এখনই আমাদের Telegram Community গ্রুপে যোগ দিন।। এখানে WBBSE বোর্ডের পঞ্চম শ্রেণি থেকে দশম শ্রেণির যেকোনো বিষয়ভিত্তিক সমস্যা শেয়ার করতে পারেন এবং একে অপরের সাহায্য করতে পারবেন। এছাড়া, কোনও সমস্যা হলে আমাদের শিক্ষকরা তা সমাধান করে দেবেন।

Telegram Logo Join Our Telegram Community

দশম শ্রেণি – বাংলা – বহুরূপী – বিষয়সংক্ষেপ

আজকের আর্টিকেলে আমরা মাধ্যমিক বাংলার চতুর্থ পাঠের প্রথম অংশ, ‘বহুরূপী,’ এর বিষয়সংক্ষেপ নিয়ে আলোচনা করবো। এই প্রশ্নগুলো মাধ্যমিক পরীক্ষার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, কারণ এ ধরনের প্রশ্ন প্রায়ই পরীক্ষায় দেখা যায়। আশা করি, এই আর্টিকেলটি আপনাদের পরীক্ষার প্রস্তুতির জন্য উপকারী হবে।

দশম শ্রেণি – বাংলা – বহুরূপী – বিষয়সংক্ষেপ
দশম শ্রেণি – বাংলা – বহুরূপী – বিষয়সংক্ষেপ

লেখক পরিচিতি

ভূমিকা –

বাংলা সাহিত্যের ইতিহাসে কথাসাহিত্যিক সুবোধ ঘোষ এক স্মরণীয় নাম। সাহিত্যজগতে তাঁর প্রবেশ ঘটে কিছুটা দেরিতে হলেও, তিনি তাঁর মেধা, চিন্তাধারা এবং অভিজ্ঞতার দ্বারা বাংলা সাহিত্যকে বিভিন্ন কালজয়ী রচনার মাধ্যমে সমৃদ্ধ করেছেন।

জন্ম ও শৈশব –

বিশিষ্ট কথাসাহিত্যিক সুবোধ ঘোষ 1909 সালের 14 সেপ্টেম্বর বিহারের হাজারিবাগে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর আদি বাড়ি ছিল বাংলাদেশের ঢাকা জেলার বিক্রমপুরের বহর গ্রামে।

শিক্ষাজীবন –

সুবোধ ঘোষ হাজারিবাগের সেন্ট কলম্বাস কলেজের ছাত্র ছিলেন। বিশিষ্ট দার্শনিক ও গবেষক মহেশ ঘোষের লাইব্রেরিতে তিনি পড়াশোনা করতেন। প্রত্নতত্ত্ব, পুরাতত্ত্ব এবং সামরিক বিদ্যায়ও তাঁর দক্ষতা ছিল।

কর্মজীবন ও সাহিত্যজীবন –

সুবোধ ঘোষের কর্মজীবন শুরু হয় বিহারের আদিবাসী অঞ্চলে বাসের কন্ডাক্টর হিসেবে। এরপর তিনি সার্কাসের ক্লাউন, মুম্বাই পৌরসভার চতুর্থ শ্রেণির কাজ, চায়ের ব্যবসা, বেকারির ব্যবসা, মালগুদামের স্টোরকিপার প্রভৃতি কাজে যুক্ত ছিলেন। দীর্ঘ পথ পরিক্রমার পর, তিরিশের দশকের শেষে তিনি আনন্দবাজার পত্রিকার রবিবাসরীয় বিভাগে সহকারী হিসেবে যোগ দেন। তাঁর লেখালেখির সময়কাল 1940 থেকে 1980 সাল পর্যন্ত বিস্তৃত। 1946 সালের 16 আগস্ট নোয়াখালির দাঙ্গাবিধ্বস্ত এলাকায় গান্ধিজির সহচর হিসেবে কাজ করার অভিজ্ঞতা তাঁকে গভীরভাবে প্রভাবিত করে। সেই সময়ের সাম্প্রদায়িকতা এবং হিংস্রতা তাঁর লেখায় প্রতিফলিত হয়েছে।

সুবোধ ঘোষের প্রথম গল্প ‘অযান্ত্রিক’ এবং তাঁর আরেকটি বিখ্যাত গল্প ‘থির বিজুরি’। গল্পকার হিসেবে যেমন তাঁর প্রতিভা প্রকাশ পায়, তেমনি ঔপন্যাসিক হিসেবেও তিনি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছেন। তাঁর লেখা অন্যতম উপন্যাস ‘তিলাঞ্জলি’ (1944), যেখানে কংগ্রেস সাহিত্য সংঘের মতাদর্শ প্রতিফলিত হয়েছে।

তাঁর কর্মজীবনে আনন্দবাজার পত্রিকায় সহকারী হিসেবে যোগ দেওয়ার পর, তিনি ক্রমে সিনিয়র অ্যাসিস্ট্যান্ট এডিটর এবং পরে সম্পাদকীয় বিভাগের অন্যতম প্রধান লেখক হিসেবে উঠে আসেন। তাঁর উল্লেখযোগ্য রচনাগুলির মধ্যে রয়েছে — ‘ভারত প্রেমকথা’ (মহাভারতের গল্প অবলম্বনে রচিত), ‘গঙ্গোত্রী’ (1947), ‘ত্রিযামা’ (1950), ‘ভালবাসার গল্প’, ‘শতকিয়া’ (1958) প্রভৃতি। এছাড়া তাঁর কয়েকটি গল্পসংকলন হল— ‘ফসিল’, ‘পরশুরামের কুঠার’, ‘জতুগৃহ’।

পুরস্কার –

সুবোধ ঘোষ তাঁর সাহিত্যকর্মের জন্য আনন্দ পুরস্কার এবং কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে জগত্তারিণী পদক লাভ করেন।

জীবনাবসান –

1980 সালের 10 মার্চ এই বিশিষ্ট কথাসাহিত্যিক প্রয়াত হন।

উৎস

সুবোধ ঘোষের গল্পসমগ্র, তৃতীয় খণ্ড থেকে ‘বহুরূপী‘ গল্পটি নেওয়া হয়েছে।

বিষয়সংক্ষেপ

বহুরূপী গল্পটি মূলত এক বহুরূপীর জীবন নিয়ে লেখা হয়েছে। গল্পের কেন্দ্রীয় চরিত্র হরিদা শহরের সবচেয়ে ছোটো গলির মধ্যেই বাস করতেন। সেখানে নিয়মিত আড্ডাও বসত। রোজকার চাকরি করতে যাওয়া হরিদার কখনই পোষাত না। তিনি ছিলেন এক বহুরূপী। মাঝেমধ্যে তিনি বিভিন্ন রূপ ধারণ করতেন — কখনও পাগল, কখনও বাউল, কখনও কাপালিক, আবার কখনও বোঁচকা কাঁধে বুড়ো কাবুলিওয়ালা, আবার কখনও পুলিশ। তাঁর এইসব রূপ দেখে অনেকে কিছু পয়সা দিতেন, যা ছিল তাঁর রোজগারের একটি উপায়। পুলিশ সেজে তিনি কখনও ঘুষও নিয়েছেন। তাঁর এইসব রূপ দেখে লোকজন কখনও বিরক্ত হতো, আবার কেউ কেউ আনন্দিত হতো, কেউ বিস্মিত হতো। বহুরূপী সেজে তিনি রাস্তায় রাস্তায় ঘুরতেন। জগদীশবাবুর বাড়িতে হিমালয়ের গুহানিবাসী এক সন্ন্যাসীর আগমন এবং অভ্যর্থনার কথা শুনে মোটা রকমের উপার্জনের আশায় তিনি সন্ন্যাসী সেজে জগদীশবাবুর বাড়িতে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন।

সৌম্য, শান্ত, জ্ঞানী মানুষ জগদীশবাবু। সাদা উত্তরীয় এবং ছোটো বহরের থান পরে এক বিরাগী মানুষের বেশ ধরে বহুরূপী হরিদা হাজির হন জগদীশবাবুর বাড়িতে। তাঁর সাজপোশাক, উদাত্ত শান্ত দৃষ্টি দেখে কেউ বুঝতেও পারেনি যে তিনি আসলে হরিদা। যেই রূপই তিনি ধারণ করতেন, সেই রূপের সঙ্গে এতটাই একাত্ম হয়ে যেতেন যে তাঁকে বহুরূপী বলে কেউ চিনতে পারত না। মনে হতো তিনি যেন সত্যিই সেই চরিত্রে পরিণত হয়েছেন। এখানেও এর ব্যতিক্রম ঘটেনি। হরিদা সত্যিই যেন বিরাগী হয়ে উঠেছিলেন। তিনি তখন ধন, যৌবন, সংসার — সবকিছু থেকে নিজেকে দূরে সরিয়ে রেখেছিলেন। তাই জগদীশবাবু তাঁকে তীর্থভ্রমণের জন্য টাকা দিতে চাইলে তিনি তা ফিরিয়ে দেন। আসলে, এইভাবে তিনি তাঁর বহুরূপী পেশাটাকেই সম্মান দিয়েছিলেন। কারণ এই পেশা ছিল তাঁর ভালোবাসা।

নামকরণ

যে – কোনো সাহিত্যের ক্ষেত্রেই নামকরণ একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। আর এই নামকরণ সাধারণত বিষয়বস্তুকেন্দ্রিক, ভাবকেন্দ্রিক বা ব্যঞ্জনাধর্মী হয়ে থাকে। যে – কোনো সাহিত্যের অন্তর্নিহিত ভাবও এই নামকরণের মাধ্যমেই ফুটিয়ে তোলা হয়।

শহরের সবচেয়ে সরু গলির ভিতরের ছোট্ট ঘরটাই হরিদার জীবনের একমাত্র আশ্রয়। কোনো ছকে বাঁধা কাজ করতে তাঁর ভালো লাগে না। তবে তাঁর জীবনের নাটকীয় বৈচিত্র্য হলো এই যে, তিনি মাঝে মাঝে বহুরূপী সাজেন। এতে সামান্য কিছু রোজগারও হয় বটে। বহুরূপী সেজে তিনি কখনও বাসস্ট্যান্ডে, কখনও বাজারে, কখনও আবার অন্য উপায়ে তাঁর সাজ দেখিয়ে পয়সা রোজগার করেন। বহুরূপী সাজাটাই তাঁর পেশা। এই পেশাগত বিচারে গল্পের নামকরণ যথাযথ। কিন্তু সুবোধ ঘোষ গল্পের কাহিনিতে একটু বাঁক ফেরালেন জগদীশবাবুর বাড়িতে হরিদাকে এনে।

হরিদা চেয়েছিলেন কৃপণ, ধনী জগদীশবাবুর কাছ থেকে বেশি করে টাকা আদায় করবেন। সেইমতো তিনি বিরাগীর বেশে সেজেও ছিলেন ভালো। জগদীশবাবু হরিদাকে বিরাগীর বেশে দেখে মুগ্ধ হয়ে যান। জগদীশবাবু বুঝতেই পারেন না যে, তাঁর বাড়িতে বিরাগীর বেশে আসা লোকটা আসলে একজন বহুরূপী। উপরন্তু, তিনি বিরাগী হরিদাকে একশো এক টাকার একটি থলি দিতে গেলে হরিদা তা প্রত্যাখ্যান করেন। তিনি জানান, বিরাগীর কোনো অর্থের প্রয়োজন নেই। ত্যাগই তাঁর জীবনের ধর্ম। অর্থাৎ, বহুরূপী সাজলেও হরিদা তাঁর চরিত্রের আন্তরিকতা বজায় রেখেছেন। এখানেই হরিদার বহুরূপী পেশা পাঠকদের কাছে গৌরবের হয়ে উঠেছে। তাই বলা যায়, গল্পের নামকরণ কিছুটা বিষয়কেন্দ্রিক হলেও ব্যঞ্জনাধর্মী হয়ে উঠেছে। সেদিক থেকে গল্পের নামকরণ ‘বহুরূপী’ সার্থক হয়েছে।


আজকে আমরা আমাদের আর্টিকেলে মাধ্যমিক বাংলার চতুর্থ পাঠের প্রথম অংশ, ‘বহুরূপী’, এর বিষয়সংক্ষেপ নিয়ে আলোচনা করেছি। এই প্রশ্নগুলো মাধ্যমিক ও চাকরির পরীক্ষার জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আশা করি, এই আর্টিকেলটি আপনাদের উপকারে এসেছে। যদি কোনো প্রশ্ন বা অসুবিধা থাকে, তাহলে আমাকে টেলিগ্রামে যোগাযোগ করতে পারেন, আমি সাহায্য করার চেষ্টা করব। এছাড়াও, এই পোস্টটি আপনার প্রিয়জনদের সাথে শেয়ার করতে ভুলবেন না, যাদের এটি প্রয়োজন হতে পারে। ধন্যবাদ!

Share via:

মন্তব্য করুন