এই আর্টিকেলে আমরা মাধ্যমিক ভৌতবিজ্ঞান বিষয়ের একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন — “লা ব্লাঙ্ক পদ্ধতিতে কীভাবে হাইড্রোক্লোরিক অ্যাসিড প্রস্তুত করা হয়? অথবা, হাইড্রোক্লোরিক অ্যাসিডের শিল্প প্রস্তুতিতে ব্যবহৃত উপাদান ও বিক্রিয়ার সমীকরণ লেখো।” — নিয়ে আলোচনা করব। এই প্রশ্নটি মাধ্যমিক ভৌতবিজ্ঞানের অষ্টম অধ্যায় “পদার্থের ভৌত ও রাসায়নিক ধর্মসমূহ” -এর “পরীক্ষাগার ও রাসায়নিক শিল্পে অজৈব রসায়ন” অংশ থেকে নেওয়া হয়েছে। মাধ্যমিক পরীক্ষা এবং বিভিন্ন চাকরির পরীক্ষায় এই প্রশ্নটি প্রায়ই আসে, তাই এটি শিক্ষার্থীদের জন্য বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ।

লা ব্লাঙ্ক পদ্ধতিতে কীভাবে হাইড্রোক্লোরিক অ্যাসিড প্রস্তুত করা হয়?
অথবা, হাইড্রোক্লোরিক অ্যাসিডের শিল্প প্রস্তুতিতে ব্যবহৃত উপাদান ও বিক্রিয়ার সমীকরণ লেখো।
সাধারণ লবণের সঙ্গে H₂SO₄ মিশিয়ে 150°C-200°C উষ্ণতায় উত্তপ্ত করলে প্রথমে সোডিয়াম বাইসালফেট (NaHSO₄) ও হাইড্রোজেন ক্লোরাইড গ্যাস উৎপন্ন হয়। পরে 550°C উষ্ণতায় NaHSO₄ ও NaCl -এর বিক্রিয়ার ফলে পুনরায় HCl গ্যাস ও সোডিয়াম সালফেট (Na₂SO₄) পাওয়া যায়।
\(NaCl+H₂SO₄\xrightarrow{150{}^\circ C-200{}^\circ C}NaHSO₄+HCl\\\)\(NaHSO₄+NaCl\xrightarrow{550{}^\circ C}Na₂SO₄+HCl\\\)কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নোত্তর
লা ব্লাঙ্ক পদ্ধতি কী?
লা ব্লাঙ্ক পদ্ধতি হলো একটি প্রাচীন শিল্পপদ্ধতি, যার মাধ্যমে সাধারণ লবণ (সোডিয়াম ক্লোরাইড) থেকে সোডিয়াম কার্বনেট (ধোয়া সোডা) তৈরি করা হত। এই প্রক্রিয়ার একটি গুরুত্বপূর্ণ উপজাত পণ্য হিসেবে হাইড্রোক্লোরিক অ্যাসিড (HCl) পাওয়া যায়।
লা ব্লাঙ্ক পদ্ধতির প্রধান উপজাত বা বাই-প্রোডাক্ট কী?
লা ব্লাঙ্ক পদ্ধতির প্রধান কাঁচামাল সাধারণ লবণ (NaCl) এবং সালফিউরিক অ্যাসিড (H₂SO₄)। এদের বিক্রিয়ায় প্রধান পণ্য হিসেবে সোডিয়াম সালফেট (Na₂SO₄, যাকে সল্ট কেকও বলে) এবং উপজাত পণ্য হিসেবে হাইড্রোক্লোরিক অ্যাসিড (HCl) উৎপন্ন হয়।
লা ব্লাঙ্ক পদ্ধতি কেন এখন কম ব্যবহৃত হয়?
এই পদ্ধতি এখন কম ব্যবহৃত হওয়ার প্রধান কারণগুলি হলো –
1. এটি একটি শ্রমসাধ্য ও কম লাভজনক প্রক্রিয়া।
2. প্রচুর পরিমাণে বর্জ্য (সোডিয়াম সালফেট) উৎপন্ন হয়।
3. বিক্রিয়ায় ব্যবহৃত যন্ত্রপাতির ক্ষয়ক্ষতি বেশি হয়।
4. আধুনিক হ্যাবার পদ্ধতি ও অন্যান্য পদ্ধতি বেশি দক্ষ ও অর্থনৈতিক।
লা ব্লাঙ্ক পদ্ধতির প্রথম ও দ্বিতীয় ধাপের বিক্রিয়া কেন ভিন্ন তাপমাত্রায় করা হয়?
তাপমাত্রার পার্থক্যটি বিক্রিয়ার স্পন্ট্যানিয়িটি (স্বতঃস্ফূর্ততা) এবং গতিবিদ্যার (Kinetics) সাথে সম্পর্কিত।
1. নিম্ন তাপমাত্রায় (150°C-200°C) – শুধুমাত্র একটি হাইড্রোজেন আয়ন (H⁺) প্রতিস্থাপিত হয়ে NaHSO₄ গঠন করে। এটি একটি তুলনামূলকভাবে সহজ বিক্রিয়া।
2. উচ্চ তাপমাত্রায় (550°C) – দ্বিতীয় হাইড্রোজেন আয়নটিকেও প্রতিস্থাপিত করার জন্য বেশি শক্তির প্রয়োজন হয়, যা উচ্চ তাপমাত্রায়ই কেবল সম্ভব। ফলে সম্পূর্ণ নিরপেক্ষ লবণ Na₂SO₄ গঠিত হয়।
বর্তমানে শিল্পে HCl প্রস্তুতের জন্য কোন পদ্ধতি বেশি ব্যবহৃত হয়?
বর্তমানে লা ব্লাঙ্ক পদ্ধতির পরিবর্তে হ্যাবার পদ্ধতি (বা সংশ্লিষ্ট পদ্ধতি) থেকে প্রাপ্ত হাইড্রোজেন (H₂) এবং ক্লোরিন (Cl₂) গ্যাসের সরাসরি সংযোজনের মাধ্যমে HCl গ্যাস তৈরি করা হয়। এটি একটি বেশি কার্যকর, সাশ্রয়ী এবং পরিবেশবান্ধব পদ্ধতি।
বিক্রিয়ার সমীকরণ – H₂(g) + Cl₂(g) → 2HCl(g)
লা ব্লাঙ্ক পদ্ধতির একটি প্রধান উপজাত পণ্য কী?
এই পদ্ধতির একটি প্রধান উপজাত পণ্য হল সোডিয়াম সালফেট (Na₂SO₄), যা গ্লাস শিল্প ও কাগজ শিল্পে ব্যবহার করা হয়।
এই আর্টিকেলে আমরা মাধ্যমিক ভৌতবিজ্ঞান বিষয়ের একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন — “লা ব্লাঙ্ক পদ্ধতিতে কীভাবে হাইড্রোক্লোরিক অ্যাসিড প্রস্তুত করা হয়? অথবা, হাইড্রোক্লোরিক অ্যাসিডের শিল্প প্রস্তুতিতে ব্যবহৃত উপাদান ও বিক্রিয়ার সমীকরণ লেখো।” — নিয়ে আলোচনা করেছি। এই প্রশ্নটি মাধ্যমিক ভৌতবিজ্ঞানের অষ্টম অধ্যায় “পদার্থের ভৌত ও রাসায়নিক ধর্মসমূহ” -এর “পরীক্ষাগার ও রাসায়নিক শিল্পে অজৈব রসায়ন” অংশ থেকে নেওয়া হয়েছে। মাধ্যমিক পরীক্ষা এবং বিভিন্ন চাকরির পরীক্ষায় এই প্রশ্নটি প্রায়ই আসে, তাই এটি শিক্ষার্থীদের জন্য বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ। আশা করি এই আর্টিকেলটি আপনাদের জন্য উপকারী হয়েছে। আপনাদের কোনো প্রশ্ন বা অসুবিধা থাকলে, আমাদের সাথে টেলিগ্রামে যোগাযোগ করতে পারেন, আমরা উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করব। তাছাড়া, নিচে আমাদের এই পোস্টটি আপনার প্রিয়জনের সাথে শেয়ার করুন, যাদের এটি প্রয়োজন হতে পারে। ধন্যবাদ।
মন্তব্য করুন