লাইকার অ্যামোনিয়ার বোতলের ছিপি খোলার সময় বোতলটিকে বরফে ঠান্ডা করে খুলতে হয় কেন?

Souvick

এই আর্টিকেলে আমরা মাধ্যমিক ভৌতবিজ্ঞান বিষয়ের একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন — “লাইকার অ্যামোনিয়ার বোতলের ছিপি খোলার সময় বোতলটিকে বরফে ঠান্ডা করে খুলতে হয় কেন?” — নিয়ে আলোচনা করব। এই প্রশ্নটি মাধ্যমিক ভৌতবিজ্ঞানের অষ্টম অধ্যায় “পদার্থের ভৌত ও রাসায়নিক ধর্মসমূহ” -এর “পরীক্ষাগার ও রাসায়নিক শিল্পে অজৈব রসায়ন” অংশ থেকে নেওয়া হয়েছে। মাধ্যমিক পরীক্ষা এবং বিভিন্ন চাকরির পরীক্ষায় এই প্রশ্নটি প্রায়ই আসে, তাই এটি শিক্ষার্থীদের জন্য বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ।

লাইকার অ্যামোনিয়ার বোতলের ছিপি খোলার সময় বোতলটিকে বরফে ঠান্ডা করে খুলতে হয় কেন?

লাইকার অ্যামোনিয়ার বোতলের ছিপি খোলার সময় বোতলটিকে বরফে ঠান্ডা করে খুলতে হয় কেন?

স্বাভাবিক উষ্ণতায় অ্যামোনিয়া দ্রবণ থেকে গ্যাসে পরিণত হয়ে বোতলের মধ্যে অতিরিক্ত চাপের সৃষ্টি করে। এই অবস্থায় বোতলের ছিপি খুললে গ্যাসীয় অ্যামোনিয়াসহ এর জলীয় দ্রবণ ছিটকে এসে চোখে লাগতে পারে, অ্যামোনিয়া চোখের পক্ষে অত্যন্ত ক্ষতিকারক। এটি চোখে পড়লে চোখ নষ্টও হয়ে যেতে পারে। এজন্য বোতলটিকে ঠান্ডা করে এর ছিপি খুলতে হয়। বোতলটি ঠান্ডা করলে বোতলের মধ্যে গ্যাসীয় অ্যামোনিয়া পুনরায় কিছুটা দ্রবীভূত হয়, ফলে বোতলের মধ্যে অ্যামোনিয়া গ্যাসের চাপ হ্রাস পায়। এই অবস্থায় ছিপি খুললে অ্যামোনিয়া ছিটকে এসে চোখে লাগার সম্ভাবনা থাকে না।

কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নোত্তর

লাইকার অ্যামোনিয়ার বোতল খোলার আগে ঠান্ডা করতেই হবে কেন?

স্বাভাবিক তাপমাত্রায় লাইকার অ্যামোনিয়া (NH₄OH) থেকে অ্যামোনিয়া গ্যাস (NH₃) নির্গত হয়ে বোতলের ভেতরে প্রচণ্ড চাপ সৃষ্টি করে। এই চাপের কারণে হঠাৎ ছিপি খুললে বোতল থেকে বিষাক্ত অ্যামোনিয়া গ্যাস ও দ্রবণ দ্রুত বেরিয়ে এসে ত্বক, শ্বাস-প্রশ্বাসের পথ এবং বিশেষ করে চোখের মারাত্মক ক্ষতি করতে পারে। বোতল ঠান্ডা করলে গ্যাসটি পুনরায় দ্রবণে ফিরে যায়, ফলে বোতলের ভেতরের চাপ কমে যায় এবং নিরাপদে খোলা সম্ভব হয়।

বোতল ঠান্ডা করলে ভেতরের চাপ কমে কীভাবে?

যেকোনো গ্যাসই ঠান্ডা করলে তার দ্রবণে দ্রবীভূত হওয়ার প্রবণতা বেড়ে যায়। বরফ বা ঠান্ডা জলে বোতল রাখলে, বোতলের ভেতরের অ্যামোনিয়া গ্যাসটি পুনরায় জলের সাথে মিশে যায় (দ্রবীভূত হয়)। গ্যাসের পরিমাণ কমে যাওয়ায় বোতলের ভেতরের চাপ স্বাভাবিক হয়ে আসে।

বোতলটি ঠান্ডা করার সর্বোত্তম পদ্ধতি কী?

বোতলটিকে একটি বড় বাটি বা সিঙ্কে রাখুন এবং এর চারপাশে বরফ-ঠান্ডা জল দিন। সাধারণ ফ্রিজের ফ্রিজার কম্পার্টমেন্টে রাখা উচিত নয়, কারণ এটি অতিরিক্ত ঠান্ডা হয়ে গ্যাস বা দ্রবণ জমাট বাঁধতে পারে, যা বিপজ্জনক। সাধারণত 10–15 মিনিট বরফ-ঠান্ডা জলে রাখলেই চাপ কমে যায়।

লাইকার অ্যামোনিয়া চোখে লাগলে কী করবেন?

এটি একটি জরুরি অবস্থা। তাত্ক্ষণিকভাবে প্রচুর পরিমাণে স্বচ্ছ, ঠান্ডা প্রবাহিত জলে অন্তত 15–20 মিনিট ধরে চোখ ধুতে হবে (চোখের পাতা খুলে রেখে)। এরপর অবশ্যই দ্রুত নিকটস্থ হাসপাতালের জরুরি বিভাগে বা চক্ষু বিশেষজ্ঞের শরনাপন্ন হতে হবে। দেরি করলে চোখের স্থায়ী ক্ষতি হতে পারে।

অ্যামোনিয়ার গন্ধ বা বাষ্প শ্বাসের সাথে গ্রহণ করলে কী করবেন?

সঙ্গে সঙ্গে খোলা ও তাজা বাতাসে চলে যান। গভীরভাবে শ্বাস নেওয়া থেকে বিরত থাকুন। যদি শ্বাসকষ্ট, কাশি বা গলা ব্যথা অনুভব করেন, তবে দ্রুত চিকিৎসকের শরনাপন্ন হন।

লাইকার অ্যামোনিয়া সংরক্ষণের সময় কী কী সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত?

লাইকার অ্যামোনিয়া সংরক্ষণের সময় সতর্কতা –
1. বোতল সবসময় শক্তভাবে বন্ধ রাখুন।
2. শীতল, শুষ্ক এবং বায়ু চলাচল করে এমন স্থানে রাখুন।
3. সরাসরি সূর্যালোক বা তাপের উৎস থেকে দূরে রাখুন।
4. শিশু ও পোষা প্রাণীর নাগালের বাইরে রাখুন।
অম্ল (এসিড) জাতীয় দ্রবণের কাছাকাছি রাখবেন না, কারণ এদের বিক্রিয়ায় বিষাক্ত গ্যাস সৃষ্টি হতে পারে।

লাইকার অ্যামোনিয়া ব্যবহারের সময় কী কী ব্যক্তিগত সুরক্ষা সামগ্রী (PPE) ব্যবহার করা উচিত?

লাইকার অ্যামোনিয়া ব্যবহারের সময় ব্যক্তিগত সুরক্ষা সামগ্রী (PPE) ব্যবহার –
1. চোখের সুরক্ষার জন্য সুরক্ষা গগলস।
2. হাতের জন্য রাসায়নিক-প্রতিরোধী গ্লাভস।
3. শরীরের জন্য এপ্রন বা ল্যাব কোট।

এই আর্টিকেলে আমরা মাধ্যমিক ভৌতবিজ্ঞান বিষয়ের একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন — “লাইকার অ্যামোনিয়ার বোতলের ছিপি খোলার সময় বোতলটিকে বরফে ঠান্ডা করে খুলতে হয় কেন?” — নিয়ে আলোচনা করেছি। এই প্রশ্নটি মাধ্যমিক ভৌতবিজ্ঞানের অষ্টম অধ্যায় “পদার্থের ভৌত ও রাসায়নিক ধর্মসমূহ” -এর পরীক্ষাগার ও রাসায়নিক শিল্পে অজৈব রসায়ন” অংশ থেকে নেওয়া হয়েছে। মাধ্যমিক পরীক্ষা এবং বিভিন্ন চাকরির পরীক্ষায় এই প্রশ্নটি প্রায়ই আসে, তাই এটি শিক্ষার্থীদের জন্য বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ। আশা করি এই আর্টিকেলটি আপনাদের জন্য উপকারী হয়েছে। আপনাদের কোনো প্রশ্ন বা অসুবিধা থাকলে, আমাদের সাথে টেলিগ্রামে যোগাযোগ করতে পারেন, আমরা উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করব। তাছাড়া, নিচে আমাদের এই পোস্টটি আপনার প্রিয়জনের সাথে শেয়ার করুন, যাদের এটি প্রয়োজন হতে পারে। ধন্যবাদ।

Please Share This Article

Related Posts

আমাদের চারপাশে কোথাও অ্যামোনিয়া গ্যাস নির্গত হলে সর্বাগ্রে আমাদের চোখে মুখে জলের ঝাপটা দেওয়া উচিত, অ্যাসিডের ঝাপটা নয় কেন?

অ্যামোনিয়া গ্যাসে চোখে মুখে জলের ঝাপটা দেওয়া উচিত, অ্যাসিড নয় কেন?

লাইকার অ্যামোনিয়া ও তরল অ্যামোনিয়ার মধ্যে পার্থক্য কী? তরল অ্যামোনিয়াকে হিমায়করূপে ব্যবহারের কারণ কী?

লাইকার ও তরল অ্যামোনিয়ার পার্থক্য ও তরল অ্যামোনিয়ার হিমায়ক ব্যবহার কারণ লিখো।

অ্যামোনিয়ার ক্ষারধর্মের পরিচয় দাও।

অ্যামোনিয়ার ক্ষারধর্মের পরিচয় দাও।

About The Author

Souvick

Tags

মন্তব্য করুন

SolutionWbbse

"SolutionWbbse" শিক্ষার্থীদের জন্য একটি অনলাইন অধ্যয়ন প্ল্যাটফর্ম। এখানে প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার প্রস্তুতি, মাধ্যমিক পরীক্ষার জন্য গাইডলাইন, এবং বিভিন্ন বিষয়ে পড়াশোনার সাহায্য প্রদান করা হয়। আমাদের মূল লক্ষ্য হলো ইন্টারনেটের মাধ্যমে সকল বিষয়ের শিক্ষণীয় উপকরণ সহজেই সকল শিক্ষার্থীর কাছে পৌঁছে দেওয়া।

Editor Picks

অ্যামোনিয়া গ্যাসে চোখে মুখে জলের ঝাপটা দেওয়া উচিত, অ্যাসিড নয় কেন?

লাইকার ও তরল অ্যামোনিয়ার পার্থক্য ও তরল অ্যামোনিয়ার হিমায়ক ব্যবহার কারণ লিখো।

অ্যামোনিয়ার ক্ষারধর্মের পরিচয় দাও।

অ্যামোনিয়া ট্যাঙ্ক বা কারখানা থেকে অ্যামোনিয়া গ্যাস বেরোতে থাকলে প্রাথমিক সতর্কতা হিসেবে কী করা উচিত?

লাইকার অ্যামোনিয়ার বোতলের ছিপি খোলার সময় বোতলটিকে বরফে ঠান্ডা করে খুলতে হয় কেন?