কোনির পারিবারিক জীবনের পরিচয় দাও।

মতি নন্দীর ‘কোনি’ উপন্যাসটি একটি দারিদ্র্যপীড়িত পরিবারের করুণ কাহিনী। উপন্যাসের কেন্দ্রীয় চরিত্র কোনি, তার দাদা কমল, মা এবং ভাইবোনদের নিয়ে সংগ্রাম করে জীবনযাপন করে। কমল গ্যারেজে কাজ করে পরিবারের ভরণপোষণ করে, কিন্তু তার সামান্য আয় তাদের দারিদ্র্য দূর করতে পারে না। তাদের থাকার জন্য উপযুক্ত ঘর নেই, খাবারও সবসময় জোটে না। কোনির ভেতরে প্রতিভা লুকিয়ে থাকলেও দারিদ্র্যের কারণে সে তা বিকশিত করতে পারে না। কমলের মৃত্যুর পর পরিবারের পরিস্থিতি আরও খারাপ হয়ে যায়। ক্ষিতীশ নামে এক ব্যক্তি তাদের সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিলেও দারিদ্র্য থেকে মুক্তি পেতে কোনিকে অনেক সংগ্রাম করতে হয়। এই উপন্যাস দারিদ্র্যের কঠিন বাস্তবতা এবং মানুষের জীবনে এর প্রভাব তুলে ধরে।

কোনির পারিবারিক জীবনের পরিচয় দাও।

কোনির পারিবারিক জীবনের পরিচয় দাও।

  • শুরুর কথা – মতি নন্দীর কোনি উপন্যাসের কেন্দ্রীয় চরিত্র কোনি। উপন্যাসে তাদের দারিদ্র্যপীড়িত পারিবারিক জীবনের করুণ কাহিনি তুলে ধরা হয়েছে।
  • অভাবী সংসার – পিতার মৃত্যুর পর কোনির দাদা কমল তাদের সংসারের হাল ধরেছে। একটা গারেজে মাসে দেড়শো টাকা মাইনেতে কমল কাজ করে। এই সামান্য আয়েই মা আর ভাই-বোনদের মুখে সে খাবার তুলে দেয়।
  • বাসস্থান – থাকার জন্য উপযুক্ত ঘরও কোনিদের নেই। একটামাত্র তক্তাপোশ, তাতেও তোশক নেই। শুধু চিটচিটে ছোটো কয়েকটা বালিশ। দেয়ালের দড়িতে টাঙানো জামা-প্যান্ট। তাদের খোলার চালের ঘরে একটিমাত্র জানালা। তার নীচে থকথকে পাঁকে ভরা নর্দমা।
  • দারিদ্র্যের চাপ – কমল নিজেও স্বপ্ন দেখত একদিন সে বড়ো সাঁতারু হবে। কিন্তু বাবার মৃত্যুর পর দারিদ্র্যের চাপে তার সেই স্বপ্ন ভেঙে চুরমার হয়ে গেছে। সে জানে কোনির ভিতর লুকিয়ে আছে প্রতিভা। কিন্তু সাধ থাকলেও কমলের সাধ্য নেই। দু-বেলা দু-মুঠো খাবার জোগাড় করাই তারপক্ষে কঠিন। কঠিন রোগে আক্রান্ত কমলের লড়াইও মৃত্যুতে শেষ হয়ে গিয়েছে।
  • রোজগারহীন সংসারে সাহায্যের হাত – সম্পূর্ণ রোজগারহীন কোনিদের সংসারে এরপর সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেন ক্ষিতীশ। ‘প্রজাপতি’ দোকানে কাজ করে কোনি পায় চল্লিশ টাকা। অপরদিকে ছাঁট কাপড় কেটে কোনির মায়ের সামান্য আয় হয়। এভাবেই দারিদ্র্যকে নিত্যসঙ্গী করে নিয়ে কোনিদের সংসার চলতে থাকে।

আরও পড়ুন, ক্ষিতীশ সিংহ কোনিকে সাঁতারের চ্যাম্পিয়ন করানোর জন্য যে কঠোর অনুশীলনের ব্যবস্থা করেছিলেন তার পরিচয় দাও।

মতি নন্দীর “কোনি” উপন্যাসটি দারিদ্র্যের বিরুদ্ধে এক সাহসী মেয়ের লড়াইয়ের গল্প। কোনি, তার পরিবারের একমাত্র আশ্রয়, দারিদ্র্যের কষাঘাত সত্ত্বেও তার স্বপ্ন পূরণের জন্য নিরলসভাবে পরিশ্রম করে। উপন্যাসের শেষে, কোনি একজন সফল সাঁতারু হয়ে ওঠে, যা তার অধ্যবসায় ও দৃঢ়তার প্রমাণ।

কোনির সাফল্য কেবল তার ব্যক্তিগত বিজয় নয়, বরং এটি দারিদ্র্যের বিরুদ্ধে একটি বিজয়। তার গল্প আমাদের শেখানো যে, দারিদ্র্য স্থায়ী নয়, পরিশ্রম ও আত্মবিশ্বাসের মাধ্যমে সকল বাধা অতিক্রম করা সম্ভব।

উপন্যাসটি সমাজের নিচু তলার মানুষের জীবনযাত্রার বাস্তব চিত্র তুলে ধরে। এটি আমাদের দারিদ্র্যের ভয়াবহতা সম্পর্কে সচেতন করে তোলে এবং সমাজের সকল স্তরের মানুষের জন্য সমান সুযোগের প্রয়োজনীয়তার উপর জোর দেয়।

“কোনি” একটি অনুপ্রেরণামূলক উপন্যাস যা আমাদের শেখানো যে, স্বপ্ন দেখা কখনোই বন্ধ করা উচিত নয়। পরিশ্রম ও আত্মবিশ্বাসের মাধ্যমে আমরা সকল প্রতিবন্ধকতা অতিক্রম করে আমাদের লক্ষ্যে পৌঁছাতে পারি।

Share via:

মন্তব্য করুন