দশম শ্রেণি – বাংলা – বহুরূপী – ব্যাখ্যাভিত্তিক সংক্ষিপ্ত উত্তরভিত্তিক প্রশ্ন ও উত্তর

Gopi

সুবোধ ঘোষের বহুরূপী গল্পটি মাধ্যমিক বাংলার একটি গুরুত্বপূর্ণ গল্প। এই গল্পে, একজন সামান্য গ্রাম্য যুবক কীভাবে তার প্রতিভা ও সাধনার মাধ্যমে একজন প্রতিষ্ঠিত বহুরূপী শিল্পী হয়ে ওঠে তার কাহিনী বর্ণিত হয়েছে।

Table of Contents

দশম শ্রেণি – বাংলা – বহুরূপী – ব্যাখ্যাভিত্তিক সংক্ষিপ্ত উত্তরভিত্তিক প্রশ্ন ও উত্তর

এক সন্ন্যাসী এসে জগদীশবাবুর বাড়িতে ছিলেন। – জগদীশবাবুর বাড়িতে যে সন্ন্যাসী এসেছিলেন তাঁর বর্ণনা দাও।

গল্পকার সুবোধ ঘোষ রচিত ‘বহুরূপী’ গল্পে জগদীশবাবুর বাড়িতে সাত দিন ধরে এক সন্ন্যাসী ছিলেন। খুবই উঁচুদরের এই সন্ন্যাসী হিমালয়ের গুহাতে থাকতেন। তিনি সারাবছরে শুধু একটি হরীতকী খেতেন। এ ছাড়া তিনি আর কিছুই খেতেন না। অনেকেই মনে করত, সন্ন্যাসীর বয়স ছিল হাজার বছরেরও বেশি। তাঁর পায়ের ধুলো ছিল অত্যন্ত দুর্লভ জিনিস; সবাই সন্ন্যাসীর এই পায়ের ধুলো পেত না। একমাত্র জগদীশবাবুই সন্ন্যাসীর পায়ের ধুলো পেয়েছিলেন।

সে ভয়ানক দুর্লভ জিনিস। – দুর্লভ জিনিসটা কী? কে, কীভাবে তা লাভ করেছিল?

দুর্লভ জিনিস – সুবোধ ঘোষ রচিত ‘বহুরূপী’ গল্পের আলোচ্য অংশে দুর্লভ জিনিসটি হল সন্ন্যাসীর পায়ের ধুলো।

দুর্লভ বস্তু লাভ – জগদীশবাবুর বাড়িতে একবার এক সন্ন্যাসী এসে সাত দিন ছিলেন। সেই সন্ন্যাসীর পায়ের ধুলো ছিল অত্যন্ত দুর্লভ। জগদীশবাবু যে-কোনো মূল্যে সন্ন্যাসীর পায়ের ধুলো নিতে চেয়েছিলেন। তাই জগদীশবাবু একজোড়া কাঠের খড়মে সোনার বোল লাগিয়ে সন্ন্যাসীর পায়ের কাছে ধরেছিলেন। তখন বাধ্য হয়ে সন্ন্যাসী তাঁর পা এগিয়ে দিয়েছিলেন আর সেই ফাঁকে জগদীশবাবু সন্ন্যাসীর পায়ের ধুলো নিয়েছিলেন।

গল্প শুনে খুব গম্ভীর হয়ে গেলেন হরিদা। – হরিদা কে ছিলেন? কোন গল্প শুনে হরিদা গম্ভীর হয়ে গিয়েছিল?

হরিদার পরিচয় – ‘বহুরূপী’ গল্পের কেন্দ্রীয় চরিত্র হরিদা ছিলেন পেশায় বহুরুপী।

হরিদার গম্ভীর হয়ে যাওয়া – লেখক ও তাঁর বন্ধুরা হরিদাকে জানিয়েছিলেন যে, জগদীশবাবুর বাড়িতে এক সন্ন্যাসী সাত দিন ধরে ছিলেন। তিনি সারাবছরে একটি হরীতকী খান। তাঁর বয়স হাজার বছরেরও বেশি। সন্ন্যাসী কাউকেই তাঁর পায়ের ধুলো দেন না। জগদীশবাবু কাঠের খড়মে সোনার বোল লাগিয়ে তাঁর পায়ের কাছে ধরতেই সন্ন্যাসী সেই খড়ম পড়তে গেলে জগদীশবাবু তাঁর পায়ের ধুলো নিয়েছিলেন। সন্ন্যাসীর এই গল্প শুনে হরিদা গম্ভীর হয়ে গিয়েছিলেন।

খুবই গরিব মানুষ হরিদা – হরিদার দারিদ্র্যের পরিচয় দাও।

সুবোধ ঘোষের ‘বহুরূপী’ গল্পে শহরের সবচেয়ে সরু একটা গলির ভিতরে হরিদার ঘর। সময় ধরে কোনো অফিসে বা দোকানে কাজ করা তাঁর পছন্দ নয়। তাই তাঁর সংসার রোজগারহীন। তাঁর উনুনে অনেক সময় শুধু জলই ফোটে, ভাত ফোটে না। এই অভাব তিনি সহ্য করতে পারেন, কিন্তু একঘেয়ে কাজ করতে তাঁর ভয়ানক আপত্তি। বহুরুপী সেজে যেটুকু রোজগার হয় তাতেই কোনোদিন একবেলা-আধবেলা খেয়ে হরিদার দিন চলে যায়।

একটা চাকরির কাজ করে যাওয়া হরিদার পক্ষে সম্ভব নয়। – কেন হরিদা কোনোদিন চাকরি করেননি?

ইচ্ছে করলেই হরিদা যে-কোনো অফিসের কাজ অথবা কোনো দোকানের বিক্রিওয়ালার কাজ পেয়ে যেতেন। কিন্তু ঘড়ির কাঁটায় সময় ধরে নিয়ম করে রোজই এক চাকরি করতে যাওয়া হরিদার পক্ষে সম্ভব ছিল না। কোনোদিন তাঁর হাঁড়িতে ভাত চড়ত, কোনোদিন চড়ত না। এই অভাবটা সহ্য করতেও হরিদা রাজি ছিলেন, কিন্তু একঘেয়ে কাজ করতে তাঁর ভীষণ আপত্তি ছিল। তাই হরিদা কোনোদিন চাকরি করেননি।

হরিদার জীবনে সত্যিই একটা নাটকীয় বৈচিত্র্য আছে। – হরিদার জীবনের নাটকীয় বৈচিত্র্যটি কী ছিল?

সুবোধ ঘোষের ‘বহুরূপী’ গল্পে হরিদার অভাবী জীবনে একটা নাটকীয় বৈচিত্র্য ছিল। হরিদা মাঝে মাঝে বহুরুপী সেজে রোজগার করতেন। বিচিত্র সব ছদ্মবেশে তিনি রাস্তায় বেরিয়ে পড়তেন। যারা চিনতে পারত তারা এক-আনা কিংবা দু-আনা বকশিশ দিত। আর যারা চিনতে পারত না তাদের মধ্যে কেউ কিছুই দিত না অথবা কেউ বিরক্ত হয়ে দু-একটা পয়সা বাড়িয়ে দিত। নানারকম বেশে রাস্তায় বেরোনোটাই ছিল হরিদার জীবনের নাটকীয় বৈচিত্র্য।

ঠিক দুপুরবেলাতে একটা আতঙ্কের হল্লা বেজে উঠেছিল। – কোথায় আতঙ্কের হল্লাটি বেজে উঠেছিল? নিজের ভাষায় তার বর্ণনা দাও।

যেখানে হল্লা বেজে উঠেছিল – একদিন দুপুরবেলা চকের বাসস্ট্যান্ডের কাছে আতঙ্কের হল্লাটি বেজে উঠেছিল।

আতঙ্কের ঘটনার বর্ণনা – চকের বাসস্ট্যান্ডের কাছে একদিন এক পাগলকে দেখা গিয়েছিল। কটকটে লাল চোখের সেই পাগলের মুখ থেকে লালা ঝরছিল। তার কোমড়ে ছিল একটা ছেঁড়া কম্বল আর গলায় ছিল টিনের কৌটোর একটা মালা। সেই পাগলটা একটা থান ইট নিয়ে বাসে বসা যাত্রীদের দিকে তেড়ে যাচ্ছিল। তাকে দেখে যাত্রীরা চেঁচিয়ে উঠছিল। কেউ কেউ দু-এক পয়সা তার সামনে ফেলে দিচ্ছিল। এভাবেই বাসস্ট্যান্ডে আতঙ্কের হল্লা শুরু হয়েছিল। বাস ড্রাইভার কাশীনাথ অবশ্য বুঝতে পেরেছিল লোকটা আসলে বহুরূপী হরিদা।

কিন্তু দোকানদার হেসে ফেলে-হরির কান্ড – কোন্ কাণ্ডের কথা বলা হয়েছে?

বহুরূপী হরিদা বিভিন্ন বেশ ধারণ করতেন। একদিন সন্ধেবেলায় যখন আলো সবেমাত্র জ্বলে উঠেছে ঠিক সেইসময় হঠাৎই সবাই ঘুঙুরের শব্দ শুনতে পায়। সবাই দেখে এক রূপসি বাইজি নাচতে নাচতে চলে যাচ্ছে। এক-একটা দোকানের সামনে গিয়ে তিনি দাঁড়ান আর মুচকি হেসে চোখ টিপে একটা ফুলসাজি এগিয়ে দেন। দোকানিরাও হেসে ফেলে একটা সিকি সেই ফুলসাজিতে দিয়ে দেয়। হরিদা-ই বাইজি সেজে এই কাণ্ড ঘটান আর বাইজিটি যে আসলে এক বহুরূপী, সেটা জানতে পেরে দর্শকদের মোহভঙ্গ হয়।

দয়ালবাবুর লিচু বাগানে কী ঘটনা ঘটেছিল?

দয়ালবাবুর লিচু বাগানে স্কুলের চারটি ছেলে এসেছিল লিচু নেওয়ার আশায়। সেখানে হরিদা পুলিশ সেজে দাঁড়িয়েছিলেন আর সেই চার জন ছেলেকে তিনি ধরেছিলেন। সব ছেলে তাঁকে সত্যিকারের পুলিশ বলেই মনে করেছিল এবং ভয়ে কেঁদে ফেলেছিল। তারপর সেই ছেলেদের স্কুলের মাস্টারমশাই সেখানে এসে ছেলেদের ছাড়িয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য নকল পুলিশের কাছে ক্ষমা চান এবং তাকে আট আনা ঘুষও দেন। সেই আট আনা ঘুষ পাওয়ার পর নকল পুলিশ হরিদা সেই চার জন ছেলেকে ছেড়েছিলেন।

হরিদা পুলিশ সেজে কোথায় দাঁড়িয়েছিলেন? তিনি কীভাবে মাস্টারমশাইকে বোকা বানিয়েছিলেন?

স্থান – হরিদা পুলিশ সেজে দয়ালবাবুর লিচু বাগানে দাঁড়িয়েছিলেন।

মাস্টারমশাইকে বোকা বানানো – দয়ালবাবুর লিচু বাগানে হরিদা পুলিশ সেজে স্কুলের চারটি ছেলেকে ধরেছিলেন। ছেলেরা তাঁকে সত্যিকারের পুলিশ বলেই মনে করেছিল এবং ভয়ে কেঁদে ফেলেছিল। তারপর সেই ছেলেগুলির স্কুলের মাস্টারমশাই সেখানে এসে নকল পুলিশের কাছে ক্ষমা চেয়ে, তাকে আট আনা ঘুষ দিয়েছিলেন। ঘুষ পাওয়ার পর তবেই নকল পুলিশ হরিদা সেই চার জন ছেলেকে ছেড়েছিলেন। হরিদা এভাবেই মাস্টারমশাইকে বোকা বানিয়েছিলেন।

ঠিকই, আমাদের সন্দেহ মিথ্যে নয়। – কারা, কী সন্দেহ করেছিল? সেই সন্দেহ যে ঠিক, তা কীভাবে বোঝা গেল?

সন্দেহকারী ও সন্দেহ – গল্পের কথক ও তাঁর বন্ধুরা ভেবেছিলেন হরিদা সন্ন্যাসীর কথা শুনে গম্ভীর হয়ে গেছেন। হয়তো মনে মনে কোনো মতলব ফাঁদছেন।

সন্দেহের যথার্থতা – হরিদা একদিন কথক ও তাঁর বন্ধুদের বলেন যে, তিনি তাঁদের একটা জবর খেলা দেখাবেন। আর তিনি ওই খেলা দেখাবে জগদীশবাবুর বাড়িতে। জগদীশবাবু ধনী লোক। সন্ন্যাসীর গল্প শুনে হরিদা তাই সন্ন্যাসীর চরিত্রটিকেই বেছে নিয়েছেন। হরিদার কথা শুনেই কথক ও তাঁর বন্ধুদের সন্দেহ ঠিক বলে প্রমাণিত হল।

আমি বলছি তোমরা সেখানে থেকো। – এখানে বক্তা কাদের থাকতে বলেছেন? তাদের থাকতে বলার কারণ কী?

উদ্দিষ্ট জন – উল্লিখিত অংশে হরিদা গল্পকথক এবং তাঁর বন্ধুদের থাকতে বলেছেন।

থাকতে বলার কারণ – কথকেরা হরিদাকে জগদীশবাবুর বাড়িতে আসা হিমালয়ের গুহানিবাসী সন্ন্যাসীর কথা শুনিয়েছিলেন। সেই সন্ন্যাসীর পায়ের ধুলো ছিল দুর্লভ। কিন্তু জগদীশবাবু কাঠের খড়মে সোনার বোল লাগিয়ে তা সন্ন্যাসীকে পরতে দিয়ে সুকৌশলে তাঁর পায়ের ধুলো নেন। এ গল্প শুনেই হরিদা গম্ভীর হয়ে যান এবং বলেন যে, তিনি একটা ‘জবর খেলা’ দেখাবেন। এই খেলা দেখতেই হরিদা কথকদের আমন্ত্রণ জানান।

এবার মারি তো হাতি, লুঠি তো ভাণ্ডার। – বক্তা কে? তিনি কোন্ উদ্দেশ্যে এ কথা বলেছেন?

বক্তা – প্রখ্যাত গল্পকার সুবোধ ঘোষ ‘বহুরূপী’ গল্প থেকে নেওয়া আলোচ্য অংশটির বক্তা বহুরূপী হরিদা।

এ কথা বলার উদ্দেশ্য – বহুরুপী সেজে হরিদার উপার্জন ছিল অতি সামান্য। তাই জগদীশবাবুর বাড়িতে সন্ন্যাসীর খাতির-যত্ন ও অর্থলাভের কাহিনি শুনে হরিদা সিদ্ধান্ত নেন সেখানে যাওয়ার। মোটা কিছু আদায় করাই ছিল তাঁর লক্ষ্য। কাঙালের মতো হাত পেতে বকশিশ নয়, একবারে এমন উপার্জন করবে, যাতে তাঁর সমস্ত বছর চলে যাবে-এই উদ্দেশ্য নিয়েই আলোচ্য কথাটি হরিদা বলেছেন।

বড়ো চমৎকার আজকে এই সন্ধ্যার চেহারা – সন্ধ্যার যে সৌন্দর্যের বর্ণনা এখানে আছে তা লেখো।

বহুরূপী গল্পে উল্লিখিত সন্ধেবেলায় দেখা যায় অনেকদিন পর চাঁদের আলো শহরের চারিদিকে ছড়িয়ে পড়েছে। স্নিগ্ধ, উজ্জ্বল আলোর সৌন্দর্যে ভরে গেছে চারিদিক। ঠান্ডা ফুরফুরে বাতাস বইছে। গাছের পাতাও হাওয়ায় দুলছে আর তারা যেন ঝিরঝির শব্দ দিয়ে কিছু বলতে চাইছে। চারিদিক শান্ত, স্নিগ্ধ। জগদীশবাবুর বাড়ির বারান্দাতে মস্ত বড়ো একটা আলো জ্বলছে। আর সেই আলোর কাছে একটা চেয়ারের ওপর জগদীশবাবু বসে আছেন।

ও চেহারা কি সত্যিই কোনো বহুরূপীর হতে পারে। – কার কথা বলা হয়েছে? সেই চেহারার বর্ণনা দাও।

উদ্দিষ্ট ব্যক্তি – উল্লিখিত অংশে বিরাগীর বেশ ধারণকারী হরিদার কথা বলা হয়েছে।

চেহারার বর্ণনা – বিরাগীর খালি গায়ে ছিল ধবধবে সাদা উত্তরীয়, পরনে ছিল একটি ছোটো থান, মাথায় শুকনো সাদা চুল, হাতে ছিল একটা ঝোলা আর পা ছিল ধুলোমাখা। তাঁর ঝোলায় ছিল একটা গীতা। দেখে মনে হচ্ছিল যেন জগতের সীমার ওপার থেকে তিনি হেঁটে হেঁটেই চলে এসেছেন। শীর্ণ শরীরটাকে দেখে মনে হচ্ছিল যেন অশরীরী চেহারা আর তাঁর চোখ থেকে একটা অদ্ভুত উদাত্ত, শান্ত ও উজ্জ্বল দৃষ্টি যেন ঝরে পড়ছিল।

আপনি কি ভগবানের চেয়েও বড়ো? – কাকে এ কথা বলা হয়েছে? এ কথা বলার কারণ কী?

উদ্দিষ্ট ব্যক্তি – বিরাগীবেশী হরিদা জগদীশবাবুকে এ কথা বলেছেন।

এ কথা বলার কারণ – বিরাগীর বেশে হরিদা জগদীশবাবুর বাড়িতে এলে জগদীশবাবু তাঁকে দেখে মুগ্ধ হয়ে যান। সাধুসঙ্গে আগ্রহী জগদীশবাবু তাঁকে উঠে দাঁড়িয়ে স্বাগত জানান। তিনি তখন বারান্দায় একটা চেয়ারে বসেছিলেন। বারান্দা থেকে জগদীশবাবুর নেমে না আসাটা বিরাগীর ক্ষোভের কারণ হয়। তিনি রুষ্টভাবে বলেন যে এগারো লক্ষ টাকার সম্পত্তির অহংকারে জগদীশবাবু নিজেকে ভগবানের থেকেও বড়ো বলে মনে করছেন।

আমি এই সৃষ্টির মধ্যে এককণা ধূলি। – প্রসঙ্গ উল্লেখ করে ব্যাখ্যা লেখো।

প্রসঙ্গ – জগদীশবাবু বিরাগীরূপী হরিদাকে ‘মহারাজ’ বলে সম্বোধন করেন। তাঁর কথার উত্তর দিতেই বিরাগী হরিদা এ কথা বলেছেন।

ব্যাখ্যা – বিরাগী হরিদার মতে, আসল মহারাজ হলেন ঈশ্বর। মানুষ কখনও মহারাজ হতে পারে না। পৃথিবীর সব কিছুরই সৃষ্টিকর্তা ঈশ্বর। মানুষ সেই সৃষ্টির একটি অংশ মাত্র। সামান্য ধূলিকণার সঙ্গে মানুষকে তুলনা করে বিরাগী হরিদা তাঁর সংসারবৈরাগ্যের পরিচয় দিয়েছেন। আসলে এটি ছিল হরিদার সন্ন্যাসীসুলভ দার্শনিক উক্তি।

ওসব হলো সুন্দর সুন্দর এক-একটি বঞ্চনা। – ‘ওসব’ বলতে কী বোঝানো হয়েছে? সেগুলোকে ‘বঞ্চনা’ বলা হয়েছে কেন?

ওসব বলতে বোঝানো হয়েছে – ‘ওসব’ বলতে ধন, জন ও যৌবনকেই বোঝানো হয়েছে।

বঞ্চনা বলার কারণ – হরিদা বিরাগী সেজেছেন। বিরাগীরা হলেন সংসারত্যাগী মানুষ, পৃথিবীর সব মোহ থেকে তাঁরা মুক্ত। তাঁরা সিদ্ধপুরুষ। তাঁদের কাছে এই জগতের সুখ-সমৃদ্ধির কোনো মূল্য নেই। ধন, জন, যৌবন-এগুলিই মানুষের মনকে চঞ্চল করে। আর এসব পাওয়ার নেশায় মানুষ অসহিষ্নু হয়ে ওঠে। প্রাপ্তির পরও তাদের লোভের শেষ থাকে না। আরও পাবার আকাঙ্ক্ষা তৈরি হয়। তাই ওগুলোকে বিরাগী হরিদা ‘বঙ্গনা’ বলেছেন।

তবে কিছু উপদেশ শুনিয়ে যান – বক্তা কে? তিনি কী উপদেশ শুনেছিলেন?

বক্তা – গল্পকার সুবোধ ঘোষ রচিত ‘বহুরূপী’ গল্পের উল্লিখিত অংশটির বক্তা হলেন জগদীশবাবু।

উপদেশ – বিরাগী তাঁকে উপদেশ দিয়েছিলেন – এই ধন, জন, যৌবন সব কিছুই অস্থায়ী, কোনো কিছুই স্থায়ী নয়। এই সমস্ত কিছুই এক-একটি বঞ্চনা। মনপ্রাণের সব আকাঙ্ক্ষা নিয়ে শুধু একজনের আপন হওয়ার চেষ্টা করতে হবে, যাঁকে পেলে এই সৃষ্টির সব ঐশ্বর্য পাওয়া যায়। অর্থাৎ ঈশ্বরের কাছাকাছি যাওয়ার চেষ্টা করতে হবে।

আপনি একটি মিনিট থাকুন বিরাগীজি। – বক্তা কে? এ কথা বলে তিনি কী করেছিলেন?

বক্তা – সুবোধ ঘোষের ‘বহুরুপী’ গল্পে উল্লিখিত অংশটির বক্তা হলেন জগদীশবাবু।

বক্তার কাজ – বিরাগীর থেকে উপদেশ শোনার পর জগদীশবাবু বিরাগীকে এক মিনিট দাঁড়াতে বলে ভিতর থেকে একটি থলি নিয়ে আসেন। সেই থলির ভেতর ছিল নোটের তাড়া। থলিটা বিরাগীর পায়ের কাছে রেখে, জগদীশবাবু ব্যাকুল স্বরে প্রার্থনা করেন তাঁর দান গ্রহণ করার জন্য। জগদীশবাবু বিরাগীর তীর্থভ্রমণ উপলক্ষ্যে সেই অর্থ দান করতে চেয়েছিলেন।

হরিদার উনানের আগুন তখন বেশ গনগনে হয়ে জ্বলছে। – হরিদা কে? উক্তিটির মধ্য দিয়ে লেখক পরোক্ষে কী বোঝাতে চেয়েছেন?

হরিদার পরিচয় – হরিদা ছিলেন একজন অভাবী মানুষ। তাঁর পেশা ছিল বহুরুপী।

পরোক্ষে লেখকের বক্তব্য – হরিদার ছোট্ট ঘরে উনানে যে আগুন জ্বলে তাতে অনেক সময় শুধু জল ফোটে, ভাত ফোটে না। বহুরূপী সেজে সামান্য রোজগারে প্রতিদিন তাঁর খাবারের সংস্থান হয় না। আবার তাঁর সততা এই অবস্থা থেকে তাঁকে বেরোতে দেয় না। জগদীশবাবুর বাড়িতে সুযোগ থাকা সত্ত্বেও শুধু সন্ন্যাসীর ‘ঢং’ নষ্ট হবে বলে তিনি প্রণামির টাকা গ্রহণ করেননি। খিদের আগুন তাই উনানের আগুনের প্রতীকে জ্বলতেই থাকে হরিদার ঘরে।

আমাদের দেখতে পেয়েই লজ্জিতভাবে হাসলেন – কে, কাদের দেখতে পেয়ে হেসেছিলেন? লজ্জিতভাবে হাসির কারণ কী?

উদ্দিষ্ট জন – গল্পের কথক এবং তাঁর বন্ধুদের দেখে হরিদা হেসেছিলেন।

লজ্জিতভাবে হাসার কারণ – হরিদা জগদীশবাবুর কাছ থেকে মোটা অঙ্কের টাকা আদায় করবেন বলে তাঁর বাড়ি গিয়েছিলেন। কথক ও তাঁর বন্ধুদের কাছে সে-কথা হরিদা আগেই জানিয়েছিলেন। হরিদার বিরাণীমূর্তি দেখে জগদীশবাবু মোহিত হয়ে যান। তিনি হরিদাকে একশো এক টাকা ভরে একটি থলিও দেন। কিন্তু হরিদা সেই টাকার থলি ছুঁয়েও দেখেন না। পূর্বপ্রতিশ্রুতি রাখতে না পারায় তিনি লজ্জিত হয়েছিলেন।

বহুরূপী গল্পে কীভাবে বোঝা গেল যে বিরাগী আসলে হরিদাই?

লেখক তাঁর বন্ধুদের নিয়ে হরিদার বাড়ি এসে দেখলেন ঘরের উনুনে হাঁড়িতে চাল ফুটছে আর হরিদা বিড়ি ধরিয়ে চুপ করে বসে আছেন। সবাই অবাক হয়ে গেলেন। কেউ-ই বিশ্বাস করতে পারছিলেন না বিরাগী আর হরিদা দুজনে আসলে একই লোক। কারণ হরিদার বিরাণী সাজের সঙ্গে তাঁরা আসল হরিদার কোনো মিল খুঁজে পাননি। কিন্তু বিরাগীর ব্যবহৃত সাদা উত্তরীয়, সেই ঝোলা এবং সেই গীতা হরিদার ঘরের মাদুরের ওপর রাখা আছে দেখে তাঁরা বুঝতে পারলেন বিরাগী আসলে হরিদাই।

খাঁটি সন্ন্যাসীর মতো সব তুচ্ছ করে সরে পড়লেন? – বক্তা কে? এই প্রশ্নের উত্তরে হরিদা কী বলেছিলেন?

বক্তার পরিচয় – উল্লিখিত অংশের বক্তা অনাদি।

হরিদার বক্তব্য – হরিদা বিরাগী সেজে জগদীশবাবুর বাড়ি গেলেও তীর্থভ্রমণ উপলক্ষ্যে জগদীশবাবুর দেওয়া একশো এক টাকা কিন্তু তিনি গ্রহণ করেননি। কথক ও তাঁর বন্ধুরা হরিদার এই টাকা না নেওয়ার কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন টাকাটা নিলে তাঁর ঢং নষ্ট হয়ে যেত। যেহেতু তিনি বিরাগী সেজেছিলেন তাই বিরাগীর ধর্ম পালন করেছেন। বিরাগী সন্ন্যাসীরা কোনোদিন টাকা স্পর্শ করেন না, তাই অভাব থাকা সত্ত্বেও হরিদা সেই টাকা নিতে চাননি।

টাকা-ফাকা কী করে স্পর্শ করি বল? – কে বলেছিলেন? কেন তিনি এমন কথা বলেছিলেন?

উদ্দিষ্ট জন – বহুরুপী হরিদা উল্লিখিত মন্তব্যটি করেছিলেন।

এমন কথা বলার কারণ – উপার্জনের আশায় জগদীশবাবুর বাড়িতে হরিদা সন্ন্যাসী সেজে গিয়েছিলেন। কিন্তু হরিদা শেষপর্যন্ত বিরাগী চরিত্রের সঙ্গে এতটাই একাত্ম হয়ে গিয়েছিলেন যে প্রণামির একশো এক টাকাও তিনি গ্রহণ করেননি। এই ঘটনা হরিদার প্রতিদিনের সঙ্গী কথক ও তাঁর বন্ধুদের বিস্মিত করে। তাতেই হরিদা বলেন যে টাকা নিলে সন্ন্যাসীর ‘ঢং’ নষ্ট হয়ে যাবে বলেই তিনি তা গ্রহণ করেননি।

একজন বিরাগী সন্ন্যাসী হয়ে টাকা-ফাকা কী করে স্পর্শ করি বল? – হতদরিদ্র হরিদার এই আচরণের নেপথ্যে কোন্ সত্য লুকিয়ে আছে?

হরিদা পাগল, বাইজি, বাউল ইত্যাদি সেজে পয়সা নিয়েছেন। কিন্তু বিরাগী সেজে পয়সা নিতে পারেননি। বিরাগী হলেন সংসারত্যাগী সন্ন্যাসী। জগতের সব মোহ থেকে তাঁরা মুক্ত। হরিদা যখন বিরাগী সেজেছিলেন, তখন তিনি ওই চরিত্রের সঙ্গে একাত্ম হয়ে পড়েছিলেন। একবারও ভাবেননি, তিনি বহুরূপী। আবার এটাও তিনি ভেবেছিলেন, বিরাগী সেজে পয়সা নিলে সন্ন্যাসীর আদর্শের অপমান করা হবে। বিরাগী চরিত্রের মহিমা তাতে ক্ষুণ্ণ হবে। তাই হতদরিদ্র হরিদা জগদীশবাবুর যাবতীয় প্রলোভন ত্যাগ করতে পেরেছিলেন।

তাতে যে আমার ঢং নষ্ট হয়ে যায়। – ‘ঢং’ বলতে কী বোঝানো হয়েছে? কীসে ‘ঢং’ নষ্ট হয়ে যায়?

ডং অর্থ – ‘ঢং’ বলতে এখানে অভিনয়কে বোঝানো হয়েছে।

ডং নষ্টের কারণ – হরিদা জগদীশবাবুর বাড়িতে গিয়েছিলেন বিরাগীর বেশ ধরে অর্থ উপার্জনের জন্য। কিন্তু ধীরে ধীরে তিনি সেই সন্ন্যাসীর চরিত্রে নিজেকে মিশিয়ে দেন। ফলে চাহিদা ও লোভহীন জীবনদর্শনের কথাই তিনি শুধু বলেন না, প্রণামির টাকা উদাসীনভাবে ফেলে রেখে তিনি আচরণেও তার প্রমাণ রাখেন। হরিদা বলেন যে, বিরাগী সন্ন্যাসী হয়ে টাকা স্পর্শ করলে তাঁর ‘ঢং’ নষ্ট হয়ে যাবে।

অদৃষ্ট কখনও হরিদার এই ভুল ক্ষমা করবে না। – হরিদা কী ভুল করেছিলেন? কেন সেই ভুল অদৃষ্ট ক্ষমা করবে না বলা হয়েছে?

হরিদার ভুল – হরিদা বিরাগী সেজে জগদীশবাবুর কাছ থেকে। একশো এক টাকা পেয়েও গ্রহণ করেননি। এটাকেই ‘ভুল’ বলা হয়েছে।

অদৃষ্টের ক্ষমা না করা – হরিদা ছিলেন খুব গরিব। তাঁর পেশা ছিল বহুরূপী সাজা। বহুরূপী সেজে তাঁর উপার্জন ছিল অতি সামান্য। কিন্তু বিরাগী সেজে হরিদা একশো এক টাকা পেয়েছিলেন। এতগুলো টাকা হয়তো তাঁকে অদৃষ্টই দিতে চেয়েছিল। তা না নিয়ে হরিদা অদৃষ্টের বিরাগভাজন হয়েছেন। এই কারণেই বলা হয়েছে অদৃষ্ট তাঁর এই ভুল ক্ষমা করবে না।

বহুরূপী গল্পটি একটি অনুপ্রেরণামূলক গল্প। এই গল্পটি আমাদের শিক্ষা দেয় যে, প্রতিভা ও সাধনার মাধ্যমে যেকোনো কিছু অর্জন করা সম্ভব। হরিরাম একজন সামান্য গ্রাম্য যুবক থেকে একজন প্রতিষ্ঠিত বহুরূপী শিল্পী হয়ে ওঠে তার প্রতিভা ও সাধনার মাধ্যমে। এই গল্পটি আমাদেরকে আমাদের প্রতিভা ও সাধনাকে কাজে লাগানোর জন্য অনুপ্রাণিত করে।

JOIN US ON WHATSAPP

JOIN US ON TELEGRAM

Please Share This Article

About The Author

Related Posts

মাধ্যমিক - ভূগোল - বারিমন্ডল - জোয়ার ভাটা - রচনাধর্মী প্রশ্ন উত্তর

মাধ্যমিক – ভূগোল – বারিমন্ডল – জোয়ার ভাটা – রচনাধর্মী প্রশ্ন উত্তর

Class 10 English – The Passing Away of Bapu – About Author and Story

Class 10 English – The Passing Away of Bapu – About Author and Story

The Passing Away of Bapu

Class 10 English – The Passing Away of Bapu – Question and Answer

Tags

মন্তব্য করুন

SolutionWbbse

Trending Now

Class 9 – English – A Day in The Zoo – Question and Answer

Class 9 – English Reference – Tom Loses a Tooth – Question and Answer

Class 9 – English Reference – The North Ship – Question and Answer

Class 9 – English – His First Flight – Question and Answer

Class 9 – English – A Shipwrecked Sailor – Question and Answer