লীলা নাগ স্মরণীয় কেন?

Souvick

এই আর্টিকেলে আমরা মাধ্যমিক ইতিহাসের একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন “লীলা নাগ স্মরণীয় কেন?” নিয়ে আলোচনা করব। এই প্রশ্নটি মাধ্যমিক ইতিহাস পরীক্ষার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই “লীলা নাগ স্মরণীয় কেন?” প্রশ্নটি মাধ্যমিক ইতিহাসের সপ্তম অধ্যায় “বিশ শতকের ভারতে নারী, ছাত্র ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর আন্দোলন: বৈশিষ্ট্য ও বিশ্লেষণ“ -এর একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন। এই প্রশ্নটি মাধ্যমিক পরীক্ষায় এবং চাকরির পরীক্ষায় প্রায়ই দেখা যায়।

লীলা নাগ স্মরণীয় কেন?
Contents Show

লীলা নাগ স্মরণীয় কেন?

ভূমিকা –

বিংশ শতকে ভারত তথা বাংলার সশস্ত্র বিপ্লবী আন্দোলনে বাংলার নারীসমাজকে বীরদর্পে এগিয়ে আসার আহ্বান করেছিলেন বাংলার মেয়ে লীলা নাগ। তাঁর নেতৃত্বে বাংলার নারীসমাজ সশস্ত্র বিপ্লবী আন্দোলনে যোগদান করে বঙ্গভঙ্গবিরোধী আন্দোলনকে আরও সাফল্যমণ্ডিত করে তুলেছিল।

লীলা নাগের পূর্বপরিচয় –

লীলা নাগের জন্ম হয় ঢাকায়। বেথুন কলেজ থেকে স্নাতক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করার পর বাংলার সশস্ত্র বিপ্লবী আন্দলনে যোগ দেন।

দীপালি সংঘের প্রতিষ্ঠা –

বাংলার নারীসমাজ যাতে ঐক্যবদ্ধভাবে সশস্ত্র আন্দোলনে যোগদান করতে পারে তার জন্যে লীলা নাগ ঢাকায় দীপালি সংঘ নামে একটি নারী সংগঠন প্রতিষ্ঠা করেন। প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদার, কল্পনা দত্ত, বীণা দাস, শান্তি দাস প্রমুখ ছিল এই সংঘের সদস্যা ছিলেন।

দীপালি সংঘ প্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্য –

দীপালি সংঘ প্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্যগুলি হল নিম্নরূপ –

  • নারী সমাজকে সংঘবদ্ধ করে ব্রিটিশ বিরোধী সশস্ত্র বিপ্লবী আন্দোলনে শামিল করা।
  • মেয়েদের বিপ্লবী আন্দোলন পরিচালনার যোগ্য করে তোলা।
  • উচ্চশিক্ষায় নারীদের উৎসাহদান করা।
  • নারীদের মধ্যে আত্মসচেতনতা ও দেশপ্রেম জাগিয়ে তোলা।

লীলা নাগের কার্যকলাপ –

মেয়েদের সাহস ও শক্তিবৃদ্ধির উদ্দেশ্যে দীপালি সংঘে নিয়মিত লাঠিখেলা, শরীরচর্চা, অস্ত্রচালনা শিক্ষা প্রভৃতি শিক্ষা দেওয়া হত। এ ছাড়া মেয়েদের হাতের কাজ, শিল্পকর্ম প্রভৃতি প্রদর্শনের উদ্দেশ্যে ‘দীপালি শিল্প প্রদর্শনী’ গড়ে তোলা হয়।

লীলা নাগের শিক্ষাবিস্তারে ভূমিকা –

লীলা নাগের উদ্যোগে ঢাকায় একটি উচ্চ বালিকা বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হয়। তাঁর যোগ্য সহকর্মী রেণুকা সেন ছাত্রীদের জন্যে একটি হোস্টেল ও কলকাতায় দীপালি সংঘের একটি শাখা স্থাপন করেন। দীপালি সংঘ ঢাকায় 12টি অবৈতনিক প্রাথমিক বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করে। এ ছাড়া তাদের উদ্যোগে দীপালি স্কুল, নারী শিক্ষামন্দির, শিক্ষাভবন প্রভৃতি ইংরেজি উচ্চবিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হয়। লীলা নাগ 1926 খ্রিস্টাব্দে ‘দীপালি ছাত্রী সংঘ ‘ নামে ভারতের প্রথম ছাত্রী 6টি সংগঠন প্রতিষ্ঠা করেন।

লীলা নাগের পত্রিকা প্রকাশ –

দীপালি সংঘের পক্ষ থেকে 1931 খ্রিস্টাব্দে একটি পত্রিকা প্রকাশ করা হয়। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের প্রেরণায় লীলা নাগ এই পত্রিকার নাম রাখেন জয়শ্রী।

মূল্যায়ন –

লীলা নাগ বাংলার নারী সমাজের মধ্যে জাতীয় চেতনা ও সশস্ত্র বিপ্লববাদী আদর্শ জাগরণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন। তিনি শুধু বৈপ্লবিক কর্মকাণ্ডেই নন, সমাজকল্যাণেও নিজেকে উজাড় করে দেন। তিনি ন্যাশনাল সার্ভিস ইন্সটিটিউট নামে একটি জনকল্যাণমূলক সংগঠন প্রতিষ্ঠা করেন। 1946 খ্রিস্টাব্দে ভারতীয় গণপরিষদের সদস্য নির্বাচিত হয়ে ভারতীয় সংবিধান রচনায়ও তিনি বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন।

কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নোত্তর

লীলা নাগ কে ছিলেন?

লীলা নাগ ছিলেন বাংলার একজন প্রখ্যাত বিপ্লবী নেত্রী, সমাজসেবিকা ও নারীশিক্ষার পথিকৃৎ। তিনি ব্রিটিশবিরোধী সশস্ত্র আন্দোলনে সক্রিয় অংশগ্রহণ করেছিলেন এবং নারীদের সংগঠিত করার জন্য দীপালি সংঘ প্রতিষ্ঠা করেন।

লীলা নাগ সম্পর্কে কী জানো?

দীপালি সংঘের প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন লীলা নাগ, তিনি কংগ্রেসে যোগ দেন সুভাষচন্দ্র বসুর অনুপ্রেরণায় এবং সুভাষচন্দ্র বসু ফরওয়ার্ড ব্লক গঠন করলে লীলা নাগ দলত্যাগ করে ফরওয়ার্ড ব্লকে যোগদান করেন। পরবর্তী কালে তিনি ভারতীয় গণপরিষদে যোগ দিয়েছিলেন এবং ভারতীয় সংবিধান রচনায় অংশ নিয়েছিলেন।

লীলা নাগের জন্ম ও শিক্ষা কোথায় হয়েছিল?

তাঁর জন্ম ঢাকায় (বর্তমান বাংলাদেশে) হয়েছিল। তিনি কলকাতার বেথুন কলেজ থেকে স্নাতক এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন।

দীপালি সংঘ কী এবং এর উদ্দেশ্য কী ছিল?

দীপালি সংঘ ছিল লীলা নাগ প্রতিষ্ঠিত একটি নারী বিপ্লবী সংগঠন। এর মূল উদ্দেশ্যগুলি ছিল –
1. নারীদের সশস্ত্র বিপ্লবী আন্দোলনে যুক্ত করা।
2. নারীদের শারীরিক ও মানসিক প্রশিক্ষণ দেওয়া (যেমন – লাঠিখেলা, অস্ত্রচালনা)।
3. নারীশিক্ষা ও স্বাবলম্বনকে উৎসাহিত করা।
4. দেশপ্রেম ও জাতীয়তাবাদী চেতনা জাগ্রত করা।

দীপালি সংঘের কিছু উল্লেখযোগ্য সদস্যা কারা ছিলেন?

প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদার, কল্পনা দত্ত, বীণা দাস, শান্তি দাস প্রমুখ বিপ্লবী নারীরা এই সংঘের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন।

লীলা নাগের শিক্ষাবিস্তারে অবদান কী ছিল?

লীলা নাগের শিক্ষাবিস্তারে অবদান ছিল –
1. তিনি ঢাকায় উচ্চ বালিকা বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেন।
2. দীপালি ছাত্রী সংঘ (ভারতের প্রথম ছাত্রী সংগঠন) গঠন করেন (1926 খ্রিস্টাব্দ)।
3. ঢাকায় 12টি অবৈতনিক প্রাথমিক বিদ্যালয় চালু করেন।
4. নারী শিক্ষার প্রসারে দীপালি স্কুল, নারী শিক্ষামন্দির ইত্যাদি প্রতিষ্ঠা করেন।

লীলা নাগ কোন পত্রিকা প্রকাশ করেছিলেন?

তিনি “জয়শ্রী” নামে একটি পত্রিকা প্রকাশ করেছিলেন (1931 খ্রিস্টাব্দে), যা রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের অনুপ্রেরণায় নামকরণ করা হয়।

লীলা নাগের রাজনৈতিক ভূমিকা কী ছিল?

লীলা নাগের রাজনৈতিক ভূমিকা ছিল –
1. 1946 সালে তিনি ভারতীয় গণপরিষদের সদস্য নির্বাচিত হন এবং ভারতের সংবিধান রচনায় অংশ নেন।
2. তিনি ন্যাশনাল সার্ভিস ইনস্টিটিউট নামে একটি সমাজসেবামূলক সংগঠন প্রতিষ্ঠা করেন।

লীলা নাগকে স্মরণীয় করে রাখার কারণ কী?

লীলা নাগকে স্মরণীয় করে রাখার কারণ –
1. তিনি বাংলার নারীদের বিপ্লবী আন্দোলনে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন।
2. নারীশিক্ষা ও স্বাধীনতা আন্দোলনে তাঁর অবদান অপরিসীম।
3. তিনি নারীদের আত্মনির্ভরশীল ও সচেতন করে গড়ে তুলেছিলেন।

লীলা নাগের মৃত্যু কবে হয়?

লীলা নাগ 1970 সালে মৃত্যুবরণ করেন।


এই আর্টিকেলে আমরা মাধ্যমিক ইতিহাসের একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন “লীলা নাগ স্মরণীয় কেন?” নিয়ে আলোচনা করেছি। এই “লীলা নাগ স্মরণীয় কেন?” প্রশ্নটি মাধ্যমিক ইতিহাসের সপ্তম অধ্যায় “বিশ শতকের ভারতে নারী, ছাত্র ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর আন্দোলন: বৈশিষ্ট্য ও বিশ্লেষণ” -এর একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন। এই প্রশ্নটি মাধ্যমিক পরীক্ষায় এবং চাকরির পরীক্ষায় প্রায়ই দেখা যায়। আশা করি এই আর্টিকেলটি আপনাদের জন্য উপকারী হয়েছে। আপনাদের কোনো প্রশ্ন বা অসুবিধা থাকলে, আমাদের সাথে টেলিগ্রামে যোগাযোগ করতে পারেন, আমরা উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করব। তাছাড়া, নিচে আমাদের এই পোস্টটি আপনার প্রিয়জনের সাথে শেয়ার করুন, যাদের এটি প্রয়োজন হতে পারে। ধন্যবাদ।

Please Share This Article

Related Posts

রাজ্য পুনর্গঠন কমিশন সম্পর্কে একটি টীকা লেখো।

রাজ্য পুনর্গঠন কমিশন সম্পর্কে একটি টীকা লেখো।

1947 খ্রিস্টাব্দে দেশ বিভাজন কী কী সমস্যার সৃষ্টি করেছিল তা বিশ্লেষণ করো।

1947 খ্রিস্টাব্দে দেশ বিভাজন কী কী সমস্যার সৃষ্টি করেছিল তা বিশ্লেষণ করো।

দেশীয় রাজ্য জুনাগড়ের ভারতভুক্তি সম্পর্কে আলোচনা করো।

দেশীয় রাজ্য জুনাগড়ের ভারতভুক্তি সম্পর্কে আলোচনা করো।

About The Author

Souvick

Tags

মন্তব্য করুন

SolutionWbbse

"SolutionWbbse" শিক্ষার্থীদের জন্য একটি অনলাইন অধ্যয়ন প্ল্যাটফর্ম। এখানে প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার প্রস্তুতি, মাধ্যমিক পরীক্ষার জন্য গাইডলাইন, এবং বিভিন্ন বিষয়ে পড়াশোনার সাহায্য প্রদান করা হয়। আমাদের মূল লক্ষ্য হলো ইন্টারনেটের মাধ্যমে সকল বিষয়ের শিক্ষণীয় উপকরণ সহজেই সকল শিক্ষার্থীর কাছে পৌঁছে দেওয়া।

Editor Picks

মাধ্যমিক জীবন বিজ্ঞান – জীবনের প্রবহমানতা – কোশ বিভাজন ও কোশচক্র – রচনাধর্মী প্রশ্নোত্তর

মাধ্যমিক জীবন বিজ্ঞান – জীবনের প্রবহমানতা – কোশ বিভাজন ও কোশচক্র – অতিসংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর

মাধ্যমিক জীবন বিজ্ঞান – জীবনের প্রবহমানতা – কোশ বিভাজন ও কোশচক্র – বিষয়সংক্ষেপ

মাধ্যমিক জীবন বিজ্ঞান – জীবজগতে নিয়ন্ত্রণ ও সমন্বয় – প্রাণীদের সাড়াপ্রদানের একটি প্রকার হিসেবে গমন – রচনাধর্মী প্রশ্নোত্তর

মাধ্যমিক জীবন বিজ্ঞান – জীবজগতে নিয়ন্ত্রণ ও সমন্বয় – প্রাণীদের সাড়াপ্রদানের একটি প্রকার হিসেবে গমন – সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর