এই আর্টিকেলে আমরা মাধ্যমিক ভৌতবিজ্ঞান বিষয়ের একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন — “কয়েকটি ধাতুর নাম, ক্ষয় ও উৎপন্ন যৌগসমূহ লেখো।” — নিয়ে আলোচনা করব। এই প্রশ্নটি মাধ্যমিক ভৌতবিজ্ঞানের অষ্টম অধ্যায় “পদার্থের ভৌত ও রাসায়নিক ধর্মসমূহ” -এর “ধাতুবিদ্যা” অংশ থেকে নেওয়া হয়েছে। মাধ্যমিক পরীক্ষা এবং বিভিন্ন চাকরির পরীক্ষায় এই প্রশ্নটি প্রায়ই আসে, তাই এটি শিক্ষার্থীদের জন্য বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ।

কয়েকটি ধাতুর নাম, ক্ষয় ও উৎপন্ন যৌগসমূহ লেখো।
- লোহা – সাধারণ উষ্ণতায় আর্দ্র বায়ুতে রেখে দিলে লোহার ওপর লালচে বাদামি রঙের আস্তরণ পড়ে। একে মরিচা (Fe₂O₃, xH₂O) বলে। এর ফলে লোহার জিনিস ক্ষয়প্রাপ্ত হয়।
- তামা – সাধারণ উষ্ণতায় আর্দ্র বায়ুতে রেখে দিলে তামার উপর সবুজ বর্ণের বেসিক কপার কার্বনেট [CuCO₃, Cu(OH)₂] এবং ক্ষারকীয় কপার সালফেট [CuSO₄, 3Cu(OH)₂]-এর আস্তরণ পড়ে। এর ফলে তামার জিনিস ক্ষয়ে যায়।
- জিঙ্ক – সাধারণ উষ্ণতায় আর্দ্র বায়ুতে জিঙ্ক রাখলে জিঙ্কের ওপর ক্ষারকীয় জিঙ্ক কার্বনেট [ZnCO₃, 3Zn(OH)₂] -এর একটি সাদা আস্তরণ পড়ে। ফলে জিঙ্ক ক্ষয় প্রাপ্ত হয়।
- অ্যালুমিনিয়াম – আর্দ্র বায়ুতে অ্যালুমিনিয়ামের ওপর অ্যালুমিনিয়াম অক্সাইডের একটি সূক্ষ্ম সাদা আস্তরণ পড়ে। এই আস্তরণ পড়ার জন্য বায়ু Al -এর সংস্পর্শে আসতে পারে না ফলে আর বিক্রিয়া হয় না।
- সিলভার – খোলা বাতাসে সিলভারের জিনিসপত্র কিছুদিন রেখে দিলে সেটি কালো হয়ে যায়। কারণ – বাতাসে সালফার এটির সঙ্গে বিক্রিয়া করে ফলে সিলভারের জিনিস পত্রের উপর সিলভার সালফাইডের আস্তরণ পড়ে।
কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নোত্তর
ধাতুর ক্ষয় কী?
ধাতুর ক্ষয় হলো একটি অবাঞ্ছিত রাসায়নিক বা তড়িৎ-রাসায়নিক বিক্রিয়া যার মাধ্যমে ধাতু তার পরিবেশের (যেমন – বাতাস, জল, অম্ল) সংস্পর্শে এসে ধীরে ধীরে নষ্ট হয়ে যায় এবং নতুন যৌগ গঠন করে। যেমন – লোহার মরিচা পড়া।
লোহার উপর যে মরিচা পড়ে তার রাসায়নিক সংকেত কী?
লোহার মরিচার রাসায়নিক সংকেত হল Fe₂O₃, xH₂O। এটি একটি জলযুক্ত ফেরিক অক্সাইড (Hydrated Ferric Oxide)।
তামা সবুজ হয়ে যায় কেন?
তামা আর্দ্র বাতাসের সংস্পর্শে এসে বেসিক কপার কার্বনেট [CuCO₃, Cu(OH)₂] এবং ক্ষারকীয় কপার সালফেট [CuSO₄.3Cu(OH)₂] গঠন করে, যা তামার উপর সবুজ রঙের আস্তরণ সৃষ্টি করে।
জিঙ্কের ক্ষয় হলে কি হয়?
জিঙ্ক আর্দ্র বাতাসের সংস্পর্শে এসে ক্ষারকীয় জিঙ্ক কার্বনেট [ZnCO₃, 3Zn(OH)₂] গঠন করে, যা জিঙ্কের উপর একটি সাদা রঙের আস্তরণ ফেলে।
অ্যালুমিনিয়ামের ক্ষয় হয় না কেন?
অ্যালুমিনিয়াম বাতাসের সংস্পর্শে আসামাত্রই এর উপর একটি পাতলা কিন্তু অত্যন্ত শক্তিশালী ও অদৃশ্য অ্যালুমিনিয়াম অক্সাইড (Al₂O₃) এর স্তর তৈরি হয়। এই স্তরটি ভিতরের ধাতুকে আরও ক্ষয় হওয়া থেকে রক্ষা করে, তাই এটি আর বিক্রিয়া করে না।
রুপো কালো হয়ে যায় কেন?
রুপো (সিলভার) বাতাসে উপস্থিত সালফার যৌগ (যেমন হাইড্রোজেন সালফাইড) এর সাথে বিক্রিয়া করে সিলভার সালফাইড (Ag₂S) গঠন করে, যার রং কালো হয়। এজন্য রুপোর গহনা বা জিনিস কালো হয়ে যায়।
ধাতুর ক্ষয় রোধের উপায় কী কী?
ধাতুর ক্ষয় রোধের কয়েকটি সাধারণ উপায় হল –
1. পেইন্ট বা তেলের প্রলেপ দেওয়া।
2. গ্যালভানাইজেশন (দস্তার প্রলেপ দেওয়া)।
3. ইলেক্ট্রোপ্লেটিং (ধাতুর উপর অন্য ধাতুর প্রলেপ দেওয়া)।
4. ক্ষয়রোধী মিশ্র ধাতু (যেমন – স্টেইনলেস স্টিল) তৈরি করা।
অ্যালুমিনিয়ামের আস্তরণ এবং জিঙ্কের আস্তরণের মধ্যে পার্থক্য কী?
অ্যালুমিনিয়ামের অক্সাইড আস্তরণটি অত্যন্ত স্থায়ী ও সংহত, যা ভিতরের ধাতুকে সম্পূর্ণরূপে রক্ষা করে। অন্যদিকে, জিঙ্ক কার্বনেটের আস্তরণ তুলনামূলকভাবে ভঙ্গুর হতে পারে এবং এটি ধাতুকে পুরোপুরি সুরক্ষা দিতে পারে না, ফলে জিঙ্ক ধীরে ধীরে ক্ষয়প্রাপ্ত হয়।
এই আর্টিকেলে আমরা মাধ্যমিক ভৌতবিজ্ঞান বিষয়ের একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন — “কয়েকটি ধাতুর নাম, ক্ষয় ও উৎপন্ন যৌগসমূহ লেখো।” — নিয়ে আলোচনা করেছি। এই প্রশ্নটি মাধ্যমিক ভৌতবিজ্ঞানের অষ্টম অধ্যায় “পদার্থের ভৌত ও রাসায়নিক ধর্মসমূহ” -এর “ধাতুবিদ্যা” অংশ থেকে নেওয়া হয়েছে। মাধ্যমিক পরীক্ষা এবং বিভিন্ন চাকরির পরীক্ষায় এই প্রশ্নটি প্রায়ই আসে, তাই এটি শিক্ষার্থীদের জন্য বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ। আশা করি এই আর্টিকেলটি আপনাদের জন্য উপকারী হয়েছে। আপনাদের কোনো প্রশ্ন বা অসুবিধা থাকলে, আমাদের সাথে টেলিগ্রামে যোগাযোগ করতে পারেন, আমরা উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করব। তাছাড়া, নিচে আমাদের এই পোস্টটি আপনার প্রিয়জনের সাথে শেয়ার করুন, যাদের এটি প্রয়োজন হতে পারে। ধন্যবাদ।
মন্তব্য করুন