মাধ্যমিক ভূগোল – বায়ুমণ্ডল – বায়ুমণ্ডলের ধারণা ও স্তরবিন্যাস – সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন ও উত্তর

Souvick

আমরা আমাদের আর্টিকেলে মাধ্যমিক (দশম শ্রেণী) ভূগোলের দ্বিতীয় অধ্যায় “বায়ুমণ্ডল” -এর “বায়ুমণ্ডলের ধারণা ও স্তরবিন্যাস” বিভাগের কিছু গুরুত্বপূর্ণ “সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন ও উত্তর” নিয়ে আলোচনা করবো। এই প্রশ্নগুলো মাধ্যমিক (দশম শ্রেণী) ভূগোল পরীক্ষার জন্য ও প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার জন্য অনেক গুরুত্বপূর্ণ।

মাধ্যমিক ভূগোল - বায়ুমণ্ডল - বায়ুমণ্ডলের ধারণা ও স্তরবিন্যাস - সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন ও উত্তর
Contents Show

বায়ুমণ্ডল কাকে বলে?

পৃথিবীর মাধ্যাকর্ষণ শক্তির টানে ভূপৃষ্ঠ থেকে প্রায় 10000 কিমি উচ্চতা পর্যন্ত বিস্তৃত যে অদৃশ্য গ্যাসীয় আবরণ পৃথিবীকে বেষ্টন করে আছে, তাকেই বলা হয় বায়ুমণ্ডল। বায়ুমণ্ডল নাইট্রোজেন, কার্বন ডাইঅক্সাইড, অক্সিজেন, হিলিয়াম, নিয়ন, জেনন, ক্রিপটন, ওজোন প্রভৃতি গ্যাস, জলীয়বাষ্প এবং এরোসল বা বিভিন্ন ধরনের কণার একটি যান্ত্রিক মিশ্রণ।

বায়ুমণ্ডলের ঊর্ধ্বসীমা বা বিস্তৃতি কত দূর?

বিজ্ঞানীদের মতে, বায়ুমণ্ডলের ঊর্ধ্বসীমা ভূপৃষ্ঠ থেকে ওপরের দিকে প্রায় 10000 কিমি পর্যন্ত বিস্তৃত। তবে অত উঁচু পর্যন্ত বিস্তৃত থাকলেও বায়ুমণ্ডলের মোট ভরের শতকরা প্রায় 97 ভাগ ভূপৃষ্ঠ থেকে 29 কিমি-র মধ্যে থাকে। কারণ এই অংশে মাধ্যাকর্ষণের টান বেশি এবং ঊর্ধ্বাকাশের বায়ুমণ্ডলের চাপ এসে পড়ে। ফলে এই অংশে বায়ুর ঘনত্ব বেড়ে যায়।

ট্রপোপজ কাকে বলে?

বায়ুমণ্ডলের একেবারে নীচের স্তরের নাম ট্রপোস্ফিয়ার। এই ট্রপোস্ফিয়ারের ঊধর্বসীমায় (নিরক্ষরেখার ওপর প্রায় 18 কিমি উচ্চতায় এবং মেরু অঞ্চলের ওপর প্রায় 8 কিমি উচ্চতায়) যেখানে তাপমাত্রা কমেও না বা বাড়েও না অর্থাৎ প্রায় ধ্রুবক থাকে, তাকে ট্রপোপজ বলা হয়। ট্রপোস্ফিয়ারের ওপর ট্রপোপজের বিস্তৃতি প্রায় আড়াই-তিন কিলোমিটার।

ওজোনস্তর কাকে বলে?

ঊধর্বমণ্ডলের স্ট্র্যাটোস্ফিয়ার স্তরে 20 থেকে 40 কিমি উচ্চতার মধ্যে ওজোন গ্যাসের ঘনত্ব খুবই বেশি। ওজোন-সমৃদ্ধ এই বলয়টিকে তাই ওজোনস্তর বা ওজোনোস্ফিয়ার নামে অভিহিত করা হয়। সূর্য থেকে ক্ষতিকারক অতিবেগুনি রশ্মি এই ওজোনস্তরে শোষিত হয় বলে এই স্তরের উষ্ণতা খুব বেশি।

বায়ুমণ্ডলে জলীয়বাষ্পের গুরুত্ব লেখো।

বায়ুমণ্ডলে জলীয়বাষ্পের গুরুত্ব –

  • বায়ুমণ্ডলে জলীয়বাষ্প আছে বলেই মেঘ, বৃষ্টি, কুয়াশা, শিলাবৃষ্টি, তুষার প্রভৃতি সৃষ্টি হয়।
  • জলীয়বাষ্প তাপশোষণ করে বায়ুমণ্ডলের উষ্ণতা নিয়ন্ত্রণ করে।
  • ঊর্ধ্বাকাশে জলীয়বাষ্পের ঘনীভবনে উৎপন্ন লীনতাপে আবহাওয়া পরিবর্তিত হয়।
  • জলীয়বাষ্প তথা জল ছাড়া পৃথিবীতে জীবনের কোনো অস্তিত্বই থাকত না।

স্ট্র্যাটোস্ফিয়ারের অপর নাম ওজোনোস্ফিয়ার কেন?

বায়ুমণ্ডলের সর্বনিম্ন স্তর ট্রপোস্ফিয়ার। এর ওপর গড়ে 12 কিমি থেকে 50 কিমি উচ্চতা পর্যন্ত দ্বিতীয় স্তরটির নাম স্ট্র্যাটোস্ফিয়ার। এই স্তরের মূল বৈশিষ্ট্য হল উচ্চতা বৃদ্ধির সাথে সাথে উষ্ণতা বৃদ্ধি। এর কারণ এই স্তরে 20 কিমি থেকে 40 কিমি উচ্চতার মধ্যে ওজোন গ্যাসের ঘনত্ব খুব বেশি এবং এই ওজোন গ্যাসই সূর্যের অতিবেগুনি রশ্মি শোষণ করে এই স্তরকে উষ্ণ করে তোলে। প্রকৃতপক্ষে স্ট্র্যাটোস্ফিয়ারের সিংহভাগ জুড়ে ওজোনসমৃদ্ধ এই বলয়টি থাকার জন্যই স্ট্র্যাটোস্ফিয়ার স্তরটি বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। আর একারণেই স্ট্র্যাটোস্ফিয়ারকে ওজোনোস্ফিয়ার বা ওজোনমণ্ডল নামেও অভিহিত করা হয়।

বায়ুমণ্ডলে ওজোন গ্যাসের প্রয়োজনীয়তা কী?

বায়ুমণ্ডলে ওজোন গ্যাসের গুরুত্ব অনস্বীকার্য। যেমন –

  • ক্ষতিকারক অতিবেগুনি রশ্মি থেকে রক্ষা – সূর্য থেকে আগত অত্যন্ত ক্ষতিকারক অতিবেগুনি রশ্মি ওজোনস্তরে শোষিত হওয়ায় ভূপৃষ্ঠে এসে পৌঁছোতে পারে না। এর ফলে জীবজগৎ ও প্রাণীজগতকে ক্ষতিকর রশ্মি থেকে রক্ষা করে।
  • অক্সিজেন উৎপাদন – ওজোন গ্যাসের অণুগুলি ভেঙে গিয়ে অক্সিজেন গ্যাস উৎপন্ন হয়, যা মানুষসহ প্রাণীকূল শ্বসনে ব্যবহার করে।
  • বায়ুমণ্ডলে উষ্ণতার পরিবর্তন – ওজোনের পরিমাণ বাড়া বা কমার ওপর উষ্ণতার পরিবর্তন নির্ভর করে। বায়ুতে ওজোন গ্যাসের পরিমাণ বাড়লে উষ্ণতাও বাড়ে। ওজোন উর্ধ্ব স্ট্র্যাটোস্ফিয়ারে সূর্যের অতিবেগুনি রশ্মি শোষণ করে বলে তাপের সঞ্চার হয়।

হোমোস্ফিয়ার বা সমমণ্ডল কী?

হোমোস্ফিয়ার -এর অর্থ – ইংরেজি শব্দ হোমোস্ফিয়ার -এর বাংলা প্রতিশব্দ সমমণ্ডল।
হোমোস্ফিয়ার স্তরের বিস্তার – ভূপৃষ্ঠ থেকে ওপরের দিকে প্রায় 90 কিমি পর্যন্ত বিস্তৃত।

হোমোস্ফিয়ার স্তরের উপাদান – বায়ুমণ্ডলের রাসায়নিক গঠন, বিশেষ করে নাইট্রোজেন, অক্সিজেন, কার্বন ডাইঅক্সাইড, আর্গন, হিলিয়াম প্রভৃতি বিভিন্ন গ্যাসের অনুপাত প্রায় একই ধরনের থাকে। এজন্য বায়ুমণ্ডলের এই স্তরটিকে হোমোস্ফিয়ার বা সমমণ্ডল বলা হয়।

হেটেরোস্ফিয়ার বা বিষমমণ্ডল কাকে বলে?

হেটেরোস্ফিয়ার -এর অর্থ – ইংরেজি শব্দ হেটেরোস্ফিয়ার -এর বাংলা প্রতিশব্দ বিষমমণ্ডল।

হেটেরোস্ফিয়ার স্তরের বিস্তার – হোমোস্ফিয়ারের পর থেকে বায়ুমণ্ডলের পরবর্তী অংশে (90 কিমি থেকে প্রায় 10000 কিমি পর্যন্ত) বায়ুমণ্ডলের গ্যাসীয় উপাদানসমূহের অনুপাত সমান থাকে না। তাই এই অংশকে হেটেরোস্ফিয়ার বা বিষমমণ্ডল বলা হয়।

হেটেরোস্ফিয়ার স্তরের উপাদান – উপাদানগুলির অনুপাত অনুসারে এই স্তরটিকে চারটি উপবিভাগে ভাগ করা যায় –

  1. আণবিক নাইট্রোজেন স্তর (প্রায় 90-200 কিমি),
  2. পারমাণবিক অক্সিজেন স্তর (প্রায় 200-1100 কিমি),
  3. হিলিয়াম স্তর (প্রায় 1100-3500 কিমি) এবং
  4. হাইড্রোজেন স্তর (প্রায় 3500-10000 কিমি)।

ট্রপোস্ফিয়ার বা ক্ষুব্ধমণ্ডল কী?

বায়ুমণ্ডলের একেবারে নীচের স্তরের যে অংশটিতে উচ্চতা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে তাপমাত্রা কমতে থাকে, তাকে ট্রপোস্ফিয়ার বা ক্ষুব্ধমণ্ডল বলা হয়।

ট্রপোস্ফিয়ার স্তরের বিস্তৃতি – নিরক্ষীয় অঞ্চলে প্রায় 16-18 কিমি এবং মেরু অঞ্চলে প্রায় 8-9 কিমি।

ট্রপোস্ফিয়ার স্তরের বৈশিষ্ট্য –

  • সাধারণভাবে দেখা যায়, এখানে প্রতি 1000 মিটার উচ্চতা বৃদ্ধিতে 6.4°C হারে উষ্ণতা কমে এবং এইভাবে কমতে কমতে ট্রপোস্ফিয়ারের ঊর্ধ্বসীমায় বায়ুর তাপমাত্রা প্রায় -57°C থেকে -60°Cপর্যন্ত নেমে যায়।
  • বায়ুমণ্ডলের এই অংশে বিভিন্ন গ্যাসীয় উপাদান, জলীয়বাষ্প, ধূলিকণা ইত্যাদি যথেষ্ট পরিমাণে থাকে এবং এখানে মেঘের উপস্থিতি লক্ষ করা যায়।

স্ট্র্যাটোস্ফিয়ার বা শান্তমণ্ডল কাকে বলে?

স্ট্র্যাটোস্ফিয়ার স্তরের অবস্থান ও বিস্তৃতি – ট্রপোপজের ঊর্ধ্বে যে বায়ুস্তর আছে, তার নাম স্ট্র্যাটোস্ফিয়ার। ট্রপোপজের ঊর্ধ্বে (ভূপৃষ্ঠ থেকে) প্রায় 50 কিমি উচ্চতা পর্যন্ত এই স্ট্র্যাটোস্ফিয়ার স্তরটি বিস্তৃত।

স্ট্র্যাটোস্ফিয়ার স্তরের বৈশিষ্ট্য –

এই স্তরের মধ্যে দিয়ে যতই ওপরে ওঠা যায় তাপমাত্রা ক্রমশ বাড়তে থাকে এবং প্রায় 50 কিমি উচ্চতায় বায়ুর তাপমাত্রা প্রায় – 4°C -এর সামান্য বেশি হয়।
স্ট্র্যাটোস্ফিয়ারের ঊর্ধ্বসীমার নাম স্ট্র্যাটোপজ। স্ট্র্যাটোস্ফিয়ারের মধ্যে তাপমাত্রা বেড়ে যাওয়ার প্রধান কারণ – বায়ুমণ্ডলের এই অংশে ওজোনস্তরের অস্তিত্ব।

মেসোস্ফিয়ার কী?

মেসোস্ফিয়ার স্তরের অবস্থান ও বিস্তৃতি – স্ট্র্যাটোস্ফিয়ারের ঊর্ধ্বের বায়ুস্তরের নাম মেসোস্ফিয়ার। স্ট্রাটোপজের ওপর (ভূপৃষ্ঠ থেকে) প্রায় 80 কিমি উচ্চতা পর্যন্ত মেসোস্ফিয়ারের বিস্তৃতি।

মেসোস্ফিয়ার স্তরের বৈশিষ্ট্য –

  • এই স্তরে উচ্চতা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে বায়ুর তাপমাত্রা কমতে থাকে।
  • মেসোস্ফিয়ারের ঊর্ধ্বসীমাকে মেসোপজ বলে। এখানে বায়ুর তাপমাত্রা কমে হয় প্রায় -93°C।
  • মহাকাশ থেকে যেসব উল্কা পৃথিবীর দিকে ছুটে আসে, সেগুলি বায়ুমণ্ডলের সঙ্গে ঘর্ষণে এই মেসোস্ফিয়ারের মধ্যে এসে পুড়ে ছাই হয়ে যায়।

আয়নোস্ফিয়ার কাকে বলে?

মেসোপজের ওপর বায়ুমণ্ডলের যে স্তর আছে তার নাম থার্মোস্ফিয়ার। বায়ু এখানে খুব হালকা এবং প্রখর সূর্যরশ্মির জন্য ওই বায়ু আয়নিত হয়ে আছে। অসংখ্য তড়িৎগ্রস্ত কণা বা আয়ন (ion) -এর অস্তিত্বের জন্য এই স্তরটির নিম্নাংশ আয়নোস্ফিয়ার নামে পরিচিত।

আয়নোস্ফিয়ারের গুরুত্ব কী?

আয়নোস্ফিয়ারের গুরুত্ব হল –

  • সূর্য থেকে প্রতিনিয়ত বিচ্ছুরিত ক্ষতিকারক স্বল্পদৈর্ঘ্যের তরঙ্গগুলি আয়নোস্ফিয়ারে শোষিত হয়।
  • এই স্তরের জন্যই পৃথিবীর এক প্রান্ত থেকে অপরপ্রান্তে বেতার সংযোগ রক্ষা করা সম্ভব হয়।
  • আয়নোস্ফিয়ারে চৌম্বক বিক্ষেপজনিত কারণে সৃষ্ট অসংখ্য মুক্ত ইলেকট্রন কণা দ্বারা প্রতিফলিত তরঙ্গ সুমেরুতে সুমেরুপ্রভা এবং কুমেরুতে কুমেরুপ্রভা নামের মেরুজ্যোতির সৃষ্টি করে।

থার্মোস্ফিয়ার কী?

মেসোপজের উর্ধ্বে 80 থেকে 640 কিমি পর্যন্ত বিস্তৃত বায়ুস্তরে তাপমাত্রা অত্যন্ত দ্রুতহারে বাড়ে। এজন্য এই স্তরের নাম থার্মোস্ফিয়ার। এই স্তরের নিম্নসীমায় (অর্থাৎ 80 কিমি উচ্চতায়) তাপমাত্রা বাড়তে বাড়তে এই স্তরের ঊর্ধ্বসীমায় (অর্থাৎ 640 কিমি উচ্চতায়) তাপমাত্রা হয় প্রায় 1200°C। এই স্তরে হিলিয়াম, পারমাণবিক অক্সিজেন ও আণবিক নাইট্রোজেন গ্যাস পাওয়া যায়।

এক্সোস্ফিয়ার সম্পর্কে লেখো।

এক্সোস্ফিয়ার স্তরের অবস্থান – থার্মোস্ফিয়ারের পরবর্তী স্তরটির নাম এক্সোস্ফিয়ার। এর বিস্তার 600-1500 কিমি।

এক্সোস্ফিয়ার স্তরের বৈশিষ্ট্য –

  • এখানে বায়ুমণ্ডল খুব হালকা।
  • এখানেও উচ্চতা বৃদ্ধির সঙ্গেঙ্গ সঙ্গে বায়ুর তাপমাত্রা বাড়তে থাকে, তবে আয়নোস্ফিয়ারের মতো অত দ্রুত নয়।
  • ভূপৃষ্ঠ থেকে 650 কিমি উচ্চতায় তাপমাত্রা বেড়ে হয় প্রায় 1240°C। 
  • এক্সোফিয়ারে হাইড্রোজেন ও হিলিয়াম গ্যাস পাওয়া যায় যদিও এই দুটি গ্যাস এখানে ভীষণভাবে ছড়িয়ে আছে।

বায়ুমণ্ডলের উপাদানসমূহ কী কী?

বায়ুমণ্ডলে তিন ধরনের উপাদান আছে –

  1. গ্যাসীয় উপাদান,
  2. জলীয়বাষ্প এবং
  3. ধূলিকণা।

বায়ুমণ্ডলে যেসব গ্যাসীয় উপাদান আছে সেগুলির মধ্যে নাইট্রোজেন (শতকরা 78.08 ভাগ) এবং অক্সিজেন (শতকরা 20.94 ভাগ) প্রধান। এই দুটি গ্যাসীয় উপাদান ছাড়া বায়ুমণ্ডলে খুব অল্প মাত্রায় আর্গন (শতকরা 0.93 ভাগ), কার্বন ডাইঅক্সাইড (শতকরা 0.033 ভাগ), হিলিয়াম, হাইড্রোজেন, ক্রিপটন, মিথেন, নিয়ন, ওজোন, জেনন প্রভৃতি গ্যাসীয় উপাদান আছে। এ ছাড়া জলীয়বাষ্প, সামান্য ধূলিকণা, লবণের কণা, উল্কাভস্ম, ধাতব কণা প্রভৃতি বায়ুমণ্ডলে ভাসমান অবস্থায় থাকে।

নিম্ন বায়ুমণ্ডল কী?

নিম্ন বায়ুমণ্ডলের ধারণা – ভূপৃষ্ঠ থেকে প্রায় ৪০ কিমি উচ্চতা পর্যন্ত বিস্তৃত বায়ুমণ্ডলের গ্যাসীয় উপাদানের অনুপাত প্রায় একই থাকে। তাই একে নিম্ন বায়ুমণ্ডল বলে।

নিম্ন বায়ুমণ্ডলের বৈশিষ্ট্য –

  • এখানে পৃথিবীর মাধ্যাকর্ষণ শক্তির টান বেশি বলে এখানে বায়ুর ঘনত্ব সবথেকে বেশি।
  • পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলের মোট ভরের প্রায় 97 ভাগ ভূপৃষ্ঠ থেকে প্রায় 29 কিমি উচ্চতার মধ্যে অবস্থান করে।

ট্রপোস্ফিয়ারের উচ্চতা কত?

বায়ুমণ্ডলের সবচেয়ে নীচের অংশ ট্রপোস্ফিয়ার। এই স্তরটির উচ্চতা কিন্তু সব জায়গায় সমান নয়। নিরক্ষীয় অঞ্চলে এর উচ্চতা 16-18 কিমি, কিন্তু মেরু অঞ্চলে এর উচ্চতা 8-9 কিমি।

উষ্ণতা হ্রাসের স্বাভাবিক হার কী?

উচ্চতা বাড়ার সাথে সাথে প্রতি কিমিতে 6.4°C উষ্ণতা কমতে থাকে। একে স্বাভাবিক উষ্ণতা হ্রাসের হার বলে।

এরোসল কী?

বায়ুতে ভাসমান বিভিন্ন প্রকার ধূলিকণাকে এককথায় এরোসল বলে। সাধারণত আগ্নেয়গিরির উৎক্ষিপ্ত ছাই, উল্কার ধ্বংসাবশেষ, কলকারখানার পোড়া ছাই, ফুলের রেণু প্রভৃতি সূক্ষ্ম কণা হিসেবে বায়ুতে মিশে এই এরোসল সৃষ্টি করে।

ভ্যান অ্যালেন বিকিরণ বেল্ট কী?

পৃথিবীর চৌম্বকক্ষেত্রে অবস্থিত আহিত কণার (charged particles) একটি প্লাজমা স্তর হল ভ্যান অ্যালন বিকিরণ বেল্ট, যা ম্যাগনেটোস্ফিয়ারে দেখা যায়। এই স্তর ভূপৃষ্ঠের থেকে 1000-60000 কিলোমিটার পর্যন্ত বিস্তৃত। 1958 সালে আমেরিকার বিশিষ্ট পদার্থবিদ ভ্যান অ্যালেন এই স্তরটি আবিষ্কার করেন বলে একে ভ্যান অ্যালেন বিকিরণ বেল্ট বলে।

সমতাপ অঞ্চল কাকে বলে?

থার্মোস্ফিয়ারের ওপরের স্তরে তাপমাত্রার পরিমাণ প্রায় সমান থাকে বা স্থির থাকে। অর্থাৎ এই স্তরে তাপমাত্রার বিশেষ কোনো পরিবর্তন ঘটে না। তাই এই অঞ্চলকে সমতাপ অঞ্চল বলে।

হাইড্রোজেন স্তর কী?

ভূপৃষ্ঠের 3500 কিমি থেকে 10000 কিমি পর্যন্ত অঞ্চলটি প্রধানত হাইড্রোজেন পরমাণু দিয়ে গঠিত। তাই একে হাইড্রোজেন স্তর বলে। যত ওপরে ওঠা যায় ততই এই স্তর পাতলা হতে থাকে এবং চাপ ক্রমশ কমতে থাকে।

পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলের ওজোনস্তরের বিনাশ ঠেকাতে কী কী ব্যবস্থা নেওয়া হয়?

রেফ্রিজারেটর, বডি স্প্রে, এয়ারকন্ডিশনার, প্রসাধনী দ্রব্য, কীটনাশক স্প্রেতে প্রচুর ক্লোরোফ্লুরোকার্বন ব্যবহার করা হয়। এগুলিই ওজোন ধ্বংসের মূল উৎস। এগুলির ব্যবহার বন্ধ করে দিলে ওজোনস্তর অনেকটা সুরক্ষিত থাকতে পারে।

ওজোনস্তর ধ্বংসকারী গ্যাসগুলির নাম লেখো।

ওজোনস্তর ধ্বংসকারী গ্যাসগুলি হল ক্লোরোফ্লুরোকার্বন (CFC), হ্যালন, কার্বন টেট্রাক্লোরাইড (CCl4), মিথাইল ব্রোমাইড (CH3Br), নাইট্রাস অক্সাইড (N2O), মিথেন (CH4) প্রভৃতি।

মৌক্তিক বা শুক্তি মেঘ কাকে বলে?

অ্যান্টার্কটিকা মহাদেশের ওপর ঊর্ধ্ব স্ট্র্যাটোস্ফিয়ারে 15-25 কিমি উচ্চতায় শীতকালে মাঝে মাঝে সামান্য মেঘের সঞ্চার হয়। একে মৌক্তিক মেঘ বা শুক্তি মেঘ (nacreous cloud) বলে। এই মেঘে বৃষ্টিপাত প্রায় ঘটেই না।

আয়নোস্ফিয়ার নামকরণ কেন হয়েছে?

সূর্য থেকে আগত রশ্মি যেমন রঞ্জনরশ্মি, গামারশ্মি, অতিবেগুনি রশ্মি, বায়ুমণ্ডলের পরমাণু ভেঙে ঋণাত্মক ইলেকট্রন বহিষ্কার ও ধনাত্মক বস্তুকণার সৃষ্টি করে। তাই এই স্তরের নাম আয়নোস্ফিয়ার। ইলেকট্রন ও প্রোটনের সংঘাত থেকেই এই স্তরে মেরুপ্রভার সৃষ্টি হয়।


আমরা আমাদের আর্টিকেলে মাধ্যমিক (দশম শ্রেণী) ভূগোলের দ্বিতীয় অধ্যায় “বায়ুমণ্ডল” -এর “বায়ুমণ্ডলের ধারণা ও স্তরবিন্যাস” বিভাগের কিছু গুরুত্বপূর্ণ “সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন ও উত্তর” নিয়ে আলোচনা করেছি। এই প্রশ্নগুলো মাধ্যমিক (দশম শ্রেণী) ভূগোল পরীক্ষার জন্য ও প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার জন্য অনেক গুরুত্বপূর্ণ। কারণ এই প্রশ্নগুলি মাধ্যমিক (দশম শ্রেণী) পরীক্ষা বা চাকরির পরীক্ষায় প্রায় দেখা যায়। আশা করি এই আর্টিকেলটি আপনাদের জন্য উপকারী হয়েছে। আশা করি এই আর্টিকেলটি আপনাদের জন্য উপকারী হয়েছে। আপনাদের কোনো প্রশ্ন বা অসুবিধা হলে, আপনারা আমাদের সাথে টেলিগ্রামে যোগাযোগ করতে পারেন, আমরা উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করবো। তাছাড়া নিচে আমাদের এই পোস্টটি আপনার প্রিয়জনের সাথে শেয়ার করুন, যাদের এটি প্রয়োজন হতে পারে। ধন্যবাদ।

Categories -
Please Share This Article

Related Posts

মাধ্যমিক ভূগোল - উপগ্রহ চিত্র ও ভূবৈচিত্র্যসূচক মানচিত্র - মানচিত্র চিহ্নিতকরণ

মাধ্যমিক ভূগোল – উপগ্রহ চিত্র ও ভূবৈচিত্র্যসূচক মানচিত্র – মানচিত্র চিহ্নিতকরণ

মাধ্যমিক ভূগোল - উপগ্রহ চিত্র ও ভূবৈচিত্র্যসূচক মানচিত্র - ব্যাখ্যামূলক প্রশ্ন ও উত্তর

মাধ্যমিক ভূগোল – উপগ্রহ চিত্র ও ভূবৈচিত্র্যসূচক মানচিত্র – ব্যাখ্যামূলক প্রশ্ন ও উত্তর

মাধ্যমিক ভূগোল - উপগ্রহ চিত্র ও ভূবৈচিত্র্যসূচক মানচিত্র - সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন ও উত্তর

মাধ্যমিক ভূগোল – উপগ্রহ চিত্র ও ভূবৈচিত্র্যসূচক মানচিত্র – সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন ও উত্তর

About The Author

Souvick

Tags

মন্তব্য করুন

SolutionWbbse

"SolutionWbbse" শিক্ষার্থীদের জন্য একটি অনলাইন অধ্যয়ন প্ল্যাটফর্ম। এখানে প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার প্রস্তুতি, মাধ্যমিক পরীক্ষার জন্য গাইডলাইন, এবং বিভিন্ন বিষয়ে পড়াশোনার সাহায্য প্রদান করা হয়। আমাদের মূল লক্ষ্য হলো ইন্টারনেটের মাধ্যমে সকল বিষয়ের শিক্ষণীয় উপকরণ সহজেই সকল শিক্ষার্থীর কাছে পৌঁছে দেওয়া।

Editor Picks

Madhyamik Geography Suggestion 2026 – শূন্যস্থান পূরণ

Madhyamik Geography Suggestion 2026 Wbbse – শুদ্ধ ও অশুদ্ধ

Madhyamik Geography MCQ Suggestion 2026 Wbbse

Madhyamik History Suggestion 2026 Wbbse (Marks 4)

Madhyamik History Suggestion 2026 – সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন (2 Marks)