল মস্তিষ্ক ও শরীরের অন্যান্য অংশের মধ্যে সংকেত পরিবহন করা এবং সরল রিফ্লেক্স কার্যের (যেমন, হাঁটুতে টোকা দিলে পা ওঠা) কেন্দ্র হিসেবে কাজ করা।
কেন্দ্রীয় স্নায়ুতন্ত্র (Central Nervous System) এবং প্রান্তীয় স্নায়ুতন্ত্র (Peripheral Nervous System) এর মধ্যে পার্থক্য কী?
কেন্দ্রীয় স্নায়ুতন্ত্র (Central Nervous System) এবং প্রান্তীয় স্নায়ুতন্ত্র (Peripheral Nervous System) এর মধ্যে পার্থক্য –
1. কেন্দ্রীয় স্নায়ুতন্ত্র (CNS) – মস্তিষ্ক ও সুষুম্নাকাণ্ড নিয়ে গঠিত। এটি সমগ্র দেহের কার্যক্রম সমন্বয় ও নিয়ন্ত্রণের মূল কেন্দ্র।
2. প্রান্তীয় স্নায়ুতন্ত্র (PNS) – কেন্দ্রীয় স্নায়ুতন্ত্রকে শরীরের বিভিন্ন অংশের সাথে যুক্ত করে এমন সব স্নায়ু ও গ্যাংলিয়া নিয়ে গঠিত। PNS সংবেদনশীল তথ্য CNS-এ বহন করে আনে এবং CNS এর আদেশ পেশি ও গ্রন্থিগুলোতে বহন করে নিয়ে যায়।
লঘুমস্তিষ্ক (Cerebellum) এর কাজ কী?
লঘুমস্তিষ্ক পশ্চাদমস্তিষ্কে অবস্থিত। এটি শারীরিক নড়াচড়ার সমন্বয়, ভারসাম্য রক্ষা, ভঙ্গি বজায় রাখা এবং মোটর দক্ষতা শেখার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এটি পেশির টোনও নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করে।
হাইপোথ্যালামাস কেন গুরুত্বপূর্ণ?
হাইপোথ্যালামাস হল একটি ক্ষুদ্র কিন্তু অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ অঞ্চল যা দেহের সমস্ত অভ্যন্তরীণ পরিবেশের সমতা (হোমিওস্ট্যাসিস) বজায় রাখে। এটি শরীরের তাপমাত্রা, ক্ষুধা, তৃষ্ণা, ঘুম, মেজাজ, হরমোন নিঃসরণ (পিটুইটারি গ্রন্থির মাধ্যমে) এবং স্বয়ংক্রিয় স্নায়ুতন্ত্রের কার্যকলাপ নিয়ন্ত্রণ করে।
সেরিব্রাল কর্টেক্স (Cerebral Cortex) বলতে কী বোঝায়? এর প্রধান লোবগুলোর কাজ কী?
সেরিব্রাল কর্টেক্স হল গুরুমস্তিষ্কের বহিঃস্থ ধূসর বস্তুর স্তর। এটি জটিল মানসিক কার্যকলাপের কেন্দ্র। প্রধান লোব ও তাদের কাজ –
1. ফ্রন্টাল লোব – যুক্তি, পরিকল্পনা, আবেগ, ব্যক্তিত্ব, ইচ্ছামূলক পেশী নিয়ন্ত্রণ।
2. প্যারাইটাল লোব – স্পর্শ, চাপ, তাপ-শীতলতা ও ব্যথার সংবেদন প্রক্রিয়াকরণ।
3. টেম্পোরাল লোব – শ্রবণ, স্মৃতি ও ভাষার কিছু দিক।
4. অক্সিপিটাল লোব – দৃষ্টি প্রক্রিয়াকরণ।
5. লিম্বিক লোব (সিস্টেম) – আবেগ, অনুপ্রেরণা ও স্মৃতি গঠনে ভূমিকা রাখে।
থ্যালামাসের ভূমিকা কী?
থ্যালামাস অগ্রমস্তিষ্কের গভীরে অবস্থিত একটি রিলে স্টেশনের মতো কাজ করে। এটি চোখ, কান, ত্বক ইত্যাদি থেকে আসা প্রায় সব সংবেদনশীল তথ্য (শুধুমাত্র ঘ্রাণ বাদে) গ্রহণ করে এবং সংশ্লিষ্ট সেরিব্রাল কর্টেক্সের অঞ্চলে পাঠিয়ে দেয়। এটি সচেতনতা, ঘুম ও জাগরণ চক্রেও ভূমিকা রাখে।
কেন্দ্রীয় স্নায়ুতন্ত্রের রক্ষণাবেক্ষণকারী কাঠামোগুলো কী কী?
CNS কে সুরক্ষা ও পুষ্টি দেওয়ার জন্য নিম্নলিখিত কাঠামো রয়েছে –
1. করোটি (স্কাল) ও মেরুদণ্ড – শক্ত হাড়ের কাঠামো দ্বারা বেষ্টিত।
2. মেনিনজেস (Meninges) – ডিউরা ম্যাটার, অ্যারাকনয়েড ম্যাটার ও পিয়া ম্যাটার নামক তিনটি ঝিল্লি স্তর।
3. সেরিব্রোস্পাইনাল ফ্লুইড (CSF) – মস্তিষ্ক ও সুষুম্নাকাণ্ডকে স্যাঁতসেঁতে আশ্রয় দেয় এবং আঘাত থেকে রক্ষা করে।
4. রক্ত-মস্তিষ্ক বাধা (Blood-Brain Barrier) – রক্ত থেকে ক্ষতিকর পদার্থ মস্তিষ্কে প্রবেশে বাধা দেয়।
এই আর্টিকেলে আমরা মাধ্যমিক জীবনবিজ্ঞান বিষয়ের একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন — “মানবমস্তিষ্কের প্রধান অংশগুলির সংক্ষিপ্ত বিবরণ দাও। সুষুম্নাকাণ্ডের অবস্থান লেখো। অথবা, কেন্দ্রীয় স্নায়ুতন্ত্রের বিভিন্ন অংশের সংক্ষিপ্ত বিবরণ দাও।” — নিয়ে আলোচনা করেছি। এই প্রশ্নটি মাধ্যমিক জীবনবিজ্ঞানের প্রথম অধ্যায় “জীবজগতে নিয়ন্ত্রণ ও সমন্বয়” -এর “প্রাণীদের সাড়াপ্রদান ও ভৌত সমন্বয়-স্নায়ুতন্ত্র” অংশ থেকে নেওয়া হয়েছে। মাধ্যমিক পরীক্ষা এবং বিভিন্ন চাকরির পরীক্ষায় এই প্রশ্নটি প্রায়ই আসে, তাই এটি শিক্ষার্থীদের জন্য বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ। আশা করি এই আর্টিকেলটি আপনাদের জন্য উপকারী হয়েছে। আপনাদের কোনো প্রশ্ন বা অসুবিধা থাকলে, আমাদের সাথে টেলিগ্রামে যোগাযোগ করতে পারেন, আমরা উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করব। তাছাড়া, আমাদের এই পোস্টটি আপনার প্রিয়জনের সাথে শেয়ার করুন, যাদের এটি প্রয়োজন হতে পারে। ধন্যবাদ।





মন্তব্য করুন